মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৩০- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৯৭২
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৭২। হযরত জা'ফর ইবনে মুহাম্মাদ তাঁহার পিতা হইতে বর্ণনা করেন যে, একদা কোরাইশী এক ব্যক্তি তাঁহার (মুহাম্মাদের) পিতা আলী ইবনে হোসাইনের নিকট আসিল। তখন আলী ইবনে হোসাইন (আগত লোকটিকে উদ্দেশ্য করিয়া) বলিলেন, আমি কি তোমাকে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর একটি হাদীস বর্ণনা করিব? লোকটি বলিল, হ্যাঁ, অবশ্যই আবুল কাসেম (ﷺ) হইতে হাদীস বর্ণনা করুন। তখন আলী ইবনে হোসাইন (মুরসাল হিসাবে) বর্ণনা করিলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যখন রোগাক্রান্ত হইলেন, তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) তাঁহার কাছে আসিয়া বলিলেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার বৈশিষ্ট্যের প্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তা'আলা আমাকে আপনার খেদমতে পাঠাইয়া আপনার হাল অবস্থা জানিতে চাহিয়াছেন। অথচ আপনার অবস্থা সম্পর্কে তিনি (আল্লাহ্) আপনার চাইতে অধিক অবগত আছেন। তবুও তিনি জানিতে চাহিয়াছেন, আপনি এখন নিজের মধ্যে কিরূপ অনুভব করিতেছেন? উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেনঃ হে জিবরাঈল! আমি নিজেকে ভারাক্রান্ত পাইতেছি এবং নিজের মধ্যে অস্থিরতা অনুভব করিতেছি। (ইহার পর সেইদিন জিবরাঈল চলিয়া গেলেন।) আবার দ্বিতীয় দিন আসিয়া বিগত দিনের ন্যায় জিজ্ঞাসা করিলেন, আর নবী (ﷺ)ও প্রথম দিনের মত জওয়াব দিলেন। (এইদিনও জিবরাঈল চলিয়া গেলেন।) পুনরায় জিবরাঈল তৃতীয় দিন আসিলেন এবং নবী (ﷺ)-কে প্রথম দিনের ন্যায় জিজ্ঞাসা করিলেন, আর তিনিও প্রথম দিনের মত একই উত্তর দিলেন। এই (তৃতীয়) দিন জিবরাঈলের সঙ্গে আসিলেন 'ইসমাঈল' নামে আর একজন ফিরিশতা। তিনি ছিলেন এমন এক লক্ষ ফিরিশতার সর্দার, যাহাদের প্রত্যেকই (স্বতন্ত্রভাবে ) এক এক লক্ষ ফিরিশতার সর্দার। সেই ফিরিশতাও নবী (ﷺ)-এর নিকটে আসিবার অনুমতি চাহিলেন। অতঃপর নবী (ﷺ) জিবরাঈলকে তাহার পরিচয় জিজ্ঞাসা করিলেন। (ইহার পর প্রবেশের অনুমতি দিলেন।) অতঃপর জিবরাঈল নবী (ﷺ)-কে বলিলেন, এই যে মালাকুল মউত (আযরাঈল)। ইনিও আপনার নিকটে আসিবার অনুমতি চাহিতেছেন। তিনি আপনার পূর্বে কখনও কোন মানুষের কাছে যাইতে অনুমতি চান নাই এবং আপনার পরেও আর কখনও কোন মানুষের নিকট আসিতে অনুমতি চাহিবেন না। অতএব, তাহাকে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করুন। তখন নবী (ﷺ) তাহাকে অনুমতি দিলেন, তখন তিনি নবী (ﷺ)-কে সালাম করিলেন এবং বলিলেন, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ্ তা'আলা আমাকে আপনার খেদমতে পাঠাইয়াছেন। আপনি যদি আমাকে আপনার রূহ কবয করিবার অনুমতি বা নির্দেশ দেন, তাহা হইলে আমি আপনার রূহ কবয করিব। আর যদি আপনি আপনাকে ছাড়িয়া দিতে আমাকে নির্দেশ দেন, তাহা হইলে আমি আপনাকে ছাড়িয়া দিব (অর্থাৎ, রূহ কবয করিব না)। তখন নবী (ﷺ) বলিলেন, হে মালাকুল মউত! আপনি কি এমন করিতে পারিবেন ? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, আমি এইভাবেই নির্দেশিত হইয়াছি। আর আমি ইহাও আদিষ্ট হইয়াছি যে, আমি যেন আপনার নির্দেশ মানিয়া চলি বর্ণনাকারী বলেন, এই সময় নবী (ﷺ) হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালামের দিকে তাকাইলেন, তখন জিবরাঈল বলিলেন, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ্ তা'আলা আপনার সাক্ষাৎলাভের জন্য একান্তভাবে উদ্‌গ্রীব। তখনই নবী (ﷺ) মালাকুল মউতকে বলিলেন, যেই জন্য আপনি আদিষ্ট হইয়াছেন, তাহাই কার্যে পরিণত করুন, অতঃপর তিনি তাহার রূহ কবয করিয়া ফেলিলেন। যখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ইনতেকাল করেন এবং একজন সান্ত্বনাদানকারী আসেন, তখন তাঁহারা গৃহের এক পার্শ্ব হইতে এই আওয়াজ শুনিতে পাইলেন। “হে আহলে বায়ত! আপনাদের প্রতি আল্লাহর তরফ হইতে শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হউক। আল্লাহর কিতাবে প্রত্যেকটি বিপদের সময় সান্ত্বনা ও ধৈর্যের উপাদান রহিয়াছে। আল্লাহ্ প্রত্যেক ধ্বংসের উত্তম বিনিময়দানকারী এবং প্রত্যেক হারান বস্তুর ক্ষতিপূরণদানকারী। সুতরাং তোমরা একমাত্র আল্লাহকেই ভয় করিয়া চল এবং তাঁহার কাছেই সর্বময় কল্যাণের কামনা কর। কারণ, প্রকৃতপক্ষে ঐ ব্যক্তি বিপদগ্রস্ত যে সওয়াব হইতে বঞ্চিত।” অতঃপর হযরত আলী বলিলেন, তোমরা কি জান এই সান্ত্বনাবাণী প্রদানকারী লোকটি কে? ইনি হইলেন, হযরত খিযর আলাইহিস সালাম। —বায়হাকী তাঁহার দালায়েলুন নবুওত গ্রন্থে।
كتاب الفضائل والشمائل
وَعَنْ جَعْفَرِ بْنِ مُحَمَّدٍ عَنْ أَبِيهِ أَنَّ رَجُلًا مِنْ قُرَيْشٍ دَخَلَ عَلَى أَبِيهِ عَلِيِّ بْنِ الْحُسَيْنِ فَقَالَ أَلَا أُحَدِّثُكَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: بَلَى حَدِّثْنَا عَنْ أَبِي الْقَاسِمِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَمَّا مَرَضِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَاهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّ اللَّهَ أَرْسَلَنِي إِلَيْكَ تَكْرِيمًا لَكَ وَتَشْرِيفًا لَكَ خَاصَّةً لَكَ يَسْأَلُكَ عَمَّا هُوَ أَعْلَمُ بِهِ مِنْكَ يَقُولُ: كَيْفَ تجدك؟ قَالَ: أجدُني يَا جِبْرِيل مغموماً وأجدني يَا جِبْرِيل مَكْرُوبًا . ثُمَّ جَاءَهُ الْيَوْمُ الثَّانِي فَقَالَ لَهُ ذَلِكَ فَرَدَّ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَمَا رَدَّ أَوَّلَ يَوْمٍ ثُمَّ جَاءَهُ الْيَوْمَ الثَّالِثَ فَقَالَ لَهُ كَمَا قَالَ أَوَّلَ يَوْمٍ وَرَدَّ عَلَيْهِ كَمَا رَدَّ عَلَيْهِ وَجَاءَ مَعَهُ مَلَكٌ يُقَالُ لَهُ: إِسْمَاعِيلُ عَلَى مِائَةِ أَلْفِ مَلَكٍ كُلُّ مَلَكٍ عَلَى مِائَةِ أَلْفِ مَلَكٍ فَاسْتَأْذَنَ عَلَيْهِ فَسَأَلَهُ عَنْهُ. ثُمَّ قَالَ جِبْرِيل: هَذَا مَلَكُ الْمَوْتِ يَسْتَأْذِنُ عَلَيْكَ. مَا اسْتَأْذَنَ عَلَى آدَمِيٍّ قَبْلَكَ وَلَا يَسْتَأْذِنُ عَلَى آدَمِيٍّ بَعْدَكَ. فَقَالَ: ائْذَنْ لَهُ فَأَذِنَ لَهُ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّ اللَّهَ أَرْسَلَنِي إِلَيْكَ فَإِنْ أَمَرْتَنِي أَنْ أَقْبِضَ رُوحَكَ قَبَضْتُ وَإِنْ أَمَرْتَنِي أَنْ أَتْرُكَهُ تَرَكْتُهُ فَقَالَ: وَتَفْعَلُ يَا مَلَكَ الْمَوْتِ؟ قَالَ: نَعَمْ بِذَلِكَ أُمرتُ وأُمرتُ أَن أطيعَك. قَالَ: فَنَظَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى جِبْرِيل عَلَيْهِ السَّلَام فَقَالَ جِبْرِيلُ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّ اللَّهَ قَدِ اشْتَاقَ إِلَى لِقَائِكَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِمَلَكِ الْمَوْتِ: «امْضِ لِمَا أُمِرْتَ بِهِ» فَقَبَضَ رُوحَهُ فَلَمَّا تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَاءَتِ التَّعْزِيَةُ سَمِعُوا صَوْتًا مِنْ نَاحِيَةِ الْبَيْتِ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ إِنَّ فِي اللَّهِ عَزَاءً مِنْ كُلِّ مُصِيبَةٍ وَخَلَفًا مِنْ كُلِّ هالكٍ ودَرَكاً من كلِّ فَائت فبالله فثقوا وَإِيَّاهُ فَارْجُوا فَإِنَّمَا الْمُصَابُ مَنْ حُرِمَ الثَّوَابَ. فَقَالَ عَلِيٌّ: أَتَدْرُونَ مَنْ هَذَا؟ هُوَ الْخَضِرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ. رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي «دَلَائِلِ النُّبُوَّةِ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

বর্ণনাকারী জা'ফর হইলেন জা'ফর আস সাদেক। তাঁহার পিতা মুহাম্মদ আল-বাকের। আর আলী ইবনে হোসাইন, ইনি যয়নুল আবেদীন নামে প্রসিদ্ধ। এই আলী ছিলেন প্রসিদ্ধ ও প্রখ্যাত তাবেয়ী। সুতরাং তাঁহার বর্ণিত হাদীস 'মুরসাল।' হাদীসের শেষাংশে فقال علي এই আলী কে? ইহাতে মতভেদ আছে। ইমাম যয়নুল আবেদীন অথবা আলী ইবনে আবু তালিব (রাঃ), তবে হযরত আলী ইবনে আবু তালিব হওয়াই অধিক যুক্তিসঙ্গত। পরিশেষে কেহ কেহ হাদীসটিকে যঈফ বলিলেও আল্লামা হাফেয আসকালানী বলিয়াছেন, ইহা 'হাসান।'
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান