মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৩০- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৯৭৭
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
প্রথম অনুচ্ছেদ - অধ্যায় [রাসূলুল্লাহ (সা.) কোন প্রকার আর্থিক ওয়াসিয়্যাত করেননি- মর্মে আলোচনা]
৫৯৭৭। হযরত আবু মুসা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলিয়াছেনঃ আল্লাহ্ তা'আলা তাঁহার বান্দাদের মধ্যে যেই জাতির প্রতি নিজের অনুগ্রহ প্রকাশ করিতে চান, সেই জাতির নবীকে তাহাদের পূর্বেই ওফাত দান করেন। আর সেই নবীকে তাহাদের জন্য অগ্রগামী ও পূর্বসূরী করেন। পক্ষান্তরে আল্লাহ্ যখন কোন জাতিকে ধ্বংস করিতে ইচ্ছা করেন, তখন তাহাদের নবীকে তাহাদের মধ্যে জীবিত রাখিয়া সেই জাতিকে আযাব ও গযবে নিপতিত করেন। আর নবী তাহাদের ধ্বংস দেখিয়া চক্ষুর শীতলতা (ও মানসিক প্রশান্তি) লাভ করেন। যেহেতু তাহারা নবীকে মিথ্যুক আখ্যায়িত করিয়াছে এবং তাঁহার আদেশাবলী অমান্য করিয়াছে। —মুসলিম
كتاب الفضائل والشمائل
وَعَنْ أَبِي مُوسَى عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ إِذَا أَرَادَ رَحْمَةَ أُمَّةٍ مِنْ عِبَادِهِ قَبَضَ نَبِيَّهَا قَبْلَهَا فَجَعَلَهُ لَهَا فَرَطًا وَسَلَفًا بَيْنَ يَدَيْهَا وَإِذَا أَرَادَ هَلَكَةَ أُمَّةٍ عَذَّبَهَا وَنَبِيُّهَا حَيٌّ فَأَهْلَكَهَا وَهُوَ يَنْظُرُ فَأَقَرَّ عَيْنَيْهِ بِهَلَكَتِهَا حِينَ كذَّبُوه وعصَوْا أمره» . رَوَاهُ مُسلم
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটি আমাদের জন্য মস্তবড় সুসংবাদ। এতে জানানো হয়েছে, আ তা'আলা কোনও উম্মতের প্রতি রহমতের ইচ্ছা করলে উম্মতের বর্তমানে তাদের নবীকে তুলে নেন। নবীর চলে যাওয়া ও উম্মতের বাকি থাকা আপাতদৃষ্টিতে উম্মতের জন্য অতি বড় মসিবত হলেও প্রকৃতপক্ষে তা আল্লাহ তা'আলার অনেক বড় রহমতও বটে। হাদীছে বলা হয়েছে-
(তাঁকে তাদের জন্য অগ্রবর্তী প্রতিনিধি ও তাদের অপ্রেরিত সঞ্চয় বানিয়ে দেন)। فَرَط অর্থ অগ্রগামী প্রতিনিধি। কোনও যাত্রীদল কোথাও যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলে তারা প্রতিনিধিস্বরূপ কাউকে আগে আগে লক্ষ্যস্থলে পাঠিয়ে দেয়। অতীত দিনে এরূপ লোক আগে গিয়ে পানির হাউয ও কুয়া সংস্কার করত, বালতি-রশি ইত্যাদির ব্যবস্থা করত এবং তাদের থাকা-খাওয়া ইত্যাদির বন্দোবস্ত করত। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
أَنَا فَرَطُكُمْ عَلَى الْحَوْضِ.
'আমি হাউযে কাউসারে তোমাদের আগেভাগে উপস্থিত থাকব ।
নবীকে فَرَطُ বলা হয়েছে এ কারণে যে, নবী আগে গিয়ে উম্মতের জন্য আল্লাহ -তা'আলার রহমতলাভের বন্দোবস্ত করেন। উম্মত যাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভ করতে পারে, সেজন্য আল্লাহ তাআলার কাছে সুপারিশ করেন।
سلف অর্থ অগ্রীম মূল্য অর্থাৎ পরবর্তীতে কখনও পণ্য হস্তগত করার উদ্দেশ্যে ক্রেতা বিক্রেতাকে অগ্রীম যে মূল্য প্রদান করে থাকে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেকে তাঁর উম্মতের অগ্রীম মূল্য সাব্যস্ত করে বোঝাতে চাচ্ছেন যে, তিনি আগে আগে চলে গেলে তারা যদি ধৈর্যধারণ করে, তবে তার বিনিময়ে তারা আল্লাহ তা'আলার কাছে অতি উত্তম প্রতিদান ও বিপুল ছাওয়াব লাভ করবে।
সন্দেহ নেই, আগে আগে নবীর চলে যাওয়াটা উম্মতের জন্য অনেক বড় ধৈর্য পরীক্ষা। আশেক উম্মতের পক্ষে নবীর বিরহবেদনার চেয়ে বেশি শোকাবহ কোনও ঘটনা হতে পারে না। এর সামনে যে-কোনও শোক-বেদনা নিতান্তই তুচ্ছ। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীছে ইরশাদ করেছেন-
إذا أَصَابَ أَحَدَكُمْ مُصِيبَةٌ فَلْيَذْكُرْ مُصِبيته بي، فَإِنَّهَا مِنْ أَعْظم المصائب
‘তোমাদের কেউ কোনও মসিবতের সম্মুখীন হলে সে যেন আমার (ওফাত) দ্বারা নিজ মসিবতের কথা স্মরণ করে। কেননা এটা অন্যতম প্রধান মসিবত।
জনৈক ব্যক্তির মুহাম্মাদ নামক পুত্রের ইন্তিকাল হয়ে গেলে তার এক দীনী ভাই তাকে এই বলে সান্ত্বনা দিয়েছিল যে-
اصْبِرْ لِكُلِّ مُلِمَّةٍ وَتَجَلَّدٍ وَاعْلَمْ بِأَنَّ الْمَرْء غَيْرُ مُخَلَّد وَإِذَا ذَكَرْتَ مُحَمَّدًا وَمُصَابَهُ فَاذْكُرْ مُصَابَكَ بِالنَّبِيِّ مُحَمَّدٍ
“যে-কোনও মসিবতে ধৈর্য ধর। শক্ত হও। জেনে রাখো, দুনিয়ায় কোনও মানুষ চিরজীবী হয় না।
যখন তোমার পুত্র মুহাম্মাদ ও তার মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়, তখন নবী মুহাম্মাদের বিয়োগ-বেদনা স্মরণ করো।'
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত যখন তাঁর উম্মতের প্রত্যেকের জন্য সর্বাপেক্ষা কঠিন মুসিবত, তখন স্বাভাবিকভাবেই এ মসিবতে ধৈর্যধারণ করার দ্বারা সে আল্লাহ তা'আলার কাছে প্রতিদানও পাবে অনেক বড়। সে হিসেবে তাঁর ওফাত আমাদের জন্য আল্লাহ তা'আলার একটি বড় রহমত। এটা রহমত আরও একদিক থেকে, যা হাদীছটির পরবর্তী অংশ দ্বারা উপলব্ধি করা যায়।
পরবর্তী অংশে জানানো হয়েছে, কোনও উম্মতকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্য থাকলে আল্লাহ তা'আলা তাদের নবীকে জীবিত রাখেন এবং তাঁর চোখের সামনেই তাদেরকে আযাব দিয়ে ধ্বংস করে দেন।
আল্লাহ তা'আলা কোনও উম্মতকে পাথরের বৃষ্টি দিয়ে ধ্বংস করেছেন, কোনও উম্মতকে প্রবল ঝড়-বাতাস দিয়ে ধ্বংস করেছেন, কোনও উম্মতকে মহাপ্লাবনে নিমজ্জিত করেছেন, কোনও উম্মতকে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দিয়েছেন, কোনও উম্মতকে শূকর ও বানরে পরিণত করেছেন। এর প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নবীকে জীবিত রেখেছেন এবং তাঁর চোখের সামনেই আযাবের ঘটনা ঘটেছে।
মহান আল্লাহ আমাদের নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তুলে নেওয়ার দ্বারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, আমাদেরকে এরকম শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করা হবে না। সুতরাং এ হিসেবেও তাঁর চলে যাওয়া আমাদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার রহমত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা আমরা আমাদের প্রতি মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত সম্পর্কে ধারণা পাই।
খ. আমরা জানতে পারি এ উম্মতকে আগের যমানার বিভিন্ন উম্মতের মত সমূলে ধ্বংস করে দেওয়া হবে না।
গ. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগে আগে গিয়ে আমাদের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাই আমাদের কর্তব্য তাঁর সুপারিশলাভ ও তাঁর হাতে হাউযে কাউসারের পানি পান করার আশায় তাঁর সুন্নত ও আদর্শের অনুসরণে অটল-অবিচল থাকা।
(তাঁকে তাদের জন্য অগ্রবর্তী প্রতিনিধি ও তাদের অপ্রেরিত সঞ্চয় বানিয়ে দেন)। فَرَط অর্থ অগ্রগামী প্রতিনিধি। কোনও যাত্রীদল কোথাও যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলে তারা প্রতিনিধিস্বরূপ কাউকে আগে আগে লক্ষ্যস্থলে পাঠিয়ে দেয়। অতীত দিনে এরূপ লোক আগে গিয়ে পানির হাউয ও কুয়া সংস্কার করত, বালতি-রশি ইত্যাদির ব্যবস্থা করত এবং তাদের থাকা-খাওয়া ইত্যাদির বন্দোবস্ত করত। এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
أَنَا فَرَطُكُمْ عَلَى الْحَوْضِ.
'আমি হাউযে কাউসারে তোমাদের আগেভাগে উপস্থিত থাকব ।
নবীকে فَرَطُ বলা হয়েছে এ কারণে যে, নবী আগে গিয়ে উম্মতের জন্য আল্লাহ -তা'আলার রহমতলাভের বন্দোবস্ত করেন। উম্মত যাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাত লাভ করতে পারে, সেজন্য আল্লাহ তাআলার কাছে সুপারিশ করেন।
سلف অর্থ অগ্রীম মূল্য অর্থাৎ পরবর্তীতে কখনও পণ্য হস্তগত করার উদ্দেশ্যে ক্রেতা বিক্রেতাকে অগ্রীম যে মূল্য প্রদান করে থাকে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেকে তাঁর উম্মতের অগ্রীম মূল্য সাব্যস্ত করে বোঝাতে চাচ্ছেন যে, তিনি আগে আগে চলে গেলে তারা যদি ধৈর্যধারণ করে, তবে তার বিনিময়ে তারা আল্লাহ তা'আলার কাছে অতি উত্তম প্রতিদান ও বিপুল ছাওয়াব লাভ করবে।
সন্দেহ নেই, আগে আগে নবীর চলে যাওয়াটা উম্মতের জন্য অনেক বড় ধৈর্য পরীক্ষা। আশেক উম্মতের পক্ষে নবীর বিরহবেদনার চেয়ে বেশি শোকাবহ কোনও ঘটনা হতে পারে না। এর সামনে যে-কোনও শোক-বেদনা নিতান্তই তুচ্ছ। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীছে ইরশাদ করেছেন-
إذا أَصَابَ أَحَدَكُمْ مُصِيبَةٌ فَلْيَذْكُرْ مُصِبيته بي، فَإِنَّهَا مِنْ أَعْظم المصائب
‘তোমাদের কেউ কোনও মসিবতের সম্মুখীন হলে সে যেন আমার (ওফাত) দ্বারা নিজ মসিবতের কথা স্মরণ করে। কেননা এটা অন্যতম প্রধান মসিবত।
জনৈক ব্যক্তির মুহাম্মাদ নামক পুত্রের ইন্তিকাল হয়ে গেলে তার এক দীনী ভাই তাকে এই বলে সান্ত্বনা দিয়েছিল যে-
اصْبِرْ لِكُلِّ مُلِمَّةٍ وَتَجَلَّدٍ وَاعْلَمْ بِأَنَّ الْمَرْء غَيْرُ مُخَلَّد وَإِذَا ذَكَرْتَ مُحَمَّدًا وَمُصَابَهُ فَاذْكُرْ مُصَابَكَ بِالنَّبِيِّ مُحَمَّدٍ
“যে-কোনও মসিবতে ধৈর্য ধর। শক্ত হও। জেনে রাখো, দুনিয়ায় কোনও মানুষ চিরজীবী হয় না।
যখন তোমার পুত্র মুহাম্মাদ ও তার মৃত্যুর কথা স্মরণ হয়, তখন নবী মুহাম্মাদের বিয়োগ-বেদনা স্মরণ করো।'
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত যখন তাঁর উম্মতের প্রত্যেকের জন্য সর্বাপেক্ষা কঠিন মুসিবত, তখন স্বাভাবিকভাবেই এ মসিবতে ধৈর্যধারণ করার দ্বারা সে আল্লাহ তা'আলার কাছে প্রতিদানও পাবে অনেক বড়। সে হিসেবে তাঁর ওফাত আমাদের জন্য আল্লাহ তা'আলার একটি বড় রহমত। এটা রহমত আরও একদিক থেকে, যা হাদীছটির পরবর্তী অংশ দ্বারা উপলব্ধি করা যায়।
পরবর্তী অংশে জানানো হয়েছে, কোনও উম্মতকে শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্য থাকলে আল্লাহ তা'আলা তাদের নবীকে জীবিত রাখেন এবং তাঁর চোখের সামনেই তাদেরকে আযাব দিয়ে ধ্বংস করে দেন।
আল্লাহ তা'আলা কোনও উম্মতকে পাথরের বৃষ্টি দিয়ে ধ্বংস করেছেন, কোনও উম্মতকে প্রবল ঝড়-বাতাস দিয়ে ধ্বংস করেছেন, কোনও উম্মতকে মহাপ্লাবনে নিমজ্জিত করেছেন, কোনও উম্মতকে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দিয়েছেন, কোনও উম্মতকে শূকর ও বানরে পরিণত করেছেন। এর প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নবীকে জীবিত রেখেছেন এবং তাঁর চোখের সামনেই আযাবের ঘটনা ঘটেছে।
মহান আল্লাহ আমাদের নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তুলে নেওয়ার দ্বারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, আমাদেরকে এরকম শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করা হবে না। সুতরাং এ হিসেবেও তাঁর চলে যাওয়া আমাদের প্রতি আল্লাহ তা'আলার রহমত।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা আমরা আমাদের প্রতি মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত সম্পর্কে ধারণা পাই।
খ. আমরা জানতে পারি এ উম্মতকে আগের যমানার বিভিন্ন উম্মতের মত সমূলে ধ্বংস করে দেওয়া হবে না।
গ. মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগে আগে গিয়ে আমাদের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাই আমাদের কর্তব্য তাঁর সুপারিশলাভ ও তাঁর হাতে হাউযে কাউসারের পানি পান করার আশায় তাঁর সুন্নত ও আদর্শের অনুসরণে অটল-অবিচল থাকা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)