শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ
১. পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়
হাদীস নং: ৪৪
পবিত্রতা অর্জনের অধ্যায়
পানিতে নাপাকী পড়লে কী করণীয়ঃ
৪৪. ইবন খুযায়মা (রাহঃ)...... হাম্মাদ ইব্ন আবু সুলায়মান (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি মুরগীর ব্যাপারে বলেছেন, যা কুয়োয় পড়ে গিয়ে মারা গিয়েছে। তিনি বলেন : চল্লিশ অথবা পঞ্চাশ বালতি পরিমাণ পানি তুলে ফেলতে হবে। তারপর এর থেকে উযূ করবে।
বিশ্লেষণ
বস্তুত এটি সেই সমস্ত রিওয়ায়াত থেকে যা আমরা সাহাবা (রাযিঃ) ও তাবেঈদের থেকে বর্ণনা করেছি। তাঁরা নাজাসাত পতিত হওয়ার দ্বারা কুয়োর পানিকে নাপাক সাব্যস্ত করেছেন, এর (নাজাসাতের) কম ও বেশী হওয়ার প্রতি লক্ষ্য করেন না, বরং লক্ষ্য করেন এর অবস্থান ও স্থিতির প্রতি, তাঁরা এবং প্রবাহমান পানির মধ্যে পার্থক্য করেছেন। অতএব কুয়োয় নাজাসাত পতিত হওয়া সম্পর্কে আমাদের (হানাফী) আলিমগণ পূর্বে উল্লিখিত সেই সমস্ত রিওয়ায়াত যা আমরা রাসূলুল্লাহ্ ই থেকে বর্ণনা করেছি, গ্রহণ করে নিয়েছেন। সুতরাং তাঁদের জন্য সেই সমস্ত রিওয়ায়াতের বিরোধিতা করা বৈধ হবে না, যেহেতু কারো থেকে পরিপন্থী বর্ণনা নেই ।
কেউ যদি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলে যে, তোমরা তো নাজাসাত পতিত হওয়ার কারণে কুয়োর পানিকে মাপাক সাব্যয় করেছ। অতএষ তোমাদের কুয়ো তখনও পাক হবে না। যেহেতু এই অপবিত্র পানি এর দেয়ালে মিশে গিয়েছে এবং তাতে স্থির রয়ে গিয়েছে। সুতরাং (কুয়ো পাক করতে হলে দেখাল ভেঙ্গে ফেলা উচিত।
উত্তরে তাকে বলা হবে তুমি কি দেখতে পাচ্ছ না যে, এই রীতিই প্রচলিত আছে। আব্দুল্লাহ্ ইবন এর সাহাবীগণের উপস্থিতিতে যমযম কুয়োর ব্যাপারে তা-ই করেছেন, যা আমরা উল্লেখ করেছি। এতে তাঁদের কেউ তাঁর প্রতিবাদ করেন নি এবং তাঁদের পরবর্তিগণও তার প্রতিবাদ করেন নি। আর কেউ তা ভেঙ্গে ফেলা বন্ধ করে দেয়া) আবশ্যক মনে করেন না এবং রাসূলুল্লাহ সেই পাত্র তা ধৌত করারই নির্দেশ দিয়েছেন, যা কুকুর মুখ দেয়ার কারণে নাপাক হয়ে গিয়েছে। তিনি তা ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেননি। অথচ তা কিছু না কিছু নাপাক পানি চুষে নিয়েছে। অতএব যেমনিভাবে সেই পাত্র ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়নি, অনুরূপভাবে উক্ত কুয়ো ভেঙ্গে ফেলার (বন্ধ করে দেয়ার) নির্দেশ দেয়া যাবে না।
যদি কেউ কোন প্রশ্ন উত্থাপন করে বলে যে, আমরা দেখতে পাচ্ছি পাত্র তা ধৌত করা হয়, তাহলে কুয়োর ক্ষেত্রে এরূপ করা হয় না কেন ?
উত্তরে তাকে বলা হবে, কুয়া ধৌত করা যায় না। যেহেতু এর যা কিছু ধৌত করা হবে তা তাতেই ফিরে পড়বে। এটি পাত্রের ন্যায় নয় যে যা দ্বারা ধৌত করা হয় তা ভাসিয়ে দেয়া হয়। সুতরাং যখন কুয়া সেই সমস্ত বস্তু থেকে ধৌত করা সম্ভব নয় এবং এর পবিত্রতা কোন না কোন ভাবে প্রমাণিত; যেহেতু যে ব্যক্তি কুয়োয় নাজাসাত পতিত হওয়ার কারণে একে নাপাক সাব্যস্ত করে সে এর পবিত্র হওয়ার জন্য পানি তুলে ফেলা আবশ্যক মনে করে। যদিও এর কাদা (মাটি) বের করা না হয়। অতএব যখন এর কাদা (মাটি) অবশিষ্ট থাকায় পরবর্তীতে আগত পানিকে নাপাক মনে করে না। যদিও পানি ওই কাদার উপর প্রবাহিত হয়, তাহলে এই অবস্থায় দেয়ালসমূহ নাপাক না হওয়াটা অধিকতর যুক্তিযুক্ত। আর যদি বাহ্যিক অর্থের দিকে লক্ষ্য করা হত, তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত এর দেয়ালসমূহ ধৌত করা না হত কাদা (মাটি) বের না করা হত এবং একে খনন করা না হত, কুয়ো পবিত্র হত না। সুতরাং যখন ফকীহ আলিমগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, এর কাদামাটি বের করে ফেলা এবং একে খনন করা আবশ্যক নয়, তাহলে এর দেয়ালসমূহ ধৌত করা ওয়াজিব না হওয়াটা অধিকতর যুক্তিযুক্ত। এটাই ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ), ইমাম আবু ইউসুফ (রাহঃ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রাহঃ)-এর অভিমত (মাযহাব)।
বিশ্লেষণ
বস্তুত এটি সেই সমস্ত রিওয়ায়াত থেকে যা আমরা সাহাবা (রাযিঃ) ও তাবেঈদের থেকে বর্ণনা করেছি। তাঁরা নাজাসাত পতিত হওয়ার দ্বারা কুয়োর পানিকে নাপাক সাব্যস্ত করেছেন, এর (নাজাসাতের) কম ও বেশী হওয়ার প্রতি লক্ষ্য করেন না, বরং লক্ষ্য করেন এর অবস্থান ও স্থিতির প্রতি, তাঁরা এবং প্রবাহমান পানির মধ্যে পার্থক্য করেছেন। অতএব কুয়োয় নাজাসাত পতিত হওয়া সম্পর্কে আমাদের (হানাফী) আলিমগণ পূর্বে উল্লিখিত সেই সমস্ত রিওয়ায়াত যা আমরা রাসূলুল্লাহ্ ই থেকে বর্ণনা করেছি, গ্রহণ করে নিয়েছেন। সুতরাং তাঁদের জন্য সেই সমস্ত রিওয়ায়াতের বিরোধিতা করা বৈধ হবে না, যেহেতু কারো থেকে পরিপন্থী বর্ণনা নেই ।
কেউ যদি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলে যে, তোমরা তো নাজাসাত পতিত হওয়ার কারণে কুয়োর পানিকে মাপাক সাব্যয় করেছ। অতএষ তোমাদের কুয়ো তখনও পাক হবে না। যেহেতু এই অপবিত্র পানি এর দেয়ালে মিশে গিয়েছে এবং তাতে স্থির রয়ে গিয়েছে। সুতরাং (কুয়ো পাক করতে হলে দেখাল ভেঙ্গে ফেলা উচিত।
উত্তরে তাকে বলা হবে তুমি কি দেখতে পাচ্ছ না যে, এই রীতিই প্রচলিত আছে। আব্দুল্লাহ্ ইবন এর সাহাবীগণের উপস্থিতিতে যমযম কুয়োর ব্যাপারে তা-ই করেছেন, যা আমরা উল্লেখ করেছি। এতে তাঁদের কেউ তাঁর প্রতিবাদ করেন নি এবং তাঁদের পরবর্তিগণও তার প্রতিবাদ করেন নি। আর কেউ তা ভেঙ্গে ফেলা বন্ধ করে দেয়া) আবশ্যক মনে করেন না এবং রাসূলুল্লাহ সেই পাত্র তা ধৌত করারই নির্দেশ দিয়েছেন, যা কুকুর মুখ দেয়ার কারণে নাপাক হয়ে গিয়েছে। তিনি তা ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেননি। অথচ তা কিছু না কিছু নাপাক পানি চুষে নিয়েছে। অতএব যেমনিভাবে সেই পাত্র ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়নি, অনুরূপভাবে উক্ত কুয়ো ভেঙ্গে ফেলার (বন্ধ করে দেয়ার) নির্দেশ দেয়া যাবে না।
যদি কেউ কোন প্রশ্ন উত্থাপন করে বলে যে, আমরা দেখতে পাচ্ছি পাত্র তা ধৌত করা হয়, তাহলে কুয়োর ক্ষেত্রে এরূপ করা হয় না কেন ?
উত্তরে তাকে বলা হবে, কুয়া ধৌত করা যায় না। যেহেতু এর যা কিছু ধৌত করা হবে তা তাতেই ফিরে পড়বে। এটি পাত্রের ন্যায় নয় যে যা দ্বারা ধৌত করা হয় তা ভাসিয়ে দেয়া হয়। সুতরাং যখন কুয়া সেই সমস্ত বস্তু থেকে ধৌত করা সম্ভব নয় এবং এর পবিত্রতা কোন না কোন ভাবে প্রমাণিত; যেহেতু যে ব্যক্তি কুয়োয় নাজাসাত পতিত হওয়ার কারণে একে নাপাক সাব্যস্ত করে সে এর পবিত্র হওয়ার জন্য পানি তুলে ফেলা আবশ্যক মনে করে। যদিও এর কাদা (মাটি) বের করা না হয়। অতএব যখন এর কাদা (মাটি) অবশিষ্ট থাকায় পরবর্তীতে আগত পানিকে নাপাক মনে করে না। যদিও পানি ওই কাদার উপর প্রবাহিত হয়, তাহলে এই অবস্থায় দেয়ালসমূহ নাপাক না হওয়াটা অধিকতর যুক্তিযুক্ত। আর যদি বাহ্যিক অর্থের দিকে লক্ষ্য করা হত, তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত এর দেয়ালসমূহ ধৌত করা না হত কাদা (মাটি) বের না করা হত এবং একে খনন করা না হত, কুয়ো পবিত্র হত না। সুতরাং যখন ফকীহ আলিমগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, এর কাদামাটি বের করে ফেলা এবং একে খনন করা আবশ্যক নয়, তাহলে এর দেয়ালসমূহ ধৌত করা ওয়াজিব না হওয়াটা অধিকতর যুক্তিযুক্ত। এটাই ইমাম আবু হানীফা (রাহঃ), ইমাম আবু ইউসুফ (রাহঃ) ও ইমাম মুহাম্মাদ (রাহঃ)-এর অভিমত (মাযহাব)।
كتاب الطهارة
باب الماء يقع فيه النجاسة
44 - وَمَا قَدْ حَدَّثَنَا ابْنُ خُزَيْمَةَ قَالَ: ثنا حَجَّاجٌ قَالَ: ثنا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ حَمَّادِ بْنِ أَبِي سُلَيْمَانَ أَنَّهُ قَالَ فِي دَجَاجَةٍ وَقَعَتْ فِي بِئْرٍ فَمَاتَتْ، قَالَ: «يُنْزَحُ مِنْهَا قَدْرُ أَرْبَعِينَ دَلْوًا أَوْ خَمْسِينَ , ثُمَّ يُتَوَضَّأُ مِنْهَا» . فَهَذَا مَنْ رَوَيْنَا عَنْهُ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَابِعِيهِمْ , قَدْ جَعَلُوا مِيَاهَ الْآبَارِ نَجِسَةً بِوُقُوعِ النَّجَاسَاتِ فِيهَا، وَلَمْ يُرَاعُوا كَثْرَتَهَا وَلَا قِلَّتَهَا , وَرَاعَوْا دَوَامَهَا وَرُكُودَهَا , وَفَرَّقُوا بَيْنَهَا وَبَيْنَ مَا يَجْرِي مِمَّا سِوَاهَا. فَإِلَى هَذِهِ الْآثَارِ مَعَ مَا تَقَدَّمَهَا مِمَّا رَوَيْنَاهُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , ذَهَبَ أَصْحَابُنَا فِي النَّجَاسَاتِ الَّتِي تَقَعُ فِي الْآبَارِ وَلَمْ يَجُزْ لَهُمْ أَنْ يُخَالِفُوهَا؛ لِأَنَّهُ لَمْ يُرْوَ عَنْ أَحَدٍ خِلَافُهَا. فَإِنْ قَالَ قَائِلٌ: فَأَنْتُمْ قَدْ جَعَلْتُمْ مَاءَ الْبِئْرِ نَجِسًا بِوُقُوعِ النَّجَاسَةِ فِيهَا، فَكَانَ يَنْبَغِي أَنْ لَا تَطْهُرَ تِلْكَ الْبِئْرُ أَبَدًا؛ لِأَنَّ حِيطَانَهَا قَدْ تَشَرَّبَتْ ذَلِكَ الْمَاءَ النَّجِسَ , وَاسْتَكَنَّ فِيهَا , فَكَانَ يَنْبَغِي أَنْ تُطَمَّ. قِيلَ لَهُ: لَمْ تُرَ الْعَادَاتُ جَرَتْ عَلَى هَذَا، قَدْ فَعَلَ عَبْدُ اللهِ بْنُ الزُّبَيْرِ مَا ذَكَرْنَا فِي زَمْزَمَ بِحَضْرَةِ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ يُنْكِرُوا ذَلِكَ عَلَيْهِ وَلَا أَنْكَرَهُ مَنْ بَعْدَهُمْ , وَلَا رَأَى أَحَدٌ مِنْهُمْ طَمَّهَا، وَقَدْ أَمَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْإِنَاءِ الَّذِي قَدْ نَجِسَ مِنْ وُلُوغِ الْكَلْبِ فِيهِ أَنْ يُغْسَلَ، وَلَمْ يَأْمُرْ بِأَنْ يُكْسَرَ، وَقَدْ شَرِبَ مِنَ الْمَاءِ النَّجَسِ. فَكَمَا لَمْ يُؤْمَرْ بِكَسْرِ ذَلِكَ الْإِنَاءِ , فَكَذَلِكَ لَا يُؤْمَرُ بِطَمِّ تِلْكَ الْبِئْرِ. فَإِنْ قَالَ قَائِلٌ: فَإِنَّا قَدْ رَأَيْنَا الْإِنَاءَ يُغْسَلُ , فَلِمَ لَا كَانَتِ الْبِئْرُ كَذَلِكَ؟ قِيلَ لَهُ: إِنَّ الْبِئْرَ لَا يُسْتَطَاعُ غَسْلُهَا , لِأَنَّ مَا يُغْسَلُ بِهِ يَرْجِعُ فِيهَا وَلَيْسَتْ كالْإِنَاءِ الَّذِي يُهْرَاقُ مِنْهُ مَا يُغْسَلُ بِهِ. فَلَمَّا كَانَتِ الْبِئْرُ مِمَّا لَا يُسْتَطَاعُ غَسْلُهَا وَقَدْ ثَبَتَ طَهَارَتُهَا فِي حَالٍ مَا، وَكَانَ كُلُّ مَنْ أَوْجَبَ نَجَاسَتَهَا بِوُقُوعِ النَّجَاسَةِ فِيهَا وَقَدْ أَوْجَبَ طَهَارَتَهَا بِنَزَحِهَا وَإِنْ لَمْ يَنْزَحْ مَا فِيهَا مِنْ طِينٍ. فَلَمَّا كَانَ بَقَاءُ طِينِهَا فِيهَا لَا يُوجِبُ نَجَاسَةَ مَا يَطْرَأُ فِيهَا مِنَ الْمَاءِ وَإِنْ كَانَ يَجْرِي عَلَى ذَلِكَ الطِّينِ، كَانَ إِذًا مَا بَيْنَ حِيطَانِهَا أَحْرَى أَنْ لَا يَنْجُسَ , وَلَوْ كَانَ ذَلِكَ مَأْخُوذًا مِنْ طَرِيقِ النَّظَرِ , لَمَا طَهُرَتْ حَتَّى تُغْسَلَ حِيطَانُهَا وَيُخْرَجَ طِينُهَا وَيُحْفَرَ. فَلَمَّا أَجْمَعُوا أَنَّ نَزْحَ طِينِهَا وَحَفْرَهَا غَيْرُ وَاجِبٍ , كَانَ غَسْلُ حِيطَانِهَا أَحْرَى أَنْ لَا يَكُونَ وَاجِبًا. وَهَذَا كُلُّهُ قَوْلُ أَبِي حَنِيفَةَ، وَأَبِي يُوسُفَ , وَمُحَمَّدٍ , رَحِمَهُمُ اللهُ تَعَالَى