শরহু মাআ’নিল আছার- ইমাম ত্বহাবী রহঃ
২. নামাযের অধ্যায়
হাদীস নং: ১৮৮২
নামাযের অধ্যায়
সালাতুল খাওফ-এর বিবরণ
১৮৮২। ইয়াযিদ ইবন সিনান (রাহঃ) ….. সুলায়মান-ইয়াশকুরী (রাহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি জাবির ই-আব্দুল্লাহ্ (রাযিঃ)-কে সালাতুল খাওফে কসর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছেন। অর্থাৎ তা কোন দিন এবং কোথায় অবতীর্ণ হয় ? তিনি বলেন আমরা সিরিয়া থেকে প্রত্যাবর্তনরত কুরায়শী কাফেলাকে আক্রমণ করার নিমিত্ত রওয়ানা হলাম। যখন আমরা নাখল নামক স্থানে উপনীত হলাম তখন কাওম থেকে জনৈক (মুশরিক) ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল, তুমি কি মুহাম্মাদ ? তিনি বললেন হ্যাঁ। সে বল্ল, তুমি কি আমাকে ভয় কর ? তিনি বললেন, না। সে বলল আমার থেকে তোমাকে কে রক্ষা করবে ? তিনি বললেন, তোমার থেকে আমাকে আল্লাহ্ রক্ষা করবেন। রাবী বলেন, তখন লোকটি তরবারী কোষমুক্ত করলে। লোকেরা (সাহাবীগণ) ধমকালেন এবং ভয় প্রদর্শন করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) রওয়ানা হওয়ার ঘোষণা প্রদান করলেন এবং লোকেরা অস্ত্র ধারণ করলেন। তারপর সালাতের ঘোষণা দেয়া হয়। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কাওমের একদলকে নিয়ে সালাত পড়লেন আর অপর দল তাদেরকে প্রহরা দিচ্ছিল। যারা তাঁর সাথে ছিলেন তাদেরকে নিয়ে তিনি দু'রাক'আত সালাত আদায় করলেন এবং সালাম ফিরালেন। এরপর যারা তাঁর সাথে (সালাতে) ছিলেন তারা তাদের পশ্চাতে চলে গেলেন এবং নিজেদের সাথীদের যারা শত্রুর মুকাবেলায় ছিলেন তাদের স্থানে গিয়ে দাঁড়ালেন। আর অপর দল যারা শত্রুর মুকাবেলায় ছিলেন তারা আসলেন এবং তিনি তাদেরকে নিয়ে দু'রাক'আত পড়লেন এবং অপরদল তাদেরকে প্রহরা দিচ্ছিলেন। এরপর তিনি সালাম ফিরালেন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর জন্য হয়েছে চার রাক'আত এবং কাওমের হয়েছে দু'রাক'আত দু'রাক'আত করে। সেই দিনে-ই আল্লাহ্ তা'আলা সালাতে কসর করার বিধান অবতীর্ণ করেন এবং মু'মিনদেরকে অস্ত্রধারণের নির্দেশ প্রদান করেন।
বস্তুত এ হাদীসের দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহ তা'আলা তাঁর প্রতি সালাতে কসরের বিধান অবতীর্ণ করার পূর্বে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাদেরকে নিয়ে সেইদিন চার রাক'আত পড়েছেন। আর সালাতে কসর করা, এর নির্দেশ আল্লাহ্ তা'আলা এর পরে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর উপর সেই দিনের চার রাক'আত ছিলো ফরয। আর যারা তাঁর ইক্তিদা (অনুসরণ) করছিলেন তাদের ফরযও এতে অনুরূপ ছিলো। যেহেতু তাদের সফরে তখন মুকীম অবস্থার বিধানের অনুরূপ ছিলো। আর যখন ঘটনা এরূপ তখন অবধারিত যে উভয় দলের প্রত্যেক দল অবশ্যই দু'রাক'আত দু'রাক'আত করে পূর্ণ করে নিয়েছেন। যেমনিভাবে করা হতো, যদি তারা নিজ নিজ আবাসগৃহে (মুকীম) থাকতেন।
যদি কেউ প্রশ্ন উত্থাপন করে বলে যে, এ হাদীসে ব্যক্ত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) প্রথম দলকে নিয়ে যে দু'রাক'আত পড়েছেন তা শেষ করার পর তিনি সালাত থেকে বের হয়ে গেছেন এবং দ্বিতীয় দল তাঁর সাথে সালাতে শরীক হওয়ার সময় তিনি (দ্বিতীয়বার) পৃথক ও নতুনভাবে সালাত শুরু করেছেন। যেহেতু হাদীসে ব্যক্ত হয়েছেঃ “তারপর তিনি সালাম ফিরিয়েছেন।”
এর উত্তরে তাকে বলা হবে যে, সম্ভবত এখানে উল্লিখিত সালাম দ্বারা তাশাহ্হুদের সালামের অনুরূপ সালাম বুঝানো হয়েছে যা দ্বারা সালাত ভঙ্গ করা উদ্দেশ্য হয় না। (অথবা) এমনও হতে পারে যে, এরূপ সালাম যদ্দ্বারা প্রথম দলকে (শত্রুর মুকাবেলায়) অবস্থান নেয়ার প্রতি সতর্ক করা হয়েছে। আর তখন সালাতে কথা বলা জায়িয ছিলো, সালাতকে তা ভঙ্গ করত না। বস্তুত এ বিষয়ে আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রাযিঃ), আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) ও যায়দ ইবন আরকাম (রাযিঃ) থেকে (হাদীস) বর্ণিত আছে। আমরা তাঁদের প্রত্যেকের বরাতে সেই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণনা করে এসেছি, যেখানে যুল-ইয়াদাঈন -এর হাদীসের কারণসমূহ বর্ণনা করেছি।
জাবির ইবন আব্দুল্লাহ্ (রাযিঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি সালাতুল খাওফ এ মর্মে নয় বরং ভিন্ন মর্মে (এক রাক'আত) পড়েছেন।
বস্তুত এ হাদীসের দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহ তা'আলা তাঁর প্রতি সালাতে কসরের বিধান অবতীর্ণ করার পূর্বে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাদেরকে নিয়ে সেইদিন চার রাক'আত পড়েছেন। আর সালাতে কসর করা, এর নির্দেশ আল্লাহ্ তা'আলা এর পরে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর উপর সেই দিনের চার রাক'আত ছিলো ফরয। আর যারা তাঁর ইক্তিদা (অনুসরণ) করছিলেন তাদের ফরযও এতে অনুরূপ ছিলো। যেহেতু তাদের সফরে তখন মুকীম অবস্থার বিধানের অনুরূপ ছিলো। আর যখন ঘটনা এরূপ তখন অবধারিত যে উভয় দলের প্রত্যেক দল অবশ্যই দু'রাক'আত দু'রাক'আত করে পূর্ণ করে নিয়েছেন। যেমনিভাবে করা হতো, যদি তারা নিজ নিজ আবাসগৃহে (মুকীম) থাকতেন।
যদি কেউ প্রশ্ন উত্থাপন করে বলে যে, এ হাদীসে ব্যক্ত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) প্রথম দলকে নিয়ে যে দু'রাক'আত পড়েছেন তা শেষ করার পর তিনি সালাত থেকে বের হয়ে গেছেন এবং দ্বিতীয় দল তাঁর সাথে সালাতে শরীক হওয়ার সময় তিনি (দ্বিতীয়বার) পৃথক ও নতুনভাবে সালাত শুরু করেছেন। যেহেতু হাদীসে ব্যক্ত হয়েছেঃ “তারপর তিনি সালাম ফিরিয়েছেন।”
এর উত্তরে তাকে বলা হবে যে, সম্ভবত এখানে উল্লিখিত সালাম দ্বারা তাশাহ্হুদের সালামের অনুরূপ সালাম বুঝানো হয়েছে যা দ্বারা সালাত ভঙ্গ করা উদ্দেশ্য হয় না। (অথবা) এমনও হতে পারে যে, এরূপ সালাম যদ্দ্বারা প্রথম দলকে (শত্রুর মুকাবেলায়) অবস্থান নেয়ার প্রতি সতর্ক করা হয়েছে। আর তখন সালাতে কথা বলা জায়িয ছিলো, সালাতকে তা ভঙ্গ করত না। বস্তুত এ বিষয়ে আব্দুল্লাহ্ ইবন মাসউদ (রাযিঃ), আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) ও যায়দ ইবন আরকাম (রাযিঃ) থেকে (হাদীস) বর্ণিত আছে। আমরা তাঁদের প্রত্যেকের বরাতে সেই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণনা করে এসেছি, যেখানে যুল-ইয়াদাঈন -এর হাদীসের কারণসমূহ বর্ণনা করেছি।
জাবির ইবন আব্দুল্লাহ্ (রাযিঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি সালাতুল খাওফ এ মর্মে নয় বরং ভিন্ন মর্মে (এক রাক'আত) পড়েছেন।
كتاب الصلاة
1882 - حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ سِنَانٍ، قَالَ: ثنا مُعَاذُ بْنُ هِشَامٍ، قَالَ: حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ سُلَيْمَانَ الْيَشْكُرِيِّ: أَنَّهُ سَأَلَ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ عَنْ إِقْصَارِ الصَّلَاةِ، فِي الْخَوْفِ أَيُّ يَوْمَ أَنْزَلَ وَأَيْنَ هُوَ قَالَ: انْطَلَقْنَا نَتَلَقَّى عِيرَ قُرَيْشٍ آتِيَةً مِنَ الشَّامِ , حَتَّى إِذَا كُنَّا بِنَخْلٍ , جَاءَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: أَنْتَ مُحَمَّدٌ؟ قَالَ: «نَعَمْ» قَالَ: أَلَا تَخَافُنِي؟ قَالَ: «لَا» قَالَ: فَمَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي؟ قَالَ: «اللهُ يَمْنَعُنِي مِنْكَ» قَالَ: فَسَلَّ السَّيْفَ , قَالَ: فَتَهَدَّدَهُ الْقَوْمُ وَأَوْعَدُوهُ. فَنَادَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالرَّحِيلِ وَأَخَذُوا السِّلَاحَ ثُمَّ نُودِيَ بِالصَّلَاةِ , فَصَلَّى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِطَائِفَةٍ مِنَ الْقَوْمِ , وَطَائِفَةٌ أُخْرَى يَحْرُسُونَهُمْ. فَصَلَّى بِالَّذِينَ يَلُونَهُ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ سَلَّمَ , ثُمَّ تَأَخَّرَ الَّذِينَ يَلُونَهُ عَلَى أَعْقَابِهِمْ فَقَامُوا فِي مَصَافِّ أَصْحَابِهِمْ , وَجَاءَ الْآخَرُونَ فَصَلَّى بِهِمْ رَكْعَتَيْنِ , وَالْآخَرُونَ يَحْرُسُونَهُمْ ثُمَّ سَلَّمَ. فَكَانَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْبَعُ رَكَعَاتٍ , وَلِلْقَوْمِ رَكْعَتَانِ رَكْعَتَانِ. فَفِي يَوْمَئِذٍ أَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ إِقْصَارَ الصَّلَاةِ , وَأَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِأَخْذِ السِّلَاحِ " فَفِي هَذَا الْحَدِيثِ , مَا يَدُلُّ عَلَى أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَّى بِهِمْ أَرْبَعًا يَوْمَئِذٍ , قَبْلَ إِنْزَالِ اللهِ عَلَيْهِ فِي قَصْرِ الصَّلَاةِ مَا أُنْزِلَ عَلَيْهِ , وَأَنَّ قَصْرَ الصَّلَاةِ إِنَّمَا أَمَرَهُ اللهُ تَعَالَى بِهِ بَعْدَ ذَلِكَ. فَكَانَتِ الْأَرْبَعُ يَوْمَئِذٍ مَفْرُوضَةً عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ الْمُؤْتَمُّونَ بِهِ فَرْضُهُمْ أَيْضًا فِيهَا كَذَلِكَ ; لِأَنَّ حُكْمَهُمْ حِينَئِذٍ , كَانَ فِي سَفَرِهِمْ كَحُكْمِهِمْ فِي حَضَرِهِمْ , وَلَا بُدَّ إِذَا كَانَ ذَلِكَ كَذَلِكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ كُلُّ طَائِفَةٍ مِنْ هَاتَيْنِ الطَّائِفَتَيْنِ قَدْ قَضَتْ رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ , كَمَا تَفْعَلُ لَوْ كَانَتْ فِي الْحَضَرِ. فَإِنْ قَالَ قَائِلٌ: فَفِي هَذَا الْحَدِيثِ مَا يَدُلُّ عَلَى خُرُوجِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الصَّلَاةِ بَعْدَ فَرَاغِهِ مِنَ الرَّكْعَتَيْنِ اللَّتَيْنِ صَلَّاهُمَا بِالطَّائِفَةِ الْأُولَى وَاسْتِقْبَالِهِ الصَّلَاةَ فِي وَقْتِ دُخُولِ الطَّائِفَةِ الثَّانِيَةِ مَعَهُ فِيهَا ; لِأَنَّ فِي الْحَدِيثِ «ثُمَّ سَلَّمَ» . [ص:318] قِيلَ لَهُ: قَدْ يُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ ذَلِكَ السَّلَامُ الْمَذْكُورُ فِي هَذَا الْمَوْضِعِ , هُوَ سَلَامُ التَّشَهُّدِ الَّذِي لَا يُرَادُ بِهِ قَطْعُ الصَّلَاةِ. وَيُحْتَمَلُ أَنْ يَكُونَ سَلَامًا أَرَادَ بِهِ إِعْلَامَ الطَّائِفَةِ الْأُولَى بِأَوَانِ انْصِرَافِهَا. وَالْكَلَامُ حِينَئِذٍ مُبَاحٌ لَهُ فِي الصَّلَاةِ غَيْرُ قَاطِعٍ لَهَا عَلَى مَا قَدْ رُوِيَ فِي ذَلِكَ , عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ , وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ , وَعَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ عَلَى مَا قَدْ رَوَيْنَا عَنْ كُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمْ فِي الْبَابِ الَّذِي ذَكَرْنَا فِيهِ وُجُوهَ حَدِيثِ ذِي الْيَدَيْنِ فِي غَيْرِ هَذَا الْمَوْضِعِ مِنْ هَذَا الْكِتَابِ. وَقَدْ رُوِيَ عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ صَلَّاهَا عَلَى غَيْرِ هَذَا الْمَعْنَى