ফিকহুস সুনান ওয়াল আসার

১৪. কুড়ানো দ্রব্য, শিশু ও পলাতক দাসদাসী

হাদীস নং: ১৯৮৪
কুড়ানো দ্রব্য, শিশু ও পলাতক দাসদাসী
যার জন্য যাকাত-সাদকা ভক্ষণ বৈধ নয়, তার জন্য যাকাতের মাল হতে পারে এমন খাদ্য পথ থেকে কুড়িয়ে খাওয়া বৈধ নয়
(১৯৮৪) আনাস ইবন মালিক রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রাস্তায় পতিত একটি খেজুরের পার্শ্ব দিয়ে গমন করেন। তখন তিনি বলেন, এই খেজুরটি যাকাতের খেজুর হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে আমি খেজুরটি খেতাম।
كتاب اللقطة و اللقيط و الإباق
عن أنس بن مالك رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم مر بتمرة بالطريق فقال: لولا أن تكون من الصدقة لأكلتها

হাদীসের ব্যাখ্যা:

সদাকা-যাকাতের মাল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য হালাল ছিল না। কেননা তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উচ্চমর্যাদার পরিপন্থী ছিল। তাঁর জন্য হালাল ছিল হাদিয়া, যা কিনা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে দেওয়া হয়। তাই তিনি হাদিয়া গ্রহণ করতেন, সদাকা ও যাকাত গ্রহণ করতেন না।

মদীনা মুনাউওয়ারায় মূল খাদ্যদ্রব্য ছিল খেজুর। এটাই ছিল মদীনাবাসীদের প্রধান সম্পদ। মদীনাবাসীগণ সাধারণত এর থেকেই সদাকা-যাকাত আদায় করত। তো রাস্তায় কোনও খেজুর পড়ে থাকলে সে ক্ষেত্রে এ সম্ভাবনা থাকে যে, তা হয়তো কারও সদাকা বা যাকাতের খেজুর থেকে পড়ে গেছে। চলার পথে এরূপ কোনও খেজুর চোখে পড়লে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আশঙ্কায় তা খেতেন না যে, তা সদাকা-যাকাতেরও খেজুর হতে পারে, যা তাঁর জন্য খাওয়া জায়েয নয়। বোঝা গেল এ আশঙ্কা না থাকলে তিনি তা খেতেন।

হাদীছটি দ্বারা বোঝা গেল রাস্তাঘাটে যদি সামান্য কোনও মালামাল পাওয়া যায়, যার প্রতি মালিকের বিশেষ আগ্রহ থাকে না এবং তা কেউ নিয়ে গেলে সে আপত্তি করে না, তবে এরূপ মাল তুলে নেওয়া এবং ভোগ করা জায়েয আছে। বরং নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে তুলে নেওয়াই ভালো। হাদীছটি দ্বারা সে ইঙ্গিতই পাওয়া যায়। এ কারণেই কোনও কোনও বর্ণনায় আছে, একবার এক ব্যক্তি রাস্তায় একটি আঙ্গুর পেয়েছিল। সে আঙ্গুরটি তুলে নিয়ে উচ্চ আওয়াজে ডাকাডাকি করছিল যে, এ আঙ্গুরটি কার। হযরত উমর ফারুক রাযি. তাকে চাবুক দিয়ে আঘাত করলেন এবং বললেন, কোনও কোনও পরহেযগারী এমন, যা আল্লাহ পসন্দ করেন না। এ কথা বলে তিনি বোঝাচ্ছিলেন যে, সাধারণত যারা এতটা বাড়াবাড়ি করে, তারা মানুষকে দেখানোর জন্যই তা করে থাকে। যেন বোঝাতে চায়- দেখো আমি কতটা পরহেযগার। আমি অন্যের কোনও কিছুই অনুমতি ছাড়া নিই না, তা যত তুচ্ছ জিনিসই হোক। তুচ্ছ একটা আঙ্গুরের দানা, যা নিয়ে নিলে মালিকের পক্ষ থেকে আপত্তির কোনও প্রশ্নই আসে না, এতে আবার অনুমতি নেওয়ার কী প্রয়োজন? এ ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে যাওয়াটা একটা বাড়াবাড়ি। এরূপ বাড়াবাড়ি ইসলামে পসন্দনীয় নয়। আলোচ্য হাদীছেও দেখা যাচ্ছে অনুমতির কোনও প্রয়োজন মনে করা হয়নি। কেবল সদাকার আশঙ্কা না থাকলেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা খেয়ে ফেলতেন।

প্রকাশ থাকে যে, মদীনার রাস্তায় পড়ে থাকা খেজুর যে সদাকা-যাকাতের হতে পারে, এটা একটা কাছাকাছি পর্যায়ের সন্দেহ। অর্থাৎ এরূপ হওয়াটা খুবই সম্ভব। তাই এ সন্দেহকে গ্রাহ্য করা হয়েছে। পক্ষান্তরে সন্দেহ যদি দূরবর্তী হয়, অর্থাৎ যে বিষয়ের সন্দেহ করা হয় তা স্বাভাবিক না হয় এবং সচরাচর না ঘটে, তবে তা গ্রাহ্য করার কোনও প্রয়োজন নেই। এরূপ সন্দেহকে প্রশ্রয় দেওয়া এক রকম বাড়াবাড়ি। এর থেকে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়। একবার কয়েক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেছিল যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! লোকে আমাদের কাছে গোশত নিয়ে আসে। আমরা জানি না জবাইকালে তাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়েছিল কি না। আমরা তা খাব কি? তিনি বললেন, তোমরা তাতে আল্লাহর নাম নিয়ে খেয়ে ফেলো।(সহীহ বুখারী: ২০৫৭; সুনানে আবু দাউদ: ২৮২৯; সুনানে নাসাঈ: ৪৪৩৬; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা : ২৪৪৩৭: বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা। ১৮৮৮৮; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ২৭৬৯) অর্থাৎ মুসলিম ব্যক্তি জবাই করলে আল্লাহ তা'আলার নাম নেবে এই তো স্বাভাবিক। আল্লাহ তা'আলার নাম নাও নিতে পারে- এটা একটা দূরবর্তী সন্দেহ। এর পেছনে তোমরা পড়ো না। এ ব্যাখ্যা এজন্য করা জরুরি যে, যদি আল্লাহ তা'আলার নাম না নেওয়ার সন্দেহকে গ্রাহ্য করা হয়, তবে তো বলতে হবে পশুটি শরী'আতসম্মতভাবে জবাই হয়নি। ফলে তার গোশত খাওয়া হালাল হবে না। এ অবস্থায় খাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলা না বলার কী ফায়দা? তা সত্ত্বেও যখন বিসমিল্লাহ বলে খেতে বলা হয়েছে, তা দ্বারা বোঝা যায় ওই সন্দেহ মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কোনও খাদ্যদ্রব্য হারাম হওয়ার সন্দেহ থাকলে তা খাওয়া উচিত নয়।

খ. দূরবর্তী সন্দেহকে গ্রাহ্য করতে নেই।

গ. রাস্তাঘাটে পাওয়া বস্তু যদি তুচ্ছ পর্যায়ের হয় এবং সাধারণ রেওয়াজ অনুযায়ী মনে হয় যে, তা নিয়ে নিলে মালিকের পক্ষ থেকে কোনও আপত্তি থাকবে না, তবে তা নিতে কোনও দোষ নেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)