রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং:
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায়: ১
পরিচ্ছেদঃ সমস্ত কাজ ও কথায় এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত যাবতীয় অবস্থায় ইখলাস ও সহীহ নিয়তের গুরুত্ব।
৩। জিহাদ ও নিয়ত সর্বদা বলবৎ থাকবে:

হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, (মক্কা) বিজয়ের পর হিজরত নেই, তবে জিহাদ ও (জিহাদের) নিয়ত আছে। যখন তোমাদেরকে (আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য) বের হতে বলা হবে, তখন তোমরা বের হয়ে পড়ো। – বুখারী ও মুসলিম। (বুখারী হাদীস নং ৩৯০০, মুসলিম হাদীস নং ১৮৬৪)।
হাদীসটির সারমর্ম হলো, মক্কা থেকে এখন আর হিজরতের প্রয়োজন নেই। কারণ এটি ইসলামের আবাসস্থল হয়ে গিয়েছে।
مقدمة الامام النووي
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النَّيَّةِ فِي جَمِيعِ الْأَعْمَالِ وَ الْأَقْوَالِ وَالْأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْخَفِيَّةِ
3 - وعن عائِشةَ رضيَ اللهُ عنها، قَالَتْ: قَالَ النبي - صلى الله عليه وسلم: «لا هِجْرَةَ بَعْدَ الفَتْحِ، وَلَكِنْ جِهَادٌ وَنِيَّةٌ، وَإِذَا اسْتُنْفِرْتُمْ (1) فانْفِرُوا». مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. (2)
وَمَعناهُ: لا هِجْرَةَ مِنْ مَكّةَ لأَنَّهَا صَارَتْ دَارَ إسلاَمٍ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে মক্কা বিজয়ের পর হিজরত করতে নিষেধ করা হয়েছে। হিজরতের হুকুম ছিল মক্কা বিজয়ের আগে। কেননা তখন মক্কায় অবস্থান করে কারও পক্ষে তার ঈমান- আমলের হেফাজত করা সম্ভব ছিল না। মক্কার মুশরিকগণ মু'মিনদের উপর চরম জুলুম- নির্যাতন চালাত। তাদেরকে ইসলাম পরিত্যাগের জন্য বাধ্য করত। এহেন পরিস্থিতিতে দীন ও ঈমান হেফাজতের লক্ষ্যে মু'মিনদের জন্য হিজরত করা ফরয ছিল। হিজরতের ৮ম বছরে মক্কা বিজয় হয়ে গেলে সেই পরিস্থিতি বাকি থাকেনি। এখানকার সকলেই ইসলাম কবুল করে নিয়েছে। প্রত্যেক মু'মিনের পক্ষে জীবন নিরাপদ হয়ে গেছে। ফলে হিজরতেরও প্রয়োজন শেষ হয়ে গেছে। তাই বলা হয়েছে, মক্কা বিজয়ের পর এখান থেকে আর হিজরত নেই। তাই বলে এর দ্বারা হিজরতের বিধান রহিত হয়ে যায়নি। যদি কখনও কোথাও এমন পরিস্থিতি দেখা দেয়, যেখানে বসবাস করে ঈমান-আমলের হেফাজত করা সম্ভব নয়, তখন সেখান থেকে হিজরত করা ফরয হয়ে যাবে। সুতরাং এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-

 لا تنقطِعُ الهجرةُ حتَّى تنقَطعَ التَّوبةُ، ولا تنقطِعُ التَّوبةُ حتَّى تطلعَ الشَّمسُ مِن مغربِها

অর্থ: হিজরত বন্ধ হবে না, যতক্ষণ না তাওবার দরজা বন্ধ হবে আর তাওবার দরজা বন্ধ হবে না, যতক্ষণ না পশ্চিম থেকে সূর্য উদিত হবে।
অতঃপর হাদীছে বলা হয়েছে, জিহাদ ও জিহাদের নিয়ত আছে। অর্থাৎ মক্কাবাসীর জন্য এখন হিজরত নেই বটে, কিন্তু জিহাদ আছে। অর্থাৎ এখন তারা ইসলামের দাওয়াত নিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে এবং যখন প্রয়োজন দেখা দেবে জিহাদ করবে। কার্যত জিহাদের পরিস্থিতি না থাকলে জিহাদের নিয়ত রাখবে।
সাধারণ অবস্থায় জিহাদ ফরযে কিফায়া। অর্থাৎ কখনও কোথাও জিহাদের পরিস্থিতি দেখা দিলে একদল লোকের উপর তাতে যোগদান করা অবশ্যকর্তব্য। প্রয়োজন পরিমাণ লোক যদি তাতে যোগদান না করে, তবে সকলেই জিহাদ তরকের জন্য গুনাহগার হবে।
হাদীছের শেষ বাক্যে ইরশাদ হয়েছে, যখন তোমাদেরকে জিহাদে বের হওয়ার জন্য ডাকা হয়, তখন বের হয়ে পড়ো। অর্থাৎ যখন তোমাদের দায়িত্বশীল ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য তোমাদের প্রতি সাধারণ আহবান জানাবে, তখন তোমরা তার ডাকে সাড়া দিয়ে বের হয়ে পড়বে। এরকম বিশেষ পরিস্থিতিতে জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায়। তখন বিনা ওযরে কারও পক্ষে তা থেকে বিরত থাকা জায়েয নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারাও নিয়তের গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কার্যত জিহাদ না থাকলেও অন্তরে জিহাদের নিয়ত থাকা জরুরি। সে নিয়ত দ্বারাও জিহাদের ছওয়াব হাসিল হবে।
খ. এ হাদীছ প্রমাণ করে, পবিত্র মক্কা আর কখনোই কুফরের দেশে পরিণত হবে না। কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা এখানে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত রাখবেন। আল্লাহ তা'আলা উত্তরোত্তর এর মর্যাদা বৃদ্ধি করুন- আমীন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)