রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

ভূমিকা অধ্যায়

হাদীস নং: ৬৬
ভূমিকা অধ্যায়
অধ্যায় ৫
মুরাকাবা-সর্বাবস্থায় আল্লাহর ধ্যান ও স্মরণ।
৬৬। কে বুদ্ধিমান, কে নির্বোধ:

হযরত আবু ইয়া'লা শাদ্দাদ ইবনে আওস রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যে নিজে নিজের হিসাব নেয় এবং মৃত্যুর পরের (জীবনের) জন্য আমল করে। আর দুর্বল (নির্বোধ) ওই ব্যক্তি, যে নিজেকে ইন্দ্রিয়ের (নফসের) অনুগামী বানায় আবার আল্লাহর কাছে আশা রাখে- তিরমিযী। (হাদীস নং ২৪৫৯)
مقدمة الامام النووي
5 - باب المراقبة
66 - السابع: عن أبي يعلى شداد بن أوس - رضي الله عنه - عن النَّبيّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «الكَيِّسُ مَنْ دَانَ نَفْسَهُ، وَعَمِلَ لِمَا بعدَ المَوتِ، والعَاجِزُ مَنْ أتْبَعَ نَفْسَهُ هَواهَا وَتَمنَّى عَلَى اللهِ». رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن». (1)
قَالَ الترمذي وغيره من العلماء: معنى «دَانَ نَفْسَهُ»: حاسبها.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এটি অত্যন্ত মূল্যবান ও তাৎপর্যপূর্ণ হাদীছ। কে বুদ্ধিমান আর কে নির্বোধ, মানুষ নানাভাবে তা বিবেচনা করে। কিন্তু প্রকৃত বুদ্ধিমান কে? আর কেই বা নির্বোধ? এ হাদীছ বলছে প্রকৃত বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যে নিজে নিজের হিসাব করে। অর্থাৎ অন্যলোকে কী করছে না করছে তার পেছনে না পড়ে নিজ আমলের খতিয়ান নেয় ও আখিরাতের দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনের লাভ-লোকসান হিসাব করে। এ হিসাব হতে পারে দুই রকম। (ক) সময় ও আয়ুর হিসাব এবং (খ) কাজকর্মের হিসাব।

বুদ্ধিমান ব্যক্তি চিন্তা করে ইহজীবন অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী। তারপরে আছে মৃত্যু। তারপর হাশরের ময়দানে হিসাব-নিকাশ এবং তারপর অনন্ত বাসের জান্নাত বা জাহান্নাম। সে মোতাবেক ইহজীবনের সংক্ষিপ্ত সময় এমনভাবে ব্যয় করা উচিত, যাতে মৃত্যুর পরের জীবন সুখের হয় এবং হাশরের হিসাব-নিকাশে উত্তীর্ণ হয়ে অনন্তকালের জান্নাত লাভ করা যায়। অনন্তকালের জান্নাত লাভ করতে হলে সময় নষ্ট করা চলে না। প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগানো উচিত। প্রতিটি সময় এমনভাবে ব্যবহার করা উচিত, যাতে তা দ্বারা পূণ্য সঞ্চয় হয় ও জান্নাত লাভের আশা করা যায়।

বুদ্ধিমান ব্যক্তি চিন্তা করে, ইহজীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর অমূল্য দান। এর সঠিক ব্যবহার করা বান্দা হিসেবে আমার কর্তব্য। তা করতে পারলেই এ দানের শোকর আদায় হবে। সময় বৃথা নষ্ট হলে কিংবা অকাজে ও পাপকাজে নষ্ট হলে তা হবে নিআমতের অকৃতজ্ঞতা। সেজন্য আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে। এক হাদীছে আছে, আল্লাহ তাআলা আয়ু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন, বান্দা তা কোথায় কী কাজে নিঃশেষ করেছে? সে প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে হলে অবশ্যই সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে।
বুদ্ধিমান ব্যক্তি কখনোই তার সময়কে দীর্ঘ মনে করে না। কার কখন মৃত্যু, কেউ জানে না। যে-কোনও সময়ই মৃত্যু এসে হানা দিতে পারে। অতীতের দিনগুলো স্বপ্নের মত চলে গেছে। সামনের দিনগুলো হয়তো এভাবেই যাবে। যখন সময় ফুরিয়ে যাবে, কিছুই করার থাকবে না। যা করার, তা করার সময় এখনই। সুতরাং অবহেলা না করে সে সময় কাজে লাগাতে শুরু করে দেয়।

সে দ্বিতীয়ত হিসাব করে তার কাজের। যে দিনগুলো চলে গেছে তার অর্জন কী? এখনই যদি মৃত্যু হয়ে যায়, তবে সংগে কী নিয়ে যাওয়া হবে? নেওয়ার মত কিছুই চোখে পড়ে না। কাজের কাজ তেমন কিছুই করা হয়নি। আর অবহেলা নয়। এখন কাজের ভেতর দিয়েই চলতে হবে। অতীতে যা করা হয়নি, তার প্রতিকারও করতে হবে এবং বর্তমানে যা করণীয়, তাও করে যেতে হবে। মনে ভয় রাখতে হবে যে, একদিন হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। হিসাব দিতে হবে সময়ের। হিসাব দিতে হবে সবকিছুর।
সেই হিসাব যাতে সহজ হয়, তাই এখনই সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হবে। প্রতিটি কাজ করতে হবে হিসাবের সাথে। হযরত উমর ফারুক রাযি. বলেন-

حَاسِبُوا قَبْلَ أَنْ تُحَاسَبُوا

“একদিন তো তোমার হিসাব নেওয়া হবে। তার আগে নিজেই নিজের হিসাব নাও।”

বুদ্ধিমান ব্যক্তি তার সামনে রাখে শরীআত। লক্ষ করে দেখে তাকে কী করতে বলা হয়েছে এবং কী নিষেধ করা হয়েছে। যা-কিছু করতে বলা হয়েছে তা করতে মনোযোগী হয়। আর যা কিছু থেকে নিষেধ করা হয়েছে তা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। প্রতিটি কাজ ও প্রতিটি কথা শরীআতের মানদণ্ডে বিচার করে দেখে। শরীআতসম্মত হলেই তা করে ও তা বলে, নয়তো তা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকে। কিছুতেই সে নিজ খেয়াল-খুশি অনুযায়ী চলে না। ইন্দ্রিয়পরবশ হয় না। নফসের চাহিদা পূরণ করে না; বরং নফসকে দমন করে রাখে। নফস ও কুপ্রবৃত্তিকে নিজ শাসনে রাখে। মোটকথা, সে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে অধীন করে দেয় শরীআতের। প্রতিদিন ভোরে সংকল্প নেয় শরীআতের সীমানার বাইরে এক কদমও চলবে না। সারাদিনের যাবতীয় কাজকর্মে ও যাবতীয় কথাবার্তায় সেই সংকল্প রক্ষার চেষ্টা করে। তারপর ঘুমের আগে হিসাব নেয়, সেই সংকল্প অনুযায়ী চলা হয়েছে কি না। যতটুকু চলা হয়েছে তার জন্য কৃতজ্ঞতা আদায় করে, আর যা হয়নি তার জন্য অনুতপ্ত হয় এবং তাওবা ও ইস্তিগফার করে। এভাবেই চলে প্রতিদিন। চলে মুরাকাবার সাথে। আল্লাহর ধ্যানের সাথে। আল্লাহর ধ্যান ও স্মরণের সাথেই দিন-রাত যাপন করে। দিনের ব্যস্ততা নির্বাহ করে আল্লাহকে হাজির-নাজির জেনে এবং রাতও কাটায় আল্লাহর স্মরণের সাথে। এভাবে যে চলে, হাদীছের ভাষায় সেই প্রকৃত বুদ্ধিমান। কুরআন মাজীদও এরূপ ব্যক্তিকেই বুদ্ধিমান বলেছে। ইরশাদ হয়েছে-

الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

অর্থ : যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে (সর্বাবস্থায়) আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে (এবং তা লক্ষ্য করে বলে ওঠে) হে আমাদের প্রতিপালক। আপনি এসব উদ্দেশ্যহীনভাবে সৃষ্টি করেননি। আপনি (এমন ফজুল কাজ থেকে) পবিত্র। সুতরাং আপনি আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।

বুদ্ধিমানের দ্বিতীয় পরিচয় দেওয়া হয়েছে, সে কাজ করে মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য। মৃত্যু দ্বারা মানুষের স্থায়ী বিনাশ ও বিলোপ ঘটে না, বরং হয় এক অনন্ত জীবনের সূচনা। সে জীবনের প্রথম ধাপ কবর। কবর মাটির ঘর। পোকা-মাকড়ের জায়গা। সেখানে আছে মুনকার নাকিরের সওয়াল। সঠিক উত্তর দিতে না পারলে আছে নিদারুণ কষ্ট। মাটির সে ঘর হয়ে যাবে সংকীর্ণ। হয়ে যাবে জাহান্নামের টুকরা। সঠিক উত্তর দিতে পারলে কবর প্রশস্ত হয়ে যাবে। হয়ে যাবে জান্নাতের টুকরা। কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত সেখানে থাকতে হবে। কিয়ামতের পর আছে হিসাব-নিকাশের জন্য হাশরের ময়দানের উপস্থিতি। সেখানে হিসাব-নিকাশ হওয়ার পর হয় জান্নাত, নয়তো জাহান্নাম) এই সবটার সাফল্য নির্ভর করে ইহজীবনের কর্মকালের উপর। এখানে কাজকর্ম ভালো না হলে দুর্ভোগ রয়েছে কবরে, হাশরের ময়দানে, তারপর জাহান্নামবাস। কর্মকাণ্ড ভালো হলে কবরেও শান্তি এবং তারপর প্রত্যেক ঘাঁটিতে নিরাপত্তা। সবশেষে জান্নাতের চিরসুখ। যে ব্যক্তি প্রকৃত বুদ্ধিমান, সে নিশ্চয়ই কবর থেকে যে অনন্ত জীবনের সূচনা হবে, দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে তার প্রস্তুতি নেবে। তার যাবতীয় কাজকর্ম হবে সেই চিরস্থায়ী জীবনকে কেন্দ্র করে। সে চিন্তা করবে কেবল সেই জীবনের কথা। কথা বলবে কেবল সেই জীবন সম্পর্কে। সে স্বপ্ন দেখবে কেবল সেই জীবনের। তার অন্তরে থাকবে কেবল সেই জীবনের স্মরণ। বরং সে নিজেকে মৃতদের একজন গণ্য করবে। ভাববে সে কবরের মধ্যেই আছে। কাজেই সে অবহেলায় জীবন কাটাবে না। বর্তমান নিয়ে মেতে থাকবে না। কোনও বুদ্ধিমান পরিণাম ও পরিণতি অবজ্ঞা করে বর্তমান নিয়ে মাতামাতি করে না। বরং ভবিষ্যতের সুখের জন্য বর্তমানের কষ্ট মেনে নেয়। শুভ পরিণামের জন্য অল্পদিনের কষ্ট স্বীকার করে নেয়। সুতরাং যে ব্যক্তি কবরে শান্তি চাবে, হাশরের বিভীষিকায় নিরাপত্তা কামনা করবে, হিসাব-নিকাশে আসানী চাবে এবং জান্নাতের দুরন্ত নি'আমত আশা করবে, নিশ্চয়ই সে ইহজীবনে সেজন্য প্রস্তুতি নেবে। অর্থাৎ শরীআত মোতাবেক জীবনযাপন করবে, তাতে যতই কষ্ট-ক্লেশ হোক না কেন। তার মনের কথা ও মুখের উচ্চারণ হবে কেবল-

اللهم لا عيش إلا عيش الآخرة

“হে আল্লাহ। আখিরাতের জীবন ছাড়া কোনও জীবন নেই”।

তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্বোধের আলামত বলেছেন- সে মনের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী চলে আবার আশা রাখে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন, জান্নাত দেবেন।

বুদ্ধিমানের বিপরীত হচ্ছে বুদ্ধিহীন বা নির্বোধ। আরবীতে নির্বোধকে سفيه বলে। কিন্তু এ হাদীছে তার জন্য عاجز শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, যার অর্থ অক্ষম। যেন বোঝানো হচ্ছে, বুদ্ধিমান ব্যক্তি শক্তিশালী ও সক্ষম আর নির্বোধ ব্যক্তি শক্তিহীন ও অক্ষম। এটাই সত্য। কেননা শারীরিক শক্তিও শক্তি বটে, কিন্তু মানসিক ও ঈমানী শক্তি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মানসিক ও ঈমানী শক্তি দ্বারাই নিজেকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করা যায়, নফস ও কুপ্রবৃত্তির চাহিদা দমন করা যায় এবং যে-কোনও লোভ-লালসার মুখে নিজেকে সংযত রাখা সম্ভব হয়। যে ব্যক্তি মনের খেয়াল-খুশি অনুযায়ী চলে, নফসের সব চাহিদা পূরণ করে ও লোভ-লালসায় গা ভাসিয়ে দেয়, সে কেবল নির্বোধই নয়, অক্ষমও বটে। তার মনে জোর নেই। নেই ঈমানী শক্তি। ফলে তার নফস তাকে কাবু করে রেখেছে। তাকে তার দাস বানিয়ে রেখেছে। তাই সে নফসের গোলামীতে লিপ্ত থাকে। নফস যা চায় তাই করে। এভাবে দু'দিনের আনন্দ-ফুর্তি লুটতে গিয়ে আখিরাতের অনন্ত জীবন ধ্বংস করে দেয়। কতবড়ই না নির্বোধ সে। আখিরাতের অনন্ত জীবনে কোথায় থাকবে সে চিন্তা নেই, তখন কী খাবে তার পরওয়া নেই, কী উপায়ে তার জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ হবে, তার কোনও ভাবনা নেই। সব দৌড়ঝাপ ইহকাল নিয়ে। এখানে বাড়ি বানানো, এখানে সম্পদ কুড়ানো ও এখানকার ভোগ-উপভোগে মাতোয়ারা হওয়াই তার একমাত্র ধ্যান-জ্ঞান। ক্ষণস্থায়ী আনন্দের জন্য চিরস্থায়ী আনন্দ বিসর্জন দেওয়া নির্বুদ্ধিতা নয় তো আর কী? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

الدُّنْيَا دَارُ مَنْ لا دَارَ لَهُ، وَمَال مَنْ لا مَالَ لَهُ، وَلَهَا يَجْمَعُ مَنْ لا عقل له

“দুনিয়া ওই ব্যক্তির বাড়ি, যার (আখিরাতের) বাড়ি নেই। ওই ব্যক্তির সম্পদ, যার (আখিরাতের) সম্পদ নেই। এবং দুনিয়ার জন্য ওই ব্যক্তি সঞ্চয় করে, যার আকল- বুদ্ধি নেই।"

কত বড়ই না নির্বুদ্ধিতার কথা, সে আখিরাতের কোনও প্রস্তুতি নেয় না, চলে মনমত, মনমত চলতে গিয়ে থাকে পাপাচারে লিপ্ত, কখনও অনুশোচনা করে না, করে না তাওবা-ইস্তিগফার, আবার আশা করে আল্লাহ মাফ করে দেবেন এবং তাকে জান্নাত দান করবেন!
হযরত সা'ঈদ ইবন জুবায়র রহ. বলেন, এটা বড়ই আত্মপ্রবঞ্চনা যে, কেউ পাপাচারে লিপ্ত থাকবে আবার আশা করবে আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন।

হাসান বসরী রহ. বলেন, কিছু লোককে মাগফিরাতের আশা উদাসীন করে রেখেছে। উদাসীনতার ভেতর থেকে তারা দুনিয়া হতে বিদায় নেয়। যখন দুনিয়া হতে বিদায় নেয়, তখন তাদের কোনও পুণ্য থাকে না। আবার বলে, আমি আমার প্রতিপালক সম্পর্কে সুধারণা রাখি। তারা মিথ্যুক। যদি তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে তাদের কোনও সুধারণা থাকত, তবে তাঁর জন্য সৎকাজও করত। এ তাদের মিথ্যা আশা। এটা ধোঁকা ও পথভ্রষ্টতা। নির্বোধ লোকই এরূপ ধোঁকা ও পথভ্রষ্টতায় পড়ে থাকে। আল্লাহ তা'আলা হেফাজত করুন।

এ হাদীছে নির্বোধ লোকদের মিথ্যা আশা সম্পর্কে 'তামান্না' শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আরেক হচ্ছে 'রজা’। এটাও আশা। তবে এই আশা প্রশংসনীয়। এর অর্থ হচ্ছে নেককাজ করার পর মনে মনে বলা- আশা করি আল্লাহ তা'আলা আমার এই ক্ষুদ্র আমল কবুল করবেন এবং এতে যে ত্রুটি হয়েছে তা মাফ করবেন। অর্থাৎ যে আশার মূলে নেক আমলের ভিত্তি থাকে, তাকে রজা বলে। এটা প্রশংসনীয় ও কাম্য। কুরআন ও হাদীছে এরূপ আশা করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। আর যে আশার মূলে কোনও ভিত্তি নেই অর্থাৎ তাওবা-ইস্তিগফার ছাড়াই আল্লাহর কাছে মাফ পাওয়ার আশা করা এবং নেককাজ না করেই জান্নাত কামনা করা, এটা হচ্ছে তামান্না। এটা কাম্য নয়। হাদীছে এরই নিন্দা করা হয়েছে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. আল্লাহ তাআলা প্রত্যেককেই কিছু না কিছু বুদ্ধি দিয়েছেন। সেই বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে আমাদের কর্তব্য মনমত না চলে মৃত্যু-পরবর্তী অনন্ত জীবনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা।

খ. অন্যের পেছনে না পড়ে নিজ আমলের হিসাব নেওয়াই প্রকৃত বুদ্ধিমত্তা।

গ. আল্লাহর কাছে মাগফিরাত ও নাজাত লাভের আশায় প্রত্যেকের কর্তব্য তাঁর বিধান মোতাবেক জীবনযাপনে যত্নবান থাকা।

ঘ. আমলে উদাসীন থেকে নাজাত লাভের আশা করা চরম নির্বুদ্ধিতা ও আত্মপ্রবঞ্চনা।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান