রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
২. বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
হাদীস নং: ৬৮৩
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
১ লজ্জাশীলতা, লজ্জাশীলতার ফযীলত এবং এ গুণে গুণান্বিত হওয়ার প্রতি উৎসাহদান
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের লজ্জাশীলতা
হাদীছ নং: ৬৮৩
হযরত আবূ সা'ঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তঃপুরবাসিনী কুমারী মেয়েদের চেয়েও বেশি লজ্জাশীল ছিলেন। তিনি যখন এমন কোনও বিষয় দেখতেন যা তাঁর পসন্দ হতো না, তখন আমরা তাঁর চেহারা দেখে তা বুঝতে পারতাম।-বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী : ৩৫৬২; সহীহ মুসলিম: ২৩০২; মুসনাদে আবূ দাউদ তয়ালিসী: ২৩৩৬; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা ২৫৩৪৬; সহীহ ইবনে হিব্বান ৬৩০৪; মুসনাদুল বাযযার: ৭১২৪; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৯৯১; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৫০৮; শু'আবুল ঈমান : ৭৩৩৬)
হাদীছ নং: ৬৮৩
হযরত আবূ সা'ঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তঃপুরবাসিনী কুমারী মেয়েদের চেয়েও বেশি লজ্জাশীল ছিলেন। তিনি যখন এমন কোনও বিষয় দেখতেন যা তাঁর পসন্দ হতো না, তখন আমরা তাঁর চেহারা দেখে তা বুঝতে পারতাম।-বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী : ৩৫৬২; সহীহ মুসলিম: ২৩০২; মুসনাদে আবূ দাউদ তয়ালিসী: ২৩৩৬; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা ২৫৩৪৬; সহীহ ইবনে হিব্বান ৬৩০৪; মুসনাদুল বাযযার: ৭১২৪; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৯৯১; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৫০৮; শু'আবুল ঈমান : ৭৩৩৬)
كتاب الأدب
باب الحياء وفضله والحث على التخلق به
683 - وعن أَبي سعيدٍ الخدري - رضي الله عنه - قَالَ: كَانَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - أشَدَّ حَيَاءً مِنَ العَذْرَاءِ في خِدْرِهَا، فَإذَا رَأَى شَيْئًا يَكْرَهُهُ عَرَفْنَاهُ في وَجْهِه. متفقٌ عَلَيْهِ. (1) [ص:220]
قَالَ العلماءُ: حَقِيقَةُ الحَيَاءِ خُلُقٌ يَبْعَثُ عَلَى تَرْكِ القَبِيحِ، وَيَمْنَعُ مِنَ التَّقْصِيرِ في حَقِّ ذِي الحَقِّ. وَرَوَيْنَا عَنْ أَبي القاسم الْجُنَيْدِ رَحِمَهُ اللهُ، قَالَ: الحَيَاءُ: رُؤيَةُ الآلاءِ - أيْ النِّعَمِ - ورُؤْيَةُ التَّقْصِيرِ، فَيَتَوَلَّدُ بَيْنَهُمَا حَالَةٌ تُسَمَّى حَيَاءً (2). وَالله أعلم.
قَالَ العلماءُ: حَقِيقَةُ الحَيَاءِ خُلُقٌ يَبْعَثُ عَلَى تَرْكِ القَبِيحِ، وَيَمْنَعُ مِنَ التَّقْصِيرِ في حَقِّ ذِي الحَقِّ. وَرَوَيْنَا عَنْ أَبي القاسم الْجُنَيْدِ رَحِمَهُ اللهُ، قَالَ: الحَيَاءُ: رُؤيَةُ الآلاءِ - أيْ النِّعَمِ - ورُؤْيَةُ التَّقْصِيرِ، فَيَتَوَلَّدُ بَيْنَهُمَا حَالَةٌ تُسَمَّى حَيَاءً (2). وَالله أعلم.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেমন লাজুক ছিলেন তা বোঝানোর জন্য অন্তঃপুরবাসিনী কুমারী নারীর উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ যে নারী বাইরে ঘোরাফেরা করে না, পরপুরুষের সঙ্গে মেলামেশা করে না, সর্বদা নিজ ঘরে পর্দার ভেতর থাকে, সকলেই জানে যে সে অত্যন্ত লজ্জাবতী হয়ে থাকে। এরূপ কুমারী নারীর যখন বিবাহ হয়, তখন ইতঃপূর্বে যাকে সে চিনত না জানত না সেই সদ্যপরিচিত স্বামীর সঙ্গে তার আচরণ কতইনা লজ্জাপূর্ণ হয়ে থাকে। হাদীছটিতে জানানো হয়েছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের লজ্জাশীলতা ছিল এরূপ কুমারী নারীর চেয়েও বেশি।
এর দ্বারা ইঙ্গিত পাওয়া গেল কুমারী নারীর লজ্জাশীলতা একটি স্বভাবগত বিষয়। এ হাদীছে স্বভাবগত এ চরিত্রের প্রশংসা করা হয়েছে। যদি কোনও কুমারী নারীর মধ্যে এ গুণের অভাব দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে তার স্বভাবগুণ বিকৃত হয়ে গেছে। অবাধ মেলামেশা ও বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনে এরূপ বিকৃতি ঘটে থাকে। তাই মুসলিম নারীর খুব সতর্ক থাকা দরকার যাতে তারা অবাধ মেলামেশা করে বা অপসংস্কৃতির প্রভাবে নিজেদের এ মূল্যবান চরিত্রটি হারিয়ে না বসে।
যাহোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত লজ্জাশীল ছিলেন। তিনি যে কত বেশি লজ্জাশীল ছিলেন, বিভিন্ন হাদীছে তার বর্ণনা পাওয়া যায়। কারও আচরণে তিনি কষ্ট পেলে লজ্জাবশত তা প্রকাশ করতে পারতেন না। এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتَ النَّبِيِّ إِلَّا أَنْ يُؤْذَنَ لَكُمْ إِلَى طَعَامٍ غَيْرَ نَاظِرِينَ إِنَاهُ وَلَكِنْ إِذَا دُعِيتُمْ فَادْخُلُوا فَإِذَا طَعِمْتُمْ فَانْتَشِرُوا وَلَا مُسْتَأْنِسِينَ لِحَدِيثٍ إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ يُؤْذِي النَّبِيَّ فَيَسْتَحْيِي مِنْكُمْ
হে মুমিনগণ! নবীর ঘরে (অনুমতি ছাড়া) প্রবেশ করো না। অবশ্য তোমাদেরকে আহার্যের জন্য আসার অনুমতি দেওয়া হলে ভিন্ন কথা। তখন এভাবে আসবে যে, তোমরা তা প্রস্তুত হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকবে না। কিন্তু যখন তোমাদেরকে দাওয়াত করা হয় তখন যাবে। তারপর যখন তোমাদের খাওয়া হয়ে যাবে তখন আপন-আপন পথ ধরবে; কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পড়বে না। বস্তুত তোমাদের এ আচরণ নবীকে কষ্ট দেয়, কিন্তু সে তোমাদেরকে (তা বলতে) সংকোচবোধ করে। (সূরা আহযাব (৩৩), আয়াত ৫৩)
বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা জানা যায়, লজ্জাজনক কোনও বিষয় বলার প্রয়োজন হলে তিনি তা সরাসরি না বলে ইশারা-ইঙ্গিতে বোঝাতেন। তিনি কারও চেহারায় স্থিরদৃষ্টিতে তাকাতেন না। কেউ কোনও ভুল করলে সাধারণত সরাসরি তার নাম নিয়ে সতর্ক করতেন না। বরং সাধারণ উপদেশ আকারে বলতেন, লোকের কী হল যে, তারা এমন এমন করে। নিজে লাজুক ছিলেন বলে অন্যকেও মানুষের সামনে লজ্জা দিতেন না। হাদীসে আছে-
فَإِذَا رَأَى شَيْئًا يَكْرَهُهُ عَرَفْنَاهُ فِي وَجْهِهِ (তিনি যখন এমন কোনও বিষয় দেখতেন যা তাঁর পসন্দ হতো না, তখন আমরা তাঁর চেহারা দেখে তা বুঝতে পারতাম)। অর্থাৎ লজ্জার কারণে তিনি তাঁর সে অপসন্দের কথাটি বলতে পারতেন না। কিন্তু তাঁর চেহারায় তা ফুটে উঠত। কখনও চেহারা রক্তিম হয়ে যেত। কখনও কপালে ভাঁজ পড়ত। এসব দেখে সাহাবায়ে কেরাম বুঝতে পারতেন যে, তিনি বিষয়টা পসন্দ করেননি।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নারীদের বিশেষত কুমারী নারীদের লজ্জাশীলতা তাদের একটি সহজাত গুণ। এ গুণ যাতে কোনওক্রমেই নষ্ট হতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা অতীব জরুরি।
খ. অন্যান্য মহৎ গুণের মতো লজ্জাশীলতার গুণটিও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যে ছিল পরিপূর্ণ মাত্রায়। তাঁর উম্মত হিসেবে আমাদেরও এ গুণে গুণান্বিত থাকতে হবে।
গ. কারও কোনও আচরণ অপসন্দ হলে তা মুখে ব্যক্ত না করে হাবভাব দিয়ে বোঝানো লজ্জাশীলতার পরিচায়ক।
এর দ্বারা ইঙ্গিত পাওয়া গেল কুমারী নারীর লজ্জাশীলতা একটি স্বভাবগত বিষয়। এ হাদীছে স্বভাবগত এ চরিত্রের প্রশংসা করা হয়েছে। যদি কোনও কুমারী নারীর মধ্যে এ গুণের অভাব দেখা যায়, তবে বুঝতে হবে তার স্বভাবগুণ বিকৃত হয়ে গেছে। অবাধ মেলামেশা ও বিজাতীয় সংস্কৃতির আগ্রাসনে এরূপ বিকৃতি ঘটে থাকে। তাই মুসলিম নারীর খুব সতর্ক থাকা দরকার যাতে তারা অবাধ মেলামেশা করে বা অপসংস্কৃতির প্রভাবে নিজেদের এ মূল্যবান চরিত্রটি হারিয়ে না বসে।
যাহোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত লজ্জাশীল ছিলেন। তিনি যে কত বেশি লজ্জাশীল ছিলেন, বিভিন্ন হাদীছে তার বর্ণনা পাওয়া যায়। কারও আচরণে তিনি কষ্ট পেলে লজ্জাবশত তা প্রকাশ করতে পারতেন না। এ বিষয়ে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتَ النَّبِيِّ إِلَّا أَنْ يُؤْذَنَ لَكُمْ إِلَى طَعَامٍ غَيْرَ نَاظِرِينَ إِنَاهُ وَلَكِنْ إِذَا دُعِيتُمْ فَادْخُلُوا فَإِذَا طَعِمْتُمْ فَانْتَشِرُوا وَلَا مُسْتَأْنِسِينَ لِحَدِيثٍ إِنَّ ذَلِكُمْ كَانَ يُؤْذِي النَّبِيَّ فَيَسْتَحْيِي مِنْكُمْ
হে মুমিনগণ! নবীর ঘরে (অনুমতি ছাড়া) প্রবেশ করো না। অবশ্য তোমাদেরকে আহার্যের জন্য আসার অনুমতি দেওয়া হলে ভিন্ন কথা। তখন এভাবে আসবে যে, তোমরা তা প্রস্তুত হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকবে না। কিন্তু যখন তোমাদেরকে দাওয়াত করা হয় তখন যাবে। তারপর যখন তোমাদের খাওয়া হয়ে যাবে তখন আপন-আপন পথ ধরবে; কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পড়বে না। বস্তুত তোমাদের এ আচরণ নবীকে কষ্ট দেয়, কিন্তু সে তোমাদেরকে (তা বলতে) সংকোচবোধ করে। (সূরা আহযাব (৩৩), আয়াত ৫৩)
বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা জানা যায়, লজ্জাজনক কোনও বিষয় বলার প্রয়োজন হলে তিনি তা সরাসরি না বলে ইশারা-ইঙ্গিতে বোঝাতেন। তিনি কারও চেহারায় স্থিরদৃষ্টিতে তাকাতেন না। কেউ কোনও ভুল করলে সাধারণত সরাসরি তার নাম নিয়ে সতর্ক করতেন না। বরং সাধারণ উপদেশ আকারে বলতেন, লোকের কী হল যে, তারা এমন এমন করে। নিজে লাজুক ছিলেন বলে অন্যকেও মানুষের সামনে লজ্জা দিতেন না। হাদীসে আছে-
فَإِذَا رَأَى شَيْئًا يَكْرَهُهُ عَرَفْنَاهُ فِي وَجْهِهِ (তিনি যখন এমন কোনও বিষয় দেখতেন যা তাঁর পসন্দ হতো না, তখন আমরা তাঁর চেহারা দেখে তা বুঝতে পারতাম)। অর্থাৎ লজ্জার কারণে তিনি তাঁর সে অপসন্দের কথাটি বলতে পারতেন না। কিন্তু তাঁর চেহারায় তা ফুটে উঠত। কখনও চেহারা রক্তিম হয়ে যেত। কখনও কপালে ভাঁজ পড়ত। এসব দেখে সাহাবায়ে কেরাম বুঝতে পারতেন যে, তিনি বিষয়টা পসন্দ করেননি।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নারীদের বিশেষত কুমারী নারীদের লজ্জাশীলতা তাদের একটি সহজাত গুণ। এ গুণ যাতে কোনওক্রমেই নষ্ট হতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা অতীব জরুরি।
খ. অন্যান্য মহৎ গুণের মতো লজ্জাশীলতার গুণটিও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মধ্যে ছিল পরিপূর্ণ মাত্রায়। তাঁর উম্মত হিসেবে আমাদেরও এ গুণে গুণান্বিত থাকতে হবে।
গ. কারও কোনও আচরণ অপসন্দ হলে তা মুখে ব্যক্ত না করে হাবভাব দিয়ে বোঝানো লজ্জাশীলতার পরিচায়ক।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)