রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
২. বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
হাদীস নং: ৬৮৫
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
২ গোপন বিষয়ের গোপনীয়তা রক্ষা করা
রাসূলুল্লাহ ﷺ -এর সঙ্গে হযরত হাফসা রাযি.-এর বিবাহ এবং এ প্রসঙ্গে হযরত আবু বকর রাযি. কর্তৃক তাঁর গোপন কথা প্রকাশ না করা
হাদীছ নং: ৬৮৫
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, উমর রাযি.-এর কন্যা হাফসা রাযি. বিধবা হলে তিনি বলেন, আমি উছমান ইবন আফফানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম এবং তার সামনে হাফসাকে তুলে ধরলাম। বললাম, আপনি চাইলে হাফসা বিনত উমরকে আপনার সঙ্গে বিবাহ দিই! তিনি বললেন, আমি এ বিষয়ে ভেবে দেখব। আমি কয়েকদিন অপেক্ষা করলাম। তারপর তিনি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন, বর্তমানে আমার কাছে আমার বিবাহ না করাটাই সঙ্গত মনে হয়েছে। তারপর আমি আবু বকর সিদ্দীকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম এবং তাকে বললাম, আপনি চাইলে হাফসা বিনত উমরকে আপনার সঙ্গে বিবাহ দিই! আবু বকর নীরব থাকলেন। তিনি আমার কথার কোনও উত্তর দিলেন না। এতে আমি উছমানের প্রতি যে কষ্ট পেয়েছিলাম তার চেয়েও বেশি কষ্ট তাঁর প্রতি পেলাম। এভাবে আমার কয়েকদিন কাটল। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাফসাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিলেন। আমি তাঁর সঙ্গেই হাফসাকে বিবাহ দিলাম। তারপর আবূ বকর আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। তিনি বললেন, আপনি যখন হাফসাকে বিবাহ করার জন্য আমার কাছে প্রস্তাব রেখেছিলেন আর আমি আপনাকে তার কোনও উত্তর দিইনি, তখন হয়তো আপনি আমার প্রতি কষ্ট পেয়েছিলেন। আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, আমি যে আপনাকে তার কোনও জবাব দিইনি, তার একমাত্র কারণ ছিল এই যে, আমি জানতে পেরেছিলাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথা আলোচনা করেছেন। আর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনও গোপন কথা প্রকাশ করতে চাচ্ছিলাম না। হাঁ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তাকে বিবাহ করার ইচ্ছা না করতেন, তবে আমি তাকে অবশ্যই গ্রহণ করতাম। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ৪০০৫; সুনানে নাসাঈ ৩২৪৮; মুসনাদে আহমাদ: ৭৪; মুসনাদুল বাযযার: ১১৬; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা: ৭; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪০৩৯; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১৩৭৪৯)
হাদীছ নং: ৬৮৫
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, উমর রাযি.-এর কন্যা হাফসা রাযি. বিধবা হলে তিনি বলেন, আমি উছমান ইবন আফফানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম এবং তার সামনে হাফসাকে তুলে ধরলাম। বললাম, আপনি চাইলে হাফসা বিনত উমরকে আপনার সঙ্গে বিবাহ দিই! তিনি বললেন, আমি এ বিষয়ে ভেবে দেখব। আমি কয়েকদিন অপেক্ষা করলাম। তারপর তিনি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন, বর্তমানে আমার কাছে আমার বিবাহ না করাটাই সঙ্গত মনে হয়েছে। তারপর আমি আবু বকর সিদ্দীকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম এবং তাকে বললাম, আপনি চাইলে হাফসা বিনত উমরকে আপনার সঙ্গে বিবাহ দিই! আবু বকর নীরব থাকলেন। তিনি আমার কথার কোনও উত্তর দিলেন না। এতে আমি উছমানের প্রতি যে কষ্ট পেয়েছিলাম তার চেয়েও বেশি কষ্ট তাঁর প্রতি পেলাম। এভাবে আমার কয়েকদিন কাটল। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাফসাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দিলেন। আমি তাঁর সঙ্গেই হাফসাকে বিবাহ দিলাম। তারপর আবূ বকর আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। তিনি বললেন, আপনি যখন হাফসাকে বিবাহ করার জন্য আমার কাছে প্রস্তাব রেখেছিলেন আর আমি আপনাকে তার কোনও উত্তর দিইনি, তখন হয়তো আপনি আমার প্রতি কষ্ট পেয়েছিলেন। আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, আমি যে আপনাকে তার কোনও জবাব দিইনি, তার একমাত্র কারণ ছিল এই যে, আমি জানতে পেরেছিলাম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কথা আলোচনা করেছেন। আর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনও গোপন কথা প্রকাশ করতে চাচ্ছিলাম না। হাঁ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তাকে বিবাহ করার ইচ্ছা না করতেন, তবে আমি তাকে অবশ্যই গ্রহণ করতাম। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ৪০০৫; সুনানে নাসাঈ ৩২৪৮; মুসনাদে আহমাদ: ৭৪; মুসনাদুল বাযযার: ১১৬; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা: ৭; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৪০৩৯; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১৩৭৪৯)
كتاب الأدب
بابُ حفظ السِّر
685 - وعن عبدِ الله بن عمر رضي الله عنهما: أنَّ عمرَ - رضي الله عنه - حِيْنَ تأيَّمَتْ بِنْتُهُ حَفْصَةُ، قَالَ: لَقِيتُ عُثْمَانَ بْنَ عَفّانَ - رضي الله عنه - فَعَرَضْتُ عَلَيْهِ حَفْصَةَ، فَقُلْتُ: إنْ شِئْتَ أَنْكَحْتُكَ حَفْصَةَ بِنْتَ عُمَرَ؟ قَالَ: سأَنْظُرُ فِي أمْرِي. فَلَبِثْتُ لَيَالِيَ ثُمَّ لَقِيَنِي، فَقَالَ: قَدْ بَدَا لِي أَنْ لاَ أتَزَوَّجَ يَوْمِي هَذَا. فَلَقِيتُ أَبَا بَكْرٍ - رضي الله عنه - فقلتُ: إنْ شِئْتَ أَنْكَحْتُكَ حَفْصَةَ بنْتَ عُمَرَ، فَصَمتَ أَبُو بَكْرٍ - رضي الله عنه - فَلَمْ يَرْجِعْ إلَيَّ شَيْئًا! فَكُنْتُ عَلَيْهِ أَوْجَدَ مِنِّي عَلَى عُثْمَانَ، فَلَبِثَ لَيَالِيَ ثُمَّ خَطَبَهَا النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم - فَأنْكَحْتُهَا إيَّاهُ. فَلَقِيَنِي أَبُو بَكْرٍ، فَقَالَ: لَعَلَّكَ وَجَدْتَ عَلَيَّ حِيْنَ عَرَضْتَ عَلَيَّ حَفْصَةَ فَلَمْ أرْجِعْ إِلَيْكَ شَيْئًا؟ فقلتُ: نَعَمْ، قَالَ: فَإنَّهُ لَمْ يَمْنَعْنِي أَنْ أرْجِعَ إِلَيْك فِيمَا عَرَضْتَ عَلَيَّ إِلاَّ أنِّي كُنْتُ عَلِمْتُ أنَّ النبيَّ - صلى الله عليه وسلم - ذَكَرَهَا، فَلَمْ أكُنْ لأُفْشِيَ سِرَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - وَلَوْ تَرَكَهَا النَّبيُّ - صلى الله عليه وسلم - لَقَبِلْتُهَا. رواه البخاري. (1)
«تَأَيَّمَتْ» أيْ: صَارَتْ بِلاَ زَوْجٍ، وَكَانَ زَوْجُهَا تُوُفِّيَ - رضي الله عنه. «وَجَدْتَ»: غَضِبْتَ.
«تَأَيَّمَتْ» أيْ: صَارَتْ بِلاَ زَوْجٍ، وَكَانَ زَوْجُهَا تُوُفِّيَ - رضي الله عنه. «وَجَدْتَ»: غَضِبْتَ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হযরত হাফসা রাযি.-এর স্বামী হযরত খুনায়স ইবন হুযাফা রাযি.-এর ইন্তিকাল হয়ে গেলে হযরত উমর রাযি. তাঁর পুনর্বিবাহের জন্য চিন্তা করতে থাকেন। প্রথমে তিনি হযরত উছমান রাযি.-এর কাছে প্রস্তাব রাখেন। তারপর হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. -এর কাছে, যেমনটা এ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। তাঁরা কেউ তাঁর প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। এতে তিনি মনে খুব কষ্ট পান। হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-এর প্রতি কষ্টটা একটু বেশিই পান। কারণ হযরত উছমান রাযি. তো তাঁর এখন বিবাহের ইচ্ছা নেই বলে একটা জবাব দিয়েছিলেন। কিন্তু হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. কোনও উত্তরই দেননি। বাহ্যত তিনি তাঁর প্রস্তাবকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছেন বলে মনে হচ্ছিল। এভাবে একজন অভিজাত ব্যক্তির বিবাহের প্রস্তাবকে উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে মনে হলে অন্তরে অনেক বেশি কষ্ট লাগারই কথা, তাও যদি হয় অন্তরঙ্গ ও বিশেষ আস্থাভাজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে। পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই যখন হযরত হাফসা রাযি.-কে বিবাহ করেন, তখন হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. জবাব না দেওয়ার কারণ প্রকাশ করেন। কারণটা হল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই যে হযরত হাফসা রাযি.-কে বিবাহ করবেন, এটা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। যাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বিবাহ করবেন বলে বোঝা যাচ্ছে, তাকে বিবাহ করার প্রস্তাব হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. কীভাবে গ্রহণ করতে পারেন? আবার প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু এ কথা অন্য কারও সামনে স্পষ্ট করেননি, তাই হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-ও তা প্রকাশ করা সমীচীন মনে করছেন না। তাই জবাব না দিয়ে তিনি প্রস্তাবটা এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু হযরত উমর রাযি.-এর তো এসব কথা জানা নেই। ফলে তাঁরও মনে কষ্ট পাওয়া স্বাভাবিক। প্রিয় সাথী ও বন্ধুর মনের এ কষ্ট দূর করা দরকার। সুতরাং যথাসময়ে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এবং রহস্য প্রকাশ করে দিয়ে তাঁর মনের কষ্ট দূর করলেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অন্যের গোপন কোনও কথা জানা থাকলে তা প্রকাশ করা উচিত নয়।
খ. ইসলামে বিধবা বিবাহ দূষণীয় নয়; বরং এর প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কাজেই কারও মেয়ে বা বোন বিধবা হলে যথাশীঘ্র তার পুনর্বিবাহের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
গ. কারও আচরণ অপ্রীতিকর মনে হলে তাতে মনে কষ্ট পাওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়।
ঘ. কারও আচরণে অন্য কেউ কষ্ট পেলে তার উচিত যথাশীঘ্র সে কষ্ট দূর করে দেওয়া।
ঙ. সঠিক পন্থায় বন্ধুকন্যাকে বিবাহ করলে তাতে দোষের কিছু নেই।
চ. কন্যার পিতা সরাসরি যদি যোগ্য পাত্রের কাছে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তা লজ্জার কোনও বিষয় নয়। হযরত শু'আয়ব আলাইহিস সালাম নিজেই তাঁর কন্যাকে বিবাহ করার জন্য হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সামনে প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। কুরআন মাজীদে আছে-
إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أُنْكِحَكَ إِحْدَى ابْنَتَيَّ هَاتَيْنِ
আমি আমার এই দুই মেয়ের একজনকে তোমার সাথে বিবাহ দিতে চাই। (সূরা কাসাস (২৮), আয়াত ২৭)
ছ. বড় কোনও ব্যক্তি কোনও নারীকে বিবাহের আগ্রহ প্রকাশ করলে ছোট'র পক্ষ থেকে তাকে বিবাহের ইচ্ছা প্রকাশ করা সমীচীন নয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অন্যের গোপন কোনও কথা জানা থাকলে তা প্রকাশ করা উচিত নয়।
খ. ইসলামে বিধবা বিবাহ দূষণীয় নয়; বরং এর প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কাজেই কারও মেয়ে বা বোন বিধবা হলে যথাশীঘ্র তার পুনর্বিবাহের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
গ. কারও আচরণ অপ্রীতিকর মনে হলে তাতে মনে কষ্ট পাওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়।
ঘ. কারও আচরণে অন্য কেউ কষ্ট পেলে তার উচিত যথাশীঘ্র সে কষ্ট দূর করে দেওয়া।
ঙ. সঠিক পন্থায় বন্ধুকন্যাকে বিবাহ করলে তাতে দোষের কিছু নেই।
চ. কন্যার পিতা সরাসরি যদি যোগ্য পাত্রের কাছে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তা লজ্জার কোনও বিষয় নয়। হযরত শু'আয়ব আলাইহিস সালাম নিজেই তাঁর কন্যাকে বিবাহ করার জন্য হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সামনে প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। কুরআন মাজীদে আছে-
إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أُنْكِحَكَ إِحْدَى ابْنَتَيَّ هَاتَيْنِ
আমি আমার এই দুই মেয়ের একজনকে তোমার সাথে বিবাহ দিতে চাই। (সূরা কাসাস (২৮), আয়াত ২৭)
ছ. বড় কোনও ব্যক্তি কোনও নারীকে বিবাহের আগ্রহ প্রকাশ করলে ছোট'র পক্ষ থেকে তাকে বিবাহের ইচ্ছা প্রকাশ করা সমীচীন নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)