রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

২. বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়

হাদীস নং: ৭০০
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
৮ ওয়াজ-নসীহত করা ও তাতে মধ্যপন্থা রক্ষা
হযরত মু‘আবিয়া ইবনুল হাকাম রাযি.-কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে শিক্ষাদান করেন
হাদীছ নং: ৭০০

হযরত মু‘আবিয়া ইবনুল হাকাম আস সুলামী রাযি. বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে নামায পড়ছিলাম। হঠাৎ উপস্থিত লোকদের মধ্যে একজন হাঁচি দিল। আমি বললাম, ইয়ারহামুকাল্লাহ (আল্লাহ তোমার প্রতি রহমত করুন)। এতে লোকজন আমার প্রতি তাদের দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। আমি বললাম, কী হল, আমার মা সন্তানহারা হোক! তোমাদের কী হল যে, আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছ? তখন তারা তাদের হাত দিয়ে উরু চাপড়াতে শুরু করল। যখন দেখলাম তারা আমাকে চুপ করাতে চাচ্ছে, অগত্যা আমি চুপ করলাম। অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শেষ করলেন। তাঁর প্রতি আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক। আমি তাঁর আগে ও পরে তাঁর চেয়ে উত্তম শিক্ষাদাতা কোনও শিক্ষক দেখিনি। আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে তিরস্কার করলেন না (অথবা এর অর্থ- তিনি চেহারা কুঞ্চিত করলেন না), মারলেন না এবং মন্দও বললেন না। তিনি বললেন, এই যে নামায, এর ভেতর মানবীয় কোনও কথাবার্তা সঙ্গত নয়; এটা তো তাসবীহ, তাকবীর ও কুরআন পাঠ। অথবা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন বলেছেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি জাহিলী যুগের খুব কাছের (অর্থাৎ আমি সদ্য ইসলাম গ্রহণকারী)। আল্লাহ আমাদের এ অবস্থায় ইসলাম দিয়েছেন যে, আমাদের কিছু লোক গণকদের কাছে যাতায়াত করে। তিনি বললেন, তুমি তাদের কাছে যেয়ো না। আমি বললাম, আমাদের কিছু লোক অশুভ প্রক্ষিণে বিশ্বাস করে। তিনি বললেন, এটা এমন একটা জিনিস, যা তারা তাদের অন্তরে অনুভব করে। তবে তা যেন তাদেরকে (ঈন্সিত কাজে) বাধা না দেয়। -মুসলিম
(সহীহ মুসলিম : ৫৩৭; সুনানে আবু দাউদ: ৯৩০; সুনানে নাসাঈ: ১২১৮; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা : ২৩৫২৪; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৯৪১; সহীহ ইবনে খুযায়মা: ৮৫৯; সহীহ ইবনে হিব্বান: ২২৪৭: বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৩৩৫১)
كتاب الأدب
بابُ الوَعظ والاقتصاد فِيهِ
700 - وعن مُعاوِيَة بن الحكم السُّلَمي - رضي الله عنه - قَالَ: بَيْنَا أنَا أُصَلّي مَعَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - إذْ عَطَسَ رَجُلٌ مِنَ القَوْمِ، فَقُلْتُ: يَرْحَمُكَ اللهُ، فَرَمَانِي القَوْمُ بِأبْصَارِهِمْ! فَقُلْتُ: وَاثُكْلَ أُمِّيَاهُ، مَا شَأنُكُمْ تَنْظُرُونَ إلَيَّ؟! فَجَعَلُوا يَضْرِبُونَ بأيديهم عَلَى أفْخَاذِهِمْ! فَلَمَّا رَأيْتُهُمْ يُصَمِّتُونَنِي لكِنّي سَكَتُّ، فَلَمَّا صَلّى رسول الله - صلى الله عليه وسلم - فَبِأبِي هُوَ وَأُمِّي، مَا رَأيْتُ مُعَلِّمًا قَبْلَهُ وَلاَ بَعْدَهُ أحْسَنَ تَعْلِيمًا مِنْهُ، فَوَاللهِ مَا كَهَرَني، وَلاَ ضَرَبَنِي، وَلاَ شَتَمَنِي. قَالَ: «إنَّ هذِهِ الصَّلاَةَ لاَ يَصْلُحُ فِيهَا شَيْءٌ مِنْ كَلامِ النَّاسِ، إنَّمَا هِيَ التَّسْبِيحُ وَالتَّكْبِيرُ، وَقِراءةُ القُرْآنِ»، أَوْ كَمَا قَالَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم. قلتُ: يَا رسول الله، إنّي حَدِيثُ عَهْدٍ بِجَاهِلِيَّةٍ، وَقَدْ جَاءَ اللهُ بِالإسْلاَمِ، وَإنَّ مِنّا رِجَالًا يَأتُونَ الْكُهّانَ؟ قَالَ: «فَلاَ تَأتِهِمْ» قُلْتُ: وَمِنّا رِجَالٌ يَتَطَيَّرُونَ؟ قَالَ: «ذَاكَ شَيْء يَجِدُونَهُ في صُدُورِهِمْ فَلاَ يَصُدَّنَّهُمْ». رواه مسلم. (1)
«الثُكْلُ» بضم الثاءِ المُثلثة: المُصيبَةُ وَالفَجِيعَةُ. «مَا كَهَرَنِي» أيْ: مَا نَهَرَنِي.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

فَقُلْتُ : يَرْحَمُكَ اللَّهُ ‘আমি বললাম, ইয়ারহামুকাল্লাহ (আল্লাহ তোমার প্রতি রহমত করুন)'। অর্থাৎ মুসল্লীদের একজন হাঁচি দিলে তিনি এ দু'আটি পড়লেন। নিয়ম হল কেউ হাঁচি দিলে সে الْحَمْدُ لِلَّهِ বলবে। যে তা শুনবে, সে يَرْحَمُكَ اللهُ বলে তার জবাব দেবে। এ জবাবকে তাশমীত বলে। এটা ওয়াজিব। যে ব্যক্তি হাঁচি দিয়েছিল সে الْحَمْدُ الله বলেছিল কি না, এ হাদীছে তার উল্লেখ নেই। হতে পারে বলেছিল। আবার নাও বলতে পারে। না বললে সে ক্ষেত্রে তাশমীত করার প্রয়োজন ছিল না। তা সত্ত্বেও হযরত মু'আবিয়া ইবনুল হাকাম রাযি. এটা করলেন। কারণ তাঁর এ নিয়ম জানা ছিল না। তিনি সদ্য ইসলাম গ্রহণকারী একজন সাহাবী। ইসলামের বিধানাবলি সবে শিক্ষা শুরু করেছেন।

فَرَمَانِي الْقَوْمُ بِأَبْصَارِهِم (এতে লোকজন আমার প্রতি তাদের দৃষ্টি নিক্ষেপ করল)। অর্থাৎ তারা তাঁর দিকে আপত্তির দৃষ্টিতে তাকাল। কেননা তিনি যে কাজ করেছেন তাতে নামায বাতিল হয়ে যায়, যদিও তা যিকির ও দু'আ। কেননা তিনি এটা বলেছেন হাঁচিদাতাকে লক্ষ্য করে তার দু'আর জবাবে। সে হিসেবে এটা মানুষের পারস্পরিক কথার মতো হল। এ জাতীয় কথা দ্বারা নামায বাতিল হয়ে যায়। যে ব্যক্তি الْحَمْدُ الله বলেছে, তার নামায বাতিল হয়নি। কারণ সে অন্য কাউকে লক্ষ্য করে তা বলেনি।

فَقُلتُ: واثُكْلَ أُمِّيَاهْ (আমি বললাম, কী হল, হায়রে আমার সন্তানহারা মা)! এর অর্থ কোনও নারী কর্তৃক তার সন্তান হারানো। যে নারীর সন্তান মারা যায় তাকে বলা হয় ثكلى।

واثُكْلَ এর শুরুর 'و' হরফটি শোক প্রকাশক অব্যয় (وَاوُ النُّدْبَةِ)। শোকের আওয়াজকে দরাজ করার জন্য এর সঙ্গে 'ا' (আলিফ) যুক্ত হয়, যেমন এখানে হয়েছে।

أُمِّيَاهْ -এর ভেতর أم (মা) শব্দটি সম্বন্ধযুক্ত হয়েছে 'ي' (আমার) উত্তম পুরুষ সর্বনামের সঙ্গে। অর্থাৎ আমার মা। তারপর আওয়াজ দরাজ করার জন্য 'ي' এর পর 'ا' হরফটি যোগ করা হয়েছে। শেষের 'ه' হরফটি সাকতার জন্য। আলিফের উচ্চারণ সুস্পষ্ট করার জন্য এটা যোগ করা হয়ে থাকে।

এটা আরবদের একটা বাকরীতি। তারা যখন কোনও বিষয়ে শোক, আক্ষেপ বা বিস্ময় প্রকাশ করে কিংবা তিরস্কার করে, তখন এরূপ বাক্য ব্যবহার করে থাকে। মায়ের সন্তানহারা হওয়ার অর্থ বক্তার নিজের মৃত্যু ঘটা। বক্তা যেন বলছে, হায়রে আমার মরণ! বাংলা ভাষায়ও বিস্ময়, তিরস্কার, আক্ষেপ ইত্যাদি ক্ষেত্রে 'হায়রে আমার মরণ' কথাটি ব্যবহৃত হয়। এ হাদীছে এ কথাটি দ্বারা হযরত মু'আবিয়া ইবনুল হাকাম রাযি. মুসল্লীদের প্রতি বিস্ময় প্রকাশ করছেন অথবা তাদেরকে তিরস্কার করছেন যে, তোমরা কেন আমার প্রতি কটাক্ষ করছ। আমি এমন কী করেছি?

فَجَعَلُوْا يَضْرِبُونَ بِأَيْدِيهِمْ عَلَى أَفْخَاذِهِمْ (তখন তারা তাদের হাত দিয়ে উরু চাপরাতে শুরু করল)। অর্থাৎ তারা এ আচরণ দ্বারা হযরত মু'আবিয়া রাযি.-কে চুপ করাতে চাইল। সম্ভবত এটা ওই সময়ের কথা, যখনও পর্যন্ত নামাযের ভেতর কারও দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সুবহানাল্লাহ বলার বিধান দেওয়া হয়নি।

এর দ্বারা প্রমাণ হয়, নামাযের ভেতর 'সামান্য কাজ' করার দ্বারা নামায বাতিল হয় না। প্রয়োজনবশত করা হলে মাকরূহ-ও হয় না।

যাহোক হযরত মু'আবিয়া রাযি. যখন বুঝতে পারলেন তারা তাঁকে চুপ করাতে চাচ্ছে, তখন তিনি চুপ হয়ে গেলেন। তারপর যথারীতি নামায শেষ হল। নামায শেষ হলে তিনি তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করেছেন যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত উত্তম শিক্ষক! কী উত্তমভাবে তিনি তাঁর ভুল সংশোধন করে দিয়েছেন এবং তাঁকে কী মমত্বের সঙ্গে শিক্ষাদান করেছেন! এটা করতে গিয়ে তিনি না তাঁকে মেরেছেন, না তাঁকে ধমকিয়েছেন, না চেহারায় বিরক্তি ভাব প্রকাশ করেছেন। তিনি তাঁকে এই বলে শিক্ষাদান করেছেন যে-
إِنَّ هَذِهِ الصَّلَاةَ لَا يَصْلُحُ فِيْهَا شَيْءٌ مِنْ كَلَامِ النَّاسِ (এই যে নামায, এর ভেতর মানবীয় কোনও কথাবার্তা সঙ্গত নয়)। 'এই যে নামায' বলে ফরয-নফল সব নামাযই বোঝানো হয়েছে। এমনকি যেসকল কাজ নামাযের অংশবিশেষ, তাও এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন জানাযার নামায, তিলাওয়াতের সিজদা ও শোকরের সিজদা। বলা হয়েছে, মানুষ নিজেদের মধ্যে যেসব কথাবার্তা বলে, সেরকমের কোনও কথা নামাযে সঙ্গত নয়। এর দ্বারা স্পষ্টভাবে নামাযে কথা বলাকে হারাম করে দেওয়া হয়েছে। সে কথা ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত। এমনিভাবে সে কথা দ্বারা যদি নামাযের ভুল সংশোধন করাও উদ্দেশ্য হয়। যদি ইমামকে তার ভুলের বিষয়ে সচেতন করা উদ্দেশ্য হয়, তবে পুরুষ মুকতাদী তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) বলবে আর নারী মুকতাদী হাতে তালি বাজাবে।

إِنَّمَا هِيَ التّسْبِيْحُ وَالتَّكْبِيْرُ وَقِرَاءَةُ الْقُرْآنِ (এটা তো তাসবীহ, তাকবীর ও কুরআন পাঠ)। নামাযে তাসবীহ পড়া সুন্নত। তাকবীরে তাহরীমা ফরয। বাকি সব তাকবীর সুন্নত। কুরআন পাঠ করা ফরয। নামাযে এছাড়া আরও আমল আছে। তা এখানে উল্লেখ করা হয়নি। এ তিনটি উল্লেখ করে বোঝানো হয়েছে যে, নামাযে বান্দা কেবল আল্লাহ তা'আলার অভিমুখী হয়েই থাকবে আর সে লক্ষ্যে কেবল যিকিরে রত থাকবে। তাসবীহ, তাকবীর, কুরআন তিলাওয়াত সবই যিকির। এছাড়া আর যা-কিছু পড়া হয় তাও যিকির। যেমন ছানা', রুকূ' থেকে ওঠার দু'আ, তাশাহহুদ, দুরূদ, দু'আ মা'ছুরা, দু'আ কুনূত। একজনের সঙ্গে কথা বলাটা যিকিরের পরিপন্থী কাজ। তাই নামাযে তা জায়েয হতে পারে না।

লক্ষণীয়, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের হাকীকত এবং নামাযে কী করণীয় আর কী করা যাবে না এ কথাটা বোঝানোর জন্য লম্বা-চওড়া কোনও বক্তৃতা দেননি। বরং গভীর মমতার সঙ্গে অল্প কথায় বুঝিয়ে দিয়েছেন। যতটুকু কথা বলা দরকার কেবল ততটুকুই বলেছেন। তার বেশিও নয়, কমও নয়। কাউকে শিক্ষাদান করা বা উপদেশ দেওয়ার এটাই সঠিক পন্থা।

قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ، إِنِّي حَدِيْثُ عَهْد بِجَاهِلِيَّةٍ 'আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি জাহিলী যুগের খুব কাছের (অর্থাৎ আমি সদ্য ইসলাম গ্রহণকারী)'। জাহিলিয়াতের যুগ মানে অজ্ঞতার যুগ। এর দ্বারা ইসলামপূর্ব যুগকে বোঝায়। সে যুগে অজ্ঞতা ছিল সর্বব্যাপী। তাই এ নাম। এ কথার দ্বারা হযরত মু'আবিয়া রাযি.-এর পক্ষ থেকে যেন ওজর দেখানো হল যে, আমি যেহেতু সদ্য ইসলাম গ্রহণ করেছি, তাই ইসলামের বিধানাবলি আমার জানা নেই। আমার জানা ছিল না যে নামাযে কথা বলা হারাম।

وَإِنَّ مِنَّا رِجَالًا يَأْتُوْنَ الْكُهَّانَ (আমাদের কিছু লোক গণকদের কাছে যাতায়াত করে)। اَلْكُهَّانُ শব্দটি كَاهِنٌ এর বহুবচন। এর অর্থ গণক, ভবিষ্যদ্বক্তা, যে-কোনও জিনের মাধ্যমে বা বিভিন্ন আলামত-ইঙ্গিতের দ্বারা ভবিষ্যতের ঘটনাবলি জানে বলে দাবি করে।

আরেক হল عَرَّافٌ (আররাফ)। এটা বলা হয় ওই ব্যক্তিকে, যে চুরি হওয়া বা হারিয়ে যাওয়া মাল কোথায় কী অবস্থায় আছে তা বলতে পারে বলে দাবি করে।

قَالَ: فَلَا تَأْتِهِمْ (তিনি বললেন, তুমি তাদের কাছে যেয়ো না)। এভাবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গণক বা ভবিষ্যদ্বক্তার কাছে যাওয়া হারাম করে দিয়েছেন। এটা হারাম এ কারণে যে, তারা গায়েবী বিষয়ে কথা বলে। আন্দাযে ঢিল ছুঁড়লে যেমন কখনও কখনও লেগে যায়, তেমনি তাদের কথাও কখনও কখনও সত্য হয়ে যায়। বেশিরভাগই মিথ্যা হয়। দু'-চারটি সত্য হওয়ার কারণে লোক তাদের কথা বিশ্বাস করে। এতে করে পারিবারিক ও সামাজিক নানা বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি দেখা দেয়। অনেক সময় মানুষ তাদের কথায় বিশ্বাস করে শরী'আতের বিধান পর্যন্ত অগ্রাহ্য করে আর এভাবে নিজ ঈমান ও আমল বরবাদ করে ফেলে।

জ্যোতিষশাস্ত্রও এ নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত। জ্যোতিষীরাও তাদের মনগড়া অনুমাননির্ভর শাস্ত্রের ভিত্তিতে মানুষকে ভবিষ্যতের সংবাদ দিয়ে থাকে, যা অধিকাংশই মিথ্যা প্রমাণিত হয়। কোনও মুমিন-মুসলিমের তাদের কাছে যাওয়া ও তাদের দিয়ে ভবিষ্যতের কোনও বিষয়ে জানার চেষ্টা করা কিছুতেই উচিত নয়। এটা সম্পূর্ণ হারাম ও জায়েয নয়। তাদের কথা বিশ্বাস করা তো ঈমানেরই পরিপন্থী।

وَمِنَّا رِجَالٌ يَتَطَيَّرُونَ (আমাদের কিছু লোক অশুভ লক্ষণে বিশ্বাস করে) । يَتَطَيَّرُونَ শব্দটির উৎপত্তি الطّيرة থেকে। এর অর্থ কোনওকিছু দ্বারা শুভ-অশুভ নির্ণয় করা। যেমন বিশেষ কোনও পাখি সম্পর্কে মনে করা যে, সেটি ডান দিকে উড়ে গেলে তা শুভতার লক্ষণ। কোনওদিকে যাত্রাকালে এরকম হলে মনে করা হয় যাত্রাটি শুভ হবে। আর যদি বামদিকে উড়ে যায়, তবে যাত্রা নাস্তি। এতে বিশ্বাসীরা সে ক্ষেত্রে যাত্রা স্থগিত রাখে।

قَالَ : ذَاكَ شَيْءٌ يَجِدُونَهُ فِي صُدُورِهِمْ فَلَا يَصُدَّنَّهُمْ তিনি বললেন, এটা এমন একটা জিনিস, যা তারা তাদের অন্তরে অনুভব করে। তবে তা যেন তাদেরকে (ঈপ্সিত কাজে) বাধা না দেয়'। অর্থাৎ এরকম একটা ধারণা প্রচলিত থাকায় তাদের অন্তরে স্বাভাবিকভাবেই এটা এসে যায়। যেসব বিষয়কে তারা অশুভ কিছুর লক্ষণ মনে করে, সেগুলো দেখতে পেলে অযাচিতভাবেই মনের মধ্যে এসে যায় যে, অশুভ কিছু ঘটবে। তো মনের এই অনুভূতি যেহেতু তাদের ইচ্ছার অতীত, অনিচ্ছাকৃতভাবেই তা জন্ম নেয়, তাই এতে কোনও দোষ নেই। দোষ হল সে কারণে কাজ থেকে বিরত থাকা, যেমন যাত্রা মুলতবি রাখা। কেননা কাজ করা বা না করাটা মানুষের ইচ্ছায় হয়ে থাকে। এখন কেউ যদি তাদের ধারণা অনুযায়ী অশুভ কোনও লক্ষণের ভিত্তিতে কোনও কাজ করা হতে বিরত থাকে, তবে সে যেন আল্লাহর ইচ্ছা ও তাকদীরের উপর ওই ভিত্তিহীন অশুভ লক্ষণকে প্রাধান্য দিল। যেন তার বিশ্বাস ওই অশুভ লক্ষণেরও কোনও ক্ষমতা আছে। এটা সম্পূর্ণ জাহেলী ধারণা ও ঈমানবিরোধী বিশ্বাস। শয়তানই মানুষের অন্তরে এ প্ররোচনা যোগায়। কাজেই এ ধারণাকে কর্মে পরিণত করা হতে বিরত থাকা অবশ্যকর্তব্য।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কেউ হাঁচি দিলে সে اَلْحَمْدُ لِلَّهِ বলবে। যে তা শুনবে, সে يَرْحَمُكَ اللهُ বলে তার জবাব দেবে।

খ. নামাযে কোনও কথা বলা জায়েয নয়। এমনকি হাঁচিদাতার اَلْحَمْدُ لِلَّهِ বলার জবাবে يَرْحَمُكَ اللهُ বলাও নিষেধ।

গ. শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষককে মমত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে। নিতান্ত প্রয়োজন না হলে শিক্ষার্থীর উপর রাগ প্রকাশ করবে না।

ঘ. গণক, জ্যোতিষী ও ভবিষ্যদ্বক্তার কাছে যাওয়া সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয।

ঙ. কোনও অশুভ লক্ষণের ভিত্তিতে কোনও কাজ থেকে বিরত থাকা ইসলামসম্মত নয়।

চ. শিক্ষাদান বা ওয়াজ-নসীহতে বক্তব্য হওয়া উচিত পরিমিত। এমন সংক্ষেপ যাতে না হয়, যদ্দরুন বিষয়বস্তু অস্পষ্ট থেকে যায়। আবার এমন দীর্ঘ করাও উচিত নয়, যদ্দরুন শিক্ষার্থী ও শ্রোতা বিরক্তি বোধ করে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)