রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

২. বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়

হাদীস নং: ৭০৭
বিবিধ আদব - শিষ্টাচারের অধ্যায়
(ভবিষ্যৎ) কল্যাণের জন্য সুসংবাদ দেওয়া এবং প্রাপ্ত কল্যাণের জন্য অভিনন্দন জানানো

মানুষকে ভবিষ্যৎকালীন কল্যাণের জন্য সুসংবাদ দেওয়া এবং কেউ কোনও কল্যাণ লাভ করে থাকলে সেজন্য তাকে অভিনন্দন জানানো মুস্তাহাব। এটা পার্থিব বিষয়েও হতে পারে এবং পরকালীন বিষয়েও হতে পারে। পার্থিব ভবিষ্যৎকালীন কল্যাণের জন্য সুসংবাদ দেওয়ার উদাহরণ হল- কেউ অসুস্থ হলে তাকে এই বলে প্রবোধ দেওয়া যে, তুমি চিন্তা করো না। ইনশাআল্লাহ অচিরেই তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। কেউ কোনও বিপদে পড়লে এই বলে সান্ত্বনা দেওয়া যে, তুমি ধৈর্য ধরো। এ বিপদ বেশি দিন স্থায়ী হবে না। আল্লাহ তা'আলার রহমতে তুমি শীঘ্রই এর থেকে মুক্তি পাবে। আল্লাহ তা'আলা ধৈর্য ধারণকারীকে সাহায্য করে থাকেন।
পার্থিব যে-কোনও দুঃখ-কষ্ট ও বালা-মসিবতে এভাবে প্রবোধ দেওয়া ও আশুমুক্তির সুসংবাদ জানানো একটি প্রশংসনীয় কাজ। নবী-রাসূল ও আল্লাহওয়ালাদেরকে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে এ জাতীয় সুসংবাদ জানানোর দৃষ্টান্ত বহু আছে। যেমন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছিল যে, তাঁর ঔরসে হযরত ইসমা'ঈল ও ইসহাক আলাইহিমাস সালাম জন্মগ্রহণ করবেন এবং তাঁর পরে পৌত্র হযরত ইয়া'কূব আলাইহিস সালামের জন্ম হবে। হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালামকে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছিল যে, ইয়াহইয়া নামে তাঁর এক পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করবে। হযরত মারয়াম আলাইহাস সালামকে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছিল যে, কুমারী অবস্থায়ই তিনি এক পুত্রসন্তানের জন্মদান করবেন, যার নাম হবে ঈসা। কোনও সাহাবী অসুস্থ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে যেতেন এবং এই বলে সান্ত্বনা দিতেন যে- لَا بَأْسَ طَهُوْرٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ (চিন্তা করো না। ইনশাআল্লাহ তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। অথবা এর অর্থ- এ রোগে কোনও ক্ষতি নেই। ইনশাআল্লাহ এটা তোমার পাপমুক্তির কারণ হবে)।
অসুস্থ ব্যক্তি অনেক সময় হতাশাগ্রস্ত হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এটা তার আরোগ্যলাভকে বাধাগ্রস্ত করে। সুসংবাদ জানানোর দ্বারা সে মানসিক শক্তি পায়। তার অন্তরে আশার সঞ্চার হয়। বিপন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রেও একই কথা। তাই এরূপ ব্যক্তিকে যথাশীঘ্র সুসংবাদ জানানো চাই। সুসংবাদ তাকে সাহস যোগাবে। তাকে উদ্দীপিত করবে। সে মনোবল হারাবে না। ভেঙে পড়বে না।
পরকালীন কল্যাণের সুসংবাদদানের উদাহরণ হল- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বহু সাহাবীকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। নেককার ব্যক্তির মৃত্যুকালে ফিরিশতাগণ জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে থাকে। কেউ অসুস্থ হলে অথবা কোনও বিপদে পড়লে এই বলে প্রবোধ দেওয়া যে, ধৈর্য ধরো। এর বিনিময়ে তুমি আখিরাতে পুরস্কৃত হবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন, যার দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেওয়া হয়, সে যদি সবর করে, তবে এর বিনিময়ে আখিরাতে জান্নাত লাভ করবে। পরকালের পুরস্কারলাভই মুমিন ব্যক্তির আসল কাম্যবস্তু। তাই তার জন্য যে-কোনও বিপদে ধৈর্যধারণ করার পক্ষে পরকালীন পুরস্কারের সুসংবাদদান অনেক বেশি সহায়ক হয়ে থাকে।
পার্থিব কল্যাণলাভের কারণে অভিনন্দন জানানোর উদাহরণ হল বিবাহের পর বর-কনেকে অভিনন্দন জানানো, সন্তান জন্মের পর পিতা-মাতাকে অভিনন্দন জানানো, পরীক্ষায় উত্তমরূপে উত্তীর্ণ হওয়ার কারণে অভিনন্দন জানানো, ব্যবসায়ে সাফল্যলাভের জন্য অভিনন্দন জানানো, কোনও অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থতা লাভ করলে সেজন্য তাকে অভিনন্দন জানানো ও আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায় করা ইত্যাদি।
দীনী কল্যাণলাভের কারণে সাধারণত অভিনন্দন জানানোর রেওয়াজ নেই। অথচ এটা আরও বেশি জরুরি। যেমন কেউ কুরআন মাজীদের হাফেজ হলে, ইলমে দীন হাসিল করে যথারীতি আলেম হয়ে গেলে, কোনও অমুসলিম ইসলাম গ্রহণের তাওফীক লাভ করলে, কোনও বেনামাযী নামায শুরু করলে, কেউ হজ্জ করে দেশে ফিরে আসলে, এমনিভাবে যে-কোনও দীনী নি'আমত যদি কেউ হাসিল করে, তবে সেজন্য তাকে অভিনন্দন জানানো চাই।
সুসংবাদ ও অভিনন্দন জানানো মানুষের দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জীবনের পক্ষে কল্যাণকর। এর কল্যাণ বহুবিধ। সবচে' গুরুত্বপূর্ণ কথা হল এর দ্বারা মানুষের মধ্যে মহব্বত ও ভালোবাসার সৃষ্টি হয়। সুসংবাদপ্রাপ্ত ব্যক্তি সুসংবাদদাতাকে এবং অভিনন্দিত ব্যক্তি অভিনন্দনদাতাকে তার বড় আপন মনে হয়। তার প্রতি তার অন্তরে কোনও হিংসা-বিদ্বেষ থাকলে তা এর মাধ্যমে দূর হয়ে যায়। কাজেই কাউকে আপন করে নেওয়ার জন্য সুসংবাদ ও অভিনন্দন জানানোটা অনেক বড় একটি উপায়। আমাদের সকলেরই উচিত এ উপায় অবলম্বন করা। কেননা পরস্পরের মধ্যে মহব্বত ও ভালোবাসার সম্পর্ক রাখাটা অতীব জরুরি। এটা ঈমানের দাবি এবং জান্নাতলাভের উপায়। আমাদের ইসলাম পারস্পরিক মহব্বত ও ভালোবাসার সম্পর্ক রাখার প্রতি নানাভাবে উৎসাহদান করেছে এবং তার বিভিন্ন উপায়ও বাতলে দিয়েছে। সুসংবাদদান ও অভিনন্দন জানানোটাও তার অন্তর্ভুক্ত। এ সম্পর্কে কুরআন মাজীদে প্রচুর আয়াত রয়েছে। আছে বহু হাদীছও। এ পরিচ্ছেদের আয়াত ও হাদীছসমূহ সে সম্পর্কেই।


‘(ভবিষ্যৎ) কল্যাণের জন্য সুসংবাদ দেওয়া…’ সম্পর্কিত কিছু আয়াত

এক নং আয়াত
فَبَشِّرْ عِبَادِ (17) الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ
অর্থ: সুতরাং আমার সেই বান্দাদেরকে সুসংবাদ শোনাও। যারা কথা শোনে মনোযোগ দিয়ে, অতঃপর তার মধ্যে যা-কিছু উত্তম তার অনুসরণ করে।’(সূরা যুমার (৩৯), আয়াত ১৭-১৮)

ব্যাখ্যা
এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দাদেরকে সুসংবাদ শোনাতে বলেছেন। এ হুকুম নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। তিনি আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা ছিলেন। তাঁকে বলা হয়েছে-

فَبَشِّرْ عِبَادِ (সুসংবাদ শোনাও আমার বান্দাদেরকে)। এটা আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে এক প্রিয় সম্ভাষণ। ‘মানুষ’ না বলে বলেছেন ‘আমার বান্দা’। আল্লাহর বান্দা হওয়াটাই মানুষের জন্য সর্বোচ্চ মর্যাদাকর বিষয়। বোঝানো হচ্ছে, সুসংবাদ পাওয়ার উপযুক্ত যে-কোনও মানুষ নয়। বরং সেইসকল মানুষ, যারা আল্লাহ তা'আলার বান্দা হতে পেরেছে, তাঁর বান্দা হওয়ার মতো মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছতে পেরেছে। তাদেরকে কিসের সুসংবাদ দেওয়া হবে? আয়াতে তা উল্লেখ করা হয়নি। তা অনুল্লেখ রাখার দ্বারা ব্যাপকতা বোঝানো উদ্দেশ্য। আরবী ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী কর্মপদ অনুল্লেখ রাখার দ্বারা ব্যাপকতা বোঝানো উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। সে হিসেবে অর্থ হবে, সুসংবাদ শোনাও সর্বপ্রকার কল্যাণের। পার্থিব কল্যাণেরও এবং পরকালীন কল্যাণেরও।
সে সুসংবাদলাভের উপযুক্ত বান্দা হওয়ার জন্য যে বিশেষত্ব দরকার, আয়াতে সে নির্দেশনাও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে-
الَّذِينَ يَسْتَمِعُونَ الْقَوْلَ (যারা কথা শোনে মনোযোগ দিয়ে)। কেবল শোনে না; বরং মনোযোগ দিয়ে শোনে। কী মনোযোগ দিয়ে শোনে? বলা হয়েছে কথা শোনে। الْقَوْلَ এর অর্থ কথা, বাণী। কোন কথা বা কোন বাণী? নিশ্চয়ই যে-কোনও কথা শোনার কথা বলা হয়নি। সব কথা শোনা যায় না। শোনা উচিতও নয়। কুরআন ও হাদীছে সাধারণভাবে যে-কোনও কথা শুনতে নিষেধ করা হয়েছে। তাহলে এটা কোন কথা, যা মনোযোগ দিয়ে শুনতে বলা হয়েছে? হাঁ, এ কথা হল কুরআন, আল্লাহর বাণী। কথার মতো কথা তো কেবল কুরআনই। যে কথা পরম সত্য। পরম কল্যাণকর। যাতে কোনও সন্দেহ নেই। যার অনুসরণ সর্ববিধ কল্যাণের কারণ। এমন কথা কুরআন ছাড়া আর কী আছে? কাজেই সাধারণভাবে যদি কথা বা বাণী শব্দ ব্যবহার করা হয়, তবে তা দ্বারা কেবল কুরআনকেই তো বুঝতে হবে বা কেবল কুরআনকেই তো বোঝা যেতে পারে। এর বিপরীতে আর কোনও কথা যেন কথাই নয়। আর কারও বাণী যেন বাণীই নয়। তাই এখানে কুরআন শব্দ ব্যবহার করা হয়নি। বরং الْقَوْلُ বা কথা শব্দের ব্যবহারকেই যথেষ্ট মনে করা হয়েছে। কেননা যারা আল্লাহর বান্দা, তারা এ সত্য সম্পর্কে অনবহিত নয় যে, সত্যিকারের কথা কেবল কুরআনই। আর পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে যদি কোনও কথা শুনতে হয়, তা তো কেবল কুরআনেরই কথা।
তা কুরআনের কথা কেন শুনতে হবে? আল্লাহর বান্দাগণ কেন তা মনোযোগ দিয়ে শোনে? আয়াতের পরবর্তী অংশে রয়েছে তার উত্তর। বলা হয়েছে-
فَيَتَّبِعُونَ أَحْسَنَهُ (অতঃপর তার মধ্যে যা-কিছু উত্তম তার অনুসরণ করে)। অর্থাৎ পূর্ণ কুরআনের অনুসরণ করে। এমন নয় যে, তার আংশিক মানল আংশিক মানল না। বস্তুত কুরআনের যাবতীয় কথাই উত্তম। পূর্ণ কুরআন সর্বোত্তম কথা। যেমন ইরশাদ-
اللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ الْحَدِيثِ كِتَابًا مُتَشَابِهًا مَثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ الَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ ذَلِكَ هُدَى اللَّهِ
‘আল্লাহ নাযিল করেছেন সর্বোত্তম বাণী। এমন এক কিতাব, যার বিষয়বস্তুসমূহ পরস্পর সুসমঞ্জস, (যার বক্তব্যসমূহ) পুনরাবৃত্তিকৃত, যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, এর দ্বারা তাদের শরীর রোমাঞ্চিত হয়। তারপর তাদের দেহমন বিগলিত হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে। এটা আল্লাহর হিদায়াত।'(সূরা যুমার (৩৯), আয়াত ২৩)

আয়াতটির শিক্ষা
ক. যে ব্যক্তি ভালো কিছু করে, তাকে তার সে ভালো কাজের সুফল সম্পর্কে সুসংবাদ শোনানো চাই।
খ. মানুষের জন্য আল্লাহর বান্দা হতে পারাটাই প্রকৃত মর্যাদা।
গ. কুরআন মাজীদ শুনতে হবে পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে।
ঘ. কুরআন মাজীদ সর্বোত্তম বাণী। এর প্রতিটি কথা অনুসরণীয়।

দুই নং আয়াত
يُبَشِّرُهُمْ رَبُّهُمْ بِرَحْمَةٍ مِنْهُ وَرِضْوَانٍ وَجَنَّاتٍ لَهُمْ فِيهَا نَعِيمٌ مُقِيمٌ (21)
অর্থ: তাদের প্রতিপালক তাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে রহমত, সন্তুষ্টি ও এমন উদ্যানসমূহের সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার ভেতর তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী নি‘আমত।(সূরা তাওবা (৯), আয়াত ২১)

ব্যাখ্যা
এটি সূরা তাওবার ২১ নং আয়াত। এর আগের আয়াতে ঈমান, হিজরত ও জিহাদ সম্পর্কে জানানো হয়েছে যে, এ তিনটি গুণ যাদের মধ্যে আছে তারাই আল্লাহ তা'আলার কাছে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী এবং তারাই সফলকাম। তারপর এ আয়াতে তাদেরকে তিনটি সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। তারা আল্লাহ তা'আলার বিশেষ রহমতের অধিকারী হবে। তারা আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভ করবে। তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী সুখ-শান্তির জান্নাত। সুতরাং যারা আল্লাহ তা'আলার বিশেষ রহমত, তাঁর সন্তুষ্টি ও জান্নাতলাভের প্রত্যাশী, তাদের কর্তব্য যেসকল বিষয়ে ঈমান ও বিশ্বাস রাখা জরুরি, তার প্রত্যেকটিতে খাঁটিমনে ঈমান আনা, নিজ ঈমানের হেফাজত করা এবং সেজন্য প্রয়োজন হলে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান পরিত্যাগ করে যেখানে গেলে ঈমান রক্ষা হবে সেখানে চলে যাওয়া, বিশেষত আল্লাহর অপসন্দনীয় যাবতীয় বিষয় পরিত্যাগ করে আল্লাহর পসন্দনীয় বিষয়সমূহের প্রতি ধাবিত হওয়া এবং আল্লাহর পথে নিজ জান-মাল দিয়ে সংগ্রাম করা, বিশেষত জিন্ন শয়তান, মানব শয়তান ও নফসের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্ন সাধনা ও সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া।

তিন নং আয়াত
وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ (30)
অর্থ: আর আনন্দিত হয়ে যাও সেই জান্নাতের জন্য, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেওয়া হত।(সূরা হা-মীম সাজদা (৪১), আয়াত ৩০)

ব্যাখ্যা
অর্থাৎ মুমিন বান্দাদের মৃত্যুকালে একদল ফিরিশতা অবতীর্ণ হয়। তারা মৃত্যুপথযাত্রীকে জান্নাতের সুসংবাদ শোনায়। যাতে তারা মৃত্যুর জন্য আতঙ্কিত না হয়। বরং জান্নাতে যাওয়ার আনন্দে মৃত্যুকে সহজভাবে বরণ করে নেয়। কারও কারও মতে এ সুসংবাদ শোনানো হবে সেই সময়, যখন মুমিন বান্দাকে তার কবর থেকে উঠানো হবে। দুনিয়ায় যে দুই ফিরিশতা সর্বদা তার সঙ্গে থাকে, তখন সেই দুই ফিরিশতা তার সঙ্গে মিলিত হবে। তারা তাকে বলবে, তুমি ভয় করো না। চিন্তিত হয়ো না। দুনিয়ায় তোমাকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, সেই জান্নাতে পৌছানোর জন্য তোমাকে কবর থেকে উঠানো হয়েছে। সুতরাং তুমি আনন্দিত হও। এভাবে আল্লাহ তা'আলা তখন তাকে ভয়-ভীতি থেকে নিরাপত্তা দান করবেন।

চার নং আয়াত
فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلَامٍ حَلِيمٍ (101)
অর্থ: সুতরাং আমি তাকে এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম।(সূরা আস-সাফফাত (৩৭), আয়াত ১০১)

ব্যাখ্যা
এর আগের আয়াতে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দু'আ উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি বলেছিলেন, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে এক সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন। আল্লাহ তা'আলা তাঁর সে দু'আ কবুল করেছেন এবং সুসংবাদ শুনিয়েছেন যে, এক সহনশীল পুত্রসন্তান তাঁকে দান করবেন। এ আয়াতে সেই সুসংবাদই উল্লেখ করা হয়েছে। সে পুত্র হলেন হযরত ইসমা'ঈল আলাইহিস সালাম। আয়াতে তাঁর বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে যে, তিনি হবে সহনশীল। হযরত ইসমা'ঈল আলাইহিস সালাম যে কত বড় সহনশীল ছিলেন, তা কুরবানীর ঘটনাই প্রমাণ করে। হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন তাঁকে জবাই করা সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলার হুকুম তাঁকে শুনিয়েছিলেন, তখন তিনি শান্তভাবে উত্তর দিয়েছিলেন-
يَاأَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُ سَتَجِدُنِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ مِنَ الصَّابِرِينَ (102)
‘আব্বাজী! আপনাকে যার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে আপনি সেটাই করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে সবরকারীদের একজন পাবেন।’(সূরা আস-সাফফাত (৩৭) আয়াত)

পাঁচ নং আয়াত
وَلَقَدْ جَاءَتْ رُسُلُنَا إِبْرَاهِيمَ بِالْبُشْرَى
অর্থ: আর আমার দূতগণ ইবরাহীমের কাছে সুসংবাদ নিয়ে আসল।(সূরা হুদ (১১), আয়াত ৬৯)

ব্যাখ্যা
এটি সূরা হূদের ৬৯ নং আয়াত। এ আয়াতে 'দূত' বলে ফিরিশতাদের বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা ফিরিশতাদেরকে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত করে থাকেন। কোনও কোনও ফিরিশতা সংবাদ বহনের কাজও করে। অর্থাৎ তারা আল্লাহ তা'আলার কাছ থেকে সংবাদ ও বার্তা নিয়ে নবী-রাসূলগণের কাছে পৌঁছিয়ে থাকেন। তাছাড়া তারা নবী-রাসূল ও নেককার বান্দাদের কাছে বিভিন্ন সুসংবাদও পৌঁছান। এ আয়াতে জানানো হয়েছে যে, একদল সংবাদবাহী ফিরিশতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিলেন। কী ছিল সে সুসংবাদ? সামনে একই সূরার ৭১ নং আয়াতে তার ব্যাখ্যা রয়েছে। তাতে আছে-
وَامْرَأَتُهُ قَائِمَةٌ فَضَحِكَتْ فَبَشَّرْنَاهَا بِإِسْحَاقَ وَمِنْ وَرَاءِ إِسْحَاقَ يَعْقُوبَ (71)
আর ইবরাহীমের স্ত্রী দাঁড়ানো ছিল। সে হেসে দিল। আমি তাকে ইসহাকের এবং ইসহাকের পর ইয়াকুবের জন্মের সুসংবাদ দিলাম।(সূরা হুদ (১১), আয়াত ৭১)
অর্থাৎ ইবরাহীম আলাইহিস সালামের স্ত্রী হযরত সারা রাযি. পর্দার আড়ালে দাঁড়ানো ছিলেন। এ অবস্থায় আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে ফিরিশতাগণ তাঁকে সুসংবাদ দিলেন যে, তাঁর গর্ভে এক পুত্রসন্তানের জন্ম হবে। তার নাম হবে ইসহাক। পরে ইসহাক আলাইহিস সালামের ইয়াকুব নামে এক পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করবে। এ সুসংবাদে হযরত সারা রাযি. খুশিতে হেসে দেন। অথবা এ হাসির কারণ ছিল তাঁর বিস্ময়। কেননা তিনি ও তাঁর স্বামী উভয়ে ছিলেন বৃদ্ধ। কোনও কোনও বর্ণনা অনুযায়ী তখন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের বয়স ছিল ১২০ বছর এবং হযরত সারা রাযি.-এর বয়স ৯০ বছর। তদুপরি তিনি ছিলেন বন্ধ্যা। এ অবস্থায় তাঁদের কীভাবে সন্তান জন্ম নিতে পারে, এ বিস্ময়ে তিনি হেসে দিয়েছিলেন। যেমনটা পরে ৭২ নং আয়াতে আছে। বলা হয়েছে-
قَالَتْ يَاوَيْلَتَا أَأَلِدُ وَأَنَا عَجُوزٌ وَهَذَا بَعْلِي شَيْخًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عَجِيبٌ (72)
‘সে বলতে লাগল, হায়! আমি এ অবস্থায় সন্তান জন্মাব, যখন আমি বৃদ্ধা এবং এই আমার স্বামী, যে নিজেও বার্ধক্যে উপনীত? বাস্তবিকই এটা বড় আশ্চর্য ব্যাপার।’
এর উত্তরে ফিরিশতাগণ বলেছিলেন-
قَالُوا أَتَعْجَبِينَ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ رَحْمَتُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ إِنَّهُ حَمِيدٌ مَجِيدٌ (73)
‘ফিরিশতাগণ বলল, আপনি কি আল্লাহর হুকুম সম্বন্ধে বিস্ময়বোধ করছেন? আপনাদের মতো সম্মানিত পরিবারবর্গের উপর রয়েছে আল্লাহর রহমত ও প্রভূত বরকত। নিশ্চয়ই তিনি সর্বময় প্রশংসার হকদার, অতি মর্যাদাবান।’

ছয় নং আয়াত
فَنَادَتْهُ الْمَلَائِكَةُ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي الْمِحْرَابِ أَنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيَى
অর্থ: সুতরাং (একদা) যাকারিয়া যখন ইবাদতখানায় সালাত আদায় করছিলেন, তখন ফিরিশতাগণ তাঁকে ডাক দিয়ে বলল, আল্লাহ আপনাকে ইয়াহইয়া (-এর জন্ম) সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছেন।(সূরা আলে ইমরান (৩) আয়াত ৩৯)

ব্যাখ্যা
এটি সূরা আলে ইমরানের ৩৯ নং আয়াত। এর আগের আয়াতে হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালামের দু'আ বর্ণিত হয়েছে-
رَبِّ هَبْ لِي مِنْ لَدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ (38)
‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তোমার নিকট হতে কোনও পবিত্র সন্তান দান কর। নিশ্চয়ই তুমি দু'আ শ্রবণকারী।'
হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম ছিলেন অতিশয় বৃদ্ধ। তাঁর স্ত্রী ছিলেন বন্ধ্যা। সন্তানলাভের বাহ্যিক কোনও অবস্থা ছিল না। মনে ছিল না আশাও। কিন্তু এ অবস্থায় তাঁর অন্তরে আশা সঞ্চারের একটি কারণ ঘটে গেল। তিনি তাঁর ভায়রা-কন্যা হযরত মারয়াম আলাইহাস সালামের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি মারয়াম আলাইহাস সালামের কাছে মৌসুমবিহীন ফল দেখতে পেয়েছিলেন। এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে হযরত মারয়াম আলাইহাস সালাম বলেছিলেন, এ ফল আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকেই তাঁর কাছে আসে। আর আল্লাহ তা'আলা যাকে চান, অকল্পনীয়ভাবে রিযিক দিয়ে থাকে। এ ঘটনা হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালামের অন্তরে আলোড়ন তোলে। তিনি যেন এক অসম্ভব আশায় উদ্বেলিত হয়ে উঠলেন। যে আল্লাহ মারয়ামকে মৌসুমবিহীন ফল দিতে পারেন, তিনি তো আমাকে আমার এই বৃদ্ধ বয়সে, যা কিনা সন্তান জন্মানোর বয়স নয়, নেক সন্তান দান করতে পারেন। তখনই তিনি আল্লাহর কাছে সুসন্তান চেয়ে দু'আ করলেন। তাঁর সে দু'আ কবুলও হল, যা আলোচ্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি একদিন নিজ কক্ষে নামাযে দাঁড়ানো ছিলেন। এ অবস্থায় সুসংবাদবাহী ফিরিশতাগণ তাঁর কাছে হাজির হল এবং আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তাঁকে এক পুত্রসন্তান জন্মের সুসংবাদ দিল। যে পুত্রের নাম হবে ইয়াহইয়া।

আট নং আয়াত
إِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَامَرْيَمُ إِنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِنْهُ اسْمُهُ الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ
অর্থ: (সেই সময়ের কথাও স্মরণ করো) যখন ফিরিশতাগণ বলেছিল, হে মারয়াম! আল্লাহ তোমাকে নিজের এক কালিমার (জন্মগ্রহণের) সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম হবে মাসীহ ঈসা ইবন মারয়াম।(সূরা আলে ইমরান (৩), আয়াত ৪৫)

ব্যাখ্যা
হযরত মারয়াম আলাইহাস সালাম ছিলেন কুমারী। কারও সঙ্গে তাঁর কখনও বিবাহ হয়নি। তিনি ছিলেন এক সতী-সাধ্বী নারী। কখনও কোনও পুরুষ তাঁকে স্পর্শ করতে পারেনি। আল্লাহ তা'আলা তাঁকে নিজের এক নিদর্শনের প্রকাশস্থলরূপে মনোনীত করেছিলেন। দুনিয়ায় সাধারণত সন্তানের জন্ম হয় পিতা-মাতা বা নর-নারীর মিলনের ধারায়। এ নিয়ম আল্লাহ তা'আলারই সৃষ্টি। মানবসৃষ্টির জন্য আল্লাহ তা'আলা এ নিয়মের মুখাপেক্ষী নন। তিনি চাইলে এ নিয়মের বাইরেও মানুষ সৃষ্টি করতে পারেন। প্রথম মানব হযরত আদম আলাইহিস সালামকে তো তিনি পিতা-মাতা ছাড়াই সৃষ্টি করেছিলেন। তারপর প্রজন্মের পর প্রজন্ম হাজারও বছর যাবৎ পিতা-মাতার ধারায় দুনিয়ায় মানুষের জন্ম হয়ে এসেছে। কেউ যাতে মনে না করে এটা অবধারিত প্রকৃতি। এই প্রাকৃতিক নিয়মেই মানুষের জন্ম হয়ে এসেছে। এতে কারও কোনও হাত নেই। এর বাইরে কোনওকিছু হওয়া সম্ভব নয়। ব্যস প্রকৃতিই শেষকথা। এই ভুল ধারণার মূলোৎপাটনের জন্য প্রয়োজন ছিল কুদরতের এমন এক নিদর্শন দেখানো, যাতে মানুষ বুঝতে পারে প্রকৃতিই শেষকথা নয়; বরং দৃশ্যমান প্রকৃতি আল্লাহ তা'আলারই সৃষ্টি। তিনি মানুষের জন্মের জন্য নর-নারী বা পিতা-মাতার ধারা প্রবর্তন করেছেন। তিনি চাইলে পিতা-মাতা ছাড়াই কিংবা তাদের কোনও একজন ছাড়া মানুষ সৃষ্টি করতে পারেন। আল্লাহ তা'আলা তাঁর কুদরতের এ নিদর্শন দেখানোর জন্য হযরত মারয়াম আলাইহাস সালামকে বেছে নেন। তিনি কেবল নিজ হুকুম 'হও'-এর মাধ্যমে তাঁর গর্তে এক আদমসন্তানের জন্ম দেন। তাঁর নাম ঈসা।
এ আয়াতে 'আল্লাহর কালেমা' দ্বারা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে বোঝানো হয়েছে। তাঁকে আল্লাহর কালেমা বলার কারণ তিনি পিতা ছাড়া কেবল অল্লাহ তা'আলার 'কুন' শব্দ দ্বারা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কালেমা মানে শব্দ।
আয়াতে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের উপাধি বলা হয়েছে 'মাসীহ'। ইংরেজিতে বলে 'ক্রাইস্ট', বাংলায় খ্রিষ্ট। ক্রাইস্ট শব্দটি হিব্রু 'মাসায়া' বা 'মোসায়া' এর অনুবাদ, যাকে আরবীতে বলে 'মাসীহ', অর্থাৎ অভিষেকপ্রাপ্ত বা পরিব্রাজক বা স্পর্শ দ্বারা চিকিৎসাকারী ইত্যাদি।
উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজা রাযি.-কে জান্নাতের সুসংবাদ এবং তাঁর জান্নাতের বাড়ি
হাদীছ নং: ৭০৭

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আবূ আওফা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজা রাযি.-কে জান্নাতে মুক্তার একটি ঘরের সুসংবাদ দিয়েছেন, যাতে কোনওরূপ শোরগোল থাকবে না এবং কষ্ট-ক্লেশও না। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ১৭৯২; সহীহ মুসলিম: ২৪৩৩; জামে' তিরমিযী: ৩৮৭৬; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক : ৯৭১৯; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা ৩২২৮৭; মুসনাদে আহমাদ: ১৭৫৯; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা ৮৩০২; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা ২০৪৭; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১৭৯)
كتاب الأدب
باب استحباب التبشير والتهنئة بالخير
قَالَ الله تَعَالَى: {فَبَشَّرْ عبادِ الذينَ يَسْتَمِعُونَ القَوْلَ فيتَّبِعُونَ أَحْسَنهُ} [الزمر: 17 - 18]، وقال تَعَالَى: {يُبَشِّرُهُمْ رَبُّهُمْ بِرَحْمَةٍ مِنْهُ وَرِضْوانٍ وَجَنَّاتٍ لَهُمْ فِيهَا نَعِيمٌ مُقِيمٌ} [التوبة: 21]، وقال تَعَالَى: {وَأَبْشِرُوا بِالجَنَّةِ الَّتي كُنْتُم تُوعَدُونَ} [فصلت: 30]، وقال تَعَالَى: {فَبَشَّرْنَاهُ بِغُلاَمٍ حَلِيمٍ} [الصافات: 101]، وقال تَعَالَى: {وَلَقدْ جَاءتْ رُسُلُنَا إبْراهِيمَ بِالبُشْرَى} [هود: 69]، وقال تَعَالَى: {وَامْرَأَتُهُ قَائِمَةٌ فَضَحِكَتْ فَبَشَّرْنَاهَا بِإِسْحَاقَ وَمِنْ وَرَاءِ إسْحَاقَ يَعْقُوبَ} [هود: 71]، وقال تَعَالَى: {فَنَادَتْهُ المَلاَئِكَةُ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي في المِحْرَابِ أَنَّ اللهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيَى} [آل عمران: 39]، وقال تَعَالَى: {إِذْ قَالَتِ الْمَلاَئِكَةُ يَا مَرْيَمُ إنَّ اللهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِنْهُ اسْمُهُ الْمسِيحُ} [آل عمران: 45] الآية، والآيات في الباب كثيرة معلومة.
وأما الأحاديث فكثيرةٌ جِدًّا وهي مشهورة في الصحيح، مِنْهَا:
707 - عن أَبي إبراهيم، ويقال: أَبُو محمد، ويقال: أَبُو معاوية عبد اللهِ بن أَبي أوفى رضي الله عنهما: أنّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - بَشَّرَ خَدِيجَةَ رضي اللهُ عنها ببَيْتٍ في الجَنَّةِ مِنْ قَصَبٍ، لاَ صَخَبَ فِيهِ، وَلاَ نَصَبَ. متفقٌ عَلَيْهِ. (1) [ص:227]
«القَصَبُ»: هُنَا اللُّؤْلُؤُ الْمُجَوَّفُ. وَ «الصَّخَبُ»: الصِّياحُ وَاللَّغَطُ.
وَ «النَّصَبُ»: التَّعَبُ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদীজা রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ১ম স্ত্রী। এক ইবরাহীম ছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সকল পুত্র-কন্যার জন্ম তাঁরই গর্ভে। তিনি ৬৫ বছর বয়সে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতের ১০ম বছর ইন্তিকাল করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বৈবাহিক জীবনের দীর্ঘ ২৫ বছর কেবল তাঁকে নিয়েই কাটিয়েছেন। এ সময় তিনি অন্য কোনও বিবাহ করেননি। তাঁর ইন্তিকালে তিনি গভীর বেদনাহত হন। জীবনে কখনও তিনি তাঁকে ভুলতে পারেননি।

হযরত খাদীজা রাযি. ছিলেন সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তি। তিনি ইসলাম ও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য নিজের সবকিছু উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। সেজন্য আল্লাহ তা'আলার কাছে অতি উচ্চমর্যাদা লাভ করেন। এ হাদীছে তাঁকে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়ার পাশাপাশি সেখানে তাঁর বাড়িটি কেমন হবে তাও জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে সে বাড়িটি হবে মুক্তার। বলাবাহুল্য, তা জান্নাতের মুক্তা। দুনিয়ার মুক্তা দিয়ে তার মূল্য ও সৌন্দর্য অনুমান করা সম্ভব নয়।

বলা হয়েছে, সেখানে কোনও শোরগোল ও ক্লান্তি থাকবে না। জান্নাতে তা থাকার কথাও নয়। কারণ জান্নাত কাজকর্ম ও ব্যস্ততার জায়গা নয়। শোরগোল ও ক্লান্তি ব্যস্ততার কারণেই হয়। জান্নাত হল আরাম ও উপভোগের স্থান। সম্মান ও মর্যাদার জায়গা। সেখানে সুখ-শান্তি ও সম্মানের পরিপন্থী কোনওকিছুই ঘটবে না।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছটি দ্বারা হযরত খাদীজা রাযি.-এর উচ্চমর্যাদা সম্পর্কে ধারণা লাভ হয়। জীবিত অবস্থায় যারা জান্নাতের সুসংবাদ লাভ করেছেন, তিনি তাদের অন্যতম।

খ. জান্নাত সত্য। সেখানে অকল্পনীয় সুখ-শান্তির ব্যবস্থা থাকবে। থাকবে দৃষ্টিনন্দন বিলাসিতাপূর্ণ বাড়ি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)