রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
৪. পোষাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা
হাদীস নং: ৭৭৮
পোষাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা
চতুর্থ ভাগ: পোশাক
পোশাক মানুষের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। আল্লাহ তা'আলা মানুষকে সৃষ্টিই করেছেন পোশাকের উপর নির্ভরশীল করে। পোশাক দ্বারা সে তার শরীর আবৃত করে। এটা তাকে করতেই হয়। অন্যথায় সে অন্যান্য জীবজন্তুর মতো হয়ে যায়। অর্থাৎ নগ্ন মানুষ পশুতুল্য। বস্তুত তার মনুষ্যত্বের স্বাতন্ত্র্য পোশাক দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত হয়।
তাছাড়া শীত ও তাপ থেকে আত্মরক্ষার জন্যও মানুষের পোশাকের প্রয়োজন হয়। তার ত্বক বড় স্পর্শকাতর। শীত ও তাপের স্পর্শে তা কষ্ট পায় ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যান্য জীব সেরকম নয়। তাই তাদের পোশাকেরও প্রয়োজন হয় না।
পোশাক মানুষের শোভাও বটে। মানুষের সৌন্দর্য পোশাকের দ্বারাই পরিস্ফুট হয়। মানুষ যে এক সুন্দরতম সৃষ্টি, তা কখনও বিনাপোশাকে উপলব্ধি করা যায় না। পোশাকবিহীন মানুষ কেবল অসুন্দরই নয়, নয় দর্শনযোগ্যও। নগ্নতা এমনই কদর্য যে, কোনও সভ্য লোক নিজেও অন্যের সামনে নগ্ন হতে পারে না, অন্যের নগ্নতাও সে পছন্দ করে না। কোনও রুচিশীল ব্যক্তি কখনও কোনও নগ্ন লোকের দিকে ফিরে তাকাতে পারে না।
এ সমস্ত কারণে পোশাক মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্তর্ভুক্ত। তাই সভ্যতার শুরু বলতে কোনও কথা নয়; বরং সৃষ্টির সূচনা থেকেই মানুষ পোশাক ব্যবহার করে আসছে। বস্তুত মানুষ শুরু থেকেই সভ্য। আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে যখন সৃষ্টি করা হয়, তখন তাঁকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি ও মা হাওয়া আলাইহাস সালাম জান্নাতে পোশাক পরিহিতা অবস্থায়ই ছিলেন। ইবলীস শয়তান তাঁদেরকে নগ্ন করতে চাইল। সে লক্ষ্যে তাঁদেরকে নানাভাবে প্ররোচনা দিল।
আল্লাহ তা'আলার নামে কসম করে মিথ্যা কথা পর্যন্ত বলল। শেষপর্যন্ত তাঁদের দ্বারা ভুল হয়ে গেল। তাঁরা জান্নাতের নিষিদ্ধ ফল খেয়ে ফেললেন। ফলে তাঁদের শরীর থেকে জান্নাতী পোশাক উড়ে গেল। তাঁরা নগ্ন হয়ে পড়লেন। কিন্তু লজ্জাশীলতা ছিল তাঁদের স্বভাবগত। তাঁরা জান্নাতের গাছের পাতা দিয়ে নিজেদের শরীর ঢাকতে শুরু করলেন। পরিশেষে তাঁদেরকে দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হল। ইরশাদ হয়েছে-
فَوَسْوَسَ إِلَيْهِ الشَّيْطَانُ قَالَ يَاآدَمُ هَلْ أَدُلُّكَ عَلَى شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَا يَبْلَى (120) فَأَكَلَا مِنْهَا فَبَدَتْ لَهُمَا سَوْآتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِنْ وَرَقِ الْجَنَّةِ
'অতঃপর শয়তান তার অন্তরে কুমন্ত্রণা দিল। সে বলল, হে আদম! তোমাকে কি এমন একটা গাছের সন্ধান দেব, যা দ্বারা অনন্ত জীবন ও এমন রাজত্ব লাভ হয়, যা কখনও ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না? অতঃপর তারা সে গাছ থেকে কিছু খেয়ে ফেলল। ফলে তাদের লজ্জাস্থানসমূহ তাদের সামনে প্রকাশ হয়ে গেল। তখন তারা জান্নাতের পাতা নিজেদের উপর জুড়তে লাগল। ( সূরা তোয়াহা, আয়াত ১২০-১২১)
বোঝা যাচ্ছে মানুষকে নগ্নতায় লিপ্ত করা ইবলীস শয়তানের কাম্য। কেননা এটা হাজারও পাপের পথ খুলে দেয়। এর ফলে মানুষ লজ্জা হারিয়ে ফেলে। পরিণামে সমাজে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা ধ্বংস হয়ে যায়। তাই ইসলাম সতর ঢাকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। কুরআন সতর্ক করেছে যাতে শয়তান নগ্নতা বিস্তারের তৎপরতায় সফল হতে না পারে। ইরশাদ হয়েছে-
يَابَنِي آدَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُمْ مِنَ الْجَنَّةِ يَنْزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْآتِهِمَا
হে আদমের সন্তান-সন্ততিগণ! শয়তান যেন কিছুতেই তোমাদেরকে প্রতারিত করতে না পারে, যেমন তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল। সে তাদেরকে পরস্পরের লজ্জাস্থান দেখানোর উদ্দেশ্যে তাদের দেহ থেকে তাদের পোশাক অপসারণ করিয়েছিল। (সূরা আ'রাফ, আয়াত ২৭)
পোশাক আল্লাহ তা'আলার কুদরতের এক নিদর্শন। পোশাকের ব্যবহার বড় বৈচিত্র্যময়। দুনিয়ায় একেক জাতির একেক রকম পোশাক। পোশাক দেখে বলে দেওয়া যায় কে কোন দেশের লোক, কে কোন ধর্মের অনুসারী। পোশাক মানুষের পসন্দ ও রুচিভেদেরও নির্দেশক। যুগ ও কালভেদেও পোশাকে পরিবর্তন আসে। তাই সেই দূরঅতীত থেকে আজ পর্যন্ত পোশাকের উপর মানুষ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে আসছে। এর পেছনে মানুষের মেধা ও কায়িক শ্রমের রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন লিপ্ততা। মানুষের পোশাককেন্দ্রিক কর্মব্যস্ততার কোনও সীমা-পরিসীমা নেই। এর কাঁচামাল থেকে শুরু করে তৈরিপোশাক পর্যন্ত রয়েছে নানা ধাপে ও নানা প্রসঙ্গে নানা গবেষণা ও নানা কর্মপ্রক্রিয়া। এটা মানুষের জীবন ও জীবিকারও এক প্রধান অবলম্বন।
পোশাক যেহেতু মানুষের এক মৌলিক চাহিদা ও তার অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ, তাই এ সম্পর্কে ইসলামের রয়েছে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা। কোন পোশাক বৈধ কোন পোশাক অবৈধ, পুরুষের পোশাক কেমন হবে, নারীর জন্য কেমন, পোশাক পরিধানে কী আদব-কায়দা অনুসরণীয় ইত্যাদি সকল বিষয়ে ইসলাম সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছে।
পরিচ্ছেদ: ১
সাদা পোশাকের উত্তমতা; লাল, সবুজ, হলুদ ও কালো রঙের পোশাক পরার বৈধতা এবং রেশম ছাড়া সুতা, পশম ইত্যাদির তৈরি পোশাক পরার বৈধতা
'সাদা পোশাকের উত্তমতা...' সম্পর্কিত দু'টি আয়াত
• এক নং আয়াত
يَابَنِي آدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ
অর্থ: হে আদমের সন্তান-সন্ততি! আমি তোমাদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করেছি, যা তোমাদের দেহের যে অংশ প্রকাশ করা দূষণীয় তা আবৃত করে এবং তা শোভাস্বরূপ। বস্তুত তাকওয়ার যে পোশাক, সেটাই সর্বোত্তম।
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে পোশাককে আল্লাহ তা'আলার এক গুরুত্বপূর্ণ দান ও নি'আমতরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, মানুষের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা আল্লাহ তা'আলাই করেছেন। আল্লাহ তা'আলা যদি মানবস্বভাবে পোশাক পরিধানের মাধ্যমে নিজ সতর ঢেকে রাখার প্রবণতা সৃষ্টি না করতেন, তারপর পোশাক তৈরির কলাকৌশল মানুষকে না শেখাতেন, তবে মানুষকে অন্যান্য জীবের মতোই নগ্ন থাকতে হত। তখন অন্যান্য জীব থেকে তার কোনও স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠিত হত না এবং তার আলাদা কোনও মর্যাদা থাকত না। আল্লাহ তা'আলা মানুষকে তাঁর খলীফা ও শ্রেষ্ঠ মাখলুক বানিয়েছেন বলে অন্যান্য জীব থেকে তার স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন ছিল। পোশাকের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা তাকে সে স্বাতন্ত্র্য দান করেছেন। কাজেই এটা মানুষের প্রতি আল্লাহ তা'আলার এক বিশেষ অনুগ্রহ।
আয়াতে পোশাকের প্রথম উপকারিতারূপে ইরশাদ হয়েছে يُوَارِي سَوْآتِكُمْ (যা তোমাদের দেহের যে অংশ প্রকাশ করা দূষণীয় তা আবৃত করে)। سَوْآتِ শব্দটি سواة এর বহুবচন। এর উৎপত্তি سوء থেকে। سوء এর অর্থ মন্দ, ঘৃণ্য। গোপন অঙ্গ প্রকাশ করা একটি মন্দ ও ঘৃণ্য কাজ। তাই গোপন অঙ্গকে سَوْآتِ বলা হয়। আমরা একে সতর বলে থাকি। সতর শব্দটি মূলত আরবী। এর অর্থ ঢাকা। গোপন অঙ্গকে যেহেতু ঢেকে রাখা হয়, তাই একে সতর বলে। নারী ও পুরুষের সতর আলাদা। পোশাক দ্বারা উভয়ে আপন আপন সতর ঢেকে রাখতে পারে। যার শরীরের যতটুকু সতরের অন্তর্ভুক্ত, ততটুকু ঢেকে রাখার মধ্যেই পোশাক পরার সার্থকতা। আয়াতে যেহেতু সতর ঢাকাকে পোশাকের প্রথম উপকারিতারূপে উল্লেখ করা হয়েছে, সেহেতু নারী ও পুরুষকে পোশাক পরার বেলায় আপন আপন সতর যাতে ঢাকা পড়ে সেদিকে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে। পোশাক পরা সত্ত্বেও যদি সতরের কোনও অংশ খোলা থেকে যায়, তবে পোশাকের যথাযথ ব্যবহার হল না। তা দ্বারা শয়তানের ইচ্ছা পূরণ হয়। শয়তানের ইচ্ছা মানুষকে নগ্ন করা, তা পুরোপুরি হোক বা আংশিক। এ আয়াতের পরের আয়াতেই সে কথা জানানো হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
يَنْزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْآتِهِمَا
(সে তাদেরকে পরস্পরের লজ্জাস্থান দেখানোর উদ্দেশ্যে তাদের দেহ থেকে তাদের পোশাক অপসারণ করিয়েছিল)। শয়তান যাতে তার সে চাওয়ায় সফল হতে না পারে, তাই প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর পোশাক দ্বারা আপন আপন সতর ঢেকে রাখার ব্যাপারে পূর্ণ সচেতন থাকা একান্ত কর্তব্য।
আয়াতে পোশাকের দ্বিতীয় ফায়দা বর্ণনা করা হয়েছে- وَرِيشًا (এবং তা শোভাস্বরূপ)। নিঃসন্দেহে পোশাক মানুষের শোভা। পোশাকবিহীন মানুষ দৃশ্যত নিতান্তই কদাকার। পোশাক যত পূর্ণাঙ্গ হয়, শোভাও ততো পরিপূর্ণ হয়। তাই পরিপূর্ণ শোভার জন্য মানুষের উচিত এমন পোশাক পরিধান করা, যা দ্বারা সতর পুরোপুরি আচ্ছাদিত হয়; বরং সতর ঢাকার পরও শরীরের যে অংশ ঢাকা ভদ্রতার মধ্যে পড়ে, তাও যাতে ঢেকে যায়। বিশেষত অতিথিদের সামনে উপস্থিত হওয়া কিংবা মজলিসে, মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়ার সময় কেবল সতর ঢাকায় ক্ষান্ত না হয়ে পরিপূর্ণ পোশাক পরাই বাঞ্ছনীয়।
সুতরাং ইরশাদ হয়েছে-
يَابَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ
'হে আদমের সন্তান-সন্ততিগণ! যখনই তোমরা কোনও মসজিদে আসবে, তখন নিজেদের শোভার বস্তু (অর্থাৎ শোভনীয় পোশাক) নিয়ে আসবে। (সূরা আ'রাফ, আয়াত ৩১)
আয়াতে দু'রকম পোশাকের কথা বলা হয়েছে। এক হচ্ছে দৃশ্যমান পোশাক। আরেক হচ্ছে অদৃশ্য বা গুপ্ত পোশাক। উভয় পোশাকই মানুষের জন্য জরুরি। আয়াতে এ পর্যন্ত যা বলা হয়েছে তার সম্পর্ক দৃশ্যমান পোশাকের সঙ্গে। তারপর অদৃশ্য পোশাক সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-
وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ (বস্তুত তাকওয়ার যে পোশাক, সেটাই সর্বোত্তম)। তাকওয়া মানে আল্লাহভীতি। আল্লাহভীতিকে পোশাকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। পোশাক যেমন মানুষকে শীত ও তাপ থেকে রক্ষা করে এবং মানুষকে সুসজ্জিত করে, তেমনি আল্লাহর ভয় মানুষকে সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে রক্ষা করে এবং সৎকর্মের মাধ্যমে তার মানবিক সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। আয়াতে তাকওয়ার পোশাককে সর্বোত্তম বলা হয়েছে। কেননা শীত ও তাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করার চেয়ে পাপকর্ম থেকে রক্ষা করার গুরুত্ব অনেক বেশি। শীত ও তাপ দ্বারা মানুষ দুনিয়ায় কষ্ট পায় এবং সে কষ্ট ক্ষণস্থায়ী। পক্ষান্তরে পাপকর্মের কারণে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যার কষ্ট স্থায়ী ও অনন্ত। সেই স্থায়ী ও অনন্ত কষ্ট থেকে যে তাকওয়া ও আল্লাহভীতি দ্বারা রক্ষা পাওয়া যায়, তা শারীরিক পোশাকের তুলনায় উত্তম বৈ কি।
সুতরাং মানুষ শারীরিক পোশাকের যে গুরুত্ব দিয়ে থাকে, তারচে' অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার এ অদৃশ্য পোশাক অর্থাৎ তাকওয়ার। আমরা পোশাকের জন্য অর্থ খরচ করি এবং সে অর্থ উপার্জনের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলি। কিন্তু তাকওয়া অর্জনের জন্য সেরকম কোনও চেষ্টা করি না। এটা আমাদের চরম গাফলাতি। যে তাকওয়ার উপর আখিরাতের নাজাত নির্ভর করে, তা অর্জনে গাফলাতি করা উচিত নয়। এর জন্য আরও অনেক বেশি চেষ্টা ও সাধনা করা জরুরি। আয়াত এ পোশাককে সর্বোত্তম বলে আমাদেরকে সে উৎসাহই দান করছে।
আয়াতে এদিকেও ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, শারীরিক পোশাকও সর্বোত্তম হয় তখনই, যখন তাতে তাকওয়ার পরিচয় দেওয়া হয়। সুন্দর থেকে সুন্দর পোশাক পরিধানের আগ্রহ থাকে সকলেরই। তাই পোশাক সংগ্রহের সময় মানুষ আপন সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোত্তমটি খুঁজে বেড়ায়। আয়াত বলছে, তুমি যত অভিনব স্টাইলই খোঁজ না কেন, যদি তাকওয়ার ছাপ না থাকে, তবে সে পোশাক কখনওই উত্তম হবে না। পোশাকে তাকওয়ার ছাপ থাকার অর্থ হল পোশাকে শরী'আতের নির্দেশনা অনুসরণ করা। যেমন পোশাক এমন হওয়া, যাতে সতর পুরোপুরি ঢাকা পড়ে। যেন খুব বেশি আঁটোসাঁটো না হয় এবং অতিরিক্ত পাতলা না হয়। পুরুষের ক্ষেত্রে যেন টাখনুর নিচে ঝুলে না পড়ে এবং পোশাক রেশমের না হয়। নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই অহমিকা পরিত্যাজ্য। যে পোশাক অহমিকা সৃষ্টি করে, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। মোটকথা জীবনের অন্যসব ক্ষেত্রের মতো পোশাকের বেলায়ও তাকওয়া ও আল্লাহভীতির পরিচয় দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. পোশাক আল্লাহ তা'আলার অতি বড় এক নি'আমত। এর জন্য শোকর আদায় করতে হবে।
খ. পোশাক মানুষের বিশেষত্ব। নগ্নতা মনুষ্যত্বের পরিপন্থি।
গ. পোশাক পরিধানে সতর ঢাকার প্রতি বিশেষ লক্ষ রাখতে হবে, যাতে করে সতরের তুলনায় পোশাক ছোট না হয়, বেশি আঁটোসাঁটো না হয় এবং অতিরিক্ত পাতলাও না হয়।
ঘ. তাকওয়াও এক রকম পোশাক; বরং সর্বোত্তম পোশাক। তাই তাকওয়া অর্জনের জন্য শারীরিক পোশাক অর্জনের চেয়েও বেশি চেষ্টা করতে হবে।
ঙ. পোশাক অবশ্যই তাকওয়াসম্মত হতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে যাতে পোশাকের কোনও দিকই শরী'আতের খেলাফ না হয়।
• দুই নং আয়াত
وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيلَ تَقِيكُمُ الْحَرَّ وَسَرَابِيلَ تَقِيكُمْ بَأْسَكُم
অর্থ: আর তোমাদের জন্য বানিয়েছেন এমন পোশাক, যা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে এবং এমন পোশাক, যা যুদ্ধকালে তোমাদেরকে রক্ষা করে।( সূরা নাহল, আয়াত ৮১)
ব্যাখ্যা
এটা সূরা নাহলের ৮১ নং আয়াতের অংশবিশেষ। এ সূরায় আল্লাহ তা'আলা তাঁর কুদরতের বিভিন্ন নিদর্শন এবং মানুষকে দেওয়া তাঁর বহু নি'আমত তুলে ধরেছেন। সে প্রসঙ্গেই এখানে পোশাকের উল্লেখ করা হয়েছে। পোশাক মানুষের জন্য আল্লাহ তা'আলার এক বিরাট নি'আমত। এর দ্বারা কেবল লজ্জা নিবারণই হয় না; শীত ও তাপ থেকেও আত্মরক্ষা হয়। এ আয়াতে কেবল তাপ থেকে রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। শীতের উল্লেখ করা হয়নি এ কারণে যে, তা এমনিই বুঝে আসে। তাপের কথা বললে শীতের বিষয়টি এমনিই চলে আসে। তাই আলাদা করে এর উল্লেখের প্রয়োজন হয় না। তা সত্ত্বেও অনুগ্রহকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য অপর এক আয়াতে শীতের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে ইরশাদ হয়েছে-
وَالْأَنْعَامَ خَلَقَهَا لَكُمْ فِيهَا دِفْءٌ
'তিনিই চতুষ্পদ জন্ত সৃষ্টি করেছেন, যার মধ্যে তোমাদের জন্য শীত থেকে বাঁচার উপকরণ রয়েছে।’ (সূরা নাহল, আয়াত ৫)
অর্থাৎ পশুর পশম দ্বারা এমন পোশাক তৈরি কর, যা দ্বারা তোমরা শীতের কষ্ট থেকে বাঁচতে পার।
এ আয়াতে পোশাকের আরেকটি উপকার বলা হয়েছে যুদ্ধ-বিগ্রহে আত্মরক্ষা। অর্থাৎ শত্রুর আঘাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য লোহা দ্বারা বর্ম তৈরি করা হয় এবং শিরস্ত্রাণ বানানো হয়। তাছাড়া রেশম ও অন্যান্য উপকরণ দ্বারা এমন মোটা কাপড়ও তৈরি করা হয়, যা দ্বারা শত্রুর আঘাত থেকে আত্মরক্ষা করা যায়। মোটকথা পোশাক মানুষের নানাবিধ উপকারে আসে। এহেন উপকারী পোশাক আল্লাহ তা'আলারই দান। কাজেই মানুষের কর্তব্য এর জন্য আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায় করা এবং সর্বপ্রকার শিরক হতে বিরত থেকে কেবল তাঁরই ইবাদত-বন্দেগী করা।
আয়াতটির শিক্ষা
পোশাক দ্বারা আমরা বহুবিধ উপকার পেয়ে থাকি। তাই এর জন্য একান্তভাবে আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায় করা উচিত।
পোশাক মানুষের এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ। আল্লাহ তা'আলা মানুষকে সৃষ্টিই করেছেন পোশাকের উপর নির্ভরশীল করে। পোশাক দ্বারা সে তার শরীর আবৃত করে। এটা তাকে করতেই হয়। অন্যথায় সে অন্যান্য জীবজন্তুর মতো হয়ে যায়। অর্থাৎ নগ্ন মানুষ পশুতুল্য। বস্তুত তার মনুষ্যত্বের স্বাতন্ত্র্য পোশাক দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত হয়।
তাছাড়া শীত ও তাপ থেকে আত্মরক্ষার জন্যও মানুষের পোশাকের প্রয়োজন হয়। তার ত্বক বড় স্পর্শকাতর। শীত ও তাপের স্পর্শে তা কষ্ট পায় ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অন্যান্য জীব সেরকম নয়। তাই তাদের পোশাকেরও প্রয়োজন হয় না।
পোশাক মানুষের শোভাও বটে। মানুষের সৌন্দর্য পোশাকের দ্বারাই পরিস্ফুট হয়। মানুষ যে এক সুন্দরতম সৃষ্টি, তা কখনও বিনাপোশাকে উপলব্ধি করা যায় না। পোশাকবিহীন মানুষ কেবল অসুন্দরই নয়, নয় দর্শনযোগ্যও। নগ্নতা এমনই কদর্য যে, কোনও সভ্য লোক নিজেও অন্যের সামনে নগ্ন হতে পারে না, অন্যের নগ্নতাও সে পছন্দ করে না। কোনও রুচিশীল ব্যক্তি কখনও কোনও নগ্ন লোকের দিকে ফিরে তাকাতে পারে না।
এ সমস্ত কারণে পোশাক মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্তর্ভুক্ত। তাই সভ্যতার শুরু বলতে কোনও কথা নয়; বরং সৃষ্টির সূচনা থেকেই মানুষ পোশাক ব্যবহার করে আসছে। বস্তুত মানুষ শুরু থেকেই সভ্য। আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে যখন সৃষ্টি করা হয়, তখন তাঁকে জান্নাতের পোশাক পরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি ও মা হাওয়া আলাইহাস সালাম জান্নাতে পোশাক পরিহিতা অবস্থায়ই ছিলেন। ইবলীস শয়তান তাঁদেরকে নগ্ন করতে চাইল। সে লক্ষ্যে তাঁদেরকে নানাভাবে প্ররোচনা দিল।
আল্লাহ তা'আলার নামে কসম করে মিথ্যা কথা পর্যন্ত বলল। শেষপর্যন্ত তাঁদের দ্বারা ভুল হয়ে গেল। তাঁরা জান্নাতের নিষিদ্ধ ফল খেয়ে ফেললেন। ফলে তাঁদের শরীর থেকে জান্নাতী পোশাক উড়ে গেল। তাঁরা নগ্ন হয়ে পড়লেন। কিন্তু লজ্জাশীলতা ছিল তাঁদের স্বভাবগত। তাঁরা জান্নাতের গাছের পাতা দিয়ে নিজেদের শরীর ঢাকতে শুরু করলেন। পরিশেষে তাঁদেরকে দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হল। ইরশাদ হয়েছে-
فَوَسْوَسَ إِلَيْهِ الشَّيْطَانُ قَالَ يَاآدَمُ هَلْ أَدُلُّكَ عَلَى شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَا يَبْلَى (120) فَأَكَلَا مِنْهَا فَبَدَتْ لَهُمَا سَوْآتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِنْ وَرَقِ الْجَنَّةِ
'অতঃপর শয়তান তার অন্তরে কুমন্ত্রণা দিল। সে বলল, হে আদম! তোমাকে কি এমন একটা গাছের সন্ধান দেব, যা দ্বারা অনন্ত জীবন ও এমন রাজত্ব লাভ হয়, যা কখনও ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না? অতঃপর তারা সে গাছ থেকে কিছু খেয়ে ফেলল। ফলে তাদের লজ্জাস্থানসমূহ তাদের সামনে প্রকাশ হয়ে গেল। তখন তারা জান্নাতের পাতা নিজেদের উপর জুড়তে লাগল। ( সূরা তোয়াহা, আয়াত ১২০-১২১)
বোঝা যাচ্ছে মানুষকে নগ্নতায় লিপ্ত করা ইবলীস শয়তানের কাম্য। কেননা এটা হাজারও পাপের পথ খুলে দেয়। এর ফলে মানুষ লজ্জা হারিয়ে ফেলে। পরিণামে সমাজে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের জান, মাল ও ইজ্জতের নিরাপত্তা ধ্বংস হয়ে যায়। তাই ইসলাম সতর ঢাকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। কুরআন সতর্ক করেছে যাতে শয়তান নগ্নতা বিস্তারের তৎপরতায় সফল হতে না পারে। ইরশাদ হয়েছে-
يَابَنِي آدَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُمْ مِنَ الْجَنَّةِ يَنْزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْآتِهِمَا
হে আদমের সন্তান-সন্ততিগণ! শয়তান যেন কিছুতেই তোমাদেরকে প্রতারিত করতে না পারে, যেমন তোমাদের পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল। সে তাদেরকে পরস্পরের লজ্জাস্থান দেখানোর উদ্দেশ্যে তাদের দেহ থেকে তাদের পোশাক অপসারণ করিয়েছিল। (সূরা আ'রাফ, আয়াত ২৭)
পোশাক আল্লাহ তা'আলার কুদরতের এক নিদর্শন। পোশাকের ব্যবহার বড় বৈচিত্র্যময়। দুনিয়ায় একেক জাতির একেক রকম পোশাক। পোশাক দেখে বলে দেওয়া যায় কে কোন দেশের লোক, কে কোন ধর্মের অনুসারী। পোশাক মানুষের পসন্দ ও রুচিভেদেরও নির্দেশক। যুগ ও কালভেদেও পোশাকে পরিবর্তন আসে। তাই সেই দূরঅতীত থেকে আজ পর্যন্ত পোশাকের উপর মানুষ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে আসছে। এর পেছনে মানুষের মেধা ও কায়িক শ্রমের রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন লিপ্ততা। মানুষের পোশাককেন্দ্রিক কর্মব্যস্ততার কোনও সীমা-পরিসীমা নেই। এর কাঁচামাল থেকে শুরু করে তৈরিপোশাক পর্যন্ত রয়েছে নানা ধাপে ও নানা প্রসঙ্গে নানা গবেষণা ও নানা কর্মপ্রক্রিয়া। এটা মানুষের জীবন ও জীবিকারও এক প্রধান অবলম্বন।
পোশাক যেহেতু মানুষের এক মৌলিক চাহিদা ও তার অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ, তাই এ সম্পর্কে ইসলামের রয়েছে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা। কোন পোশাক বৈধ কোন পোশাক অবৈধ, পুরুষের পোশাক কেমন হবে, নারীর জন্য কেমন, পোশাক পরিধানে কী আদব-কায়দা অনুসরণীয় ইত্যাদি সকল বিষয়ে ইসলাম সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছে।
পরিচ্ছেদ: ১
সাদা পোশাকের উত্তমতা; লাল, সবুজ, হলুদ ও কালো রঙের পোশাক পরার বৈধতা এবং রেশম ছাড়া সুতা, পশম ইত্যাদির তৈরি পোশাক পরার বৈধতা
'সাদা পোশাকের উত্তমতা...' সম্পর্কিত দু'টি আয়াত
• এক নং আয়াত
يَابَنِي آدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ
অর্থ: হে আদমের সন্তান-সন্ততি! আমি তোমাদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করেছি, যা তোমাদের দেহের যে অংশ প্রকাশ করা দূষণীয় তা আবৃত করে এবং তা শোভাস্বরূপ। বস্তুত তাকওয়ার যে পোশাক, সেটাই সর্বোত্তম।
ব্যাখ্যা
এ আয়াতে পোশাককে আল্লাহ তা'আলার এক গুরুত্বপূর্ণ দান ও নি'আমতরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, মানুষের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা আল্লাহ তা'আলাই করেছেন। আল্লাহ তা'আলা যদি মানবস্বভাবে পোশাক পরিধানের মাধ্যমে নিজ সতর ঢেকে রাখার প্রবণতা সৃষ্টি না করতেন, তারপর পোশাক তৈরির কলাকৌশল মানুষকে না শেখাতেন, তবে মানুষকে অন্যান্য জীবের মতোই নগ্ন থাকতে হত। তখন অন্যান্য জীব থেকে তার কোনও স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠিত হত না এবং তার আলাদা কোনও মর্যাদা থাকত না। আল্লাহ তা'আলা মানুষকে তাঁর খলীফা ও শ্রেষ্ঠ মাখলুক বানিয়েছেন বলে অন্যান্য জীব থেকে তার স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন ছিল। পোশাকের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা তাকে সে স্বাতন্ত্র্য দান করেছেন। কাজেই এটা মানুষের প্রতি আল্লাহ তা'আলার এক বিশেষ অনুগ্রহ।
আয়াতে পোশাকের প্রথম উপকারিতারূপে ইরশাদ হয়েছে يُوَارِي سَوْآتِكُمْ (যা তোমাদের দেহের যে অংশ প্রকাশ করা দূষণীয় তা আবৃত করে)। سَوْآتِ শব্দটি سواة এর বহুবচন। এর উৎপত্তি سوء থেকে। سوء এর অর্থ মন্দ, ঘৃণ্য। গোপন অঙ্গ প্রকাশ করা একটি মন্দ ও ঘৃণ্য কাজ। তাই গোপন অঙ্গকে سَوْآتِ বলা হয়। আমরা একে সতর বলে থাকি। সতর শব্দটি মূলত আরবী। এর অর্থ ঢাকা। গোপন অঙ্গকে যেহেতু ঢেকে রাখা হয়, তাই একে সতর বলে। নারী ও পুরুষের সতর আলাদা। পোশাক দ্বারা উভয়ে আপন আপন সতর ঢেকে রাখতে পারে। যার শরীরের যতটুকু সতরের অন্তর্ভুক্ত, ততটুকু ঢেকে রাখার মধ্যেই পোশাক পরার সার্থকতা। আয়াতে যেহেতু সতর ঢাকাকে পোশাকের প্রথম উপকারিতারূপে উল্লেখ করা হয়েছে, সেহেতু নারী ও পুরুষকে পোশাক পরার বেলায় আপন আপন সতর যাতে ঢাকা পড়ে সেদিকে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে। পোশাক পরা সত্ত্বেও যদি সতরের কোনও অংশ খোলা থেকে যায়, তবে পোশাকের যথাযথ ব্যবহার হল না। তা দ্বারা শয়তানের ইচ্ছা পূরণ হয়। শয়তানের ইচ্ছা মানুষকে নগ্ন করা, তা পুরোপুরি হোক বা আংশিক। এ আয়াতের পরের আয়াতেই সে কথা জানানো হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
يَنْزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْآتِهِمَا
(সে তাদেরকে পরস্পরের লজ্জাস্থান দেখানোর উদ্দেশ্যে তাদের দেহ থেকে তাদের পোশাক অপসারণ করিয়েছিল)। শয়তান যাতে তার সে চাওয়ায় সফল হতে না পারে, তাই প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর পোশাক দ্বারা আপন আপন সতর ঢেকে রাখার ব্যাপারে পূর্ণ সচেতন থাকা একান্ত কর্তব্য।
আয়াতে পোশাকের দ্বিতীয় ফায়দা বর্ণনা করা হয়েছে- وَرِيشًا (এবং তা শোভাস্বরূপ)। নিঃসন্দেহে পোশাক মানুষের শোভা। পোশাকবিহীন মানুষ দৃশ্যত নিতান্তই কদাকার। পোশাক যত পূর্ণাঙ্গ হয়, শোভাও ততো পরিপূর্ণ হয়। তাই পরিপূর্ণ শোভার জন্য মানুষের উচিত এমন পোশাক পরিধান করা, যা দ্বারা সতর পুরোপুরি আচ্ছাদিত হয়; বরং সতর ঢাকার পরও শরীরের যে অংশ ঢাকা ভদ্রতার মধ্যে পড়ে, তাও যাতে ঢেকে যায়। বিশেষত অতিথিদের সামনে উপস্থিত হওয়া কিংবা মজলিসে, মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়ার সময় কেবল সতর ঢাকায় ক্ষান্ত না হয়ে পরিপূর্ণ পোশাক পরাই বাঞ্ছনীয়।
সুতরাং ইরশাদ হয়েছে-
يَابَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ
'হে আদমের সন্তান-সন্ততিগণ! যখনই তোমরা কোনও মসজিদে আসবে, তখন নিজেদের শোভার বস্তু (অর্থাৎ শোভনীয় পোশাক) নিয়ে আসবে। (সূরা আ'রাফ, আয়াত ৩১)
আয়াতে দু'রকম পোশাকের কথা বলা হয়েছে। এক হচ্ছে দৃশ্যমান পোশাক। আরেক হচ্ছে অদৃশ্য বা গুপ্ত পোশাক। উভয় পোশাকই মানুষের জন্য জরুরি। আয়াতে এ পর্যন্ত যা বলা হয়েছে তার সম্পর্ক দৃশ্যমান পোশাকের সঙ্গে। তারপর অদৃশ্য পোশাক সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-
وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ (বস্তুত তাকওয়ার যে পোশাক, সেটাই সর্বোত্তম)। তাকওয়া মানে আল্লাহভীতি। আল্লাহভীতিকে পোশাকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। পোশাক যেমন মানুষকে শীত ও তাপ থেকে রক্ষা করে এবং মানুষকে সুসজ্জিত করে, তেমনি আল্লাহর ভয় মানুষকে সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে রক্ষা করে এবং সৎকর্মের মাধ্যমে তার মানবিক সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। আয়াতে তাকওয়ার পোশাককে সর্বোত্তম বলা হয়েছে। কেননা শীত ও তাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করার চেয়ে পাপকর্ম থেকে রক্ষা করার গুরুত্ব অনেক বেশি। শীত ও তাপ দ্বারা মানুষ দুনিয়ায় কষ্ট পায় এবং সে কষ্ট ক্ষণস্থায়ী। পক্ষান্তরে পাপকর্মের কারণে আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে হবে, যার কষ্ট স্থায়ী ও অনন্ত। সেই স্থায়ী ও অনন্ত কষ্ট থেকে যে তাকওয়া ও আল্লাহভীতি দ্বারা রক্ষা পাওয়া যায়, তা শারীরিক পোশাকের তুলনায় উত্তম বৈ কি।
সুতরাং মানুষ শারীরিক পোশাকের যে গুরুত্ব দিয়ে থাকে, তারচে' অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার এ অদৃশ্য পোশাক অর্থাৎ তাকওয়ার। আমরা পোশাকের জন্য অর্থ খরচ করি এবং সে অর্থ উপার্জনের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলি। কিন্তু তাকওয়া অর্জনের জন্য সেরকম কোনও চেষ্টা করি না। এটা আমাদের চরম গাফলাতি। যে তাকওয়ার উপর আখিরাতের নাজাত নির্ভর করে, তা অর্জনে গাফলাতি করা উচিত নয়। এর জন্য আরও অনেক বেশি চেষ্টা ও সাধনা করা জরুরি। আয়াত এ পোশাককে সর্বোত্তম বলে আমাদেরকে সে উৎসাহই দান করছে।
আয়াতে এদিকেও ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, শারীরিক পোশাকও সর্বোত্তম হয় তখনই, যখন তাতে তাকওয়ার পরিচয় দেওয়া হয়। সুন্দর থেকে সুন্দর পোশাক পরিধানের আগ্রহ থাকে সকলেরই। তাই পোশাক সংগ্রহের সময় মানুষ আপন সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোত্তমটি খুঁজে বেড়ায়। আয়াত বলছে, তুমি যত অভিনব স্টাইলই খোঁজ না কেন, যদি তাকওয়ার ছাপ না থাকে, তবে সে পোশাক কখনওই উত্তম হবে না। পোশাকে তাকওয়ার ছাপ থাকার অর্থ হল পোশাকে শরী'আতের নির্দেশনা অনুসরণ করা। যেমন পোশাক এমন হওয়া, যাতে সতর পুরোপুরি ঢাকা পড়ে। যেন খুব বেশি আঁটোসাঁটো না হয় এবং অতিরিক্ত পাতলা না হয়। পুরুষের ক্ষেত্রে যেন টাখনুর নিচে ঝুলে না পড়ে এবং পোশাক রেশমের না হয়। নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই অহমিকা পরিত্যাজ্য। যে পোশাক অহমিকা সৃষ্টি করে, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। মোটকথা জীবনের অন্যসব ক্ষেত্রের মতো পোশাকের বেলায়ও তাকওয়া ও আল্লাহভীতির পরিচয় দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
আয়াতটির শিক্ষা
ক. পোশাক আল্লাহ তা'আলার অতি বড় এক নি'আমত। এর জন্য শোকর আদায় করতে হবে।
খ. পোশাক মানুষের বিশেষত্ব। নগ্নতা মনুষ্যত্বের পরিপন্থি।
গ. পোশাক পরিধানে সতর ঢাকার প্রতি বিশেষ লক্ষ রাখতে হবে, যাতে করে সতরের তুলনায় পোশাক ছোট না হয়, বেশি আঁটোসাঁটো না হয় এবং অতিরিক্ত পাতলাও না হয়।
ঘ. তাকওয়াও এক রকম পোশাক; বরং সর্বোত্তম পোশাক। তাই তাকওয়া অর্জনের জন্য শারীরিক পোশাক অর্জনের চেয়েও বেশি চেষ্টা করতে হবে।
ঙ. পোশাক অবশ্যই তাকওয়াসম্মত হতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে যাতে পোশাকের কোনও দিকই শরী'আতের খেলাফ না হয়।
• দুই নং আয়াত
وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيلَ تَقِيكُمُ الْحَرَّ وَسَرَابِيلَ تَقِيكُمْ بَأْسَكُم
অর্থ: আর তোমাদের জন্য বানিয়েছেন এমন পোশাক, যা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে এবং এমন পোশাক, যা যুদ্ধকালে তোমাদেরকে রক্ষা করে।( সূরা নাহল, আয়াত ৮১)
ব্যাখ্যা
এটা সূরা নাহলের ৮১ নং আয়াতের অংশবিশেষ। এ সূরায় আল্লাহ তা'আলা তাঁর কুদরতের বিভিন্ন নিদর্শন এবং মানুষকে দেওয়া তাঁর বহু নি'আমত তুলে ধরেছেন। সে প্রসঙ্গেই এখানে পোশাকের উল্লেখ করা হয়েছে। পোশাক মানুষের জন্য আল্লাহ তা'আলার এক বিরাট নি'আমত। এর দ্বারা কেবল লজ্জা নিবারণই হয় না; শীত ও তাপ থেকেও আত্মরক্ষা হয়। এ আয়াতে কেবল তাপ থেকে রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। শীতের উল্লেখ করা হয়নি এ কারণে যে, তা এমনিই বুঝে আসে। তাপের কথা বললে শীতের বিষয়টি এমনিই চলে আসে। তাই আলাদা করে এর উল্লেখের প্রয়োজন হয় না। তা সত্ত্বেও অনুগ্রহকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য অপর এক আয়াতে শীতের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে ইরশাদ হয়েছে-
وَالْأَنْعَامَ خَلَقَهَا لَكُمْ فِيهَا دِفْءٌ
'তিনিই চতুষ্পদ জন্ত সৃষ্টি করেছেন, যার মধ্যে তোমাদের জন্য শীত থেকে বাঁচার উপকরণ রয়েছে।’ (সূরা নাহল, আয়াত ৫)
অর্থাৎ পশুর পশম দ্বারা এমন পোশাক তৈরি কর, যা দ্বারা তোমরা শীতের কষ্ট থেকে বাঁচতে পার।
এ আয়াতে পোশাকের আরেকটি উপকার বলা হয়েছে যুদ্ধ-বিগ্রহে আত্মরক্ষা। অর্থাৎ শত্রুর আঘাত থেকে আত্মরক্ষার জন্য লোহা দ্বারা বর্ম তৈরি করা হয় এবং শিরস্ত্রাণ বানানো হয়। তাছাড়া রেশম ও অন্যান্য উপকরণ দ্বারা এমন মোটা কাপড়ও তৈরি করা হয়, যা দ্বারা শত্রুর আঘাত থেকে আত্মরক্ষা করা যায়। মোটকথা পোশাক মানুষের নানাবিধ উপকারে আসে। এহেন উপকারী পোশাক আল্লাহ তা'আলারই দান। কাজেই মানুষের কর্তব্য এর জন্য আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায় করা এবং সর্বপ্রকার শিরক হতে বিরত থেকে কেবল তাঁরই ইবাদত-বন্দেগী করা।
আয়াতটির শিক্ষা
পোশাক দ্বারা আমরা বহুবিধ উপকার পেয়ে থাকি। তাই এর জন্য একান্তভাবে আল্লাহ তা'আলার শোকর আদায় করা উচিত।
সাদা রঙের পোশাকের শ্রেষ্ঠত্ব
হাদীছ নং: ৭৭৮
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা সাদা রঙের কাপড় পড়বে। কেননা এটাই তোমাদের সর্বোত্তম কাপড়। এর দ্বারাই তোমাদের মৃতদের কাফন পরাবে। -আবু দাউদ ও তিরমিযী"
( সুনানে আবূ দাউদ: ৩৮৭৮; জামে তিরমিযী: ৯৯৪; সুনানে নাসাঈ ১৮৯৬; মুসনাদে আহমাদ: ২০৪৫; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৬২০০; সহীহ ইবনে হিব্বান ৫৪২৩; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১২৪৮৫; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা ৮৯৫১; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১৪৭৭)
হাদীছ নং: ৭৭৮
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা সাদা রঙের কাপড় পড়বে। কেননা এটাই তোমাদের সর্বোত্তম কাপড়। এর দ্বারাই তোমাদের মৃতদের কাফন পরাবে। -আবু দাউদ ও তিরমিযী"
( সুনানে আবূ দাউদ: ৩৮৭৮; জামে তিরমিযী: ৯৯৪; সুনানে নাসাঈ ১৮৯৬; মুসনাদে আহমাদ: ২০৪৫; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ৬২০০; সহীহ ইবনে হিব্বান ৫৪২৩; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১২৪৮৫; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা ৮৯৫১; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ১৪৭৭)
كتاب اللباس
كتَاب اللّبَاس
باب استحباب الثوب الأبيض، وجواز الأحمر والأخضر والأصفر والأسود، وجوازه من قطن وكتان وشعر وصوف وغيرها إِلاَّ الحرير
قَالَ الله تَعَالَى: {يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَاري سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ} [الأعراف: 26]، وقال تَعَالَى: {وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيلَ تَقِيكُمُ الحَرَّ وَسَرَابِيلَ تَقِيكُمْ بَأسَكُمْ} [النحل: 81].
باب استحباب الثوب الأبيض، وجواز الأحمر والأخضر والأصفر والأسود، وجوازه من قطن وكتان وشعر وصوف وغيرها إِلاَّ الحرير
قَالَ الله تَعَالَى: {يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَاري سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ} [الأعراف: 26]، وقال تَعَالَى: {وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيلَ تَقِيكُمُ الحَرَّ وَسَرَابِيلَ تَقِيكُمْ بَأسَكُمْ} [النحل: 81].
778 - وعن ابن عباس رضي الله عنهما: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ:
«الْبَسُوا مِنْ ثِيَابِكُمْ البَيَاضَ؛ فَإنَّهَا مِنْ خَيْرِ ثِيَابِكُمْ، وَكَفِّنُوا فِيهَا مَوْتَاكُمْ». رواه أَبُو داود والترمذي، (1) وقال: «حديث حسن صحيح».
«الْبَسُوا مِنْ ثِيَابِكُمْ البَيَاضَ؛ فَإنَّهَا مِنْ خَيْرِ ثِيَابِكُمْ، وَكَفِّنُوا فِيهَا مَوْتَاكُمْ». رواه أَبُو داود والترمذي، (1) وقال: «حديث حسن صحيح».
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছটিতে জীবিতদেরকে সাদা পোশাক পরতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে এবং মৃতদেরকে সাদা কাপড় দিয়ে কাফন দিতে বলা হয়েছে। এর কারণ বলা হয়েছে যে, সাদা কাপড়ই উৎকৃষ্ট। সম্ভবত সাদা পোশাক মানুষের স্বভাব-প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তাই দেখা যায় সব কালেই মানুষ পোশাকের ক্ষেত্রে অন্যান্য রঙের উপর সাদা রংকে প্রাধান্য দিয়েছে। অনুষ্ঠানাদিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে মানুষ সাধারণত সাদা পোশাককেই বেছে নেয়। ইসলাম স্বভাবধর্ম। তার প্রতিটি শিক্ষা স্বভাব-প্রকৃতির অনুকূল। সে কারণেই হয়তো পোশাকের বেলায় সাদা রংকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও সাদা রং পসন্দ করতেন। তিনি সাদা রঙের পোশাক পরেছেনও। ফিরিশতাদের বেলায়ও সাদা রঙের প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। 'হাদীছু জিবরীল' নামক প্রসিদ্ধ হাদীছে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালামের আগমন সম্পর্কে বলা হয়েছে-
إِذْ طَلَعَ عَلَيْنَا رَجُلٌ شَدِيدُ بَيَاضِ الثِّيَابِ
'হঠাৎ আমাদের সামনে ধবধবে সাদা পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তির অভ্যুদয় ঘটল।" ( সহীহ মুসলিম: ৮: সুনানে আবু দাউদ: ৪৬৯৫; জামে' তিরমিযী: ২৬১০; সুনানে নাসাঈ: ৪৯৯০; সুনানে ইবন মাজাহ: ৬৩; মুসনাদে আহমাদ ৩৬৬; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা ৩৭৫৫৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা: ২৫০৪; সহীহ ইবনে হিব্বান: ১৬৮; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৮৬১০)
উহুদের যুদ্ধে ফিরিশতাদের উপস্থিতি সম্পর্কে হযরত সা'দ ইবন আবী ওয়াক্কাস রাযি. বর্ণনা করেন-
«رأيت بشمال النبي صلى الله عليه وسلم ويمينه رجلين، عليهما ثياب بيض يوم أحد، ما رأيتهما قبل ولا بعد»
'আমি উহুদের যুদ্ধের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ডান ও বামদিকে সাদা কাপড় পরিহিত দুই ব্যক্তিকে দেখলাম। তাদেরকে এর আগেও দেখিনি, পরেও নয়। অর্থাৎ তারা ছিলেন ফিরিশতা।
( সহীহ বুখারী: ৫৮২৬; সহীহ মুসলিম: ২৩০৬; মুসনাদে আহমাদ : ১৫৩০; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৩২১৫৩; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৬৯৮৭; মুসনাদুল বাযযার: ১২৩৮ )
হাদীছে সাদা পোশাককে পবিত্রতম বলা হয়েছে। এর কারণ সাদা কাপড়ে অল্প ময়লা লাগলেও তা দেখা যায়। ফলে তা পরিষ্কার করা হয়। রঙিন কাপড়ে ময়লা সহজে দেখা যায় না। তাই তা পরিষ্কার করার প্রতি সাদা কাপড়ের মতো অতটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এ কারণেই সাদা কাপড় পরার প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এর দ্বারা ইসলামে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব কত বেশি তা উপলব্ধি করা যায়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ইসলামে সাদা পোশাক বেশি পসন্দনীয়। তাই বিশেষ সমস্যা না থাকলে অন্যান্য রঙের উপর সাদা রঙের পোশাককে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
إِذْ طَلَعَ عَلَيْنَا رَجُلٌ شَدِيدُ بَيَاضِ الثِّيَابِ
'হঠাৎ আমাদের সামনে ধবধবে সাদা পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তির অভ্যুদয় ঘটল।" ( সহীহ মুসলিম: ৮: সুনানে আবু দাউদ: ৪৬৯৫; জামে' তিরমিযী: ২৬১০; সুনানে নাসাঈ: ৪৯৯০; সুনানে ইবন মাজাহ: ৬৩; মুসনাদে আহমাদ ৩৬৬; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা ৩৭৫৫৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা: ২৫০৪; সহীহ ইবনে হিব্বান: ১৬৮; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৮৬১০)
উহুদের যুদ্ধে ফিরিশতাদের উপস্থিতি সম্পর্কে হযরত সা'দ ইবন আবী ওয়াক্কাস রাযি. বর্ণনা করেন-
«رأيت بشمال النبي صلى الله عليه وسلم ويمينه رجلين، عليهما ثياب بيض يوم أحد، ما رأيتهما قبل ولا بعد»
'আমি উহুদের যুদ্ধের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ডান ও বামদিকে সাদা কাপড় পরিহিত দুই ব্যক্তিকে দেখলাম। তাদেরকে এর আগেও দেখিনি, পরেও নয়। অর্থাৎ তারা ছিলেন ফিরিশতা।
( সহীহ বুখারী: ৫৮২৬; সহীহ মুসলিম: ২৩০৬; মুসনাদে আহমাদ : ১৫৩০; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ৩২১৫৩; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৬৯৮৭; মুসনাদুল বাযযার: ১২৩৮ )
হাদীছে সাদা পোশাককে পবিত্রতম বলা হয়েছে। এর কারণ সাদা কাপড়ে অল্প ময়লা লাগলেও তা দেখা যায়। ফলে তা পরিষ্কার করা হয়। রঙিন কাপড়ে ময়লা সহজে দেখা যায় না। তাই তা পরিষ্কার করার প্রতি সাদা কাপড়ের মতো অতটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এ কারণেই সাদা কাপড় পরার প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। এর দ্বারা ইসলামে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব কত বেশি তা উপলব্ধি করা যায়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ইসলামে সাদা পোশাক বেশি পসন্দনীয়। তাই বিশেষ সমস্যা না থাকলে অন্যান্য রঙের উপর সাদা রঙের পোশাককে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)