রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

৪. পোষাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা

হাদীস নং: ৭৮১
পোষাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা
চতুর্থ ভাগ: পোশাক
পরিচ্ছেদ:১ সাদা পোশাকের উত্তমতা; লাল, সবুজ, হলুদ ও কালো রঙের পোশাক পরার বৈধতা এবং রেশম ছাড়া সুতা, পশম ইত্যাদির তৈরি পোশাক পরার বৈধতা
বিদায় হজ্জের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের লাল ডোরাযুক্ত কাপড় পরিধান করা
হাদীছ নং: ৭৮১

হযরত আবূ জুহায়ফা ওয়াহব ইবন আব্দুল্লাহ রাযি. বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মক্কায় দেখেছি। তিনি আবতাহ নামক স্থানে চামড়ার একটি লাল তাঁবুতে ছিলেন। বিলাল তাঁর ওযুর (অবশিষ্ট) পানি নিয়ে আসলেন। কেউ সে পানির একটা অংশ পেলেন এবং কেউ নিজ অংশ থেকে (তার ভাইকে খানিকটা) ঢেলে দিলেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি লাল পোশাক পরিহিত অবস্থায় বের হয়ে আসলেন। আমি যেন তাঁর দুই নলার শুভ্রতা দেখতে পাচ্ছি। তিনি ওযু করলেন এবং বিলাল আযান দিলেন। আমি তার মুখ এদিকে-ওদিকে অনুসন্ধান করছিলাম। তিনি ডান ও বাম দিকে ফিরে বলছিলেন- حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ، حَيَّ عَلَى الفَلَاحِ )এসো নামাযের দিকে, এসো সফলতার দিকে)। তারপর তাঁর সামনে একটি বর্শা গেড়ে দেওয়া হল। তিনি সামনে এগিয়ে গেলেন এবং নামায পড়লেন। তাঁর সম্মুখ দিয়ে কুকুর ও গাধা অতিক্রম করছিল, কিন্তু বাধা দেওয়া হচ্ছিল না। -বুখারী ও মুসলিম
( সহীহ বুখারী: ৩৭৬; সহীহ মুসলিম: ৫০৩; সুনানে আবূ দাউদ: ৫২০; জামে তিরমিযী: ১৯৫; মুসনাদে আহমাদ: ১৮৭৫৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা ২৯৯৫; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা : ৩২৪৮৯; সহীহ ইবনে হিব্বান ২৩৯৪; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ২৮৯; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৫৪৯৭; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৪০৯)
كتاب اللباس
كتَاب اللّبَاس
باب استحباب الثوب الأبيض، وجواز الأحمر والأخضر والأصفر والأسود، وجوازه من قطن وكتان وشعر وصوف وغيرها إِلاَّ الحرير
781 - وعن أَبي جُحَيفَةَ وَهْب بن عبد الله - رضي الله عنه - قَالَ: رَأيتُ النبيَّ - صلى الله عليه وسلم - بِمكّةَ وَهُوَ بالأبْطَحِ في قُبَّةٍ لَهُ حَمْرَاءَ مِنْ أَدمِ، فَخَرَجَ بِلاَلٌ بِوَضُوئِهِ، فَمِنْ نَاضِحٍ وَنَائِلٍ، فَخَرَجَ النبيُّ - صلى الله عليه وسلم - وعليه حُلَّةٌ حَمْرَاءُ، كَأنِّي أنْظُرُ إِلَى بَيَاضِ سَاقَيْهِ، فَتَوَضّأ وَأذَّنَ بِلاَلٌ، فَجَعَلْتُ أتَتَبَّعُ فَاهُ هاهُنَا وَهَاهُنَا، يقولُ يَمِينًا وَشِمَالًا: حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ، حَيَّ عَلَى الفَلاَحِ، ثُمَّ رُكِزَتْ لَهُ عَنَزَةٌ، فَتَقَدَّمَ فَصَلَّى يَمُرُّ بَيْنَ يَدَيْهِ الْكَلْبُ وَالْحِمَارُ لاَ يُمْنَعُ. متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
«العنَزة» بفتح النون: نحو العُكازَة.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটির বর্ণনাকারী হযরত আবূ জুহায়ফা রাযি.। তিনি বিদায় হজ্জে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেমনটা দেখেছিলেন, তার একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ এ হাদীছে প্রদান করেছেন। তাঁর সূত্রে অনেকেই এটি বর্ণনা করেছেন। তাদের পরস্পরের মধ্যে বর্ণনার ধারাবাহিকতায় কিছুটা পার্থক্য আছে। এখানে যে বর্ণনাটি উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে পরের কথা আগে এবং আগের কথা পরে চলে এসেছে। যেমন এখানে প্রথমে হযরত বিলাল রাযি. কর্তৃক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওযুর অবশিষ্ট পানি নিয়ে বের হয়ে আসার কথা বলা হয়েছে। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওযু করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে পরে। অথচ ঘটনার ধারাবাহিকতা হবে এর বিপরীত।

যাহোক হযরত আবূ জুহায়ফা রাযি, জানাচ্ছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবতাহ নামক স্থানে লাল চামড়ার একটি তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। আবতাহ'র অপর নাম বাতহা। একে 'মুহাসসাব'-ও বলে। জায়গাটি মিনার কাছাকাছি। হযরত আবূ জুহায়ফা রাযি. একদিন জোহরের সময় এখানে উপস্থিত হন। তখন তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লাল হুল্লা পরিহিত অবস্থায় তাঁবু থেকে বের হয়ে আসতে দেখেন।

হুল্লা মানে একই কাপড়ের এক জোড়া লুঙ্গি ও চাদর। এটি লাল ছিল মানে লাল ডোরাযুক্ত ছিল, যেমনটা অন্যান্য বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায়। পুরোপুরি লাল রঙের কাপড় পরা পুরুষের জন্য মাকরূহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পরতে নিষেধ করেছেন।

হযরত আবূ জুহায়ফা রাযি, যে সময়টার কথা বলছেন, তখন ছিল যোহরের ওয়াক্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁবুর বাইরে এসে ওযু করেন। হযরত বিলাল রাযি. যোহরের আযান দেন। আযানে যখন حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ বলছিলেন, তখন ডানদিকে এবং যখন حَيَّ عَلَى الفَلَاحِ বলছিলেন, তখন বামদিকে মুখ ঘোরাচ্ছিলেন। হযরত আবূ জুহায়ফা রাযি. এটা বিশেষভাবে লক্ষ করলেন। এর দ্বারা প্রমাণ হয় আযানে حَيَّ عَلَى الفَلَاحِ . حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ বলার সময় যথাক্রমে ডানে ও বামে মুখ ঘোরানো নিয়ম। এটা সুন্নত। আযান শেষ হলে হযরত বিলাল রাযি. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওযুর অবশিষ্ট পানি নিয়ে আসেন। উপস্থিত সাহাবীদের মধ্যে তা নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে গেল। কেউ তো সরাসরি সে অবশিষ্ট পানির একটা অংশ পেয়ে গেলেন। আর যারা সরাসরি পেলেন না, তাদেরকে যারা পেয়েছিলেন তারা নিজেদের অংশ থেকে খানিকটা ঢেলে দিলেন। তারা এতটা আগ্রহের সঙ্গে যে সেই অবশিষ্ট পানি নিচ্ছিলেন, তার কারণ ছিল তাবাররুক। অর্থাৎ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতের স্পর্শ থাকায় তারা সে পানিকে বরকতপূর্ণ মনে করেছিলেন। এর দ্বারা নবীর স্পর্শে বরকত থাকার প্রমাণ মেলে। যারা নবীর খাঁটি উত্তরসূরী, সে আল্লাহওয়ালাদের স্পর্শেও বরকত লাভ হয়।

তারপর হযরত বিলাল রাযি. তাঁবুর ভেতর গিয়ে একটি 'আনাযা নিয়ে আসেন। 'আনাযা বর্শার মতোই একটা অস্ত্র। তবে তা বর্শার তুলনায় ছোট হয়ে থাকে। 'আনাযাটি এক জায়গায় গেড়ে দেওয়া হল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটিকে সুতরা বানিয়ে নামাযে দাঁড়ালেন। সবাই তাঁর পেছনে কাতার বেঁধে ইকতিদা করলেন। তাদের সামনে কোনও সুতরা ছিল না। সুতরার ওপাশ দিয়ে কুকুর, গাধা ইত্যাদি চলাচল করছিল। কোনও কোনও বর্ণনায় নারীদের অতিক্রম করার কথাও আছে। তাতে তাদের যাওয়াটা হয় মুক্তাদীদের সম্মুখ থেকে। অথচ তাদের সামনে কোনও সুতরা ছিল না। বোঝা গেল ইমামের সুতরাই মুক্তাদীদের জন্য যথেষ্ট। তাদের আলাদা সুতরার প্রয়োজন নেই।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. পুরুষের জন্য লাল ডোরাযুক্ত কাপড় পরা জায়েয। পুরোপুরি লাল বর্ণের পোশাক পুরুষের জন্য পসন্দনীয় নয়।

খ. আযানে حَيَّ عَلَى الفَلَاح ও حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ বলার সময় যথাক্রমে ডান ও বামদিকে মুখ ফেরানো সুন্নত।

গ. আল্লাহওয়ালাদের স্পর্শযুক্ত বস্তুকে তাবাররুক হিসেবে গ্রহণ করা জায়েয।

ঘ. জামাতে নামায পড়লে ইমামের সুতরাই মুক্তাদীর সুতরা হিসেবে যথেষ্ট। তাদের আলাদা সুতরার প্রয়োজন নেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)