রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

৪. পোষাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা

হাদীস নং: ৭৯০
পোষাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা
পরিচ্ছেদ:৩ জামা, জামার হাতা, লুঙ্গি ও পাগড়ির শামলার দৈর্ঘ্য, অহংকারবশত এগুলোর কোনওটি ঝুলিয়ে দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা এবং বিনা অহংকারে হলে তার কারাহাত
টাখনুর নিচে পোশাক পরা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ
হাদীছ নং: ৭৯০

হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি অহংকারবশে তার কাপড় হেঁচড়িয়ে চলে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না। তখন আবু বকর রাযি. বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার লুঙ্গি ঝুলে পড়ে, যদি না আমি বিশেষভাবে লক্ষ রাখি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নও, যারা অহংকারবশে এটা করে। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৫৭৮৪; সহীহ মুসলিম: ২০৮৫; সুনানে আবূ দাউদ: ৪০৮৫; জামে তিরমিযী: ১৭৩০; সুনানে নাসাঈ ৫৩৩৫; মুসনাদে আহমাদ: ৫৩৫১; মুসনাদুল হুমায়দী: ৬৫১; মুসনাদুল বাযযার: ৭৯৫০; মুসনাদে আবূ ইয়া'লা: ৫৫৭২; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫৪৪৪; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর ১৩১৭৮; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা ;৩৩১৪)
كتاب اللباس
باب صفة طول القميص والكُم والإزار وطرف العمامة وتحريم إسبال شيء من ذلك على سبيل الخيلاء وكراهته من غير خيلاء
790 - وعن ابن عمر رضي الله عنهما: أنَّ النبيَّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلاءَ لَمْ يَنْظُرِ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ القِيَامَةِ» فَقَالَ أَبُو بكر: يَا رسول الله، إنَّ إزاري يَسْتَرْخِي إِلاَّ أَنْ أَتَعَاهَدَهُ، فَقَالَ لَهُ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «إنَّكَ لَسْتَ مِمَّنْ يَفْعَلُهُ خُيَلاءَ». رواه البخاري وروى مسلم بعضه. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীসটিতে টাখনুর নিচে লুঙ্গি পরিধানকারী সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তার দিকে তাকাবেন না। অর্থাৎ রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। বড়ই ভয়ানক কথা। রহমতের দৃষ্টিতে তাঁর না তাকানোর অর্থ তিনি এরূপ ব্যক্তির প্রতি অসন্তুষ্ট থাকবেন, তার পরিণাম নিশ্চিত জাহান্নাম। আল্লাহ তা'আলা সে পরিণাম থেকে আমাদের রক্ষা করুন।

হাদীছের এ সতর্কবাণী শুনে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. ভয় পেয়ে গেলেন। কারণ তাঁর লুঙ্গি অসতর্কতাবশত টাখনুর নিচে নেমে যেত। তাই তিনি আরয করলেন-- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার লুঙ্গি ঝুলে পড়ে, যদি না আমি বিশেষভাবে লক্ষ রাখি। অর্থাৎ এ অবস্থায় আমিও কি ওই সতর্কবাণীর আওতায় পড়ব? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে আশ্বস্ত করে বললেন- তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নও, যারা অহংকারবশে এটা করে। অর্থাৎ এ সতর্কবাণী তাদের জন্য প্রযোজ্য, যারা এটা করে অহংকারবশত। তুমি যেহেতু অহংকারবশত কর না, তাই তোমার জন্য এটা প্রযোজ্য নয়।

এখন এদিকে লক্ষ করে কেউ যদি বলে আমারও টাখনুর নিচে লুঙ্গি বা প্যান্ট-পায়জামা পরাটা অহংকারের কারণে নয়, তবে তার সে কথা গ্রহণযোগ্য হবে কি? না, গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা নিজেকে অহংকারী মনে করে না কেউ, যদিও বাস্তবিকপক্ষে অহংকারী হয়ে থাকে। হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. যে অহংকারী ছিলেন না, তা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেওয়া সনদ দ্বারা জানতে পারি। আমাদের কারও পক্ষে তো এরকম সনদ নেই। তাই আমাদের কারও নিজেকে নিরহংকার ভাবার কোনও সুযোগ নেই।

প্রকৃতপক্ষে কার মনে অহংকার আছে আর কার মনে তা নেই, তা আল্লাহ তা'আলাই ভালো জানেন। সাধারণত টাখনুর নিচে পরাই হয় অহংকারবশে। যাদের এরকম পরার অভ্যাস, তারা টাখনুর উপরে উঠাতে পারে না। তাতে লজ্জাবোধ করে। এটা অহংকারেরই লক্ষণ। সুতরাং সাধারণ এ অবস্থার প্রতি লক্ষ করেই হাদীছটিতে অহংকারের কথা বলা হয়েছে। না হয় কোনও কোনও হাদীছে অহংকারের উল্লেখ ছাড়াই এ নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এ সতর্কবাণী কেবল লুঙ্গির জন্যই নির্ধারিত নয়; বরং জামা ও পায়জামার জন্যও প্রযোজ্য। অর্থাৎ পরিধেয় যে-কোনও বস্ত্র নিচের দিকে সর্বোচ্চ টাখনু পর্যন্ত নামানো যাবে, এর নিচে নয়। পুরুষের সতর যেহেতু হাঁটু পর্যন্ত, তাই হাঁটুর নিচে নামাতে হবে অবশ্যই। তার মানে পরিধেয় বস্ত্র হাঁটু ও টাখনুর মাঝামাঝি যে-কোনও স্থান পর্যন্ত নামানো যাবে। লুঙ্গি বা পায়জামা নলার মাঝ বরাবর হলে ভালো।
প্রকাশ থাকে যে, টাখনুর নিচে নামানোর নিষেধাজ্ঞা কেবল পুরুষদের জন্যই প্রযোজ্য, নারীদের জন্য নয়। তাদের জন্য টাখনুর নিচে নামানোই জরুরি। কেননা তাদের পা'ও সতরের অন্তর্ভুক্ত।
উল্লেখ্য, মোজা দ্বারা পা ঢাকাতে কোনও অসুবিধা নেই। নিষিদ্ধ হচ্ছে পরিধেয় কাপড় টাখনুর নিচে নামানো। মোজা তার মধ্যে পড়ে না। পায়ে মোজা পরিহিত অবস্থায়ও পরিধেয় বস্ত্র টাখনুর নিচে নামানো নিষেধ।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. কিয়ামতে আল্লাহ তা'আলার রহমতের দৃষ্টি আমাদের কাম্য। সুতরাং যা-কিছু সে দৃষ্টিলাভের পক্ষে বাধা, তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

খ. পরিধেয় বস্ত্র, তা লুঙ্গি ও প্যান্ট-পায়জামা হোক কিংবা জামা, সর্বাবস্থায় টাখনুর উপরে পরতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)