রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

৪. পোষাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা

হাদীস নং: ৭৯৬
পোষাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা
পরিচ্ছেদ:৩ জামা, জামার হাতা, লুঙ্গি ও পাগড়ির শামলার দৈর্ঘ্য, অহংকারবশত এগুলোর কোনওটি ঝুলিয়ে দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা এবং বিনা অহংকারে হলে তার কারাহাত
টাখনুর নিচে পোশাক ঝুলিয়ে নামায পড়লে
হাদীছ নং: ৭৯৬

হযরত আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, এক ব্যক্তি লুঙ্গি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে নামায় পড়ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে তাকে বললেন, যাও, ফের ওযু করো। সে গিয়ে ওযু করে আসল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও, ফের ওযু করো। তখন এক ব্যক্তি তাঁকে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কেন তাকে ওযু করতে আদেশ করলেন, তারপর তার সম্পর্কে নীরব থাকলেন? তিনি বললেন, সে তার লুঙ্গি টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে নামায পড়ছিল। অথচ আল্লাহ ওই ব্যক্তির নামায কবুল করেন না, যে টাখনুর নিচে পোশাক ঝুলিয়ে দেয়। -আবু দাউদ
(সুনানে আবু দাউদ: ৬৩৮; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা ৯৭০৩; মুসনাদে আহমাদ: ১১৬২৮; মুসনাদুল বাযযার: ৮৭৬২; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৩৩০৫)
كتاب اللباس
باب صفة طول القميص والكُم والإزار وطرف العمامة وتحريم إسبال شيء من ذلك على سبيل الخيلاء وكراهته من غير خيلاء
796 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - قَالَ: بينما رَجُلٌ يُصَلَّي مسبلٌ إزَارَهُ، قَالَ لَهُ رسول الله - صلى الله عليه وسلم: «اذْهَبْ فَتَوَضَّأ» فَذَهَبَ فَتَوَضّأَ، ثُمَّ جَاءَ، فَقَالَ: «اذْهَبْ فَتَوَضّأ» فَقَالَ لَهُ رجُلٌ: يَا رسولَ اللهِ، مَا لَكَ أمَرْتَهُ أَنْ يَتَوَضّأَ ثُمَّ سَكَتَّ عَنْهُ؟ قَالَ: «إنّهُ كَانَ يُصَلِّي وَهُوَ مُسْبِلٌ إزَارَهُ، وَإنَّ اللهَ لاَ يَقْبَلُ صَلاَةَ رَجُلٍ مُسْبلٍ». رواه أَبُو داود بإسناد صحيح عَلَى شرط مسلم. (1)

হাদীসের ব্যাখ্যা:

টাখনুর নিচে পোশাক পরা কী কঠিন গুনাহ, তা এ হাদীছ দ্বারা কিছুটা অনুমান করা যায়। জনৈক ব্যক্তি টাখনুর নিচে লুঙ্গি ঝোলানো অবস্থায় নামায পড়ছিল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পুনরায় ওযু করে আসতে বললেন। অর্থাৎ নতুন ওযু করে নামায দোহরাতে বললেন। লোকটি তাই করল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পুনরায় একই হুকুম করলেন। লোকটি সেই হুকুম পালন করল। এরপর আর তাকে সেই হুকুম করা হয়নি। তাই অপর এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাকে প্রথমে নতুনভাবে ওযু করার হুকুম করলেন, পরে আর সে হুকুম করলেন না; নীরব থাকলেন, এর কারণ কী? তিনি বললেন, সে টাখনুর নিচে লুঙ্গি ঝোলানো অবস্থায় নামায পড়ছিল। আর যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে পোশাক ঝুলিয়ে দেয়, তার নামায আল্লাহ কবুল করেন না।

এর দ্বারা বোঝা যায় তৃতীয়বার সে ব্যক্তি লুঙ্গি উপরে উঠিয়ে নিয়েছিল। দ্বিতীয়বারও সে আগের মতোই টাখনুর নিচে লুঙ্গি ঝোলানো অবস্থায় নামায পড়েছিল। দু'-দু'বার তাকে নতুন ওযু করে নামায দোহরাতে বলায় সম্ভবত তার মনেও প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল যে, কেন তাকে নামায দোহরানোর হুকুম দেওয়া হয়েছে। তাই সে খুব চিন্তা করল। নিজেকে পর্যবেক্ষণ করল। এভাবে হয়তো সে বুঝতে পেরেছিল যে, টাখনুর নিচে লুঙ্গি পরার কারণেই তাকে এ হুকুম করা হয়েছে। তার প্রতি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরও তাওয়াজ্জুহ ছিল। তিনি তার সংশোধনের প্রতি মনোযোগী ছিলেন। সংশোধনের ব্যবস্থাস্বরূপ তাকে নতুন ওযু করতে বললেন। ওযু দ্বারা বাহ্যিক পবিত্রতা অর্জিত হয়। বাহ্যিক পবিত্রতার একটা প্রভাব অন্তরের উপরও থাকে। ফলে আত্মিক পবিত্রতা অর্জনের পথ খুলে যায়। এসব কারণে আল্লাহ তা'আলাই তার অন্তর্দৃষ্টি খুলে দিয়েছিলেন, যা দ্বারা সে দেখতে পেয়েছিল টাখনুর নিচে লুঙ্গি পরাটাই তার অপরাধ। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাচ্ছেন যাতে তার সে অপরাধের সংশোধন হয়ে যায়। ফলে শেষবার সে টাখনুর উপর লুঙ্গি উঠিয়ে নেয় আর এ অবস্থায় পুনরায় নামায আদায় করে।

হাদীছে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে পোশাক ঝোলানো অবস্থায় নামায পড়ে, তার নামায আল্লাহ কবুল করেন না। এর কারণ নামায হল বিনয়ের অবস্থা। আর টাখনুর নিচে পোশাক পরা অহংকারী ব্যক্তির কাজ, যা কিনা নামাযের অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। অপর এক হাদীছে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি অহংকারবশে টাখনুর নিচে পোশাক পরে, আল্লাহ তা'আলা তার দিকে তাকান না। যার দিকে আল্লাহ তাকান না, তার নামায কীভাবে কবুল হতে পারে?

নামায কবুল না হওয়ার মানে নামায পড়ার দ্বারা যে ছাওয়াব পাওয়া যেত তা পাওয়া যায় না। এর মানে এ নয় যে, তার নামায আদায়ই হয় না। নামায অবশ্যই হয়ে যায়। নামায হওয়া না হওয়াটা নির্ভর করে নামাযের ফরয-ওয়াজিব আদায় হওয়া না হওয়ার উপর। যে ব্যক্তি নামাযের সবগুলো ফরয ও ওয়াজিব আদায় করে ফেলে, তার নামায অবশ্যই আদায় হয়ে যায়, যদিও সে টাখনুর নিচে পোশাক পরে। তবে একইসঙ্গে সে কঠিন গুনাহগারও হয়। তার গুনাহ নামাযে মশগুল হওয়ার আগেই হচ্ছিল। নামায ছাড়াও টাখনুর নিচে পোশাক পরা হারাম। সে যেহেতু হারামে লিপ্ত থাকা অবস্থায় নামাযে দাঁড়িয়েছে, তাই নামায সম্পন্ন হয়ে গেলেও একইসঙ্গে সে গুনাহগারও হবে। তাই উলামায়ে কেরাম বলেন, এরূপ ব্যক্তির নামায মাকরূহ বলে গণ্য হয়।

লক্ষণীয়, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওই ব্যক্তিকে নতুনভাবে ওযূ করার হুকুম করেছেন। কিন্তু তার কী ত্রুটি তা উল্লেখ করেননি। তিনি তাকে বলেননি যে, তুমি টাখনুর নিচে লুঙ্গি ঝুলিয়ে নামায পড়েছ, তাই তোমার নামায কবুল হয়নি, যাও ফের ওযু করে নামায পড়ো। এর রহস্য হল, তিনি সে ব্যক্তিকে নিজ ত্রুটি সম্পর্কে চিন্তা করার সুযোগ দিয়েছেন। সরাসরি ত্রুটির কথা বলে দিলেও সংশোধন হত বটে। কিন্তু ত্রুটি যার সে নিজেই যদি চিন্তা করে বের করতে সক্ষম হয় যে, কী কারণে তাকে নতুনভাবে ওযু করে নামায দোহরানোর হুকুম দেওয়া হয়েছে, তবে বিষয়টি তার অন্তরে বদ্ধমূল হয়ে যাবে। সে কোনওদিন এ ঘটনা ভুলবে না। বরং সে নিজে এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীগণ অন্যত্র তা বর্ণনা করে এ জাতীয় ত্রুটি যাদের হয় তাদের সংশোধন করতে উৎসাহী থাকবে। সুতরাং অন্যের ত্রুটি সংশোধনের এটা এক হিকমতপূর্ণ ব্যবস্থা।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. পোশাক টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে পরা হারাম।

খ. পোশাক টাখনুর নিচে ঝোলানো অবস্থায় নামায পড়লে সে নামায কবুল হয় না।

গ. এ হাদীছ দ্বারা অন্যকে সংশোধন করার এক হিকমতপূর্ণ ব্যবস্থা জানা যায়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান