রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

৪. পোষাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা

হাদীস নং: ৮০০
পোষাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা
পরিচ্ছেদ:৩ জামা, জামার হাতা, লুঙ্গি ও পাগড়ির শামলার দৈর্ঘ্য, অহংকারবশত এগুলোর কোনওটি ঝুলিয়ে দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা এবং বিনা অহংকারে হলে তার কারাহাত
পোশাকের ঝুলের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের পার্থক্য
হাদীছ নং: ৮০০

হযরত ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি অহংকারবশে তার কাপড় হেঁচড়িয়ে চলে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না। উম্মু সালামা বললেন, তাহলে মহিলারা তাদের পোশাকের ঝুলের বেলায় কী করবে? তিনি বললেন, তারা এক বিঘত পরিমাণ ঝুলিয়ে রাখবে। উম্মু সালামা বললেন, তবে তো তাদের পা উন্মুক্ত হয়ে পড়বে! তিনি বললেন, তাহলে তারা তা এক হাত পর্যন্ত ঝুলাবে, তার বেশি নয়। -আবু দাউদ ও তিরমিযী
(সুনানে আবূ দাউদ: ৪১১৯; জামে তিরমিযী: ১৭৩৬; সুনানে নাসাঈ ৫৩৩৬; মুসনাদে আহমাদ: ৪৪৮৯; সহীহ ইবনে হিব্বান ৫৬৮১; জামে' মা'মার ইবন রাশিদ: ১৯৯৮৪)
كتاب اللباس
باب صفة طول القميص والكُم والإزار وطرف العمامة وتحريم إسبال شيء من ذلك على سبيل الخيلاء وكراهته من غير خيلاء
800 - وعنه، قَالَ: قَالَ رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلاءَ لَمْ يَنْظُرِ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ القِيَامَةِ» فَقَالَتْ أُمُّ سَلَمَةَ: فَكَيْفَ تَصْنَعُ النِّسَاءُ بذُيُولِهِنَّ؟ قَالَ: «يُرْخِينَ شِبْرًا» قالت: إِذًا تَنْكَشِفُ أقْدَامُهُنَّ. قَالَ: «فَيرخِينَهُ ذِرَاعًا لاَ يَزِدْنَ». رواه أَبُو داود والترمذي، (1) وقال: «حديث حسن صحيح».

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, পোশাকের ঝুলের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে পার্থক্য আছে। পুরুষের বেলায় হুকুম হল পোশাক টাখনুর নিচে নামিয়ে পরা যাবে না। এটা কঠিন গুনাহ। হাদীছটির শুরুতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন যে, যে ব্যক্তি অহংকারবশে তার কাপড় হেঁচড়িয়ে চলে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না। পোশাক টাখনুর নিচে নামিয়ে পরলে হাঁটা-চলার সময় তা হেঁচড়িয়ে থাকে। আর সাধারণত এটা করাই হয় অহংকারবশে। কাজেই এ সতর্কবাণীর মর্মবস্তু হল পোশাক টাখনুর নিচে নামিয়ে পরা যাবে না। এ সতর্কবাণীতে স্পষ্টভাবে বলা হয়নি যে, এটা কেবল পুরুষের জন্যই প্রযোজ্য। কথাটি বলা হয়েছে সাধারণভাবে। তবে কি নারীগণও এর আওতায় পড়বে? যদি পড়ে, তবে তা নারীস্বভাবের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয় না। পায়ের গোছার সামান্য মাত্রও দেখা গেলে নারীগণ লজ্জাবোধ করে। তাই লজ্জাশীলা নারীগণ পোশাক টাখনুর নিচে অনেকখানি নামিয়ে পরে, যাতে কিছুতেই নলার খানিকটাও প্রকাশ হয়ে না যায়। ইসলাম স্বভাবধর্ম। তাই ইসলামের কোনও বিধান নারীস্বভাবের পরিপন্থি হতে পারে না। কিন্তু হাদীছে তো সাধারণভাবেই বলা হয়েছে পোশাক টাখনুর নিচে নামানো যাবে না। এ অবস্থায় স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, তাহলে নারীগণ কী করবে? তাই হযরত উম্মু সালামা রাযি. জিজ্ঞাসা করেন-
فَكَيْفَ تَصْنَعُ النِّسَاءُ بِذُيُولِهِنَّ؟ (তাহলে মহিলারা তাদের পোশাকের ঝুলের বেলায় কী করবে)? এ জিজ্ঞাসা দ্বারা হযরত উম্মু সালামা রাযি. নারীসমাজের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তিনি জানতে চান, মহিলারা তো স্বাভাবিক লজ্জাবশত তাদের পোশাকের ঝুল অনেকখানি নামিয়ে দেয়, তা টাখনুর আরও নিচে চলে যায়, এখন টাখনুর নিয়ে পোশাক পরাটা যদি এত খারাপ হয়ে থাকে, তবে নারীরা কী করবে? তারা তাদের পোশাকের ঝুল রাখবে কোন পর্যন্ত?

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এক বিঘত। অর্থাৎ তারা তাদের পোশাক টাখনুর এক বিঘত নিচ পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখবে। হযরত উম্মু সালামা রাযি. বললেন-
إِذا تَنكَشِفُ أَقْدَامُهُنَّ (তবে তো তাদের পা উন্মুক্ত হয়ে পড়বে)। অর্থাৎ টাখনুর নিচে মাত্র এক বিঘত ঝোলানো হলে হাঁটা-চলার সময় পা দেখা যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর দ্বারা বোঝা যায় নারীদের পা'ও পর্দার অন্তর্ভুক্ত। পরপুরুষের সামনে তা অনাবৃত রাখা যাবে না। তাই তাদের পোশাক এতটা লম্বা হওয়া উচিত, যাতে চলাফেরার সময় পায়ের পিঠ অনাবৃত হয়ে না পড়ে। এক বিঘত লম্বা রাখার ক্ষেত্রে সে আশঙ্কাটা থেকে যায়। উম্মুল মুমিনীন হযরত উম্মু সালামা রাযি, তাঁর এ কথা দ্বারা সে আশঙ্কাই ব্যক্ত করেছেন। এর জবাবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তারা তা এক হাত পর্যন্ত ঝুলাবে, তার বেশি নয়। অর্থাৎ তারচে'ও বেশি ঝুলিয়ে পরলে তা সীমালঙ্ঘন ও নাজায়েয হবে, যেহেতু পা ও পায়ের নলা আবৃত রাখার জন্য টাখনুর নিচে এক হাতের বেশি ঝুলিয়ে রাখার প্রয়োজন হয় না। সুতরাং নারীগণ তাদের বোরকা, চাদর, জামা, পায়জামা, শাড়ি, পেটিকোট, ঘাগরা ইত্যাদি সর্বোচ্চ টাখনুর এক হাত নিচ পর্যন্ত লম্বা করতে পারবে, তার বেশি নয়। আবার এ পরিমাণ খাটোও করবে না, যাতে করে হাঁটা-চলার সময় পরপুরুষের সামনে তাদের পায়ের পিঠ ও পায়ের নলা প্রকাশ হয়ে যায়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. পুরুষ তাদের পরিধানের পোশাক টাখনুর নিচে নামাতে পারবে না।

খ. নারীগণ তাদের পোশাক এ পরিমাণ লম্বা পরবে, যাতে হাঁটাচলার সময় তাদের পায়ের নলা বা পায়ের পিঠ পরপুরুষের সামনে উন্মুক্ত না হয়ে যায়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান