রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

৫. ঘুমানো ও মজলিসের আদব

হাদীস নং: ৮১৩
ঘুমানো ও মজলিসের আদব
পঞ্চম ভাগ: ঘুমানোর আদব
ঘুম আল্লাহ তা'আলার কুদরতের নিদর্শন। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَمِنْ آيَاتِهِ مَنَامُكُمْ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ
‘এবং তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে আছে রাত ও দিনে তোমাদের ঘুম’।(সূরা রূম, আয়াত ২৩)
আল্লাহ তা'আলা মানবদেহ নির্মাণে যে বিস্ময়কর কৌশল অবলম্বন করেছেন, তারই এক স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হল ঘুম। মানুষ শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করতে থাকলে এক পর্যায়ে তার মস্তিষ্কের কোষগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং শরীরযন্ত্র পরিচালনার শক্তি হারিয়ে ফেলে। এ অবস্থায় তার কর্মক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য কোষগুলোর পুনর্গঠন দরকার। সে পুনর্গঠনের জন্যই আল্লাহ তা'আলা ঘুমের ব্যবস্থা দিয়েছেন। ক্লান্ত-অবসন্ন মস্তিষ্ক তখন আপনা-আপনিই ঘুমিয়ে পড়ে। শরীর ও মস্তিষ্কের সে বিশ্রামের ভেতর দিয়ে কোষগুলো পুনর্গঠিত হয়ে যায়। যখন ঘুম ভাঙে, তখন পুনর্গঠিত কোষগুলো পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে সতেজ-সজীব দেহ নিয়ে মানুষ ফের শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। আবারও দিনমান পরিশ্রমের পর মস্তিষ্ক কোষের ক্ষয়। দেহের ক্লান্তি ও অবসন্নতা। ফের ঘুম, ফের জাগরণ। এ এক নিরবচ্ছিন্ন চক্র। ঘুম ও জাগরণের এ চক্র ততোদিন চলতে থাকে, যতদিন না আখেরী ঘুম মরণ আসে।
ঘুম আল্লাহ তা'আলার এক বিরাট নি'আমত। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَجَعَلْنَا نَوْمَكُمْ سُبَاتًا
'আর তোমাদের ঘুমকে ক্লান্তি ঘুচানোর উপায় বানিয়েছি।(সূরা নাবা', আয়াত ৯)
ঘুম দ্বারা শরীরে ক্লান্তি দূর হয়। কাজের উদ্দীপনা তৈরি হয়। ক্ষমতা বাড়ে। স্মৃতিশক্তি কার্যকর থাকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীগণ ঘুমের নানা উপকার তুলে ধরেছেন। ঘুম না হলে কিংবা ঘুম কম হলে কি কি ক্ষতি হয় সে সম্পর্কেও তারা সতর্ক করেছেন। তাই তারা পর্যাপ্ত ঘুমের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর জন্য ওষুধও আবিষ্কৃত হয়েছে। যাদের ঘুম হয় না বা কম হয়, তারা যাতে অনিদ্রাজনিত রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত না হয়ে পড়ে, সেজন্য তাদেরকে ঘুমের ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। বোঝাই যাচ্ছে ঘুম অনেক বড় নি'আমত। এটা যেহেতু অনেক বড় নি'আমত, তাই এর জন্য শোকর আদায় করা দরকার। সে শোকরের একটা দিক হল ঘুমের যথোচিত ব্যবহার। এক তো সময়মতো ঘুমানো ও নিয়মমতো ঘুমানো। দ্বিতীয়ত শরী'আত এর জন্য যে নির্দেশনা দিয়েছে তা অনুসরণ করা। ঘুম যেহেতু মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ, তাই শরী'আত এ বিষয়ে তার সামনে সুস্পষ্ট নির্দেশনা পেশ করেছে। সে কখন ঘুমাবে, কখন জাগবে, কীভাবে শোবে, শোওয়ার আগে কী করবে কী পড়বে, ঘুম থেকে জাগার পর কী করণীয়, সবই বলে দেওয়া হয়েছে।
হাদীছ নং: ৮১৩

হযরত বারা' ইবন আযিব রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিছানায় যেতেন, ডান কাতে শুইতেন। তারপর বলতেন-
اللهم أسلمت نفسي إليك، ووجهت وجهي إليك، وفوضت أمري إليك، وألجأت ظهري إليك، رغبة ورهبة إليك، لا ملجأ، ولا منجى منك إلا إليك، آمنت بكتابك الذي أنزلت، ونبيك الذي أرسلت
হে আল্লাহ! আমি নিজেকে আপনার নিকট সমর্পণ করলাম, আমি নিজ চেহারা আপনার অভিমুখী করলাম, আমি আমার যাবতীয় বিষয় আপনার নিকট ন্যস্ত করলাম এবং আমি আমার পিঠকে আপনার আশ্রয়ে দিলাম- আপনার কাছে আশা ও ভয়ের সাথে। আপনি ছাড়া কোনও আশ্রয়ের জায়গা নেই এবং আপনি ছাড়া নেই নাজাতের কোনও স্থান। আমি ঈমান এনেছি আপনার ওই কিতাবের প্রতি, যা আপনি নাযিল করেছেন এবং আপনার ওই নবীর প্রতি, যাঁকে আপনি পাঠিয়েছেন)। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ৬৩১৩; সহীহ মুসলিম: ২৭১০; সুনানে আবু দাউদ: ৫০৪৬; জামে তিরমিযী: ৩৩৯৪; মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসী: ৭৪৩; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৬৫২৬; সুনানে দারিমী: ২৭২৫; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা; ১০৫২৭; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৪৪২০; ইবনুস সুন্নী, আমালুল ইয়াওম ওয়াল লায়লা: ৭০৮)
كتاب آداب النوم والاضطجاع والقعود والمجلس والجليس والرؤيا
كتاب آداب النوم
باب مَا يقوله عِنْدَ النوم
813 - عن البَراءِ بن عازِبٍ رضي الله عنهما، قَالَ: كَانَ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - إِذَا أوَى إِلَى فِرَاشِهِ نَامَ عَلَى شِقِّهِ الأَيْمَن، ثُمَّ قَالَ: «اللَّهُمَّ أسْلَمْتُ نفسي إلَيْكَ، وَوَجَّهْتُ وَجْهِي إلَيْكَ، وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إلَيْكَ، وَألْجَأتُ ظَهْرِي إلَيْك، رَغْبَةً وَرَهْبَةً إلَيْكَ، لاَ مَلْجَأ وَلاَ مَنْجا مِنْكَ إِلاَّ إلَيكَ، آمَنْتُ بكِتَابِكَ الَّذِي أنْزَلْتَ، وَنَبِيِّكَ الَّذِي أرْسَلْتَ». رواه البخاري (1) بهذا اللفظ في كتاب الأدب من صحيحه.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ঘুমের আদব ও নিয়ম শিক্ষা দিয়েছেন। এতে ঘুমের দুইটি আদব বলা হয়েছে। ক. ডান কাতে ঘুমানো খ. ঘুমের দু'আ পড়া।

ডান কাতে ঘুমানো
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ডান কাতে ঘুমাতেন, যেমনটা হাদীছে বলা হয়েছে। অন্য হাদীছ দ্বারা এ কথাও জানা যায় যে, যাবতীয় উত্তম ও প্রিয় কাজে ডান দিককে প্রাধান্য দেওয়া মুস্তাহাব। ঘুম প্রত্যেকেরই একটি কাম্য ও প্রিয় বিষয়। কাজেই এ ক্ষেত্রেও ডান দিককে প্রাধান্য দেওয়া মুস্তাহাব হবে বৈ কি, বিশেষত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অন্য হাদীছে এর আদেশও করেছেন। চিকিৎসাবিদগণ এর বিভিন্ন উপকার ব্যাখ্যা করেছেন। বিশেষত ডান কাতে ঘুমালে সে ঘুম মাত্রাতিরিক্ত গভীর হয় না। ফলে যখন জাগ্রত হওয়া দরকার তখন জাগা সহজ হয়। সবচে' বড় কথা এটা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত। আর সুন্নতের অনুসরণ করার মধ্যেই দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিহিত।

ঘুমের দু'আ পড়া
একটা আদব ঘুমের দু'আ পড়া। ঘুমের বিভিন্ন দু'আ আছে। এ হাদীছে একটি পূর্ণাঙ্গ দু'আ শেখানো হয়েছে। এর প্রথম অংশে আছে নিজের ইসলাম ও আত্মনিবেদনের প্রকাশ আর দ্বিতীয় অংশে আছে আন্তরিক ঈমান ও বিশ্বাসের ঘোষণা।

ইসলাম ও আত্মসমর্পণের প্রকাশে চারটি কথা বলা হয়েছে। প্রথমে বলা হয়েছে اللَّهُمْ أَسْلَمْتُ نَفْسِي إِلَيْكَ ‘হে আল্লাহ! আমি নিজেকে আপনার প্রতি সমর্পণ করলাম'। অর্থাৎ আমার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আপনার আদেশ-নিষেধের অধীন করে দিলাম। আপনি আমার মনিব, আমি আপনার বান্দা। বান্দা হিসেবে আমার কর্তব্য বিনাবাক্যে আপনার যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে নেওয়া। কোনও আদেশ বা নিষেধ কী কারণে করেছেন সে প্রশ্ন তোলা কোনও বান্দার কাজ নয়। সুতরাং আপনি যা-কিছু আদেশ করেছেন আমি সর্বান্তকরণে তা মানতে বাধ্য থাকব। আর যা-কিছু নিষেধ করেছেন তা থেকে পরিপূর্ণরূপে বিরত থাকব।

তারপর বলা হয়েছে- وَوَجَّهْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ 'আমার চেহারাকে আপনার অভিমুখী করলাম'। 'চেহারা' বলে নিজ সত্তা বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ আমি আমার শরীর ও মন উভয়দিক থেকে আপনার অভিমুখী হয়ে গেলাম। আপনার প্রতি আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের ক্ষেত্রে আমার মধ্যে কোনও মুনাফিকী ও কপটতা নেই। আমি রিয়া ও লোকদেখানোর মানসিকতা থেকেও বাঁচতে চাই। এভাবে প্রকাশ্য ও গুপ্ত সর্বপ্রকার শিরক থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে কেবল আপনার দিকেই ফিরিয়ে দিলাম। কোনও মাখলুকের কাছ থেকে কোনওকিছু পাওয়ার আশায় নয়; বরং কেবল আপনার সন্তুষ্টির জন্যই আমি নিজেকে ইসলাম ও আনুগত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত করলাম।

তৃতীয় বাক্যে বলা হয়েছে- وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيْكَ 'আমার যাবতীয় বিষয় আপনার উপর ন্যস্ত করলাম'। এটা তাওয়াক্কুল ও আল্লাহনির্ভরতার প্রকাশ। অর্থাৎ জাগ্রত অবস্থায় তো আমি আপনার হুকুম মোতাবেক নিজ করণীয় কাজ করতে সচেষ্ট ছিলাম। কিন্তু ঘুমের অবস্থায় আমার পক্ষে কোনওকিছুই করা সম্ভব নয়। বস্তুত সর্বাবস্থায় আপনার ইচ্ছাই কার্যকর হয়ে থাকে। জাগ্রত অবস্থায় আমি চেষ্টা করলেও বাস্তবে ঘটে কেবল তাই, যা আপনি ইচ্ছা করেন। সুতরাং জাগ্রত ও ঘুমন্ত সর্বাবস্থায় আমার যাবতীয় বিষয়ে একান্ত আপনার উপরই আমি নির্ভরশীল থাকলাম।

চতুর্থ বাক্যে বলা হয়েছে- وَأَلْجَأْتُ ظَهْرِي إِلَيْكَ 'আমি আমার পৃষ্ঠদেশ আপনার আশ্রয়ে অর্পণ করলাম'। অর্থাৎ আপনি ছাড়া আর কেউ আমাকে হেফাজত করার ক্ষমতা রাখে না। তাই আমি আমার সত্তাকে আপনার হেফাজতে সমর্পণ করলাম। আপনি আমাকে সর্বপ্রকার বিপদ-আপদ ও দুঃখ-কষ্ট থেকে হেফাজত করুন। এটাও তাওয়াক্কুলেরই অংশ।

তারপর বলা হয়েছে- رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيْكَ 'আশা ও ভীতির সাথে'। অর্থাৎ আমার যাবতীয় বিষয় আপনার উপর ন্যস্ত করলাম আপনার রহমতের আশায়। আর নিজেকে আপনার আশ্রয়ে অর্পণ করলাম আপনাকে ভয় করার সাথে। আমি দুনিয়া ও আখিরাতে আপনার রহমত ও দয়ার আশাবাদী, যেহেতু আপনার দয়া আপনার ক্রোধের উপর প্রবল। আপনি পরম দয়ালু। আবার যেহেতু আমি অনেক বড় গুনাহগার, তাই আপনার আযাবের ভয়ও আমার আছে। দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানেই আমি আমার পাপাচারের দুর্ভোগ পোহানোর ভয় রাখি। সে দুর্ভোগ যাতে আমাকে পোহাতে না হয়, তাই আমি নিজেকে আপনার হেফাজতে ন্যস্ত করেছি। বস্তুত এ আশা ও ভয়ের সমন্বিত রূপই ঈমান। প্রত্যেক মু'মিনের অন্তরে এ দুই অবস্থা বিদ্যমান থাকা জরুরি।

এর পরের বাক্য হচ্ছে- لَا مَلْجَأَ وَلَا مَنْجا مِنْكَ إِلَّا إِلَيْكَ ‘আপনার ছাড়া আর কোনও আশ্রয়স্থল ও মুক্তির জায়গা নেই'। এর দ্বারা আল্লাহ তা'আলার সর্বময় ক্ষমতার কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ যাবতীয় কল্যাণ-অকল্যাণ ও লাভ-ক্ষতি আল্লাহরই হাতে। কেউ কোনও কল্যাণ লাভ করতে চাইলে তা কেবল আল্লাহরই কাছে লাভ করতে পারে। আর অকল্যাণ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে তাও পেতে পারে কেবল আল্লাহরই কাছে। উভয় ক্ষেত্রেই বান্দার কর্তব্য কেবল তাঁরই শরণাপন্ন হওয়া এবং কেবল তাঁরই প্রতি নির্ভর করা। এ বাক্যটি তাওয়াক্কুল ও আল্লাহনির্ভরতার পরিশিষ্টস্বরূপ।

এর পরের দুই বাক্যে দেওয়া হয়েছে ঈমানের ঘোষণা। প্রথম বাক্য- آمَنْتُ بِكِتابك الَّذِي أَنْزَلْتَ 'আমি ঈমান এনেছি আপনার ওই কিতাবের প্রতি, যা আপনি নাযিল করেছেন'। এর দ্বারা কেবল কুরআন মাজীদের প্রতি ঈমানের কথাও বোঝানো হতে পারে, আবার সমস্ত আসমানী কিতাবও বোঝানো হতে পারে। কেবল কুরআন মাজীদের কথা বোঝানো উদ্দেশ্য হলেও অন্যান্য আসমানী কিতাবসমূহও এর মধ্যে এসে যায়। কেননা কুরআন মাজীদে সেসব কিতাবের উল্লেখ আছে। তাই কুরআন মাজীদের প্রতি বিশ্বাস সে সমস্ত কিতাবের প্রতি বিশ্বাসকেও শামিল করে। কিতাবের প্রতি ঈমানের অর্থ কিতাবে যা-কিছু বলা হয়েছে সবকিছুর প্রতি ঈমান রাখা। এর মধ্যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস, নবী-রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাসসহ ঈমান ও বিশ্বাসের যাবতীয় বিষয়ই এসে গেছে। তা সত্ত্বেও বিশেষ গুরুত্বের কারণে পরবর্তী বাক্যে রাসূলের প্রতি বিশ্বাসের কথাটি স্বতন্ত্রভাবেও উল্লেখ করা হয়েছে।

ونبيك الذي أرسلت ‘এবং (ঈমান আনলাম) আপনার ওই নবীর প্রতি, যাঁকে আপনি পাঠিয়েছেন’ এবং এ বাক্যেও নবী দ্বারা কেবল শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বোঝানো উদ্দেশ্য হতে পারে, আবার সকল নবী-রাসুলকেও বোঝানো হতে পারে। আল্লাহ তা'আলা যত নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন সকলের প্রতি এই বিশ্বাস রাখা জরুরি যে, প্রত্যেকেই হক ও সত্য নবী। কোনও একজন নবীকেও অবিশ্বাস করলে ঈমানদার হওয়া যায় না।

উল্লেখ্য, ওযূর দ্বারা বান্দার শারীরিক পবিত্রতা অর্জিত হয়। আর এ দু'আর মাধ্যমে অর্জিত হয় তার আত্মিক পবিত্রতা। বান্দা যখন এ দুই আমলের সাথে ঘুমায়, তখন সে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় রকম পবিত্রতার সাথে থাকে। ফলে এ অবস্থায় মৃত্যু হলে তার মৃত্যু হয় একজন পূর্ণাঙ্গ মুসলিমরূপে। তাই কোনও কোনও বর্ণনায় হাদীছের শেষে আছে- فَإِنَّكَ إِنْ مِتَّ فِي لَيْلَتِكَ مِتَّ عَلَى الْفِطْرَةِ، وَإِنْ أَصْبَحْتَ أَصْبَحْتَ خَيْرًا 'তুমি যদি (এই দু'আ পড় এবং) ওই রাতেই মারা যাও, তবে তোমার মৃত্যু হবে 'ফিতরাত' অর্থাৎ ইসলামের উপর। আর যদি ভোরে জেগে ওঠ, তবে বিরাট কল্যাণ লাভ করবে অর্থাৎ প্রভূত ছাওয়াবের অধিকারী হবে'।

অন্য হাদীছে এ দু'আটি সবশেষে পড়তে বলা হয়েছে। এর দুই অর্থ হতে পারে। ক. ঘুমের আগে যে সমস্ত দু'আ পড়া হবে, তার মধ্যে এটি পড়বে সবার শেষে। অন্যসব দু'আ আগে গড়ে নেবে। খ. এ দু'আটি শেষে পড়ার অর্থ এরপর আর কোনও কথাবার্তা বলবে না। যদি ঘুম আসতে দেরি হয়, তবে যিকর করতে বাধা নেই। কিংবা ঘুম যাতে আসে সেজন্য অন্য কোনও দু'আ পড়লেও ক্ষতি নেই। কেবল দুনিয়াবী কথাবার্তা বলাই নিষেধ।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ দ্বারা শিক্ষা পাওয়া যায় যে, জাগ্রত ও ঘুমন্ত সর্বাবস্থায়ই বান্দার কর্তব্য আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল ও নির্ভর করা।

খ. এ হাদীছ দ্বারা ঘুমের আদব জানা যায়। যেমন ডানকাতে শোওয়া ও ঘুমের দু'আ পড়া। এছাড়াও ঘুমের অনেক আদব আছে, যা অন্যান্য হাদীছ দ্বারা জানা যাবে।

গ. এ হাদীছ দ্বারা এ শিক্ষাও পাওয়া যায় যে, মু'মিন ব্যক্তির ঘুম অন্যদের মতো হওয়া উচিত নয়। ঘুম যাতে ইবাদতে পরিণত হয় এবং ঘুমের ভেতর মৃত্যু হয়ে গেলে সে মৃত্যু যাতে মুসলিমরূপে হয়, সে লক্ষ্যে যথাযথ প্রস্তুতির সাথেই ঘুমাতে হবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)