রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
৫. ঘুমানো ও মজলিসের আদব
হাদীস নং: ৮১৮
ঘুমানো ও মজলিসের আদব
পঞ্চম ভাগ: ঘুমানোর আদব
পরিচ্ছেদ:১ ঘুমের দু'আ
পরিচ্ছেদ:১ ঘুমের দু'আ
বৈঠক ও শয়ন-শয্যায় আল্লাহ তা'আলার যিকির করা
হাদীছ নং: ৮১৮
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোনও বৈঠকে বসল অথচ আল্লাহর যিকির করল না, আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য তা ক্ষতির কারণ হবে। যে ব্যক্তি কোনও স্থানে শুইল অথচ আল্লাহর যিকির করল না, আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য তা ক্ষতির কারণ হবে। -আবূ দাউদ
(সুনানে আবূ দাউদ: ৪৮৫৬; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা ১০৫৮৫; তাবারানী, মুসনাদুশ শামিয়্যীন: ১৩২৪; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান : ৫৪১)
হাদীছ নং: ৮১৮
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোনও বৈঠকে বসল অথচ আল্লাহর যিকির করল না, আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য তা ক্ষতির কারণ হবে। যে ব্যক্তি কোনও স্থানে শুইল অথচ আল্লাহর যিকির করল না, আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য তা ক্ষতির কারণ হবে। -আবূ দাউদ
(সুনানে আবূ দাউদ: ৪৮৫৬; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা ১০৫৮৫; তাবারানী, মুসনাদুশ শামিয়্যীন: ১৩২৪; বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান : ৫৪১)
كتاب آداب النوم والاضطجاع والقعود والمجلس والجليس والرؤيا
كتاب آداب النوم
باب مَا يقوله عِنْدَ النوم
باب مَا يقوله عِنْدَ النوم
818 - وعن أَبي هريرة - رضي الله عنه - عن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - قَالَ: «مَنْ قَعَدَ مَقْعَدًا لَمْ يَذْكُرِ الله تَعَالَى فِيهِ، كَانَتْ عَلَيْهِ مِنَ اللهِ تَعَالَى تِرَةٌ، وَمَنِ اضْطَجَعَ مَضجَعًا لاَ يَذْكُرُ اللهَ تَعَالَى فِيهِ، كَانَتْ عَلَيْهِ مِنَ اللهِ تِرَةٌ». رواه أَبُو داود بإسنادٍ حسن. (1)
«التِّرَةُ»: بكسر التاء المثناة من فوق، وَهِيَ: النقص، وقِيلَ: التَّبعَةُ.
«التِّرَةُ»: بكسر التاء المثناة من فوق، وَهِيَ: النقص، وقِيلَ: التَّبعَةُ.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
ترة এর অর্থ ক্ষতি, দায়, আক্ষেপ। হাদীছটিতে মজলিস ও শয়নস্থলে আল্লাহ তা'আলার যিকির ও স্মরণ করতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আল্লাহ তা'আলার যিকির ও স্মরণ ছাড়া কোনও মজলিসে বসলে বা কোনও শয়নস্থলে শুইলে তা বান্দার জন্য দায় হয়ে থাকবে। কিয়ামতের দিন বান্দাকে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। বান্দার জীবনের একটা সময় মজলিসে কেটে গেল বা ঘুমের ভেতর পার হয়ে গেল, অথচ সে এ সময়ের ভেতর আল্লাহ তা'আলাকে স্মরণ করল না। এর মানে দাঁড়াল এই যে, সময় তো চলে গেল, কিন্তু তার বিপরীতে বান্দার কিছুই অর্জিত হল না। যিকির করলে তাতে বিপুল ছাওয়াব হাসিল হত। সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'র যিকির অশেষ মূল্যবান। এতে বিপুল ছাওয়াব পাওয়া যায়। ইস্তিগফার করাও অনেক বড় যিকির। তা দ্বারা গুনাহ মাপ হয়। যিকির দরূদ পড়াও। তাতে আল্লাহর রহমত অর্জিত হয়। দীনের আলোচনা,দু’আ পড়া, তিলাওয়াত করা, দীনী বই-পুস্তক পড়ে কোনওকিছু শেখা- এ সবই যিকিরের অন্তর্ভুক্ত। এর কোনওটি যদি করা না হয়, তবে সময়টা বেকার চলে যায়। আল্লাহ তা'আলা জিজ্ঞেস করবেন, বান্দা! তোমার জীবনের এই যে সময়টা মজলিসে বসে কাটালে বা ঘুমের ভেতর পার করলে, তার বিপরীতে তুমি কী নিয়ে এসেছ? তখন এর কী উত্তর দেওয়া যাবে? এটা কত বড়ই না ক্ষতি যে, জীবনের উল্লেখযোগ্য একটা সময় চলে গেল অথচ তার বিপরীতে আখিরাতের জন্য কোনও অর্জন থাকল না! এ ক্ষতির জন্য সেদিন বড়ই আক্ষেপ করতে হবে। সে আক্ষেপ যাতে করতে না হয়, সেজন্য আমরা যে মজলিসেই বসি না কেন, তাতে কিছু না কিছু যিকির অবশ্যই করা উচিত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একেকটা মজলিসে অনেক বেশি যিকির করতেন। এমনকি একশ বার পর্যন্ত ইস্তিগফারও করতেন। অথচ তাঁর কোনও গুনাহ ছিল না। তাঁর উম্মত হয়ে আমরা কিনা একেকটা বৈঠকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেহুদা গল্পে-সল্পে নষ্ট করি! এমনিভাবে ঘুমের আগে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত যিকির ও দু'আ করতেন! কুরআন মাজীদের বহু আয়াত ও তিলাওয়াত করতেন। কিন্তু আমরা ছোট্ট একটা দু'আ পর্যন্ত পাঠ করি না। জীবনে কত মজলিসে বসলাম, কত ঘুম ঘুমালাম, কিন্তু তার অধিকাংশই কেটেছে যিকিরবিহীন। এতে করে আমাদের আমলনামায় আক্ষেপের কত কারণ জমা হয়ে আছে। আল্লাহ তা'আলা ক্ষমা করুন। এ হাদীছ আমাদের উৎসাহ দিচ্ছে, কিয়ামতের দিন যাতে আক্ষেপ করতে না হয়, সে লক্ষ্যে যেন আমরা প্রতিটি মজলিসে অবশ্যই কিছু না কিছু যিকির করি এবং প্রত্যেক শয়নস্থলে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো দু'আ পাঠ করি। দু'আ পড়ে ঘুমালে সে ঘুম কেবল দুনিয়াবী কাজ থাকবে না; ইবাদতে পরিণত হবে, যিকিরের মধ্যে গণ্য হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আমরা যে-কোনও বৈঠকে বসি, তাতে অবশ্যই কিছু না কিছু যিকির করব।
খ. যখন ঘুমানোর জন্য শয্যাগ্রহণ করব, তখন হাদীছে বর্ণিত আমলসমূহ করতে যত্নবান থাকব এবং ঘুমের দু'আও পড়ে নেব।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. আমরা যে-কোনও বৈঠকে বসি, তাতে অবশ্যই কিছু না কিছু যিকির করব।
খ. যখন ঘুমানোর জন্য শয্যাগ্রহণ করব, তখন হাদীছে বর্ণিত আমলসমূহ করতে যত্নবান থাকব এবং ঘুমের দু'আও পড়ে নেব।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)