রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

৫. ঘুমানো ও মজলিসের আদব

হাদীস নং: ৮২৬
ঘুমানো ও মজলিসের আদব
পরিচ্ছেদ:৩ মজলিস ও মজলিসের সঙ্গীদের সম্পর্কিত আদব-কায়দা
পরে আসলে পেছনে বসা
হাদীছ নং: ৮২৬

হযরত জাবির ইবন সামুরা রাযি. বলেন, আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইছি ওয়াসাল্লামের কাছে আসতাম, তখন আমাদের প্রত্যেকে মজলিসের শেষ সীমায় বসে পড়ত।
-আবু দাউদ ও তিরমিযী
(সুনানে আবু দাউদ: ৪৮২৫; জামে’ তিরমিযী: ২৭২৫; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৬০৬২; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা: ৫৮৬৮; মুসনাদে আবু ইয়া'লা: ৭৪৫৩; সহীহ ইবনে হিব্বান : ৬৪৩৩; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ১৯৫১; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ৫৮৯০; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ: ৩৭০৫)
كتاب آداب النوم والاضطجاع والقعود والمجلس والجليس والرؤيا
باب في آداب المجلس والجليس
826 - وعن جابر بن سَمُرَة رضي الله عنهما، قَالَ: كُنَّا إِذَا أَتَيْنَا النَّبيَّ - صلى الله عليه وسلم - جلَسَ أحَدُنَا حَيْثُ يَنْتَهِي. رواه أَبُو داود والترمذي، (1) وقال: «حديث حسن».

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে মজলিসের একটি আদব বর্ণনা করা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি পরে আসবে, সে পেছনে যেখানে জায়গা পাবে সেখানেই বসবে, লোকজনকে ডিঙিয়ে সামনে যাবে না। অনেক সময় এমন হয় যে, এক ব্যক্তির অভ্যাস সামনের কাতারে নামায পড়া কিংবা ওয়াজ-মাহফিল ও সভা-সেমিনারে সামনের কাতারে বসা। কোনওদিন হয়তো তার আসতে দেরি হয়ে গেল। এখন বরাবর যেহেতু সে সামনের দিকে থাকে, তাই এদিনও সে লোকজনকে ডিঙিয়ে সামনে যেতে চায়। কখনও কখনও মোড়ল ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরাও এমন করে থাকে। পরে এসে তারা অন্যদের ঠেলে সামনে চলে যায়। তা এরূপ করা কি উচিত? এ হাদীছে হযরত জাবির ইবন সামুরা রাযি. তাঁর সতীর্থ সাহাবীদের নিয়ম বর্ণনা করছেন যে, তারা মজলিসে এসে সামনে চলে যাওয়ার চেষ্টা করতেন না; বরং পেছনে যেখানে জায়গা পেতেন সেখানেই বসে যেতেন। কেননা পরে এসে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। অন্যদেরকে ডিঙিয়ে যেতে চাইলে তাদেরকে কষ্ট দেওয়া হয়। আবার সামনে জায়গা খালি না থাকা সত্ত্বেও বসতে চাইলে অন্যকে উঠিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন হয়, যা কিনা সম্পূর্ণ নাজায়েয, যেমন অন্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া পরে এসে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করাটা অহমিকারও প্রকাশ। অহমিকা অতি মন্দ স্বভাব।

বলাবাহুল্য, সাহাবায়ে কেরামের এসব প্রশংসনীয় রীতি ও আদব-কায়দা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচর্য ও তাঁর প্রশিক্ষণেরই ফল। সুতরাং তাঁদের অনুসরণে এসব রীতি-নীতি ও আদব-কায়দায় অভ্যস্ত হওয়া আমাদেরও কর্তব্য। মসজিদ বা মজলিসের সামনের কাতার ধরতে হলে আগে আগেই যেতে হবে। পরে গেলে পেছনে যেখানে জায়গা পাওয়া যাবে সেখানেই বসতে হবে। মসজিদের ভেতরে জায়গা না পাওয়া গেলে বারান্দায়, বারান্দায় না পাওয়া গেলে বাইরে যেখানে সম্ভব সেখানেই বসা উচিত। মজলিস বা মাহফিলে প্যান্ডেলের ভেতর জায়গা না পাওয়া গেলে বসতে হবে বাইরেই। পরে গিয়ে সামনে যাওয়ার জন্য ঠেলাঠেলি করা বা কাতার ডিঙিয়ে লোকজনকে কষ্ট দেওয়া একজন প্রকৃত মুসলিম ও মুমিন ব্যক্তির কাজ হতে পারে না। এর থেকে বিরত থাকা একান্ত জরুরি।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

মসজিদ, মজলিস, মাহফিল ও সভা-সেমিনারে গিয়ে যেখানে জায়গা পাওয়া যাবে সেখানেই বসা চাই। পরে গিয়ে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করা শৃঙ্খলাপরিপন্থি কাজ। এটা কিছুতেই বাঞ্ছনীয় নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান