রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

৬. সালাম-মুসাফাহার আদব

হাদীস নং: ৮৫১
সালাম-মুসাফাহার আদব
পরিচ্ছেদ:২ সালাম কীভাবে দিতে হয়
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-কে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালামের সালাম দেওয়া
হাদীছ নং: ৮৫১

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, এই যে জিবরীল তোমার প্রতি সালাম পড়ছেন। হযরত আয়েশা রাযি. বলেন, আমি বললাম, ওয়া আলাইহিস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৩২১৭; সহীহ মুসলিম: ২৪৪৭; জামে তিরমিযী: ৩৮৮১; সুনানে নাসাঈ : ৩৯৫৩; জামে' মা'মার ইবন রাশিদ: ২০৯১৭; মুসনাদে ইসহাক ইবন রাহূয়াহ: ৮৫৬; সুনানে দারিমী: ২৬৮০; সহীহ ইবনে হিব্বান: ৭০৯৮)
كتاب السلام
باب كيفية السلام
851 - وعن عائشةَ رضي الله عنها، قالت: قَالَ لي رسولُ الله - صلى الله عليه وسلم: «هَذَا جِبريلُ يَقْرَأُ عَلَيْكِ السَّلاَمَ» قالت: قُلْتُ: وَعَلَيْهِ السَّلاَمُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ. متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
وهكذا وقع في بعض رواياتِ الصحيحين: «وَبَرَكاتُهُ» وفي بعضها بحذفِها، وزِيادةُ الثقةِ مقبولة (2).

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটি উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-এর বিশেষ মর্যাদা প্রমাণ করে। এমনিতে তো বিশেষ বিশেষ সময়ে বিশেষ বিশেষ ফিরিশতা মুমিনদের সালাম দিয়ে থাকে। কিন্তু তা জানার এবং সে সালামের উত্তর দেওয়ার সৌভাগ্য কতজনের হয়েছে? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম সর্বশ্রেষ্ঠ ফিরিশতা। তিনি এসে হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-কে সালাম দিয়েছেন, যা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে অবহিত করেছেন। তিনি তা অবহিত হয়ে এই বলে তার উত্তরও দিয়েছেন- وَعَلَيْهِ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ - নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল এতটুকুই বলেছেন যে - هذَا جِبْرِيلُ يَقْرَأْ عَلَيْكِ السَّلَامَ (এই যে জিবরীল তোমার প্রতি সালাম পড়ছেন)। এতে সালামের পরিপূর্ণ রূপের উল্লেখ নেই। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম কী শব্দে সালাম দিয়েছিলেন তা জানা যাচ্ছে না। কেবল এতটুকুই জানা যে, তিনি সালাম দিয়েছেন। যা জানা গেছে তা কেবলই এক শব্দের সালাম। কিন্তু হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. উত্তর দিয়েছেন সালামের সবগুলো শব্দে। এভাবে তিনি আল্লাহর আদেশ পালন করেছেন উৎকৃষ্টরূপে। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَإِذَا حُيِّيتُمْ بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا
'যখন কেউ তোমাদেরকে সালাম করে, তখন তোমরা (তাকে) তদপেক্ষাও উত্তমরূপে সালাম দিয়ো কিংবা (অন্ততপক্ষে) সেই শব্দেই তার জবাব দিয়ো। ( সূরা নিসা, আয়াত ৮৬)

লক্ষণীয়, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম আম্মাজান আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-কে সরাসরি সালাম না দিয়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে দিয়েছেন। এটা তাঁর প্রতি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালামের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা ও এই সম্ভ্রমবোধের বহিঃপ্রকাশ। বিনা প্রয়োজনে পরনারীকে লক্ষ করে কিছু বলতে নেই। এতে তাকে অসম্মান করা হয়। সেই নারীর সংশ্লিষ্ট পুরুষের সামনে বললে তাতে সেই পুরুষেরও অমর্যাদা হয়। কোনও নারীকে লক্ষ করে কিছু বলতে হলে তা তার স্বামী, পিতা, সন্তান, ভাই কিংবা অন্য কোনও মাহরাম পুরুষের মাধ্যমে বলা চাই। এখানে তো সায়্যিদুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী ও আমাদের মা সতী-সাধ্বী আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.। অপরদিকে নিষ্পাপ ফিরিশতাদের মধ্যমণি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম। উভয়পক্ষ পাক-পবিত্র, শুচিশুদ্ধ। কোনওদিক থেকেই অনুচিত ভাবনা-কল্পনার কোনও অবকাশ নেই। তাঁদের মধ্যকার কথাও অন্যকিছু নয়; কেবলই সালাম- দু'আর বাক্য। সরাসরি অন্য কোনও কথা বললেও অসুবিধার কিছু ছিল না। এতদসত্ত্বেও উম্মুল মুমিনীনকে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম সরাসরি সালাম বলেননি: নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমে বলেছেন। মহান স্বামীর মাধ্যমে তাঁর বহুবিচিত্র গুণবতী স্ত্রীকে সালাম দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে আমাদেরকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে, নারীকে এভাবেই সম্মান করতে হয়। আর এভাবেই কোনও নারীর স্বামী বা মাহরাম পুরুষের মর্যাদা রক্ষা করতে হয়। এটা আত্মমর্যাদার বিষয়। আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন পুরুষ কখনও তার স্ত্রী ও মা-বোনের সঙ্গে অন্য কোনও পুরুষের সরাসরি কথা বলাটা মেনে নিতে পারে না। অন্যের এ মর্যাদা সম্পর্কে সচেতন থাকা প্রত্যেক আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন ব্যক্তির একান্ত কর্তব্য।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. উম্মুল মুমিনীন আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. অতি উচ্চমর্যাদাসম্পন্ন নারীকুলের শ্রেষ্ঠ নারী।

খ. হযরত জিবরীল আলাইহিস সালামের পক্ষ থেকে সালাম পাওয়া হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি.-এর একটি বিশেষত্ব।

গ. সালাম অপেক্ষা সালামের জবাব উৎকৃষ্ট হওয়া কাম্য।

ঘ. নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া পরনারীর সঙ্গে কথা বলতে নেই।

ঙ. পরনারীকে সালামও পৌঁছাতে হবে তার স্বামী বা কোনও মাহরাম পুরুষের মাধ্যমে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)