রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ
৬. সালাম-মুসাফাহার আদব
হাদীস নং: ৮৫৮
সালাম-মুসাফাহার আদব
পরিচ্ছেদ:৪ কাছাকাছি সময়ে কারও সঙ্গে বার বার সাক্ষাৎ হলে বার বার সালাম দেওয়া, যেমন (কোনও কক্ষে) প্রবেশ করল, তারপর বের হয়ে আসল, তারপর সঙ্গে সঙ্গে আবার প্রবেশ করল কিংবা দুজনের মাঝখানে গাছ বা অন্যকিছুর আড়াল দেখা দিল
হাদীছ নং: ৮৫৮
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে নামাযে ভুল-ত্রুটিকারী ব্যক্তি সম্পর্কিত একটি হাদীছে বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি এসে নামায পড়ল। তারপর নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তাঁকে সালাম দিল। তিনি তার সালামের জবাব দিয়ে বললেন, ফিরে যাও, আবার নামায পড়ো। কেননা তুমি নামায পড়নি। সে ফিরে গিয়ে আবার নামায পড়ল। তারপর এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিল। সে এরূপ তিনবার করল। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৭৫৭; সহীহ মুসলিম: ৩৯৭; সুনানে আবু দাউদ: ৮৫৬; জামে তিরমিযী: ৩০৩: সুনানে নাসাঈ: ৮৮৪; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৩৭৩৯; সুনানে দারিমী: ১৩৬৮; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ১৫৯৩)
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে নামাযে ভুল-ত্রুটিকারী ব্যক্তি সম্পর্কিত একটি হাদীছে বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি এসে নামায পড়ল। তারপর নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তাঁকে সালাম দিল। তিনি তার সালামের জবাব দিয়ে বললেন, ফিরে যাও, আবার নামায পড়ো। কেননা তুমি নামায পড়নি। সে ফিরে গিয়ে আবার নামায পড়ল। তারপর এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিল। সে এরূপ তিনবার করল। -বুখারী ও মুসলিম
(সহীহ বুখারী: ৭৫৭; সহীহ মুসলিম: ৩৯৭; সুনানে আবু দাউদ: ৮৫৬; জামে তিরমিযী: ৩০৩: সুনানে নাসাঈ: ৮৮৪; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক: ৩৭৩৯; সুনানে দারিমী: ১৩৬৮; তহাবী, শারহু মুশকিলিল আছার: ১৫৯৩)
كتاب السلام
باب استحباب إعادة السلام عَلَى من تكرر لقاؤه عَلَى قرب بأن دخل ثم خرج ثُمَّ دخل في الحال، أَو حال بينهما شجرة ونحوهما
858 - عن أَبي هريرة - رضي الله عنه - في حديثِ المسِيءِ صلاته: أنّه جَاءَ فَصَلَّى، ثُمَّ جَاءَ إِلَى النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - فَسَلَّمَ عَلَيْهِ، فَرَدَّ عَلَيْهِ السَّلاَمَ، فَقَالَ: «ارْجِعْ فَصَلِّ فَإنَّكَ لَمْ تُصَلِّ» فَرَجَعَ فَصَلَّى، ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَى النَّبيِّ - صلى الله عليه وسلم - حَتَّى فَعَلَ ذَلِكَ ثَلاثَ مَرَّاتٍ. متفقٌ عَلَيْهِ. (1)
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হাদীছটির পরবর্তী অংশ হচ্ছে-
فقال: والذي بعثك بالحق ما أحسن غيره، فعلمني، فقال: «إذا قمت إلى الصلاة فكبر، ثم اقرأ ما تيسر معك من القرآن، ثم اركع حتى تطمئن راكعا، ثم ارفع حتى تعدل قائما، ثم اسجد حتى تطمئن ساجدا، ثم ارفع حتى تطمئن جالسا، وافعل ذلك في صلاتك كلها
‘লোকটি বলল, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন তাঁর কসম! আমি এরচে' ভালো পারি না। আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যখন নামাযে দাঁড়াবে, তখন তাকবীর বলবে। তারপর কুরআনের যতটুকু তোমার জানা আছে তা থেকে তোমার পক্ষে যা সহজ হয় তা পড়বে। তারপর রুকূ' করবে। রুকূ' অবস্থায় স্থির হয়ে যাবে। তারপর রুকূ' থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর সিজদা করবে। সিজদা অবস্থায় স্থির হয়ে যাবে। তারপর সিজদা থেকে উঠে স্থির হয়ে বসবে। তোমার পূর্ণ নামাযে এরূপ করবে’।
এ হাদীছটিতে যে সাহাবীর ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, তার নাম খাল্লাদ ইবন রাফি'। তিনি একজন বেদুঈন সাহাবী। তিনি মসজিদে এসে তাড়াহুড়া করে নামায পড়ছিলেন। তা'দীলুল আরকান করছিলেন না। তা'দীলুল আরকান অর্থ নামাযের রুকন অর্থাৎ রুকূ'-সিজদা ইত্যাদি ফরযসমূহ ধীরস্থিরভাবে আদায় করা। যেমন রুকূ'তে গিয়ে এতটুকু সময় স্থির হয়ে থাকা, যাতে ধীরস্থিরভাবে অন্ততপক্ষে একবার সুবহানা রাব্বিয়াল 'আযীম পড়া যায়। তারপর রুকু' থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে খানিকটা স্থির হওয়া। তারপর রুকূ'র মতো ধীরস্থিরভাবে সিজদা করা। দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে স্থিরভাবে বসা। এসব কাজ ওয়াজিব। এগুলো না করলে নামায হয় না। এরূপ নামায পুনরায় পড়তে হয়। ওই সাহাবী তা'দীলুল আরকান ছাড়াই নামায পড়ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা লক্ষ করছিলেন।
ওই সাহাবী নামায শেষ করে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন এবং সালাম দিলেন। তিনি সালামের উত্তর দিয়ে বললেন- اِرْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصل (ফিরে যাও, আবার নামায পড়ো। কেননা তুমি নামায পড়নি)। তাঁর নামায পড়াটা যেহেতু সহীহভাবে হয়নি, তাই বলেছেন তুমি নামায পড়নি। অর্থাৎ তোমার পড়াটা না পড়ার মতোই হয়েছে। তাই এ নামায আবার পড়তে হবে। কীভাবে পড়তে হবে তা তিনি বলে দেননি। সম্ভবত মনে করেছিলেন ওই সাহাবী নিজেই বুঝতে পারবেন তাঁর নামায কীভাবে পড়া উচিত ছিল আর কীভাবে পড়েছেন। কিন্তু সাহাবীর নামাযের সব নিয়ম-কানুন জানা ছিল না। তাই ফিরে গিয়ে আবারও নামায পড়লেন বটে, কিন্তু পড়লেন আগের মতোই। তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইতি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে সালাম দিলেন। তিনি যথারীতি সালামের উত্তর দিলেন। ওই সাহাবী ক্ষনিক আগেই এসে সালাম দিয়েছিলেন। তারপর নামায পড়ে এসে আবার সাহাবী দিলেন। দুইবার সালাম দেওয়ার মাঝখানে ছিল নামাযের ব্যবধান। অল্পসময়ের বিরতির পর ফের সালাম দেওয়ায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপত্তি করেননি; বরং যথারীতি সালামের উত্তর দিয়েছেন। বোঝা গেল একবার সালাম দেওয়ার পর যদি ক্ষণিকের বিচ্ছেদ হয়, তারপর পুনরায় সাক্ষাৎকালে সালাম দেওয়া বিধিসম্মত। প্রথমবারের মতোই পরেরবারও সালাম দেওয়া সুন্নত।
যাহোক দ্বিতীয়বার সালামের জবাব দেওয়ার পর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় বললেন, ফিরে যাও, আবার নামায পড়ো। কেননা তুমি নামায পড়নি। এভাবে তিনবার হল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয়বারও তাঁকে নামাযের নিয়ম শিখিয়ে দিলেন না। এর কারণ এ হতে পারে যে, তিনি তাঁকে সময় দিচ্ছিলেন। যাতে নিজ ত্রুটি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতে থাকেন এবং বিশুদ্ধভাবে নামায পড়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। তারপরও যখন তাঁর কাছে নিজ ত্রুটি ধরা পড়বে না, তখন তাঁর নিজের মধ্যেই শেখার আগ্রহ জন্মাবে এবং বিষয়টির গুরুত্বও তাঁর বুঝে আসবে। তখন জানতে চাইবেন সহীহ-শুদ্ধভাবে নামায কীভাবে পড়তে হয়। তখন যদি শিক্ষা দেওয়া হয়, তবে তা তার মনে বসে যাবে। কখনও ভুলবেন না। পরিশেষে তাই হল। শেষবার যখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন 'ফিরে যাও, আবার নামায পড়ো। কেননা তুমি নামায পড়নি', তখন তিনি নিজ অপারগতা প্রকাশ করে বললেন-
والذي بعثك بالحق ما أحسن غيره، فعلمني،
‘যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন তাঁর কসম! আমি এরচে' ভালো পারি না। আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন’।
তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্নেহ-মমতার সঙ্গে তাঁকে নামাযের নিয়ম শিখিয়ে দিলেন। নামাযের কোন রুকন কীভাবে আদায় করতে হবে তা বলে দিলেন। অর্থাৎ প্রতিটি রুকন আদায় করতে হবে ধীরস্থিরভাবে। তা'দীলুল আরকানের সঙ্গে। তাড়াহুড়া করা যাবে না। যদি তাড়াহুড়া করা হয়, তবে তা'দীলুল আরকান ছুটে যাবে, যা কিনা ওয়াজিব। রুকু'-সিজদায় গিয়ে স্থির না হলে, রুকু' থেকে সোজা হয়ে না দাঁড়ালে এবং দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে না বসলে নামায হয় না। কেননা এর প্রতিটিই ওয়াজিব।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. একবার সালাম দেওয়ার পর ক্ষণিকের বিচ্ছেদ বা আড়ালের পর পুনরায় সাক্ষাৎ হলে পুনরায় সালাম দেওয়া সুন্নত।
খ. নামাযে তা'দীলুল আরকান ওয়াজিব। ওয়াজিব ছুটে গেলে নামায হয় না।
গ. কারও দ্বারা কোনও ভুল হলে তাকে শিক্ষাদানের একটা নববী পন্থা এটাও যে, তাকে সুযোগ দেওয়া হবে যাতে সে নিজে নিজেই অনুসন্ধান করে নিজ ভুল নির্ণয় করতে পারে এবং নিজে নিজেই তা সংশোধন করতে সক্ষম হয়।
ঘ. যার যে বিষয়ে জানা নেই তার উচিত, তা অকপটে স্বীকার করা এবং যে জানে তার কাছ থেকে জেনে নেওয়া।
ঙ. শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ ছিল খুবই মমতাপূর্ণ। প্রত্যেক শিক্ষাদাতার এ আদর্শ অনুসরণ করা উচিত।
فقال: والذي بعثك بالحق ما أحسن غيره، فعلمني، فقال: «إذا قمت إلى الصلاة فكبر، ثم اقرأ ما تيسر معك من القرآن، ثم اركع حتى تطمئن راكعا، ثم ارفع حتى تعدل قائما، ثم اسجد حتى تطمئن ساجدا، ثم ارفع حتى تطمئن جالسا، وافعل ذلك في صلاتك كلها
‘লোকটি বলল, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন তাঁর কসম! আমি এরচে' ভালো পারি না। আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যখন নামাযে দাঁড়াবে, তখন তাকবীর বলবে। তারপর কুরআনের যতটুকু তোমার জানা আছে তা থেকে তোমার পক্ষে যা সহজ হয় তা পড়বে। তারপর রুকূ' করবে। রুকূ' অবস্থায় স্থির হয়ে যাবে। তারপর রুকূ' থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর সিজদা করবে। সিজদা অবস্থায় স্থির হয়ে যাবে। তারপর সিজদা থেকে উঠে স্থির হয়ে বসবে। তোমার পূর্ণ নামাযে এরূপ করবে’।
এ হাদীছটিতে যে সাহাবীর ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, তার নাম খাল্লাদ ইবন রাফি'। তিনি একজন বেদুঈন সাহাবী। তিনি মসজিদে এসে তাড়াহুড়া করে নামায পড়ছিলেন। তা'দীলুল আরকান করছিলেন না। তা'দীলুল আরকান অর্থ নামাযের রুকন অর্থাৎ রুকূ'-সিজদা ইত্যাদি ফরযসমূহ ধীরস্থিরভাবে আদায় করা। যেমন রুকূ'তে গিয়ে এতটুকু সময় স্থির হয়ে থাকা, যাতে ধীরস্থিরভাবে অন্ততপক্ষে একবার সুবহানা রাব্বিয়াল 'আযীম পড়া যায়। তারপর রুকু' থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে খানিকটা স্থির হওয়া। তারপর রুকূ'র মতো ধীরস্থিরভাবে সিজদা করা। দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে স্থিরভাবে বসা। এসব কাজ ওয়াজিব। এগুলো না করলে নামায হয় না। এরূপ নামায পুনরায় পড়তে হয়। ওই সাহাবী তা'দীলুল আরকান ছাড়াই নামায পড়ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা লক্ষ করছিলেন।
ওই সাহাবী নামায শেষ করে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন এবং সালাম দিলেন। তিনি সালামের উত্তর দিয়ে বললেন- اِرْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصل (ফিরে যাও, আবার নামায পড়ো। কেননা তুমি নামায পড়নি)। তাঁর নামায পড়াটা যেহেতু সহীহভাবে হয়নি, তাই বলেছেন তুমি নামায পড়নি। অর্থাৎ তোমার পড়াটা না পড়ার মতোই হয়েছে। তাই এ নামায আবার পড়তে হবে। কীভাবে পড়তে হবে তা তিনি বলে দেননি। সম্ভবত মনে করেছিলেন ওই সাহাবী নিজেই বুঝতে পারবেন তাঁর নামায কীভাবে পড়া উচিত ছিল আর কীভাবে পড়েছেন। কিন্তু সাহাবীর নামাযের সব নিয়ম-কানুন জানা ছিল না। তাই ফিরে গিয়ে আবারও নামায পড়লেন বটে, কিন্তু পড়লেন আগের মতোই। তারপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইতি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে সালাম দিলেন। তিনি যথারীতি সালামের উত্তর দিলেন। ওই সাহাবী ক্ষনিক আগেই এসে সালাম দিয়েছিলেন। তারপর নামায পড়ে এসে আবার সাহাবী দিলেন। দুইবার সালাম দেওয়ার মাঝখানে ছিল নামাযের ব্যবধান। অল্পসময়ের বিরতির পর ফের সালাম দেওয়ায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপত্তি করেননি; বরং যথারীতি সালামের উত্তর দিয়েছেন। বোঝা গেল একবার সালাম দেওয়ার পর যদি ক্ষণিকের বিচ্ছেদ হয়, তারপর পুনরায় সাক্ষাৎকালে সালাম দেওয়া বিধিসম্মত। প্রথমবারের মতোই পরেরবারও সালাম দেওয়া সুন্নত।
যাহোক দ্বিতীয়বার সালামের জবাব দেওয়ার পর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় বললেন, ফিরে যাও, আবার নামায পড়ো। কেননা তুমি নামায পড়নি। এভাবে তিনবার হল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয়বারও তাঁকে নামাযের নিয়ম শিখিয়ে দিলেন না। এর কারণ এ হতে পারে যে, তিনি তাঁকে সময় দিচ্ছিলেন। যাতে নিজ ত্রুটি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতে থাকেন এবং বিশুদ্ধভাবে নামায পড়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। তারপরও যখন তাঁর কাছে নিজ ত্রুটি ধরা পড়বে না, তখন তাঁর নিজের মধ্যেই শেখার আগ্রহ জন্মাবে এবং বিষয়টির গুরুত্বও তাঁর বুঝে আসবে। তখন জানতে চাইবেন সহীহ-শুদ্ধভাবে নামায কীভাবে পড়তে হয়। তখন যদি শিক্ষা দেওয়া হয়, তবে তা তার মনে বসে যাবে। কখনও ভুলবেন না। পরিশেষে তাই হল। শেষবার যখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন 'ফিরে যাও, আবার নামায পড়ো। কেননা তুমি নামায পড়নি', তখন তিনি নিজ অপারগতা প্রকাশ করে বললেন-
والذي بعثك بالحق ما أحسن غيره، فعلمني،
‘যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন তাঁর কসম! আমি এরচে' ভালো পারি না। আপনি আমাকে শিখিয়ে দিন’।
তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্নেহ-মমতার সঙ্গে তাঁকে নামাযের নিয়ম শিখিয়ে দিলেন। নামাযের কোন রুকন কীভাবে আদায় করতে হবে তা বলে দিলেন। অর্থাৎ প্রতিটি রুকন আদায় করতে হবে ধীরস্থিরভাবে। তা'দীলুল আরকানের সঙ্গে। তাড়াহুড়া করা যাবে না। যদি তাড়াহুড়া করা হয়, তবে তা'দীলুল আরকান ছুটে যাবে, যা কিনা ওয়াজিব। রুকু'-সিজদায় গিয়ে স্থির না হলে, রুকু' থেকে সোজা হয়ে না দাঁড়ালে এবং দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে না বসলে নামায হয় না। কেননা এর প্রতিটিই ওয়াজিব।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. একবার সালাম দেওয়ার পর ক্ষণিকের বিচ্ছেদ বা আড়ালের পর পুনরায় সাক্ষাৎ হলে পুনরায় সালাম দেওয়া সুন্নত।
খ. নামাযে তা'দীলুল আরকান ওয়াজিব। ওয়াজিব ছুটে গেলে নামায হয় না।
গ. কারও দ্বারা কোনও ভুল হলে তাকে শিক্ষাদানের একটা নববী পন্থা এটাও যে, তাকে সুযোগ দেওয়া হবে যাতে সে নিজে নিজেই অনুসন্ধান করে নিজ ভুল নির্ণয় করতে পারে এবং নিজে নিজেই তা সংশোধন করতে সক্ষম হয়।
ঘ. যার যে বিষয়ে জানা নেই তার উচিত, তা অকপটে স্বীকার করা এবং যে জানে তার কাছ থেকে জেনে নেওয়া।
ঙ. শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ ছিল খুবই মমতাপূর্ণ। প্রত্যেক শিক্ষাদাতার এ আদর্শ অনুসরণ করা উচিত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)