রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

৬. সালাম-মুসাফাহার আদব

হাদীস নং: ৮৬২
সালাম-মুসাফাহার আদব
পরিচ্ছেদ :৭ নিজ স্ত্রী ও মাহরাম নারীকে সালাম দেওয়া এবং ফিতনার আশঙ্কা নেই এমন ক্ষেত্রে পরনারীকে সালাম দেওয়া, অনুরূপ শর্তে নারীদের কর্তৃক পুরুষদের সালাম দেওয়া
বৃদ্ধা নারীকে সালাম দেওয়া
হাদীছ নং: ৮৬২

হযরত সাহ্‌ল ইবন সা'দ রাযি. বলেন, আমাদের মধ্যে এক মহিলা ছিল। অপর এক বর্ণনায় আছে, আমাদের মধ্যে এক বৃদ্ধা ছিলেন। তিনি বিট-মূল তুলে ডেকচিতে ফেলতেন এবং যবের দানা পিষে তাতে ঢেলে দিতেন (এভাবে তিনি তা রান্না করতেন)। আমরা জুমু'আর নামায পড়ে যখন ফিরতাম, তখন সেই বৃদ্ধাকে সালাম দিতাম। তিনি আমাদেরকে তা পরিবেশন করতেন। -বুখারী
(সহীহ বুখারী: ৬২৪৮; মুসনাদু ইবনিল জা'দ: ২৯৪০; সহীহ ইবনে হিব্বান : ৫৩০৭; বায়হাকী, আস সুনানুল কুবরা: ১৩৫৩৫; নাসাঈ, আস সুনানুল কুবরা : ১১৭৯১; তাবারানী, আল মু'জামুল কাবীর: ৫৯০৪; শারহুস সুন্নাহ: ২৮৬৪)
كتاب السلام
باب سلام الرجل على زوجته والمرأة من محارمه، وعلى أجنبية وأجنبيات لا يخاف الفتنة بهن وسلامهن بهذا الشرط
862 - عن سهل بن سعدٍ - رضي الله عنه - قال: كَانَتْ فِينَا امْرَأةٌ - وفي رواية: كَانَتْ لَنَا عَجُوزٌ - تَأخُذُ مِنْ أصُولِ السِّلْقِ فَتَطْرَحُهُ فِي القِدْرِ، وَتُكَرْكِرُ حَبَّاتٍ مِنْ شَعِيرٍ، فَإذَا صَلَّيْنَا الْجُمُعَةَ، وَانْصَرَفْنَا، نُسَلِّمُ عَلَيْهَا، فَتُقَدِّمُهُ إلَيْنَا. رواه البخاري. (1)
قَوْله: «تُكَرْكِرُ» أيْ: تَطْحَنُ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

হযরত সাহ্‌ল রাযি.-এর বর্ণনাটি এখানে সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বিস্তারিত বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, জুমু'আর দিন আমরা আনন্দিত হতাম। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে এখানে উল্লিখিত এ কথাগুলো বলেন। অর্থাৎ জুমু'আর নামাযের পরে ওই বৃদ্ধার কাছে এসে যে খাবার খেতে পারতেন, সেটাই ছিল আনন্দের কারণ। এ বৃদ্ধার নাম জানা যায় না। তবে তিনি তাঁর এক কীর্তিতে স্মরণীয় হয়ে আছেন ও থাকবেন। তিনি জুমু'আর মুসল্লীদের আপ্যায়িত করতেন। আপ্যায়নের উপকরণ ছিল নিতান্তই সাধারণ। চরম ক্ষুধার্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ তা খেতে চাবে না। বাগান থেকে পালং জাতীয় এক প্রকার সবজি মূলসহ তুলতেন। তারপর সামান্য যবের দানা পিষে তা -এই সবজির সঙ্গে মিশিয়ে পানিতে সেদ্ধ করতেন। না তেল, না কোনও মশলা। মুসুল্লীগণ জুমু'আর নামায পড়ে ফেরার সময় তাকে সালাম দিতেন। তাদের উদ্দেশ্য হত তার অতিথি হিসেবে ওই খাবার খাওয়া। তিনি তাদেরকে পরম স্নেহে ওই খাবার খেতে দিতেন। তারা পরমানন্দে তা খেয়ে নিতেন। তাদের জন্য এটা ছিল অনেক বড় প্রাপ্তি। তাই তারা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে এ কথা মনে রেখেছেন এবং পরবর্তীদের কাছে এটা প্রকাশ ও প্রচারও করেছেন।

এর দ্বারা আঁচ করা যায় সাহাবায়ে কেরাম কত গরীব ছিলেন। তাদের খাদ্যের কত অভাব ছিল। তা না হলে অত তুচ্ছ ও সাধারণ খাবার এমন আনন্দে তারা কেন খাবেন? এমনই কষ্ট-ক্লেশের জীবন তারা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে যাপন করতেন। এরই মধ্য দিয়ে তারা দীন শিখতেন এবং বিপুল উদ্দীপনায় দীনের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় প্রাণ বিলাতেন। তাদের সে অসামান্য ত্যাগের বদৌলতেই এ মহান দীন আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে।

সাহাবীগণ যখন এ বৃদ্ধার কাছে আসতেন, তখন তারা তাকে সালাম দিতেন। বোঝা গেল বৃদ্ধা নারী মাহরাম না হলেও তাকে সালাম দেওয়া যেতে পারে।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ফিতনার আশঙ্কা না থাকলে পরনারীকে সালাম দেওয়া যাবে। বৃদ্ধা নারীর ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য।

খ. আপন সামর্থ্য অনুযায়ী মেহমানকে আপ্যায়ন করা চাই। তাতে খাবারের বস্তু যত সাধারণই হোক না কেন।

গ. আন্তরিকতার সঙ্গে যে খাবার পেশ করা হয় তা যত সাধারণই হোক না কেন, পরম আনন্দের সঙ্গেই তা গ্রহণ করা উচিত।

ঘ. কারও দ্বারা কোনওভাবে উপকৃত হলে তা লুকাতে নেই: অকুণ্ঠভাবে প্রকাশ কর উচিত। এটাও কৃতজ্ঞতার অন্তর্ভুক্ত।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)