রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

৬. সালাম-মুসাফাহার আদব

হাদীস নং: ৮৬৪
সালাম-মুসাফাহার আদব
পরিচ্ছেদ :৭ নিজ স্ত্রী ও মাহরাম নারীকে সালাম দেওয়া এবং ফিতনার আশঙ্কা নেই এমন ক্ষেত্রে পরনারীকে সালাম দেওয়া, অনুরূপ শর্তে নারীদের কর্তৃক পুরুষদের সালাম দেওয়া
হাদীছ নং: ৮৬৪

হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ রাযি. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের একদল মহিলাদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি আমাদেরকে সালাম দিলেন।
-আবু দাউদ ও তিরমিযী। এটা আবু দাউদের বর্ণনা।
(সুনানে আবু দাউদ: ৫২০৪; জামে তিরমিযী: ২৬৯৭; বুখারী, আল আদাবুল মুফরাদ: ১০৪৭; বাগাবী, শারহুস সুন্নাহ : ৩৩০৮; সুনানে ইবন মাজাহ : ৩৭০০; মুসনাদুল হুমায়দী: ৩৭০; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা: ২৫৭৮০; মুসনাদে ইসহাক ইবন রাহূয়াহ : ২২৯৬; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর; ৪৩৬; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান: ৮৫০৯)
তিরমিযীর বর্ণনা এরূপ- একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে যাচ্ছিলেন। একদল নারী বসা ছিল। তিনি হাত দ্বারা ইশারা করে সালাম দিলেন।
كتاب السلام
باب سلام الرجل على زوجته والمرأة من محارمه، وعلى أجنبية وأجنبيات لا يخاف الفتنة بهن وسلامهن بهذا الشرط
864 - وعن أسماءَ بنتِ يزيدَ رضي الله عنها، قالت: مَرّ عَلَيْنَا النّبيُّ - صلى الله عليه وسلم - فِي نِسوَةٍ فَسَلَّمَ عَلَيْنَا. رواه أَبُو داود والترمذي، (1) وقال: «حديث حسن»، وهذا لفظ أَبي داود.
ولفظ الترمذي: أنَّ رسول الله - صلى الله عليه وسلم - مَرَّ في المَسْجِدِ يَوْمًا، وَعُصْبَةٌ مِنَ النِّسَاءِ قُعُودٌ، فَأَلْوَى بِيَدِهِ بالتَّسْلِيمِ.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটির বর্ণনা অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদেরকে সালাম দিয়েছেন আর তা দিয়েছেন হাতের ইশারায়। মহিলাদেরকে সালাম দেওয়া সম্পর্কে উলামায়ে কেরামের বিভিন্ন মত আছে। এমনিতে সালাম দেওয়া ফরয বা ওয়াজিব নয়: সুন্নত। যদিও জবাব দেওয়া ওয়াজিব। অপরদিকে নিজেকে গুনাহ থেকে বাঁচানো জরুরি। মহিলাদেরকে সালাম দেওয়ার দ্বারা সাধারণদের ক্ষেত্রে গুনাহের আশঙ্কা থাকে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মা'সূম ছিলেন। তাই তাঁর সালাম দেওয়ায় কোনও সমস্যা ছিল না। তাঁর সালাম উম্মতের জন্য বিশাল প্রাপ্তি। নারী-পুরুষ সকলের জন্যই। পক্ষান্তরে নারীর প্রতি স্বভাবগত আকর্ষণ থাকায় সাধারণ মানুষের বেলায় আশঙ্কা রয়েছে যে, সালাম দিতে গিয়ে সে নারীর প্রতি এবং নারীও সালামদাতার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়বে। গায়রে মাহরাম নারীর প্রতি ইচ্ছাকৃত তাকানো জায়েয নয়। সালাম দেওয়ার ছলে হয়তো তাকিয়ে বসবে। শয়তান সেই সুযোগ গ্রহণ করবে। মনের ভেতর কুচিন্তার জন্ম দেবে। এভাবে সালামদাতা বা যাকে সালাম দেওয়া হল সেই নারী কিংবা উভয়ে ফিতনার শিকার হবে। তাই সাধারণভাবে গায়রে মাহরাম নারীকে সালাম দেওয়া ঠিক নয়। হাঁ, গায়রে মাহরাম নারীর সঙ্গে যদি পুরুষ থাকে, তবে সে পুরুষকে লক্ষ্য করে সালাম দেওয়া যাবে। এমনিভাবে সে নারী যদি বৃদ্ধা হয়, যেখানে ফিতনার আশঙ্কা নেই, সে ক্ষেত্রেও সালাম দেওয়া জায়েয হবে
এ হাদীছটিতে যে ইশারায় সালাম দেওয়ার কথা আছে, প্রকৃতপক্ষে তা কেবল ইশারা ছিল না; ইশারা সঙ্গে মুখে সালাম উচ্চারণও করা হয়েছিল। কেননা এ হাদীছেরই অপর এক বর্ণনায় আছে, হযরত আসমা বিনতে ইয়াযীদ রাযি. বলেন–
مَرَّ عَلَيْنَا النَّبِيُّﷺ فِي نِسْوَةٍ فَسَلَّمَ عَلَيْنَا
'নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের একদল মহিলাদের নিকট নিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি আমাদেরকে সালাম দিলেন।' (সুনানে আবূ দাউদ : ৫২০৪; সুনানে ইবন মাজাহ : ৩৭০০; মুসনাদুল হুমায়দী: ৩৭০; মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বা : ২৫৭৮০; মুসনাদে ইসহাক ইবন রাহুয়াহ: ২২৯৬; তাবারানী, আল মুজামুল কাবীর : ৪৩৬; বায়হাকী, শুআবুল ঈমান: ৮৫০৯)

সুতরাং সালাম মুখের উচ্চারণেই দিতে হবে। হাঁ, যাকে সালাম দেওয়া হল তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং তাকে যে সালাম দেওয়া হচ্ছে এ কথা বোঝানোর জন্য উচ্চারণের সঙ্গে হাত দ্বারা ইশারাও করা যেতে পারে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতের ইশারা ছিল সেরকমই।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. যে ক্ষেত্রে ফিতনার আশঙ্কা নেই, সে ক্ষেত্রে নারীদের সালাম দেওয়া যেতে পারে।

খ. সালামের বাক্য মুখে উচ্চারণ করা জরুরি। তবে দৃষ্টি আকর্ষণ করা অথবা সালাম দেওয়া হচ্ছে এ কথা বোঝানোর জন্য হাত দিয়ে ইশারা করা যেতে পারে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান