রিয়াযুস সালিহীন-ইমাম নববী রহঃ

৭. রোগীর শুশ্রূষা ও মাইয়্যেতের প্রতি কর্তব্য

হাদীস নং: ৮৯৮
রোগীর শুশ্রূষা ও মাইয়্যেতের প্রতি কর্তব্য
সপ্তম ভাগ: রোগী দেখতে যাওয়া, মায়্যিতকে বিদায় দেওয়া, জানাযার নামায পড়া, দাফনে শরীক হওয়া, দাফনের পর কবরের কাছে কিছুক্ষণ অবস্থান করা

পরিচ্ছেদ :১ রোগী দেখতে যাওয়া
সকাল-সন্ধ্যায় সত্তর হাজার ফিরিশতার দু'আ পাওয়ার উপায়
হাদীছ নং: ৮৯৮

হযরত আলী রাযি. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, যে-কোনও মুসলিম ব্যক্তি সকালবেলা কোনও অসুস্থ মুসলিমকে দেখতে গেলে সত্তর হাজার ফিরিশতা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য মাগফিরাতের দু'আ করে। যদি সন্ধ্যাবেলা তাকে দেখতে যায় তবে সত্তর হাজার ফিরিশতা সকাল পর্যন্ত তার জন্য মাগফিরাতের দু'আ করে এবং তার জন্য জান্নাতে একটি বাগান কর হয়। -তিরমিযী
( জামে তিরমিযী : ৯৬৯; সুনানে আবূ দাউদ: ৩০৯৮; মুসনাদে আহমাদ: ৯৭৬; বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান: ৮৭৪২; বাগাবী, শারহুস্ সুন্নাহ: ১৪১০)
كتاب عيادة المريض وتشييع الميت والصلاة عليه وحضور دفنه والمكث عند قبره بعد دفنه
كتاب عيَادة المريض وَتشييع المَيّت والصّلاة عليه وَحضور دَفنهِ وَالمكث عِنْدَ قبرهِ بَعدَ دَفنه

باب عيادة المريض
898 - وعن عليّ - رضي الله عنه - قَالَ: سَمِعْتُ رسولَ الله - صلى الله عليه وسلم - يَقُولُ: «مَا مِنْ مُسْلِم يَعُودُ مُسْلِمًا غُدْوةً إِلاَّ صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُونَ ألْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُمْسِيَ، وَإنْ عَادَهُ عَشِيَّةً إِلاَّ صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُصْبحَ، وَكَانَ لَهُ خَرِيفٌ في الْجَنَّةِ». رواه الترمذي (1)، وقال: «حديث حسن».
«الخَريفُ»: الثَّمرُ الْمَخْرُوفُ، أيْ: الْمُجْتَنَى.

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে রোগী দেখতে যাওয়ার বিশাল ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। হাদীছটি বর্ণনা করেছেন হযরত আলী রাযি.। বর্ণনাটির একটি প্রেক্ষাপট আছে। একবার নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাতি হযরত হাসান রাযি. অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। খবর পেয়ে হযরত আবূ মূসা আশ'আরী রাযি. তাঁকে দেখতে গেলেন। হযরত আলী রাযি. তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি রোগী দেখতে এসেছেন, না আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে? তিনি বললেন, না, বরং রোগী দেখতে। তখন হযরত আলী রাযি. তাঁকে এ হাদীছটি শুনিয়ে দেন।

হাদীছটিতে রোগী দেখতে যাওয়ার দু'টি ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। তার একটি হল সত্তর হাজার ফিরিশতার দু'আ পাওয়া। যে ব্যক্তি সকালবেলা কোনও রোগীকে দেখতে যায়, তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফিরিশতা দু'আ করতে থাকে। আর সন্ধ্যাবেলা দেখতে গেলে সকালবেলা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফিরিশতা তার জন্য দু'আ করতে থাকে।

কোনও কোনও বর্ণনায় আরও আছে যে, ফিরিশতাগণ আল্লাহর কাছে তার গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। নিশ্চয়ই মা'সুম ফিরিশতাদের দু'আ বৃথা যায় না। কাজেই যারা রোগী দেখতে যায়, যথেষ্ট আশা রয়েছে আল্লাহ পাপরাশিও ক্ষমা করে দেবেন।

এতসংখ্যক ফিরিশতাদের দু'আ করতে থাকায় আশ্চর্যের কিছু নেই। দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষও যদি সকাল-বিকাল রোগী দেখতে বের হয়, তবে আল্লাহর এতসংখ্যক ফিরিশতা আছে যে, তাদের প্রত্যেকের জন্যই সত্তর হাজার ফিরিশতা দু'আ করতে পারবে। তাতে ফিরিশতাদের সংখ্যায় কোনও টান পড়বে না। আল্লাহ তা'আলা বলেন-
وَمَا يَعْلَمُ جُنُودَ رَبِّكَ إِلَّا هُوَ
'তোমার প্রতিপালকের বাহিনী সম্পর্কে (অর্থাৎ তাদের সংখ্যা যে কত তা) তিনি ছাড়া কেউ জানে না’। (সূরা মুদ্দাচ্ছির, আয়াত ৩১)

বলাবাহুল্য, ফিরিশতাদের দু'আ পেতে পারে কেবল তারাই, যারা ঈমানদার এবং যারা কেবল আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টির জন্যই রোগী দেখতে যায়। ইখলাস ও সহীহ নিয়ত যে-কোনও নেক আমলের জন্যই জরুরি।

রোগী দেখতে যাওয়ার দ্বিতীয় ফযীলত হল জান্নাতের ফল লাভ করা। অর্থাৎ রোগী দেখতে যাওয়ার পুরস্কারে আল্লাহ তা'আলা জান্নাতের অকল্পনীয় স্বাদের ফল খাওয়াবেন। জান্নাতের ফল খাওয়া যাবে জান্নাতে গেলেই। কাজেই এটা কেবল ফল খেতে পারার সুসংবাদই নয়; বরং জান্নাত পাওয়ারও সুসংবাদ। আল্লাহু আকবার! অতি সহজ ও সামান্য কাজের বিনিময়েও মহা মেহেরবান আল্লাহ কী বিশাল পুরস্কারের ব্যবস্থা রেখেছেন। কিন্তু মানুষ কতইনা গাফেল। এত বড় ফযীলতের এ আমলটি ক'জন মানুষই বা করে? অতি কাছে বা অতি আপনজন দিনের পর দিন রোগশয্যায় শায়িত থাকে। তা সত্ত্বেও তাকে দেখতে যাওয়ার ফুরসত হয় না! হয় না ইচ্ছাও। আল্লাহ তা'আলা এ গাফলাত থেকে জেগে ওঠার তাওফীক আমাদেরকে দান করুন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. রোগী দেখতে গেলে ফিরিশতাদের দু'আ পাওয়া যায়।

খ. রোগী দেখতে যাওয়ার দ্বারা গুনাহ মাফেরও আশা থাকে।

গ. আল্লাহ তা'আলার ফিরিশতাসংখ্যা অগণিত। বিভিন্ন কাজের জন্য তাদের নিযুক্ত রাখা হয়েছে। একেক কাজের জন্য অসংখ্য ফিরিশতা।

ঘ. রোগী দেখতে যাওয়ার দ্বারা জান্নাতলাভ সহজ হবে এবং জান্নাতের ফল ভোগ করা যাবে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান