আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৬৯- শপথ ও মান্নতের অধ্যায়

হাদীস নং: ৬২০১
আন্তর্জাতিক নং: ৬৬৫৬
- শপথ ও মান্নতের অধ্যায়
২৭৫৭. মহান আল্লাহর বাণীঃ তারা আল্লাহ তাআলার নামে সুদৃঢ় কসম করছে।
৬২০১। ইসমাঈল (রাহঃ) ......... আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ যে মুসলমানের তিনটি সন্তান মৃত্যুবরণ করেছে, (সে যদি ধৈর্যধারণ করে) তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। হ্যাঁ, কসম পূর্ণ করার জন্য (জাহান্নামের উপর দিয়ে পুলসিরাত) অতিক্রম করতে যতটুকু সময় লাগে।
كتاب الأيمان والنذور
بَابُ قَوْلِ اللَّهِ تَعَالَى: {وَأَقْسَمُوا بِاللَّهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ} [الأنعام: 109]
6656 - حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ: حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنِ ابْنِ المُسَيِّبِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لاَ يَمُوتُ لِأَحَدٍ مِنَ المُسْلِمِينَ ثَلاَثَةٌ مِنَ الوَلَدِ تَمَسُّهُ النَّارُ، إِلَّا تَحِلَّةَ القَسَمِ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে সাধারণভাবে সন্তানের মৃত্যুতে ধৈর্যধারণের ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, যার তিনটি সন্তান মারা যায়, জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ করবে না। অর্থাস সে অবশ্যই জাহান্নাম থেকে মুক্ত থাকবে এবং জান্নাত লাভ করবে। অবশ্য যারা জান্নাত লাভ করবে, তাদেরকেও জান্নাতে যেতে হবে জাহান্নামের উপর দিয়েই। সে সম্পর্কেই এ হাদীছটির শেষে বলা হয়েছে-
إلا تحلة القسم (তবে কসম পূরণ করার বিষয়টা ভিন্ন।) ইমাম নববী রহ. এর ব্যাখ্যা করেছেন, কসম পূরণ করার দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে আল্লাহ তা'আলার এ বাণীর দিকে যে- وَإِنْ مِنْكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا (তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে তা (অর্থাৎ জাহান্নাম) অতিক্রম করবে না)। এ অতিক্রম দ্বারা পুলসিরাত অতিক্রম করার কথা বোঝানো হয়েছে। এটা জাহান্নামের উপর স্থাপিত একটি সেতু।

হাদীছটিতে বোঝানো হয়েছে যে, যার তিনটি সন্তান মারা যায় আর তাতে সে ধৈর্যধারণ করে, সে অবশ্যই জান্নাতবাসী হবে। সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। তবে জাহান্নামে প্রবেশ সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলার যে কসম রয়েছে, সে কসম পূরণের জন্য তাকে ক্ষণিকের জন্য অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করতে হবে। সে প্রবেশ এভাবে যে, জাহান্নামের উপর যে পুলসিরাত আছে সে পুলসিরাতের উপর দিয়ে সকলকেই যেতে হবে। যারা জাহান্নামী, তারা সেই ক্ষুরধার পুলসিরাতে কাটা পড়বে এবং জাহান্নামের গর্তে পতিত হবে। আর যারা জান্নাতবাসী, তারা বিভিন্ন গতিতে পুলসিরাত পার হয়ে যাবে। যেমন এক হাদীছে ইরশাদ হয়েছে-
يَرِدُ النَّاسُ النَّارَ، ثُمَّ يَصْدُرُونَ مِنْهَا بِأَعْمَالِهِمْ فَأَوَّلُهُمْ كَلَمْحِ الْبَرْقِ، ثُمَّ كَالرِّيحِ، ثُمَّ كَحُضْرِ الْفَرَسِ، ثُمَّ كَالرَّاكِبِ فِي رَحْلِهِ، ثُمَّ كَشَدِّ الرَّجُلِ، ثُمَّ كَمَشْيِهِ
'সমস্ত মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করবে। তারপর তারা নিজ নিজ আমল অনুযায়ী তা থেকে বের হবে। সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি বের হবে, সে বের হবে বিদ্যুৎগতিতে। তার পরের ব্যক্তি বের হবে বায়ুর গতিতে। তার পরের ব্যক্তি বের হবে ঘোড়ার গতিতে। তারপর পরের ব্যক্তি বের হবে উষ্ট্রারোহীর গতিতে। তার পরের ব্যক্তি বের হবে দৌড়ের গতিতে। তারপর হেঁটে চলার গতিতে।’ (জামে' তিরমিযী: ২১৫৯; সুনানে দারিমী: ২৮৫২; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৩৪২১)

যদিও মুমিনদেরকে জাহান্নামের উপর স্থাপিত পুলসিরাত অতিক্রম করতে হবে, আল্লাহ তা'আলার রহমত ও কুদরতে তারা সম্পূর্ণ অক্ষত থাকবে। এমনকি জাহান্নামের আগুনের উত্তাপও তাদের গায়ে লাগবে না। তাদের কাছে সে আগুনের উত্তাপ শীতল বোধ হবে। যেমন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
لَا يَبْقَى بَرٌّ وَلَا فَاجِرٌ إِلَّا دَخَلَهَا، فَتَكُونُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ بَرْدًا وَسَلَامًا كَمَا كَانَتْ عَلَى إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ
'পুণ্যবান ও পাপী সকলকেই জাহান্নামে প্রবেশ করতে হবে। তবে মুমিনদের জন্য তা শীতল ও শান্তিদায়ক হবে, যেমন ইবরাহীম আলাইহিস সালামের উপর শীতল ও শান্তিদায়ক হয়েছিল।’ (বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান: ৩৬৪; হাকিম, আল মুস্তাদরাক: ৮৭৪৪)

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. সন্তানের মৃত্যুতে পিতা-মাতার সবরের পরিচয় দেওয়া উচিত।

খ. সন্তানের মৃত্যু বাহ্যত মসিবত হলেও প্রকৃতপক্ষে পিতা-মাতার জন্য তা আল্লাহর রহমত এবং তা তাদের জন্য জান্নাতলাভের অসিলা।

গ. জান্নাতবাসীদেরকেও জাহান্নামের উপর স্থাপিত পুলসিরাত পার হতে হবে।

ঘ. জাহান্নামের উপর দিয়ে অতিক্রমকালে জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ জান্নাতবাসীদের গায়ে লাগবে না।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)