মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)
১. একত্ববাদ ও দীনের মূল ভিত্তিসমূহের আলোচনা
হাদীস নং: ৪
আন্তর্জাতিক নং: ২২০৭৩
একত্ববাদ ও দীনের মূল ভিত্তিসমূহের আলোচনা
(১)পরিচ্ছেদঃ আল্লাহকে জানা, তাঁর একত্বের ঘোষণা দান ও তাঁর অস্তিত্বের স্বীকৃতি দানের আবশ্যকতা প্রসঙ্গে
(৪) আব্দুর রহমান বিন গানাম (রা) থেকে তিনি হচ্ছে সেই সৌভাগ্যশালী ব্যক্তি যাঁকে হযরত উমর ইব্ন খাত্তাব (রা) সিরিয়ায় প্রেরণ করেছিলেন মানুষজনকে ধর্মীয় জ্ঞান শিহ্মা দেয়ার উদ্দেশ্যে, তিনি বলেন, হযরত মুআয বিন জাবাল (রা) তাঁকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর থেকে এরূপ (হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, একদা রাসূল (ﷺ) তাঁর ইয়া’ফূর’ নামক গর্দভের পৃষ্ঠে আরোহণ করেন। এ গর্দভের লাগামটি ছিল খেজুর গাছের থাকার এর তৈরী।তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে মুআয, আরোহণ কর; আমি বললাম, আপনি চলুন, ইয়া রাসূলাল্লাহ।’ কিন্তু তিনি আবার বললেন, আরোহণ কর।
সুতরাং, আমি তাঁর পেছনে উঠে বসলাম। কিন্তু গর্দভ আমাদেরকে আসনসহ ফেলে দিল।আল্লাহর রাসূল (ﷺ) হাসতে হাসতে ওঠে দাঁড়ালেন, আর আমি মনে মনে দুঃখিত হয়ে দণ্ডায়মান হলাম।অতঃপর গর্দভ দ্বিতীয়বার এবং তৃতীয়বারও ঐরূপ করল।এবাদ গর্দভ আমাদেরকে বহন করে নিয়ে চললো।(কিছুহ্মণ পর) রাসূল (ﷺ) তাঁর হাত পেছনের দিকে ফিরিয়ে চাবুক অথবা দ্বারা (যা তাঁর হাতে ছিল) আমার পৃষ্ঠদেশে (মৃদু) আঘাত করলেন এবং বললেন, হে মুআয তুমি কি জান বান্দার উপর আল্লঅহর হক বা অধিকার কী? আমি বললাম আল্লঅহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।তিনি বললেন, বান্দার উপর আল্লাহর অধিকার হচ্ছে যে, তারা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না।হযরত মুআয বলেন, (ইত্যবসরে) আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা বেশ কিছুদূর অগ্রসর হলাম।আল্লাহর রাসূল (ﷺ) (পূর্বের ন্যায়) তাঁর হাত পেছনে ফিরিয়ে আমার পৃষ্ঠে (মৃদু) আঘাত করলেন (স্পষ্টতই) বুঝা যায় যে, এইরূপ আঘাতের উদ্দেশ্য হচ্ছে শ্রোতাকে কর্তব্য বিষয়ে আকৃষ্ট করা।) এবং বললেন, মুআয, ওহে মুআযের মায়ের সন্তান (স্নেহমাখা মধুর সম্বোধন), তুমি কি জান, বান্দারা যদি এইরূপ করে, তবে আল্লাহর উপর বান্দার ‘হক’ বা অধিকার কী? আমি বললাম।আল্লাহ ও তদীয় রাসূল সর্বোত্তম জ্ঞাত।তিনি বললেন, বান্দারা যদি ঐরূপ করে, তবে আল্লাহর উপর তাদের অধিকার হচ্ছে যে, তিনি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।(বুখারী, মুসলিম, বায়হাকী ও অন্যান্য)
সুতরাং, আমি তাঁর পেছনে উঠে বসলাম। কিন্তু গর্দভ আমাদেরকে আসনসহ ফেলে দিল।আল্লাহর রাসূল (ﷺ) হাসতে হাসতে ওঠে দাঁড়ালেন, আর আমি মনে মনে দুঃখিত হয়ে দণ্ডায়মান হলাম।অতঃপর গর্দভ দ্বিতীয়বার এবং তৃতীয়বারও ঐরূপ করল।এবাদ গর্দভ আমাদেরকে বহন করে নিয়ে চললো।(কিছুহ্মণ পর) রাসূল (ﷺ) তাঁর হাত পেছনের দিকে ফিরিয়ে চাবুক অথবা দ্বারা (যা তাঁর হাতে ছিল) আমার পৃষ্ঠদেশে (মৃদু) আঘাত করলেন এবং বললেন, হে মুআয তুমি কি জান বান্দার উপর আল্লঅহর হক বা অধিকার কী? আমি বললাম আল্লঅহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।তিনি বললেন, বান্দার উপর আল্লাহর অধিকার হচ্ছে যে, তারা আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করবে না।হযরত মুআয বলেন, (ইত্যবসরে) আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা বেশ কিছুদূর অগ্রসর হলাম।আল্লাহর রাসূল (ﷺ) (পূর্বের ন্যায়) তাঁর হাত পেছনে ফিরিয়ে আমার পৃষ্ঠে (মৃদু) আঘাত করলেন (স্পষ্টতই) বুঝা যায় যে, এইরূপ আঘাতের উদ্দেশ্য হচ্ছে শ্রোতাকে কর্তব্য বিষয়ে আকৃষ্ট করা।) এবং বললেন, মুআয, ওহে মুআযের মায়ের সন্তান (স্নেহমাখা মধুর সম্বোধন), তুমি কি জান, বান্দারা যদি এইরূপ করে, তবে আল্লাহর উপর বান্দার ‘হক’ বা অধিকার কী? আমি বললাম।আল্লাহ ও তদীয় রাসূল সর্বোত্তম জ্ঞাত।তিনি বললেন, বান্দারা যদি ঐরূপ করে, তবে আল্লাহর উপর তাদের অধিকার হচ্ছে যে, তিনি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।(বুখারী, মুসলিম, বায়হাকী ও অন্যান্য)
كتاب التوحيد
(1) باب في وجوب معرفة الله تعالى وتوحيده والاعتراف بوجوده
(4) (3) وعن عبد الرحمن بن غَنْمٍ وهو الذي بعثه عمر بن الخطاب (رضي الله عنه) إلى الشام يفقه الناس أن معاذ بن جبل (رضي الله عنه)
حدثه عن النبي صلى الله عليه وآله وسلم أنه ركب يوما على حمار له يقال له يعفور (1) رَسَنُهُ من ليف ثم قال اركب يا معاذ فقلت: سر يا رسول اله فقال اركب فردِفْتُهُ (2) فصُرِع الحمار بنا فقام النبي صلى الله عليه وآله وسلم يضحك وقمت أذكر من نفسي أسفاً ثم فعل ذلك الثانية ثم الثالثة وسار بنا فأخلف يده (3) فضرب ظهري بسوطٍ معه أو عصا ثم قال يا معاذ هل تدري ما حق الله على العباد؟ فقلت الله ورسوله أعلم، قال فإن حق الله على العباد أن يعبدوه ولا يشركوا به شيئا، قال ثم سار ما شاء الله، ثم أخلف يده فضرب ظهري فقال: يا معاذ يا ابن أم معاذ هل تدري ما حق العباد على الله (4) إذا هم فعلوا ذلك؟ قلت الله ورسوله أعلم. قال: إذن حق العباد على الله إذا فعلوا ذلك أن يدخلهم الجنة.
حدثه عن النبي صلى الله عليه وآله وسلم أنه ركب يوما على حمار له يقال له يعفور (1) رَسَنُهُ من ليف ثم قال اركب يا معاذ فقلت: سر يا رسول اله فقال اركب فردِفْتُهُ (2) فصُرِع الحمار بنا فقام النبي صلى الله عليه وآله وسلم يضحك وقمت أذكر من نفسي أسفاً ثم فعل ذلك الثانية ثم الثالثة وسار بنا فأخلف يده (3) فضرب ظهري بسوطٍ معه أو عصا ثم قال يا معاذ هل تدري ما حق الله على العباد؟ فقلت الله ورسوله أعلم، قال فإن حق الله على العباد أن يعبدوه ولا يشركوا به شيئا، قال ثم سار ما شاء الله، ثم أخلف يده فضرب ظهري فقال: يا معاذ يا ابن أم معاذ هل تدري ما حق العباد على الله (4) إذا هم فعلوا ذلك؟ قلت الله ورسوله أعلم. قال: إذن حق العباد على الله إذا فعلوا ذلك أن يدخلهم الجنة.
হাদীসের ব্যাখ্যা:
حق - শব্দটি দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়।
ক. অস্তিত্বমান ও বিদ্যমান বস্তু বা বিষয়। এ অর্থে আল্লাহ তা'আলা হক। তিনি অনাদিকাল থেকে বিদ্যমান আছেন এবং অনন্তকাল বিদ্যমান থাকবেন। জান্নাত ও জাহান্নাম হক। কেননা তা বিদ্যমান আছে।
খ. আগামীতে যা অবশ্যই ঘটবে। এ অর্থ হিসেবে মৃত্যু হক। প্রত্যেকের মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। তা ঘটবেই। মুমিনদের জান্নাতে যাওয়া ও কাফেরদের জাহান্নামে যাওয়া হক। কেননা তাও অবশ্যই ঘটবে।
সত্যকথাকে হক কথা বলা হয়। কেননা তা বাস্তবে বিদ্যমান আছে অথবা ভবিষ্যতে অবশ্যই ঘটবে। অন্যের কাছে কারও কোনও প্রাপ্য থাকলে তাকেও হক (অধিকার) বলা হয়, যেহেতু তাও নিশ্চিতভাবে বিদ্যমান আছে।
এ হাদীছে 'আল্লাহর হক' বলে এমনসব বিষয়কে বোঝানো হয়েছে, যা আল্লাহ তা'আলার উদ্দেশ্যে বান্দার জন্য করা অবশ্যকর্তব্য। তাকে তা করতেই হবে, না করাটা অন্যায় অপরাধ। তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় ও সবচে' বেশি গুরুত্বপূর্ণ হক হল বান্দা কেবল তাঁরই ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কোনওকিছুকে শরীক করবে না, যেমনটা এ হাদীছে বলা হয়েছে।
আর বান্দার হক হল আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক না করে ও তাঁর অনুগত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে তার প্রতিদানে শাস্তিভোগ না করা ও জান্নাত লাভ করা। অর্থাৎ এরূপ বান্দাকে আল্লাহ তা'আলা শাস্তি না দিয়ে অবশ্যই জান্নাতবাসী করবেন। এটাকে হক বলা হয়েছে এ কারণে যে, আল্লাহ তা'আলা যেহেতু এরূপ ওয়াদা করেছেন, তাই এটা অবশ্যই ঘটবে। আল্লাহ তা'আলা তাঁর ওয়াদার খেলাফ করেন না। এটাকে এ হিসেবে হক বলা হয়নি যে, আল্লাহ তা'আলার জন্য এটা করা অবশ্যকর্তব্য। কেননা আল্লাহ তা'আলার জন্য অবশ্যকর্তব্য বলতে কিছু নেই।
কোনওকিছু অবশ্যকর্তব্য হয় তখনই, যখন তার কোনও আদেশদাতা থাকে এবং সে কর্তব্য পালন না করলে সেজন্য কোনও কৈফিয়ত তলবকারী থাকে। এমন কে আছে, যে আল্লাহ তা'আলাকে কোনওকিছুর আদেশ করতে পারে কিংবা আদেশ পালন না করলে তাঁর কাছে কৈফিয়ত তলবের ক্ষমতা রাখে? সুতরাং আল্লাহ তা'আলার ক্ষেত্রে 'হক' শব্দটির এ অর্থ গ্রহণের কোনও অবকাশ নেই। বস্তুত তিনি নিজ অনুগ্রহে তাঁর অনুগত বান্দাকে অবশ্যই পুরস্কৃত করবেন। তাদেরকে কিছুতেই শাস্তি দেবেন না। এটা তাঁর জন্য অবশ্যকর্তব্য নয় বটে, তবে যা অবশ্যকর্তব্য তা যেমন অবশ্যই করা হয়, তেমনি আল্লাহ তা'আলাও নিজ অনুগ্রহে এরূপ অবশ্যই করবেন। সে হিসেবেই এটাকে 'হক' শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে।
এ সুসংবাদ দ্বারা আমলের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা হয়নি। তাই আমলে অবহেলা করার সুযোগ নেই। এ কারণেই হযরত মু'আয ইবন জাবাল রাযি, যখন খুশি হয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি মানুষকে এ সুসংবাদটি কি জানাব না? তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এই বলে বারণ করলেন যে, না, তাহলে অনেকেই এর উপর ভরসা করে বসে থাকবে। অর্থাৎ তারা মনে করবে যে, কালেমায়ে শাহাদাত পড়লেই যখন জাহান্নাম হারাম হয়ে যায়, তখন আর আমলের প্রয়োজন কী? ব্যস এই ভেবে একদিকে তারা নেক আমল ছেড়ে দেবে, অন্যদিকে পাপকর্ম করতে উৎসাহ পাবে। অথচ পাপকর্ম ত্যাগ করা ও নেক আমলে যত্নবান থাকা অতীব জরুরি। কেননা পাপকর্ম যদি কবীরা গুনাহের পর্যায়ে হয় এবং তাতে লিপ্ত হওয়ার পর তাওবা ছাড়াই মৃত্যু হয়, তবে ঈমান থাকা সত্ত্বেও একটা কাল পর্যন্ত জাহান্নামে থাকার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা ক্ষমা না করলে অবশ্যই তাকে শাস্তিভোগ করতে হবে। আর যদি কোনও গুনাহ নাও থাকে, তবুও বেশি বেশি নেক আমল আখিরাতে অনেক কাজে আসবে।
ঈমানের বদৌলতে জান্নাতলাভের পর যার যতো বেশি নেক আমল হবে, তার স্তর ততো বেশি উন্নত হবে। সুতরাং জান্নাতের উচ্চস্তর লাভের জন্য বেশি বেশি নেক আমল অবশ্যই করা চাই। কুরআন ও হাদীছ জান্নাতের উচ্চস্তর লাভের জন্য বিপুল উৎসাহ প্রদান করেছে। জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর হল জান্নাতুল ফিরদাওস। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো আমাদেরকে জান্নাতুল ফিরদাওসই প্রার্থনা করতে উৎসাহ দিয়েছেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্পর্কে এই আদব ও নীতি জানা যায় যে, উত্তর নিজের জানা না থাকলে অজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং বিষয়টি আল্লাহ তা'আলার উপর ছেড়ে দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
খ. প্রশ্নকর্তার কর্তব্য যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে তার উত্তর জানা না থাকলে নিজে তা সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া।
গ. যে কথার প্রচার দ্বারা মানুষের মধ্যে আমলের প্রতি শৈথিল্য বা বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে, সাধারণভাবে তা কিছুতেই প্রচার করা উচিত নয়।
ঘ. এ হাদীছ দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, এক আল্লাহ তা'আলার ইবাদত করা ও শির্ক করা হতে বিরত থাকা কত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর পুরস্কার কত বড়।
ক. অস্তিত্বমান ও বিদ্যমান বস্তু বা বিষয়। এ অর্থে আল্লাহ তা'আলা হক। তিনি অনাদিকাল থেকে বিদ্যমান আছেন এবং অনন্তকাল বিদ্যমান থাকবেন। জান্নাত ও জাহান্নাম হক। কেননা তা বিদ্যমান আছে।
খ. আগামীতে যা অবশ্যই ঘটবে। এ অর্থ হিসেবে মৃত্যু হক। প্রত্যেকের মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। তা ঘটবেই। মুমিনদের জান্নাতে যাওয়া ও কাফেরদের জাহান্নামে যাওয়া হক। কেননা তাও অবশ্যই ঘটবে।
সত্যকথাকে হক কথা বলা হয়। কেননা তা বাস্তবে বিদ্যমান আছে অথবা ভবিষ্যতে অবশ্যই ঘটবে। অন্যের কাছে কারও কোনও প্রাপ্য থাকলে তাকেও হক (অধিকার) বলা হয়, যেহেতু তাও নিশ্চিতভাবে বিদ্যমান আছে।
এ হাদীছে 'আল্লাহর হক' বলে এমনসব বিষয়কে বোঝানো হয়েছে, যা আল্লাহ তা'আলার উদ্দেশ্যে বান্দার জন্য করা অবশ্যকর্তব্য। তাকে তা করতেই হবে, না করাটা অন্যায় অপরাধ। তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় ও সবচে' বেশি গুরুত্বপূর্ণ হক হল বান্দা কেবল তাঁরই ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কোনওকিছুকে শরীক করবে না, যেমনটা এ হাদীছে বলা হয়েছে।
আর বান্দার হক হল আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক না করে ও তাঁর অনুগত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে তার প্রতিদানে শাস্তিভোগ না করা ও জান্নাত লাভ করা। অর্থাৎ এরূপ বান্দাকে আল্লাহ তা'আলা শাস্তি না দিয়ে অবশ্যই জান্নাতবাসী করবেন। এটাকে হক বলা হয়েছে এ কারণে যে, আল্লাহ তা'আলা যেহেতু এরূপ ওয়াদা করেছেন, তাই এটা অবশ্যই ঘটবে। আল্লাহ তা'আলা তাঁর ওয়াদার খেলাফ করেন না। এটাকে এ হিসেবে হক বলা হয়নি যে, আল্লাহ তা'আলার জন্য এটা করা অবশ্যকর্তব্য। কেননা আল্লাহ তা'আলার জন্য অবশ্যকর্তব্য বলতে কিছু নেই।
কোনওকিছু অবশ্যকর্তব্য হয় তখনই, যখন তার কোনও আদেশদাতা থাকে এবং সে কর্তব্য পালন না করলে সেজন্য কোনও কৈফিয়ত তলবকারী থাকে। এমন কে আছে, যে আল্লাহ তা'আলাকে কোনওকিছুর আদেশ করতে পারে কিংবা আদেশ পালন না করলে তাঁর কাছে কৈফিয়ত তলবের ক্ষমতা রাখে? সুতরাং আল্লাহ তা'আলার ক্ষেত্রে 'হক' শব্দটির এ অর্থ গ্রহণের কোনও অবকাশ নেই। বস্তুত তিনি নিজ অনুগ্রহে তাঁর অনুগত বান্দাকে অবশ্যই পুরস্কৃত করবেন। তাদেরকে কিছুতেই শাস্তি দেবেন না। এটা তাঁর জন্য অবশ্যকর্তব্য নয় বটে, তবে যা অবশ্যকর্তব্য তা যেমন অবশ্যই করা হয়, তেমনি আল্লাহ তা'আলাও নিজ অনুগ্রহে এরূপ অবশ্যই করবেন। সে হিসেবেই এটাকে 'হক' শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে।
এ সুসংবাদ দ্বারা আমলের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা হয়নি। তাই আমলে অবহেলা করার সুযোগ নেই। এ কারণেই হযরত মু'আয ইবন জাবাল রাযি, যখন খুশি হয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি মানুষকে এ সুসংবাদটি কি জানাব না? তখন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে এই বলে বারণ করলেন যে, না, তাহলে অনেকেই এর উপর ভরসা করে বসে থাকবে। অর্থাৎ তারা মনে করবে যে, কালেমায়ে শাহাদাত পড়লেই যখন জাহান্নাম হারাম হয়ে যায়, তখন আর আমলের প্রয়োজন কী? ব্যস এই ভেবে একদিকে তারা নেক আমল ছেড়ে দেবে, অন্যদিকে পাপকর্ম করতে উৎসাহ পাবে। অথচ পাপকর্ম ত্যাগ করা ও নেক আমলে যত্নবান থাকা অতীব জরুরি। কেননা পাপকর্ম যদি কবীরা গুনাহের পর্যায়ে হয় এবং তাতে লিপ্ত হওয়ার পর তাওবা ছাড়াই মৃত্যু হয়, তবে ঈমান থাকা সত্ত্বেও একটা কাল পর্যন্ত জাহান্নামে থাকার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। আল্লাহ তা'আলা ক্ষমা না করলে অবশ্যই তাকে শাস্তিভোগ করতে হবে। আর যদি কোনও গুনাহ নাও থাকে, তবুও বেশি বেশি নেক আমল আখিরাতে অনেক কাজে আসবে।
ঈমানের বদৌলতে জান্নাতলাভের পর যার যতো বেশি নেক আমল হবে, তার স্তর ততো বেশি উন্নত হবে। সুতরাং জান্নাতের উচ্চস্তর লাভের জন্য বেশি বেশি নেক আমল অবশ্যই করা চাই। কুরআন ও হাদীছ জান্নাতের উচ্চস্তর লাভের জন্য বিপুল উৎসাহ প্রদান করেছে। জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর হল জান্নাতুল ফিরদাওস। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো আমাদেরকে জান্নাতুল ফিরদাওসই প্রার্থনা করতে উৎসাহ দিয়েছেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ দ্বারা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্পর্কে এই আদব ও নীতি জানা যায় যে, উত্তর নিজের জানা না থাকলে অজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং বিষয়টি আল্লাহ তা'আলার উপর ছেড়ে দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
খ. প্রশ্নকর্তার কর্তব্য যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে তার উত্তর জানা না থাকলে নিজে তা সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া।
গ. যে কথার প্রচার দ্বারা মানুষের মধ্যে আমলের প্রতি শৈথিল্য বা বিভ্রান্তি দেখা দিতে পারে, সাধারণভাবে তা কিছুতেই প্রচার করা উচিত নয়।
ঘ. এ হাদীছ দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, এক আল্লাহ তা'আলার ইবাদত করা ও শির্ক করা হতে বিরত থাকা কত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর পুরস্কার কত বড়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)