আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ
৭৫- বল-প্রয়োগে বাধ্য করা
হাদীস নং: ৬৪৮২
আন্তর্জাতিক নং: ৬৯৫২
- বল-প্রয়োগে বাধ্য করা
২৯১৩. যখন কোন ব্যক্তি তার সঙ্গীর ব্যাপারে নিহত হওয়া বা অনুরূপ কিছুর আশঙ্কা করে, তখন (তার কল্যাণার্থে) কসম করা যে, সে তার ভাই। অনুরূপভাবে যেকোন বলপ্রয়োগকৃত ব্যক্তির ব্যাপারে যখন কোন প্রকার আশঙ্কা দেখা দেয়।
৬৪৮২। মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুর রহীম (রাহঃ) ......... আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমার ভাইকে সাহায্য কর। সে জালিম হোক অথবা মজলুম হোক। এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! মজলুম হলে তাকে সাহায্য করব, তা তো বোধ্যগম্য ব্যাপার। কিন্তু জালিম হলে তাকে সাহায্য করব, তা কিভাবে? তিনি বললেনঃ তাকে অত্যাচার করা থেকে বিরত রাখবে। আর এটাই হচ্ছে তার সাহায্য।
كتاب الإكراه
باب يَمِينِ الرَّجُلِ لِصَاحِبِهِ إِنَّهُ أَخُوهُ، إِذَا خَافَ عَلَيْهِ الْقَتْلَ أَوْ نَحْوَهُ وَكَذَلِكَ كُلُّ مُكْرَهٍ يَخَافُ
6952 - حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحِيمِ، حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ سُلَيْمَانَ، حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، أَخْبَرَنَا عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ أَبِي بَكْرِ بْنِ أَنَسٍ، عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «انْصُرْ أَخَاكَ ظَالِمًا أَوْ مَظْلُومًا» فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَنْصُرُهُ إِذَا كَانَ مَظْلُومًا، أَفَرَأَيْتَ إِذَا كَانَ ظَالِمًا كَيْفَ أَنْصُرُهُ؟ قَالَ: «تَحْجُزُهُ، أَوْ تَمْنَعُهُ، مِنَ الظُّلْمِ فَإِنَّ ذَلِكَ نَصْرُهُ»
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীস দ্বারাও নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপন উম্মতকে ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত করেছেন। ভ্রাতৃত্ববোধের দাবি হিসেবে তিনি আদেশ করেন যে, তোমার ভাই জালেম হোক বা মজলুম, সর্বাবস্থায় তাকে সাহায্য করবে। ভাই বলে তিনি মুসলিম ভাই বুঝিয়েছেন। আরও ব্যাপক অর্থে ধরলে এর দ্বারা সমস্ত আদমসন্তানদেরও বোঝানো যেতে পারে। তাঁর শিক্ষা অনুযায়ী জুলুম কারও প্রতি জায়েয নয়, তা মুসলিম হোক বা অমুসলিম। কাজেই অমুসলিমের প্রতিও যদি কেউ জুলুম করে, তবে মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য সেখানেও জুলুম প্রতিহত করা।
তিনি যখন বললেন, জালেম হোক বা মজলুম, সর্বাবস্থায় তোমার ভাইকে সাহায্য কর, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে যে, জালেমকে সাহায্য করা হবে কিভাবে? মজলুমকে সাহায্য করার বিষয়টা তো স্পষ্ট। তাকে জুলুমকারীর জুলুম হতে বাঁচানোই তার সাহায্য। পক্ষান্তরে জালেমকে যদি সাহায্য করা হয়, তবে বাহ্যদৃষ্টিতে তার জুলুমের কাজেই সহযোগিতা করা হয়। সেটা মজলুমের প্রতি অধিকতর জুলুম করার নামান্তর। আর এটা তো জায়েয হতে পারে না এবং এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উদ্দেশ্যও হতে পারে না। তাহলে জালেমকে সাহায্য করা দ্বারা তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন? সে প্রশ্নই জনৈক সাহাবী করলেন।
জালেমকে সাহায্য করার অর্থ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেন তা দীন। কাজেই তা বুঝে নেওয়া দরকার। অন্যথায় ভুল বুঝে ভুল আমলের আশঙ্কা থাকে। তাই তাঁর কোনও কথা বুঝে না আসলে সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করে তা বুঝে নিতেন। এ ক্ষেত্রেও তাই করলেন। জিজ্ঞেস করলেন, জালেমকে কিভাবে সাহায্য করব? তিনি বললেন-تحجزه- او تمنعه من الظلم فان ذلك نصره ‘তুমি তাকে জুলুম করা হতে বিরত রাখবে অথবা তাকে বাধা দেবে, এটাই তাকে সাহায্য করা'। এখানে বর্ণনাকারীর সন্দেহ হয়েছে শব্দটি تحجزه নাকি تمنعه । উভয়ের উদ্দিষ্ট অর্থ একই অর্থাৎ জালেমকে জুলুম করতে না দেওয়া। এটাই তার সাহায্য । বুখারী শরীফের অপর এক বর্ণনায় আছে-
تَأْخُذُ فَوْقَ يَدَيْهِ
‘তার দু হাতের উপর ধরবে।[১]
تَأْخُذُ يَدَيْهِ (তার দু' হাত ধরবে) না বলে تَأْخُذُ فَوْقَ يَدَيْهِ (তার দু’ হাতের উপর ধরবে) বলার দ্বারা শক্তি আরোপের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ তুমি সবলে ও শক্ত করে তার দু'হাত ধরবে, যাতে সে তার উপর জুলুম করতে না পারে। তিনি বলেছেন, এটাই তাকে সাহায্য করা। এর দ্বারা শয়তান ও নফসে আম্মারার বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করা হয়। শয়তান ও নফসে আম্মারা তাকে জুলুমের প্ররোচনা দিয়ে তার আখলাক ও তার আখেরাত ধ্বংস করতে চায়। কাজেই তাকে জুলুম করতে বাধা দেওয়ার দ্বারা শয়তান ও নফসে আম্মারার সে দুরভিসন্ধি থেকে তাকে বাঁচানো হয়। এভাবে তার আখলাক ও তার আখেরাতের হেফাজত হয়। নিঃসন্দেহে এটা তার অনেক বড় সাহায্য। কেননা সে শয়তান কর্তৃক মজলুম। শয়তান এতে কৃতকার্য হলে তার আখেরাত বরবাদ হয়। পক্ষান্তরে সে নিজে যার প্রতি জুলুম করতে চায়, সেই মজলুমের বড়জোর সে দুনিয়ার ক্ষতি করবে। তার জুলুম দ্বারা সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না; বরং একদিক থেকে আখেরাতে সে লাভবানই হবে। জুলুমের বিপরীতে তাকে জালেমের নেকী দিয়ে দেওয়া হবে। সেতো অনেক বড় লাভ। জুলুম দ্বারা যেহেতু জালেমের আখেরাত নষ্ট হয়, তাই সে-ই সাহায্যের বেশি মুখাপেক্ষী, যাতে জুলুম করা হতে সে বেঁচে যায় ।
উল্লেখ্য, একজনের দ্বারা আরেকজন তিনভাবে জুলুমের শিকার হতে পারে। তিনও ক্ষেত্রেই অন্যদের উচিত তাদের সাহায্য করা। এক হচ্ছে শারীরিক জুলুম - অন্যায়ভাবে কাউকে মারধর করা, অঙ্গহানি করা বা হত্যার চেষ্টা করা। নিশ্চয়ই এ জাতীয় আক্রমণ অনেক বড় জুলুম। কাজেই কাউকে এমন কিছু করতে উদ্যত দেখলে সঙ্গে সঙ্গে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাওয়া চাই, যদি-না নিজেই আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে।
দ্বিতীয় প্রকারের জুলুম হতে পারে অন্যের অর্থ-সম্পদের উপর। যেমন কারও সম্পত্তি জবরদখল করা, গচ্ছিত মাল ফেরত দিতে টালবাহানা করা, ঋণের টাকা পরিশোধে গড়িমসি করা, ঘুষের লোভে কারও বিল আটকে দেওয়া ইত্যাদি। এরকম কোনও জুলুমের কথা জানতে পারলে আপন সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া চাই। এ প্রসঙ্গে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য ।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি ঘটনা
একবার ইরাশ গোত্রীয় এক ব্যক্তি, তার নাম বলা হয়ে থাকে কাহলা ইবন ইসাম, একটি উট নিয়ে মক্কা মুকাররামায় আসে। আবূ জাহল তার কাছ থেকে উটটি কিনে নেয়, কিন্তু মূল্য পরিশোধ করতে টালবাহানা করতে থাকে। অনেক ঘোরাঘুরির পর লোকটি কুরায়শদের এক মজলিসে আসে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন মসজিদুল হারামের এক কোণে বসা ছিলেন। লোকটি কুরায়শের লোকজনকে লক্ষ্য করে অনুরোধ জানায়, কেউ কি আছে যে আমাকে আবুল হিকামের (আবু জাহেলের পূর্ব উপাধি) কাছ থেকে পাওনা আদায়ে সাহায্য করতে পারে? আমি এক বিদেশী পথিক। আবুল হিকাম আমার পাওনা পরিশোধ করছেন না। মজলিসের লোকজন তাকে বলল, ওই যে লোকটি বসা আছে তাকে দেখতে পাচ্ছ? তার কাছে যাও। সে তোমাকে সাহায্য করতে পারবে। আসলে এ বলে তারা পরিহাস করছিল। তাদের তো জানাই ছিল আবূ জাহল ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যে কী গভীর শত্রুতা। কিন্তু ইরাশ গোত্রীয় লোকটি তা বুঝতে পারেনি। সে তাদের কথাকে সত্যি সত্যি মনে করে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে চলে গেল এবং আবূ জাহলের বিরুদ্ধে তাঁর কাছে নালিশ করল। তিনি তার সাহায্য করা প্রয়োজন মনে করলেন। কাজেই তাকে সঙ্গে করে আবূ জাহলের বাড়ির দিকে চললেন। ওদিকে মজলিসের লোকজন তাদের এক ব্যক্তিকে কী ঘটছে তা দেখার জন্য পাঠিয়ে দিল। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবূ জাহলের বাড়িতে পৌঁছে দরজায় করাঘাত করলেন। ভেতর থেকে জিজ্ঞেস করল, কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। আমার কাছে আসুন। আবূ জাল বের হয়ে আসল। তাঁকে দেখামাত্র তার চেহারা রক্তশূন্য হয়ে গেল। তিনি বললেন, এই লোকের পাওনা মিটিয়ে দিন। সঙ্গে সঙ্গে সে বলল, এখনই দিয়ে দিচ্ছি, আপনারা দাঁড়ান। আবূ জাহল ভেতরে চলে গেল এবং মুহূর্তের মধ্যে ফিরে এসে লোকটির পাওনা মিটিয়ে দিল। তারপর সেই লোক কুরায়শদের সে মজলিসে ফিরে আসল এবং তাদেরকে লক্ষ্য করে বলল, আল্লাহ তাআলা তাকে জাযায়ে খায়র দান করুন, বাস্তবিকই তিনি আমার হক আদায় করিয়ে দিয়েছেন।
ইতোমধ্যে তারা যে ব্যক্তিকে লক্ষ করার জন্য পাঠিয়েছিল সেও ফিরে আসল। তারা তাকে জিজ্ঞেস করল, বল তো কী দেখলে? সে বলল, আশ্চর্য কাণ্ড দেখেছি। আল্লাহর কসম, তিনি গিয়ে যেই-না দরজায় করাঘাত করলেন, অমনি আবুল হিকাম বের হয়ে আসেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল শরীরে প্রাণ নেই। তিনি তাকে বললেন, এর পাওনা মিটিয়ে দিন। অমনি তিনি ভেতরে চলে গেলেন এবং মুহূর্তের মধ্যে বের হয়ে এসে তার পাওনা মিটিয়ে দিলেন। ক্ষণিকের মধ্যে আবূ জাহলও সেখানে এসে হাজির। তারা তাকে ধিক্কার জানিয়ে বলল, আপনার কী হয়েছে? আল্লাহর কসম, আজ যা করলেন এমনটা করতে আর কখনও আপনাকে দেখিনি। সেও তাদেরকে তিরস্কার করে বলল, আল্লাহর কসম, সে যেই না গিয়ে আমার দরজায় করাঘাত করল এবং আমি তার আওয়াজ শুনতে পেলাম, অমনি আমার ভেতর এক মারাত্মক ভীতি সঞ্চার হল। আমি বের হয়ে এসে দেখি তার মাথার উপর এক বিশালাকার উট। বিশাল তার মাথা! বিশাল গর্দান! বড় বড় দাঁত! এরকম উট আমি কখনও দেখিনি। একটু গড়িমসি করলে সেটি আমাকে গিলে ফেলত ।
এ ঘটনার লক্ষণীয় বিষয় হল যে, এক অপরিচিত বিদেশীকে আবূ জাহল হয়রানি করছিল, যা স্পষ্ট জুলুম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ক্ষেত্রে তার সাহায্য করা প্রয়োজন মনে করলেন। অথচ আবূ জাহল তার ঘোর শত্রু। মক্কার সমস্ত লোক তার হুকুমবরদার। কিন্তু তিনি তার তোয়াক্কা করলেন না। আপন কর্তব্য পালনকেই বড় করে দেখলেন। কাজেই এর থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদেরও কর্তব্য হবে কেউ কারও দ্বারা কোনওরকম জুলুমের শিকার হলে আপন সামর্থ্য অনুযায়ী তার সাহায্য করা।
তৃতীয় প্রকারের জুলুম হল অন্যের মান-সম্মানের উপর আক্রমণ, যেমন কাউকে গালমন্দ করা, কারও নামে অপবাদ রটানো, কারও গীবত করা ইত্যাদি। কাউকে কারও উদ্দেশ্যে গালমন্দ করতে দেখলে সে ক্ষেত্রে সাহায্য করার উপায় হচ্ছে তাকে তা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা এবং যাকে গালমন্দ করা হয়, তার মান-সম্মানের প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা। কেউ যদি কারও নামে অপবাদ রটায়, সে ক্ষেত্রে কর্তব্য- রটনাকারীকে তা থেকে নিবৃত্ত করা এবং সে অপবাদের-যে কোনও ভিত্তি নেই তা মানুষের সামনে তুলে ধরা। কেউ কারও গীবত করলে কর্তব্য তাকে তাতে বাধা দেওয়া এবং যার গীবত করা হয় তার সদগুণসমূহ তুলে ধরা।
হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ.-এর সামনে কেউ কারও গীবত করলে তিনি বলতেন, সে এরকম নয়।
হাকীমুল উম্মত হযরত আশরাফ আলী থানভী রহ.-এর সামনে কেউ কারও দোষের কথা বললে তিনি তাকে ডাকিয়ে আনতেন, তারপর বলতেন- এবার তার সামনে বল। তাদের এ নীতি গীবত বন্ধ করার অতি উত্তম উপায়।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম 'ভাই' শব্দ ব্যবহার করে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন যে, জালেম ও মজলুম উভয়ই তোমাদের ভাই। কাজেই ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত হয়ে তোমরা তাদের সাহায্যে এগিয়ে যাবে। জালেম জুলুম করছে বলে ঘৃণাভরে তাকে প্রত্যাখ্যান করবে না; বরং জুলুম করার দ্বারা তোমার এ ভাই-যে নিজ দীন ও দুনিয়া নষ্ট করছে, সেজন্য তার প্রতি ব্যথিত হও। মায়া-মমতার সাথে তাকে তা থেকে ফেরানোর চেষ্টা করো। এমনিভাবে মজলুম ব্যক্তি তোমার আত্মীয় হোক বা অনাত্মীয়, কাছের হোক বা দূরের, শিক্ষিত হোক বা অশিক্ষিত, ধনী হোক বা গরীব, অভিজাত হোক বা সাধারণ, এমনকি সে মুসলিম হোক বা অমুসলিম, মোটকথা সে যে-ই হোক না কেন, তার সামাজিক অবস্থান বিচার্য নয়, সে মজলুম এটাই মূল কথা। সর্বাবস্থায় জুলুম থেকে রক্ষা পাওয়া তার অধিকার। তাই তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া তোমাদের কর্তব্য।
মোটকথা জান, মাল ও ইজ্জত- এর যে-কোনও দিক থেকে কেউ কারও উপর জুলুমে লিপ্ত হলে আপন আপন সামর্থ্য অনুযায়ী প্রত্যেকের উচিত জালেম ও মজলুম উভয়কেই সাহায্য করা। এ হাদীছ দ্বারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সে হুকুমই দিয়েছেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ আমাদেরকে ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষাদান করে। সুতরাং দুনিয়ার সব মুসলিমকেই নিজ ভাই মনে করা চাই।
খ. কেউ যাতে অন্যের প্রতি জুলুম করে নিজ দুনিয়া ও আখেরাত বরবাদ না করে, সেজন্য সকলের কর্তব্য সেদিকে লক্ষ রাখা এবং জুলুমকারীকে জুলুম করতে না দেওয়া।
গ. মজলুম ব্যক্তি যে-ই হোক না কেন, তাকে জুলুমের শিকার হওয়া থেকে বাঁচানো ইসলামী ভ্রাতৃত্বের দাবি।
[১] সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৪৪৪; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১১৫১০
তিনি যখন বললেন, জালেম হোক বা মজলুম, সর্বাবস্থায় তোমার ভাইকে সাহায্য কর, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে যে, জালেমকে সাহায্য করা হবে কিভাবে? মজলুমকে সাহায্য করার বিষয়টা তো স্পষ্ট। তাকে জুলুমকারীর জুলুম হতে বাঁচানোই তার সাহায্য। পক্ষান্তরে জালেমকে যদি সাহায্য করা হয়, তবে বাহ্যদৃষ্টিতে তার জুলুমের কাজেই সহযোগিতা করা হয়। সেটা মজলুমের প্রতি অধিকতর জুলুম করার নামান্তর। আর এটা তো জায়েয হতে পারে না এবং এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উদ্দেশ্যও হতে পারে না। তাহলে জালেমকে সাহায্য করা দ্বারা তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন? সে প্রশ্নই জনৈক সাহাবী করলেন।
জালেমকে সাহায্য করার অর্থ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেন তা দীন। কাজেই তা বুঝে নেওয়া দরকার। অন্যথায় ভুল বুঝে ভুল আমলের আশঙ্কা থাকে। তাই তাঁর কোনও কথা বুঝে না আসলে সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করে তা বুঝে নিতেন। এ ক্ষেত্রেও তাই করলেন। জিজ্ঞেস করলেন, জালেমকে কিভাবে সাহায্য করব? তিনি বললেন-تحجزه- او تمنعه من الظلم فان ذلك نصره ‘তুমি তাকে জুলুম করা হতে বিরত রাখবে অথবা তাকে বাধা দেবে, এটাই তাকে সাহায্য করা'। এখানে বর্ণনাকারীর সন্দেহ হয়েছে শব্দটি تحجزه নাকি تمنعه । উভয়ের উদ্দিষ্ট অর্থ একই অর্থাৎ জালেমকে জুলুম করতে না দেওয়া। এটাই তার সাহায্য । বুখারী শরীফের অপর এক বর্ণনায় আছে-
تَأْخُذُ فَوْقَ يَدَيْهِ
‘তার দু হাতের উপর ধরবে।[১]
تَأْخُذُ يَدَيْهِ (তার দু' হাত ধরবে) না বলে تَأْخُذُ فَوْقَ يَدَيْهِ (তার দু’ হাতের উপর ধরবে) বলার দ্বারা শক্তি আরোপের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ তুমি সবলে ও শক্ত করে তার দু'হাত ধরবে, যাতে সে তার উপর জুলুম করতে না পারে। তিনি বলেছেন, এটাই তাকে সাহায্য করা। এর দ্বারা শয়তান ও নফসে আম্মারার বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করা হয়। শয়তান ও নফসে আম্মারা তাকে জুলুমের প্ররোচনা দিয়ে তার আখলাক ও তার আখেরাত ধ্বংস করতে চায়। কাজেই তাকে জুলুম করতে বাধা দেওয়ার দ্বারা শয়তান ও নফসে আম্মারার সে দুরভিসন্ধি থেকে তাকে বাঁচানো হয়। এভাবে তার আখলাক ও তার আখেরাতের হেফাজত হয়। নিঃসন্দেহে এটা তার অনেক বড় সাহায্য। কেননা সে শয়তান কর্তৃক মজলুম। শয়তান এতে কৃতকার্য হলে তার আখেরাত বরবাদ হয়। পক্ষান্তরে সে নিজে যার প্রতি জুলুম করতে চায়, সেই মজলুমের বড়জোর সে দুনিয়ার ক্ষতি করবে। তার জুলুম দ্বারা সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না; বরং একদিক থেকে আখেরাতে সে লাভবানই হবে। জুলুমের বিপরীতে তাকে জালেমের নেকী দিয়ে দেওয়া হবে। সেতো অনেক বড় লাভ। জুলুম দ্বারা যেহেতু জালেমের আখেরাত নষ্ট হয়, তাই সে-ই সাহায্যের বেশি মুখাপেক্ষী, যাতে জুলুম করা হতে সে বেঁচে যায় ।
উল্লেখ্য, একজনের দ্বারা আরেকজন তিনভাবে জুলুমের শিকার হতে পারে। তিনও ক্ষেত্রেই অন্যদের উচিত তাদের সাহায্য করা। এক হচ্ছে শারীরিক জুলুম - অন্যায়ভাবে কাউকে মারধর করা, অঙ্গহানি করা বা হত্যার চেষ্টা করা। নিশ্চয়ই এ জাতীয় আক্রমণ অনেক বড় জুলুম। কাজেই কাউকে এমন কিছু করতে উদ্যত দেখলে সঙ্গে সঙ্গে সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাওয়া চাই, যদি-না নিজেই আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে।
দ্বিতীয় প্রকারের জুলুম হতে পারে অন্যের অর্থ-সম্পদের উপর। যেমন কারও সম্পত্তি জবরদখল করা, গচ্ছিত মাল ফেরত দিতে টালবাহানা করা, ঋণের টাকা পরিশোধে গড়িমসি করা, ঘুষের লোভে কারও বিল আটকে দেওয়া ইত্যাদি। এরকম কোনও জুলুমের কথা জানতে পারলে আপন সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া চাই। এ প্রসঙ্গে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য ।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি ঘটনা
একবার ইরাশ গোত্রীয় এক ব্যক্তি, তার নাম বলা হয়ে থাকে কাহলা ইবন ইসাম, একটি উট নিয়ে মক্কা মুকাররামায় আসে। আবূ জাহল তার কাছ থেকে উটটি কিনে নেয়, কিন্তু মূল্য পরিশোধ করতে টালবাহানা করতে থাকে। অনেক ঘোরাঘুরির পর লোকটি কুরায়শদের এক মজলিসে আসে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন মসজিদুল হারামের এক কোণে বসা ছিলেন। লোকটি কুরায়শের লোকজনকে লক্ষ্য করে অনুরোধ জানায়, কেউ কি আছে যে আমাকে আবুল হিকামের (আবু জাহেলের পূর্ব উপাধি) কাছ থেকে পাওনা আদায়ে সাহায্য করতে পারে? আমি এক বিদেশী পথিক। আবুল হিকাম আমার পাওনা পরিশোধ করছেন না। মজলিসের লোকজন তাকে বলল, ওই যে লোকটি বসা আছে তাকে দেখতে পাচ্ছ? তার কাছে যাও। সে তোমাকে সাহায্য করতে পারবে। আসলে এ বলে তারা পরিহাস করছিল। তাদের তো জানাই ছিল আবূ জাহল ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যে কী গভীর শত্রুতা। কিন্তু ইরাশ গোত্রীয় লোকটি তা বুঝতে পারেনি। সে তাদের কথাকে সত্যি সত্যি মনে করে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে চলে গেল এবং আবূ জাহলের বিরুদ্ধে তাঁর কাছে নালিশ করল। তিনি তার সাহায্য করা প্রয়োজন মনে করলেন। কাজেই তাকে সঙ্গে করে আবূ জাহলের বাড়ির দিকে চললেন। ওদিকে মজলিসের লোকজন তাদের এক ব্যক্তিকে কী ঘটছে তা দেখার জন্য পাঠিয়ে দিল। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবূ জাহলের বাড়িতে পৌঁছে দরজায় করাঘাত করলেন। ভেতর থেকে জিজ্ঞেস করল, কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ। আমার কাছে আসুন। আবূ জাল বের হয়ে আসল। তাঁকে দেখামাত্র তার চেহারা রক্তশূন্য হয়ে গেল। তিনি বললেন, এই লোকের পাওনা মিটিয়ে দিন। সঙ্গে সঙ্গে সে বলল, এখনই দিয়ে দিচ্ছি, আপনারা দাঁড়ান। আবূ জাহল ভেতরে চলে গেল এবং মুহূর্তের মধ্যে ফিরে এসে লোকটির পাওনা মিটিয়ে দিল। তারপর সেই লোক কুরায়শদের সে মজলিসে ফিরে আসল এবং তাদেরকে লক্ষ্য করে বলল, আল্লাহ তাআলা তাকে জাযায়ে খায়র দান করুন, বাস্তবিকই তিনি আমার হক আদায় করিয়ে দিয়েছেন।
ইতোমধ্যে তারা যে ব্যক্তিকে লক্ষ করার জন্য পাঠিয়েছিল সেও ফিরে আসল। তারা তাকে জিজ্ঞেস করল, বল তো কী দেখলে? সে বলল, আশ্চর্য কাণ্ড দেখেছি। আল্লাহর কসম, তিনি গিয়ে যেই-না দরজায় করাঘাত করলেন, অমনি আবুল হিকাম বের হয়ে আসেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল শরীরে প্রাণ নেই। তিনি তাকে বললেন, এর পাওনা মিটিয়ে দিন। অমনি তিনি ভেতরে চলে গেলেন এবং মুহূর্তের মধ্যে বের হয়ে এসে তার পাওনা মিটিয়ে দিলেন। ক্ষণিকের মধ্যে আবূ জাহলও সেখানে এসে হাজির। তারা তাকে ধিক্কার জানিয়ে বলল, আপনার কী হয়েছে? আল্লাহর কসম, আজ যা করলেন এমনটা করতে আর কখনও আপনাকে দেখিনি। সেও তাদেরকে তিরস্কার করে বলল, আল্লাহর কসম, সে যেই না গিয়ে আমার দরজায় করাঘাত করল এবং আমি তার আওয়াজ শুনতে পেলাম, অমনি আমার ভেতর এক মারাত্মক ভীতি সঞ্চার হল। আমি বের হয়ে এসে দেখি তার মাথার উপর এক বিশালাকার উট। বিশাল তার মাথা! বিশাল গর্দান! বড় বড় দাঁত! এরকম উট আমি কখনও দেখিনি। একটু গড়িমসি করলে সেটি আমাকে গিলে ফেলত ।
এ ঘটনার লক্ষণীয় বিষয় হল যে, এক অপরিচিত বিদেশীকে আবূ জাহল হয়রানি করছিল, যা স্পষ্ট জুলুম। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ক্ষেত্রে তার সাহায্য করা প্রয়োজন মনে করলেন। অথচ আবূ জাহল তার ঘোর শত্রু। মক্কার সমস্ত লোক তার হুকুমবরদার। কিন্তু তিনি তার তোয়াক্কা করলেন না। আপন কর্তব্য পালনকেই বড় করে দেখলেন। কাজেই এর থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদেরও কর্তব্য হবে কেউ কারও দ্বারা কোনওরকম জুলুমের শিকার হলে আপন সামর্থ্য অনুযায়ী তার সাহায্য করা।
তৃতীয় প্রকারের জুলুম হল অন্যের মান-সম্মানের উপর আক্রমণ, যেমন কাউকে গালমন্দ করা, কারও নামে অপবাদ রটানো, কারও গীবত করা ইত্যাদি। কাউকে কারও উদ্দেশ্যে গালমন্দ করতে দেখলে সে ক্ষেত্রে সাহায্য করার উপায় হচ্ছে তাকে তা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা এবং যাকে গালমন্দ করা হয়, তার মান-সম্মানের প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা। কেউ যদি কারও নামে অপবাদ রটায়, সে ক্ষেত্রে কর্তব্য- রটনাকারীকে তা থেকে নিবৃত্ত করা এবং সে অপবাদের-যে কোনও ভিত্তি নেই তা মানুষের সামনে তুলে ধরা। কেউ কারও গীবত করলে কর্তব্য তাকে তাতে বাধা দেওয়া এবং যার গীবত করা হয় তার সদগুণসমূহ তুলে ধরা।
হযরত হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ.-এর সামনে কেউ কারও গীবত করলে তিনি বলতেন, সে এরকম নয়।
হাকীমুল উম্মত হযরত আশরাফ আলী থানভী রহ.-এর সামনে কেউ কারও দোষের কথা বললে তিনি তাকে ডাকিয়ে আনতেন, তারপর বলতেন- এবার তার সামনে বল। তাদের এ নীতি গীবত বন্ধ করার অতি উত্তম উপায়।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম 'ভাই' শব্দ ব্যবহার করে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন যে, জালেম ও মজলুম উভয়ই তোমাদের ভাই। কাজেই ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত হয়ে তোমরা তাদের সাহায্যে এগিয়ে যাবে। জালেম জুলুম করছে বলে ঘৃণাভরে তাকে প্রত্যাখ্যান করবে না; বরং জুলুম করার দ্বারা তোমার এ ভাই-যে নিজ দীন ও দুনিয়া নষ্ট করছে, সেজন্য তার প্রতি ব্যথিত হও। মায়া-মমতার সাথে তাকে তা থেকে ফেরানোর চেষ্টা করো। এমনিভাবে মজলুম ব্যক্তি তোমার আত্মীয় হোক বা অনাত্মীয়, কাছের হোক বা দূরের, শিক্ষিত হোক বা অশিক্ষিত, ধনী হোক বা গরীব, অভিজাত হোক বা সাধারণ, এমনকি সে মুসলিম হোক বা অমুসলিম, মোটকথা সে যে-ই হোক না কেন, তার সামাজিক অবস্থান বিচার্য নয়, সে মজলুম এটাই মূল কথা। সর্বাবস্থায় জুলুম থেকে রক্ষা পাওয়া তার অধিকার। তাই তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া তোমাদের কর্তব্য।
মোটকথা জান, মাল ও ইজ্জত- এর যে-কোনও দিক থেকে কেউ কারও উপর জুলুমে লিপ্ত হলে আপন আপন সামর্থ্য অনুযায়ী প্রত্যেকের উচিত জালেম ও মজলুম উভয়কেই সাহায্য করা। এ হাদীছ দ্বারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সে হুকুমই দিয়েছেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. এ হাদীছ আমাদেরকে ভ্রাতৃত্ববোধের শিক্ষাদান করে। সুতরাং দুনিয়ার সব মুসলিমকেই নিজ ভাই মনে করা চাই।
খ. কেউ যাতে অন্যের প্রতি জুলুম করে নিজ দুনিয়া ও আখেরাত বরবাদ না করে, সেজন্য সকলের কর্তব্য সেদিকে লক্ষ রাখা এবং জুলুমকারীকে জুলুম করতে না দেওয়া।
গ. মজলুম ব্যক্তি যে-ই হোক না কেন, তাকে জুলুমের শিকার হওয়া থেকে বাঁচানো ইসলামী ভ্রাতৃত্বের দাবি।
[১] সহীহ বুখারী, হাদীছ নং ২৪৪৪; বায়হাকী, আস্ সুনানুল কুবরা, হাদীছ নং ১১৫১০
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)