আল জামিউস সহীহ- ইমাম বুখারী রহঃ

৮৩- তাওহীদ অধ্যায় ও জাহমিয়্যাসহ ভ্রান্ত দলগুলোর অপনোদন

হাদীস নং: ৬৯১১
আন্তর্জাতিক নং: ৭৪১৬
- তাওহীদ অধ্যায় ও জাহমিয়্যাসহ ভ্রান্ত দলগুলোর অপনোদন
৩১২২. নবী (ﷺ) এর বাণীঃ আল্লাহ অপেক্ষা বেশী আত্মমর্যাদাসম্পন্ন কেউই নয়।
৬৯১১। মুসা ইবনে ইসমাঈল (রাহঃ) ......... মুগীরা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, সা’দ ইবনে উবাদা (রাযিঃ) বললেন, আমি আমার স্ত্রীর সাথে অন্য কোন পুরুষকে যদি দেখি, তাকে তরবারি দ্বারা হত্যা করব। এই উক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে পৌছলে তিনি বললেনঃ তোমরা কি সা’দের আত্মমর্যাদাবোধ দেখে আাশ্চর্যান্বিত হচ্ছ? আল্লাহর কসম! আমি তার চেয়েও বেশী আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন। আর আল্লাহ আমার চেয়েও বেশী আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন। আল্লাহ আত্মমর্যাদাবোধ সস্পন্ন হওয়ার কারণে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য (সর্বপ্রকার) অশ্লীলতাকে হারাম করে দিয়েছেন। অক্ষমতা প্রকাশকে আল্লাহর চাইতে বেশী পছন্দ করেন এমন কেউই নেই। আর এই জন্য তিনি ভীতি প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদদাতাদেরকে পাঠিয়েছেন। আত্মস্তুতি আল্লাহর চেয়ে বেশী কারো কাছে প্রিয় নয়। তাই তিনি জান্নাতের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন।
كتاب الرد على الجهمية و غيرهم و التوحيد
باب قَوْلِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم " لاَ شَخْصَ أَغْيَرُ مِنَ اللَّهِ "
7416 - حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ التَّبُوذَكِيُّ، حَدَّثَنَا أَبُو عَوَانَةَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ المَلِكِ، عَنْ وَرَّادٍ، كَاتِبِ المُغِيرَةِ عَنِ المُغِيرَةِ، قَالَ: قَالَ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ: لَوْ رَأَيْتُ رَجُلًا مَعَ امْرَأَتِي لَضَرَبْتُهُ بِالسَّيْفِ غَيْرَ مُصْفَحٍ، فَبَلَغَ ذَلِكَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أَتَعْجَبُونَ مِنْ غَيْرَةِ سَعْدٍ، وَاللَّهِ لَأَنَا أَغْيَرُ مِنْهُ، وَاللَّهُ أَغْيَرُ مِنِّي، وَمِنْ أَجْلِ غَيْرَةِ اللَّهِ حَرَّمَ الفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ، وَلاَ أَحَدَ [ص:124] أَحَبُّ إِلَيْهِ العُذْرُ مِنَ اللَّهِ، وَمِنْ أَجْلِ ذَلِكَ بَعَثَ المُبَشِّرِينَ وَالمُنْذِرِينَ، وَلاَ أَحَدَ أَحَبُّ إِلَيْهِ المِدْحَةُ مِنَ اللَّهِ، وَمِنْ أَجْلِ ذَلِكَ وَعَدَ اللَّهُ الجَنَّةَ»

হাদীসের ব্যাখ্যা:

গায়রত অর্থ আত্মাভিমানবোধ, একান্ত নিজের কোনও বিষয়ে অন্যের হস্তক্ষেপজনিত মনোবেদনা এবং কারও নিরঙ্কুশ অধিকারে অন্যের ভাগ বসানোর দ্বারা সৃষ্ট মানসিক উত্তেজনা। কোনও স্বামী যদি তার স্ত্রীর প্রতি অন্যের আসক্তি বা কুদৃষ্টি দেখতে পায়, তখন তার ভেতর যে চিত্তচাঞ্চল্য ও ক্ষোভ সঞ্চার হয়, সেটাই গয়রত। এমনিভাবে কোনও স্ত্রী যদি তার স্বামীকে অন্য নারীতে আসক্ত দেখে বা তার স্বামীর প্রতি অন্য নারীর আকর্ষণ লক্ষ করে, তখন তার যে মানসিক উত্তেজনা ও বেদনা বোধ হয়, তাকেই গয়রত বলে। কারণ তাতে স্বামীর বা স্ত্রীর একচ্ছত্র অধিকারে ভাগ বসানো হয়ে থাকে। আক্ষরিক অর্থে এ শব্দটি কেবল মানুষের জন্যই প্রযোজ্য। আল্লাহর জন্য এ শব্দটি ব্যবহৃত হয় রূপকার্থে। সে ক্ষেত্রে অর্থ হবে- অসন্তোষ ও শাস্তিদান

এ হাদীছে বলা হয়েছে, আল্লাহ তা'আলা যা নিষিদ্ধ করেছেন তাতে কেউ লিপ্ত হলে আল্লাহ তা'আলা গয়রত বোধ করেন। অর্থাৎ তিনি নারাজ হন। তা এ কারণে যে, আল্লাহ তা'আলা প্রজ্ঞাময়। তিনি সর্বজ্ঞ ও দয়াময়। তিনি মানুষের জন্য যা ফরয ও ওয়াজিব করেন, তার ভেতর তাদের দীন-দুনিয়ার প্রভূত কল্যাণ নিহিত থাকে। যা হারাম করেন, তার মধ্যে নিহিত থাকে তাদের দুনিয়া ও আখিরাতের প্রকৃত ক্ষতি। আদেশ-নিষেধ করার ভেতর তাঁর নিজের কোনও লাভ-ক্ষতি নেই। তিনি কোনও কিছু ফরয এজন্য করেন না যে, বান্দা তা পালন করলে তাঁর নিজের কোনও লাভ হবে। আর যা নিষেধ করেন তাও এজন্য নয় যে, বান্দা তা পালন না করলে আল্লাহর ক্ষতি হবে। সমস্ত সৃষ্টি মিলেও যদি আল্লাহর অবাধ্যতা করে ও পাপাচারে লিপ্ত হয়, তাতে আল্লাহর রাজত্বে কোনও কিছু কমবে না। আর সমস্ত সৃষ্টি মিলে আল্লাহর ইবাদত আনুগত্য করলে তাতে আল্লাহর রাজত্বে এককণাও বাড়বে না। তিনি আদেশ-নিষেধ করেন কেবলই বান্দার স্বার্থে।

তো আল্লাহ তা'আলা যখন কোনওকিছু হারাম করেন, তখন বান্দা কিভাবে নেই জিনিসে লিপ্ত হয়? বান্দার জানা আছে আল্লাহ সব দেখেন, তিনি তার হারাম কাজে লিপ্ত হওয়া দেখছেন। আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তাঁর শাস্তি অতি কঠিন। এ কাজের জন্য তিনি তাকে শাস্তিদান করবেন। তা সত্ত্বেও মানুষ কিভাবে আল্লাহর নিষিদ্ধ কাজ করতে পারে? তা করতে পারে তখনই, যখন সে কোনওকিছুকে পরওয়া করে না। যখন সে আল্লাহর শাস্তির ভয় করে না। যখন আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনই তার কাছে আসল মনে হয়। যখন শরী'আতের বিধানাবলী পালনের বিপরীতে নিজ খেয়াল-খুশিমত চলাকেই বেছে নেয়। এটা মারাত্মক গালাত ও চরম ধৃষ্টতা। তাই আল্লাহর গয়রত হয়। তাই তাঁর পক্ষ থেকে শাস্তির ব্যবস্থা। আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তাঁর গয়রত ও শাস্তি থেকে হেফাজত করুন এবং তাঁর মর্জি মোতাবেক চলার তাওফীক দিন।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

এ হাদীছটি দ্বারাও মুরাকাবার শিক্ষা পাওয়া যায়। যখনই অন্তরে কোনও হারাম কাজের ইচ্ছা জাগে, সংগে সংগে ধ্যান করতে হবে যে, এরূপ কাজে আল্লাহ গয়রত বোধ করেন। ফলে এ কাজ করলে তাঁর আযাব ভোগ করতে হবে। এরূপ ধ্যান করলে হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:বিশুদ্ধ (পারিভাষিক সহীহ)