সুন্নতী বিবাহ
প্রশ্নঃ ১০৪৬০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ইসলামীক বিয়ের নিয়মটা জানাবেন কী? 
যেটাতে খরচ অনেক কম ও বরকত অনেক বেশি !
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সুন্নত তরিকায় বিবাহ সম্পাদন বরকতময় হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: নিশ্চয় সে বিয়ে বেশি বরকতপূর্ণ হয়, যে বিয়েতে খরচ কম হয়। (মুসনাদে আহমাদ ও মুস্তাদরাকে হাকিম)। এ ছাড়া বিয়ে সংশ্লিষ্ট আরও কিছু সুন্নত রয়েছে, যেমন: বিবাহ সাদাসিধে ও অনাড়ম্বর হওয়া, অপচয়, অপব্যয় ও বিজাতীয় অপসংস্কৃতিমুক্ত হওয়া এবং সামর্থ্যের অধিক দেনমোহর ধার্য বা শর্ত না করা। (তাবারানি আওসাত, হাদিস নং-৩৬১২)। (আবু দাউদ: ২১০৬)
এমনিভাবে কনেপক্ষ থেকে অলংকারের শর্ত করা বা ছেলেপক্ষ থেকে যৌতুক চাওয়া উভয়টিই নিষিদ্ধ। (আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড: ৫, পৃষ্ঠা: ১৩)।
সৎ ও খোদাভীরু পাত্র-পাত্রীর সন্ধান করা এবং কোনো সুযোগে পাত্রী দেখা সম্ভব হলে দেখে নেওয়া। বিয়ের পর ছেলের পক্ষ তার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী ও গরিব-মিসকিনদের তৌফিক অনুযায়ী আপ্যায়ন করাকে ‘ওয়ালিমা’ বলে। বাংলায় ওয়ালিমাকে বউভাতও বলা হয়ে থাকে। বিয়ের পরদিন বা পরবর্তী সময়ে সুবিধামতো নিকটতম সময়ের মধ্যে ওয়ালিমা করা বিধেয়। তবে তিন দিনের মধ্যে করা উত্তম। যেকোনো প্রকার খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ওয়ালিমা করা যায়। ওয়ালিমা একটি ইবাদত। একদিন ওয়ালিমা করা সুন্নত, দুইদিন ওয়ালিমা করা মুস্তাহাব, তিনদিন ওয়ালিমা করা জায়েজ। (মুসলিম: ১৪২৭)।
ওয়ালিমা করা এক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে ওয়ালিমা করেছেন এবং সাহাবিদের করতে বলেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.)-কে বিয়ে করার পরদিন ওয়ালিমা করেছিলেন। (বুখারি, হাদিস নম্বর-৫১৭০)। এমনিভাবে ছাফিয়াহ (রা.)-কে বিয়ের পর তিনদিন যাবৎ ওয়ালিমা খাইয়েছিলেন। (মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদিস নম্বর-৩৮৩৪)।
হজরত আনাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) আবদুর রহমান ইবনে আওফের গায়ে হলুদ রঙের চিহ্ন দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কী? তিনি বললেন, আমি এক খেজুর আঁটির ওজন স্বর্ণ দিয়ে একজন মহিলাকে বিবাহ করেছি। রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তোমার বিবাহে বরকত দান করুক। একটি ছাগল দ্বারা হলেও তুমি ওয়ালিমা করো।’ (বুখারি: ৫১৫৫; মুসলিম ও মিশকাত, হাদিস নম্বর-৩২১০)।
উপরোক্ত হাদিসের মাধ্যমে প্রনিধানযোগ্য বিষয় এই যে, আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু) এর মত সাহাবী যিনি বিপুল সম্পদের মালিক ছিলেন, অপরদিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিনি সাহাবীদের চোখের মনি এবং পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্ব এমনকি তাদের নিজেদের জীবনের চেয়েও প্রিয় ছিলেন। সেই সাহাবায়েকরামদের মধ্য থেকে যখন কেউ একজন বিয়ে করলেন, তখন ওই বিয়ে এত অনারম্বর এবং সাদাসিধে ছিল যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও জানেন নি। কতই না সহজ-সরল ছিল তাহাদের বিবাহ-সাদী। যার কারনে ওই সময়ে গুনাহ এবং ব্যভিচারের সংখ্যা ছিল খুবই কম। অথচ বর্তমানে জাঁকজমক- বিলাসিতা, অপচয় এবং সামাজিক রীতিনীতির প্যাঁচের মাধ্যমে বিবাহকে আমরা খুবই কঠিন করে ফেলেছি , অপরদিকে বিবাহবহির্ভূত অবৈধ প্রেম ভালোবাসা রাস্তা খুলে দিয়েছি। যার কারণে সমাজের ছড়িয়ে পড়ছে বেহায়াপনা ও বিশৃঙ্খলা।
সুতরাং বিবাহ হওয়া চাই সাদা-সিধে, অনারম্বর, অপচয় মুক্ত, সুন্নতানুসারে এবং ওয়ালিমায় অতিরিক্ত ব্যয় করা কিংবা খুব উঁচু মানের খানার ব্যবস্থা করাও জরুরি নয়। বরং সামর্থ্য অনুযায়ী খরচ করাই সুন্নত আদায়ের জন্য যথেষ্ট। যে ওয়ালিমায় শুধু ধনী ও দুনিয়াদার লোকদের দাওয়াত দেওয়া হয়, দ্বীনদার ও গরিব-মিসকিনদের দাওয়াত দেওয়া হয় না, সেই ওয়ালিমাকে হাদিসে নিকৃষ্টতম ওয়ালিমা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (আবু দাউদ:)
এমনিভাবে মেয়ের বাড়িতেও যে ভোজের আয়োজন করা হয়, তা শরিয়তসম্মত নয়। বিয়েতে মেয়েপক্ষের কোনোরূপ খরচ করার কথা নয়। আপ্যায়নের উদ্দেশ্যে অনারম্বর ভাবে সামান্য কিছু আয়োজন করা যেতে পারে। (বুখারি, হাদিস নম্বর-৬০১৮)।
তবে আপ্যায়নের নামে মেয়েদের উপর সামাজিক প্রচলন ও রুসমতের উপর ভিত্তি করে মেয়ে পক্ষের ওপর আপ্যায়নের যে চাপ সৃষ্টি করা হয়, তা সম্পূর্ণ হারাম। সর্বোপরি শর্ত আরোপ করে বরযাত্রীর নামে বরের সঙ্গে অধিকসংখ্যক লোক নিয়ে যাওয়া এবং কনের বাড়িতে মেহমান হয়ে কনের পিতার ওপর বোঝা সৃষ্টি করা বর্তমান সমাজের একটি জঘন্য কুপ্রথা, যা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা আবশ্যক। (মুসনাদে আহমাদ: ২০৭২২, বুখারি: ২৬৯৭)।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
শাইখ আবু সাঈদ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, মোহাম্মাদপুর।
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
