যত্রতত্র ছবি তোলা সম্পর্কে
প্রশ্নঃ ১০৮৭৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, অপ্রয়োজনে অহরহ ছবি তোলার ক্ষেত্রে শরীয়তের নির্দেশনা কি? মোবাইল ফোনে ক্যামেরা সহজলভ্য হওয়ার পর দেখা যায় অনেক আলেম যেখানে সেখানে অসংখ্য ছবি তোলেন এবং এগুলো বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য জায়গায়ও ব্যবহার করেন। যেহেতু আলেমসমাজ এর আচরণের ওপর সমাজের মুসলিম আমজনতার একটা প্রভাব আছে, সাধারণ মানুষ মনে করে, যখন কোনো বড় আলেম কোন কাজ করেন নিশ্চয়ই তিনি তা শরীয়ত সম্মত করেন। তাই শরীয়তের দৃষ্টিকোণে এরকম অপ্রয়োজনে ছবি তোলা বিধান কি ?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ডিজিটাল ছবি (যা প্রিন্টেড নয়) নিয়ে অনেক আলেম ও মুফতি জায়েজের ফতোয়া দিলেও দেওবন্দসহ হক্কানি আলেমদের অবস্থান এখনো কঠোর। তারা ছবি ও ভিডিওকে জায়েজ মনে করেন না। বাংলাদেশের উলামাও এ বিষয়ে একম।
আর শরীয়তের বৈধ-অবৈধের হুকুম আলেম এবং সাধারন জনগন সকলের জন্যই প্রযোজ্য,।তাই অনর্থক ছবি তোলা ও আপলোড করো জন্যই বৈধ নয়।
তবে অবস্থা ও অবস্থান এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনের তাগিদে ব্যক্তিবিশেষ কিছুটা ভিন্নতার অবকাশ শরীয়তে রয়েছে,,,।
যেমন প্রশ্ন উঠছে আলেম উলামাগণ ছবিকে নাজায়েজ মনে করলেও ভিডিওকে মনে করেন না। তারা অবাধে ভিডিও করেন এবং ইউটিউবে প্রচার করেন। এটা কিভাবে বৈধ?
বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি একটি ভিডিও ইউটিউবে প্রকাশ করেছেন প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন, মাদরাসা নূরে মদীনার মুহাতামিম আল্লামা নূরুল ইসলাম ওলীপুরী।
ভিডিও বক্তব্যে তিনি বলেন, ইতোপূর্বে ওয়াজ মাহফিলগুলোতে ছবি তোলা এবং ভিডিও করার ব্যাপারে আমি খুবই কঠোর ছিলাম। কিন্তু, ইদানীং বাতিলদের বিভিন্ন মিথ্যাচারের জবাব ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রচার করছি এখন অনেকে আমাদের কাছে প্রশ্ন পাঠিয়েছেন, এতদিন যেই ছবি নিষেধ করলেন এখন সেই ছবির অনুমতি কিভাবে দিচ্ছেন?
এ ব্যাপারে ফেকাহ’র কিতাবে স্পষ্ট লেখা আছে, ইসলামে এমন অনেক বিধান রয়েছে, যেসব বিধান সাধারণ অবস্থায় নিষিদ্ধ বা হারাম, সেসব বিধান প্রয়োজনের খাতিরে ভুক্তোভোগি ব্যক্তি বিশেষের জন্য জায়েজ হয়ে যায়। ঠিক তেমনই একটি বিধান হলো, মানুষ ও প্রাণীর ছবির বিধান।
রাসুলের অনেক হাদিসে মানুষ ও প্রাণীর ছবি তোলা এবং সংরক্ষণ করা, যত্ম করা, হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে।
সাধারণ অবস্থায় ইসলামের এই বিধান কেয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে। খামখেয়ালি করে বিলাসিতা বশত যারা মানুষ ও প্রাণীর ছবি তোলে, সংরক্ষণ করে তারা হারাম কাজ করছে এবং গুনাহ করছে। কেয়ামতের ময়দানে তারা গুনাহগার অপরাধী হয়েও উঠবে।
কিন্তু ইসলামি বিধানশাস্ত্র ফেকাহ এর পরিভাষায় জরুরত ও হাজাত বলতে দুটি বিষয় আছে। বাংলা ভাষায় বলা যেতে পারে নিতান্ত প্রয়োজনীয় অবস্থা। অত্যন্ত জরুরি অবস্থায় ছবি তোলা, সংরক্ষণ করা এবং ব্যবহার করা জায়েজ।
উদারণসরূপ বলা যেতে পারে, বাংলাদেশ থেকে একজন হজ পালন করতে সৌদি আরবে যাবেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে পাসপোর্ট করতে হবে এবং পাসপোর্ট করতে গেলে ছবিও তুলতে হবে। হজ পালনকারী ব্যক্তি বিলাসিতা করে এই ছবি তুলছে না বরং নিতান্ত প্রয়োজনের খাতিরে তাকে ছবি তুলতে হচ্ছে।
সুতরাং এ ব্যাপারে ইসলামের বিধান সুস্পষ্ট যে নিতান্ত কোনো প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ও প্রাণীর ছবি তোলা, সংরক্ষণ ও ব্যবহার করা হারাম। শুধুমাত্র বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ইসলামের পরিভাষায় যাকে জরুরত এবং হাজাত বলা হয়, এমন ক্ষেত্রে ছবি তোলা জায়েজ।
জরুরত ও হাজাত কাকে বলা হয়? এই দুটি বিষয় সবিস্তারে মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ তার ‘ছবি ভিডিও এর শরয়ি বিধান’ নামক কিতাবে সম্পূর্ণ সবিস্তারে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং, আমরা কেবল মাত্র একান্ত প্রয়োজন অনুভব করে ছবি তুলবো এবং ব্যবহার করবো । আল্লাহ আমাদের সঠিক তথ্য জেনে শুদ্ধ আমল করার তাওফিক দিন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ৭০৫৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম। প্রশ্নঃ- বর্তমানে অধিকাংশ মানুষকে দেখা যায় যে, তারা মোবাইলে নিজের বা অন্যের ছবি তুলছে এবং ফেসবুকে পোস্ট করছে। এটা কী জায়েজ?বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ছবির কয়টি পর্যায় রয়েছে।
মূর্তি-ভাস্কর্য সর্বসম্মতিক্রমে হারাম ও নিষিদ্ধ।
কাগজ, কাপড় বা দেয়ালে অঙ্কিত ছবি এটিও সর্বসম্মতিক্রমে নিষিদ্ধ। শুধুমাত্র পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ইত্যাদি অতীব প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে জায়েয।
ক্যামেরায় তোলা ছবি অর্থাৎ ডিজিটাল ছবি প্রিন্ট করার আগ পর্যন্ত এ ছবির বিষয়ে ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কিছুটা মতপার্থক্য রয়েছে।
তাকওয়ার দাবী হল বিনা প্রয়োজনে ডিজিটাল ছবিও না তোলা।
বিশেষ প্রয়োজনে তুললে সেটা ভিন্ন কথা।
উল্লেখ্য, সেলফি কোন প্রয়োজনের গন্ডিতে আসে না।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর
প্রশ্নঃ ৩৪৩৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামু আলাইকুম,ভালো আছেন শায়েখ? আমার প্রশ্ন, বক্তারা যেন ইউটিউবে ছবি দেয় এই ছবি দেয়া কী জায়েজ আছে, Facebook কী ছবি দেয়া জায়েজ আছে,কোন কোন আলেম বলেন, ছবি তোলা জায়েজ আছে,আবার কোন কোন আলেম বলেন মোবাইলে ছবি তোলা হারাম।আমি দারুল উলূম দেওবন্দের ফতোয়া দেখিছি ছবি তোলা হারাম বলেছে? শায়েখ দলীল সহ উত্তর দিলে উপকৃত হতাম?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
ছবি ভিডিওর ব্যাপারে হক্কানী ওলামায়ে কেরামের মধ্যে কিছুটা মতভিন্নতা আছে। দারুল উলুম করাচি এবং দারুল দেওবন্দের ফতোয়ায় এ বিষয়ে কিছুটা ভিন্নতা আছে। দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া আছে সর্তকতা ও সাবধানতা। দারুল উলুম করাচির ফতোয়ায় আছে কিঞ্চিৎ অবকাশ। তাও আবার সর্বক্ষেত্রে নয়, শুধুমাত্র জরুরতের ক্ষেত্রে।
প্রত্যেক দারুল ইফতা স্ব স্ব ফতোয়ার পক্ষে কুরআন হাদীস থেকে দলীল প্রমাণ উল্লেখ করেছেন। বিস্তারিত জানতে তাদের ফতোয়া দেখতে পারেন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন