প্রশ্নঃ ২৩৬২৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
আমি একজন প্রাইমারি ক্সুল শিক্ষিকা।আমি আমার স্বামীর প্রয়োজনে বেতনের এগেইনষ্টে ৫০০০০০ টাকা লোন করি।বেতন থেকে সুদ সহ কিস্তি কেটে নেয়। সুদের ভয়াবহতা সমন্ধে আমার জ্ঞানের অভাব ছিল।এখন আমার স্বামী মারা গেছে। আমার অন্য কোন উপায় এই মূহূর্তে পাচ্ছি না যে, টাকা জোগার করে পরিশোধ করে তাড়া
তাড়ি সুদ থেকে বাচবো।মাসে মাসে কর্তন করে পরিশোধ হচ্ছে। এছাড়াও কিছু সুদের লোন আমার স্বামীর করা আছে।সেগুলো আল্লার ইচ্ছায় হালাল উপায়ে কিছুকিছু পরিশোধ করার তৌফিক আল্লাহ দিচ্ছেন।এখন আমি পরামর্শ চাচ্ছি, আমার বেতন থেকে যে সুদ সহ টাকা কেটে নিচ্ছে। এভাবে পরিশোধ হওয়া পর্যন্ত চলমান থাকলে রহমানুর রাহীম কি আমাকে ক্ষমা করবেন না?
আমি কি করবো? যদি আমাকে বুঝিয়ে বলতেন!আমি এজন্য খুব পেরেশানিতে আছি।আল্লাহ আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের পথ সহজ করুণ।
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সুদের গুনাহ ও তার ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে নিচের রেফারেন্স উত্তরটি দেখুন।
আপনার জন্য করণীয় হলো যথা সম্ভব দ্রুত আপনার ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া। সেটা সম্ভব হলো আপনার বেতনের বাইরে থেকেও করুন। আর আল্লাহ তায়ালা কাছে এই গুনাহের মাফির জন্য তাওবা করুন। আল্লাহ তায়ালা চাইলে মাফ করতেও পারেন সেটা তিনিই ভালো জানেন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইবরাহিমিয়া দারুল উলুম মেরাজনগর, কদমতলী, ঢাকা।
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ১০৭৩৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সুদের কী কী গুনাহ সবগুলো কোরআন সুন্নাহ দ্বারা জানতে চাই?এবং কারা জরিত ?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সুদ খাওয়ার ৭০টি গুনাহ।
সুদ খাওয়ার ৭০টি গুনাহের মধ্যে ১টি হচ্ছে নিজ মায়ের সাথে যিনা করা। এটা কি গুনাহের ভয়াবহতা বুঝাতে বলা হয়েছে, নাকি আসলেই
সমান গুনাহ?
পূর্বের রাসূলগনের মধ্যেও সুদ হারাম ছিল এবং বর্তমানেও হারাম আছে, যা প্রত্যেক মুসলিম জানে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেছেন:
বস্তুত: ইয়াহুদীদের জন্যে আমি হারাম করে দিয়েছি বহু পবিত্র বস্তু যা তাদের জন্যে হালাল ছিল, তাদের পাপের কারনে এবং আল্লাহর পথে অধিক পরিমানে বাধা দেয়ার দরুন। আর এ কারনে যে তারা সুদ গ্রহন করত। অথচ এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল এবং এ কারনে যে, তারা অপরের সম্পদ ভোগ করত অন্যায় ভাবে। বস্তুত: আমি
কাফিরদের জন্য তৈরি করে রেখেছি যন্ত্রণাদায়ক আযাব…
[সূরা আন-নিসা: ১৬০-১৬১]
কুরআনে আরও আছে:
হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর। যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করতে পার…
(সুরা আলে ইমরান-১৩০)
সুদ একটি মারাত্মক পাপ, যার দ্বারা ক্ষতি সাধন হয় মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের, সামাজিক জীবনের এবং রাষ্ট্রীয় জীবনের। এর ভয়াবহতা সম্পর্কে কুরআনে উল্লেখ আছে:
মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, এই আশায় যা কিছু তোমরা সুদে দিয়ে থাক; মহান আল্লাহ তায়া’লার নিকট তা বর্ধিত হয় না । পক্ষান্তরে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যারা দিয়ে থাকে, অতএব, তারাই দ্বিগুণ লাভ করে…
(সূরা- রুম, আয়াত-৩৯)
যারা সুদ খায় তারা সেই ব্যক্তির ন্যায় দাঁড়াবে (কিয়ামতের দিন), যাকে (জ্বীন) শয়তান স্পর্শ করেই পাগল করে দেয় । এটা এই জন্যেই যে তারা বলে বেচা-কেনা তো সুদেরই মত…(সূরা-বাকারা, আয়াত-২৭৫)
অতঃপর তোমরা যদি তা (বকেয়া সুদ) না ছাড়, তবে জেনে রাখ এটা আল্লাহ তায়া’লা ও তার রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধ । কিন্তু যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই । এতে তোমরা অত্যাচার করবেনা,
অত্যাচারিতও হবে না…
(সূরা-বাকারা, আয়াত-২৭৯)
হাদীসে উল্লেখ আছে:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লা’নত করেছেন, সুদখোরের উপর, সুদদাতার উপর, এর লেখকের উপর ও উহার সাক্ষীদ্বয়ের উপর এবং বলেছেন এরা সকলেই সমান…
[মুসলিম/জাবির (রাঃ), আবূ দাউদ, তিরমীযী]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
সুদ হল সত্তর প্রকার পাপের সমষ্টি । তার মাঝে সবচেয়ে নিম্নতম হল-আপন মায়ের সাথে ব্যভিচার করা…[ইবনে মাজাহ/ আবূ হুরাইরা (রাঃ)]
নিশ্চয়ই যে অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করবে, কিয়ামতের দিন তার জন্যে নির্ধারিত রয়েছে জাহান্নাম…
[বুখারী, মিশকাত]
হারাম খাদ্য ভক্ষণ করা শরীর জান্নাতে প্রবেশ করবেনা…[মিশকাত]
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা:) বলেছেন:
শবে মেরাজ রাতে আমাকে উর্ধ্বলোকে বিচরণ করানোর সময় আমি আমার মাথার উপরে সপ্তম আকাশে বজ্রে প্রচন্ড গর্জনের শব্দ শুনতে পেলাম। চোখ মেলে এমন কিছু লোক দেখতে পেলাম,
যাদের পেটগুলো বিশাল ঘরের মত সামনের দিকে বের হয়ে আছে। তা ছিলো অসংখ্য সাপ ও বিচ্ছুতে পরিপূর্ণ। যেগুলো পেটের বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাঈল (আ:) ! এরা কারা? তিনি উত্তরে বললেনঃ এরা সুদখোরের দল…[ইবনে মাযা ও আহমদ]
হযরত আবদুর রহমান ইবনে মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত আছে, যখন কোন জাতির মধ্যে ব্যভিচার ও সুদ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে,
তখন আল্লাহ পাক সেই জাতিকে ধ্বংস করার নির্দেশ দেন…
[আবু ইয়া’লা ও হাকেম]
সুদ থেকে অর্জিত এক দিরহাম পরিমাণ অর্থ ইসলামের দৃষ্টিতে ৩৬ বার ব্যভিচার করা অপেক্ষা গুরুতর অপরাধ…[ইবনে মাজা, বায়হাকী]
হযরত সামুরা বিন জুনদুব (রা:) থেকে বর্ণিত, নবীয়ে আকরাম (সা:) বলেছেন:
আজ রাতে আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, দু’জন লোক আমার কাছে আগমন করে আমাকে এক পবিত্র ভূমির দিকে নিয়ে চলছে। যেতে যেতে আমরা
রক্তে পরিপূর্ণ এক নহরের পাড়ে দাঁড়ালাম। এ সময় আমরা দু’জন লোককে দেখতে পেলাম,
একজন এ নহরের মাঝে দাঁড়ানো, আরেকজন নহরের পাড়ে দাঁড়ানো। কিনারে দাঁড়ানো লোকটির সম্মুখে অনেকগুলো পাথর। নহরের ভিতরে দাঁড়ানোর লোকটি কিনারার দিকে আসতে ইচ্ছা করলে, পাড়ের লোকটি তার মুখে স্বজোরে পাথর নিক্ষেপ করে যে, লোকটি পুনরায় পূর্বেকার জায়গায় পৌঁছে যায়। সে যতবারই পাড়ে আসতে চায় ততবারই তার মুখে
পাথর নিক্ষেপ করা হয়।
রাসূলে আকরাম (সা:) জিজ্ঞাসা করলেন: এ লোকটি কে?
যার মুখে পাথর নিক্ষেপ করা হচ্ছে। উত্তরে বলা হল: এ হচ্ছে সুদখোর ব্যক্তি…[বুখারী]
রাসূলুল্লাহ্ (সা:) তার স্বপ্ন সম্পর্কে এক দীর্ঘ হাদীসের একাংশে বলেন: সুদখোর মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত আযাব দেয়া হবে। আর তার আযাব হবে, তাকে এমন নদীতে সাঁতার কাটতে হবে, যার পানি হবে রক্তের মত লাল। সুদের ভিত্তিতে দুনিয়ায় বসে সে সম্পদ সঞ্চয় করেছে আর হারাম সম্পদ সঞ্চয় করার জন্য তাকে আগুনের পাথর খেতে হবে।
এটাই হচ্ছে কিয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত বরযাখী জীবনের শাস্তি এর সাথে থাকবে তার প্রতি আল্লাহর অভিশাপ…[বূখারী]
কোন ব্যক্তির এক দিরহাম পরিমান সুদ উপার্জন করা মুসলমান অবস্থায় তেত্রিশ বার যিনা করা হতেও বেশি গুনাহের কাজ…
[তাবরানী]
সুদের গুনাহ সত্তরটি। তার মধ্যে অপরাধের দিক থেকে সর্বনিম্ন গুনাহটি হল, আপন মায়ের সাথে যৌনাচারের গুনাহের সমান।
আর সবচেয়ে জঘন্য প্রকারের সুদ হলো, সুদের পাওনা আদায়ের জন্য কোন মুসলমান ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি করা বা তার সম্পদ দখল করা…
[ইবনে মাজা, তাবারানী]
এর থেকে বুঝা যায় যে সুদের গুনাহ্ নিজ মায়ের সাথে যিনা করার করার থেকেও মারাত্মক গুনাহ্। অর্থাৎ তার শাস্তি হবে যিনার পাপের থেকেও মারাত্মক।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সুদ থেকে এবং সুদী কারবারে জড়িত লোকদের থেকে হেফাজত করুক। আমীন
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন