প্রশ্নঃ ৮৩০০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ১.আমি যদি অনেক বড় গোনাহগার হয় এবং দুনিয়াতে এমন কোনো পাপ কাজ নেই যেটা আমি করিনি।তাহলে আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করবেন?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
السلام عليكم ورحمة الله وبركاته
পাপ কাজ বা গুনাহের শ্রেষ্ঠ প্রতিষেধক হলো তাওবা।
ইতিমধ্যে এ বিষয়ে উত্তর দেয়া হয়েছে উত্তরটি নিচে সংযুক্ত করা হল।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
রেফারেন্স উত্তর :
প্রশ্নঃ ৭৮২৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, গুনাহ করে ফেলার পর সঠিক ভাবে আল্লাহর নিকট তওবা করবো কিভাবে?
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
মুমিনের গুনাহ হয়ে গেলে করনীয়ঃ
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنّ الْمُؤْمِنَ إِذَا أَذْنَبَ كَانَتْ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ فِي قَلْبِهِ، فَإِنْ تَابَ وَنَزَعَ وَاسْتَغْفَرَ، صُقِلَ قَلْبُهُ، وَإِنْ زَادَ زَادَتْ، حَتّى يَعْلُوَ قَلْبَهُ. ذَاكَ الرّانُ الّذِي ذَكَرَ اللهُ عَزّ وَجَلّ فِي الْقُرْآنِ: كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ .
মুমিনের গুনাহ হয়ে গেলে তাতে তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে যায়। তখন সে যদি তাওবা করে, গুনাহ ছেড়ে দেয় এবং ইস্তিগফার করে তাহলে তার অন্তর পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু যদি আরো গুনাহ করে, তাহলে কালো দাগ বাড়তে থাকে, একসময় তার অন্তর কালো দাগে ছেয়ে যায়। এটাই সেই জং, যা আল্লাহ তাআলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন-
كَلَّا بَلْ رَانَ عَلَى قُلُوبِهِمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
‘না, কখনো নয়; বরং তাদের কৃতকর্ম তাদের অন্তরে জং ধরিয়ে দিয়েছে। [সূরা মুতাফফিফীন (৮৩) : ১৪] -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭৯৫২; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৪২৪৪
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উক্ত হাদীস থেকে জানা গেল যে, গুনাহ, পাপাচার ও মন্দকর্মের কারণে শুধু কাফিরদেরই অন্তর কালো হয়ে যায় তা নয়, বরং মুসলমানও যদি গুনাহ করে তাহলে তার অন্তরেও গুনাহের গান্দেগীর কারণে কালো দাগ পড়ে যায়। কিন্তু সে যদি অন্তর থেকে তাওবা করে, ইস্তেগফার করে তাহলে সেই কালো দাগ দূর হয়ে যায়, কলব আবার আগের মত পবিত্র ও আলোকিত হয়ে যায়। কিন্তু গুনাহ হয়ে যাওয়ার পর যদি তাওবা-ইস্তিগফার না করে, গুনাহ ও অবাধ্যতার পথেই চলতে থাকে, তাহলে অন্তরে অন্ধকার বাড়তে থাকে। একসময় পুরো অন্তর অন্ধকারে ছেয়ে যায়।
পক্ষান্তরে ফাসেক-ফাজেরের কাছে গোনাহ কোনো পেরেশানীর বিষয়ই নয়। একটি হাদীসে একটি সুন্দর উপমার মাধ্যমে বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে-
إِنّ المُؤْمِنَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَأَنّهُ قَاعِدٌ تَحْتَ جَبَلٍ يَخَافُ أَنْ يَقَعَ عَلَيْهِ، وَإِنّ الفَاجِرَ يَرَى ذُنُوبَهُ كَذُبَابٍ مَرّ عَلَى أَنْفِهِ.
মুমিনের কাছে গোনাহ যেন পতনোন্মুখ পাহাড়, যার পাদদেশে সে বসা; যে কোনো মুহূর্তে তা ভেঙে পড়তে পারে তার উপর (ধ্বংস করে দিতে পারে তাকে)। আর ফাসেক-ফাজেরের কাছে গোনাহ যেন নাকের উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া সামান্য মাছির মত। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৩০৮
হাঁ, মুমিনের কাছে গোনাহ এমনই। গোনাহকে মুমিন পাহাড়সম বোঝা হিসেবে দেখে। কোনো পাপ হয়ে গেলে ব্যথিত হয়, কষ্টে থাকে। আফসোস-আক্ষেপ করতে থাকে- কেন পাপে জড়ালাম! আর এটিই ঈমানের আলামত।
গোনাহ তো হয়েই যায়। শয়তানের ধোঁকায়, নফসের প্ররোচনায়, ইচ্ছায়, অনিচ্ছায়- গোনাহ হয়েই যায়। কিন্তু আশার কথা হল, আল্লাহ বান্দার জন্য রেখেছেন পাপ মোচনের অগণিত পথ।
অতএব, গোনাহের এলাজ হলো তাওবা।
তাওবার মাধ্যমে মহাপাপীও হয়ে যেতে পারে গোনাহমুক্ত; শয়তানের সকল অপচেষ্টা মুহূর্তে ধূলিস্মাৎ করে দিতে পারে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
التّائِبُ مِنَ الذّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ.
গোনাহ থেকে তওবাকারী গোনাহমুক্ত ব্যক্তির মত। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৪২৫০
***তাওবা দু’প্রকার। ইজমালি তাওবা ও তাফসীলি তাওবা।
ইজমালি তাওবা হলো একসঙ্গে পিছনের সমস্ত গোনাহ থেকে তাওবা করা। অর্থাৎ প্রথমে দু’রাকাত ‘ছালাতে তাওবা’ পড়ে এভাবে দু’আ করবে, ‘হে আল্লাহ! জীবনে আমার যত গোনাহ হয়েছে, যত ভুল-ভ্রান্তি ও পদস্খলন ঘটেছে, সমস্ত কিছু থেকে আমি আপনার কাছে মাফ চাই। হে আল্লাহ, আমি তাওবা করছি, ইসতিগফার করছি, এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করছি যে, বাকি জীবনে কখনো কোন গোনাহ করবো না। আপনি কবুল করুন এবং তাওফীক দান করুন, আমীন।’ এটা হলো ইজমালি তাওবা।
এর পর হলো তাফছীলি তাওবা। অর্থাৎ প্রতিটি গোনাহ থেকে আলাদা আলাদা তাওবা করা। এই তাওবার নিয়ম এই যে, যে গোনাহ থেকে তাওবা করা হচ্ছে যদি তার ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব হয় তাহলে তার ক্ষতিপূরণ করতে হবে। যেমন কারো সম্পদ আত্মসাৎ করা হয়েছে; এখন ক্ষতিপূরণ না করে বসে বসে তাওবা করছে। তো এমন তাওবা কীভাবে কবুল হতে পারে! আগে তো পয়সা ফেরত দিতে হবে, কিংবা যার পয়সা তার কাছ থেকে মাফ নিতে হবে, তারপর তাওবা করতে হবে। তদ্রূপ কাউকে কষ্ট দেয়া। তো মাফ চেয়ে নেয়ার মাধ্যমে এর ক্ষতিপূরণ হতে পারে। এটা না করে শুধু তাওবা করা যথেষ্ট নয়। উপরে যা বলা হলো তা হচ্ছে হুকূকুল ইবাদ বা বান্দার হক থেকে তাওবা করার বিষয়। আল্লাহর হক থেকে তাওবা করা সম্পর্কেও একই কথা।
মোটকথা, তাফছীলি তাওবা এই যে, মানুষ নিজের পিছনের জীবনের হিসাব নিয়ে দেখবে যে, তার যিম্মায় আল্লাহর, কিংবা বান্দার কোন হক ওয়াজিব আছে কি না? এবং সেগুলোর ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব কি না? যদি সম্ভব না হয় তাহলে শুধু তাওবা করাই যথেষ্ট। আর যদি ক্ষতিপূরণ করা সম্ভব হয় তাহলে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ করতে হবে। যেমন নামায আল্লাহর হক। তো হিসাব করে দেখবে যে, আমার যিম্মায় কত ওয়াক্তের নামায কাযা আছে। সেগুলো আদায় করার চেষ্টা-ফিকির শুরু করে দেবে।
এটা হলো তাফছীলি তাওবা।
জনৈক ব্যক্তি হযরত থানবী (রাহ.)-এর কাছে পত্র লিখেছেন যে, প্রতিসপ্তাহেই আমি তাওবা করি, কিন্তু একদিন পার না হতেই সব প্রতিজ্ঞা তছনছ হয়ে যায়। এ অবস্থা অবশ্য প্রায় প্রত্যেকের জীবনেই দেখা দেয়। মানুষ পিছনের সমস্ত গোনাহ থেকে খাঁটি মনেই তাওবা করে এবং ভবিষ্যতে গোনাহ না করার বিষয়ে খুব দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে, কিন্তু একদু’দিন পরই নফস ও শয়তানের প্ররোচনায় এবং পরিবেশ ও পরিসি'তির মোকাবেলায় সব সংকল্প ভেসে যায় এবং আবার গোনাহ ও নাফরমানিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সাধারণত প্রায় প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই এ অবস্থা দেখা দেয়। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
এই পেরেশানির সমাধানের জন্য প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে তাওবার শর্ত কী কী? তাওবাতুন্নাছূহ বা খাঁটি তাওবার জন্য শরীয়াতে তিনটি শর্তের কথা বলা হয়েছে। এই শর্ততিনটি পাওয়া গেলেই বলা হবে যে, বান্দা খাঁটি তাওবা করেছে।
প্রথম শর্ত হলো অন্তরে গোনাহের প্রতি ঘৃণা থাকা এবং গোনাহ ও নাফরমানির কারণে অন্তরে লজ্জা ও অনুশোচনা আসা। যদি গোনাহের প্রতি ঘৃণাই না থাকে, অন্তরে যদি লজ্জা ও অনুশোচনাই না জাগে, গোনাহকে যদি গোনাইই মনে না করে তাহলে আর তাওবা হলো কোথায়? সেটা তো বরং বড় ভয়ের কথা। আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মুসলমানকে তা থেকে হেফাযত করুন, আমীন। তো তাওবার জন্য প্রথম শর্ত হলো গোনাহের কারণে লজ্জিত ও শরমিন্দা হওয়া যে, ইয়া আল্লাহ, আমার তো বড় ভুল হয়ে গেছে! হায়, কেয়ামতের দিন কীভাবে আল্লাহর সামনে মুখ দেখাবো! আয় আল্লাহ, আমি ভুল স্বীকার করছি, আমাকে মাফ করে দিন।
দ্বিতীয় শর্ত হলো সঙ্গে সঙ্গে ঐ গোনাহটি ছেড়ে দেয়া। এছাড়া তাওবা পূর্ণ হতে পারে না। এটা কীভাবে সম্ভব যে, মানুষ একদিকে তাওবা করবে, অন্যদিকে গোনাহও করে যাবে! এটা তো আল্লাহর সঙ্গে তামাশার মত হলো! এর পরিণতি তো খুবই ভয়াবহ!
তাওবার তৃতীয় শর্ত হলো ভবিষ্যতে গোনাহ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা এবং প্রতিজ্ঞার উপর অবিচল থাকার আন্তরিক চেষ্টা করা। এই তিনটি হলো তাওবার শর্ত। এছাড়া তাওবা পূর্ণ হয় না।
তাওবার প্রথম যে শর্ত, অর্থাৎ গোনাহের কারণে লজ্জিত ও শরমিন্দা হওয়া, এটা তো প্রায় প্রত্যেক ঈমানদার ব্যক্তিরই হয়ে থাকে। সামান্য ঈমান যার দিলে আছে সে গোনাহ করার পর অবশ্যই লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়। তারপর দ্বিতীয় শর্ত গোনাহ ছেড়ে দেয়া, এর উপরও সাধারণত আমল হয়ে যায়। মানুষ গোনাহ করার পর কিছু সময়ের জন্য হলেও গোনাহ ছেড়ে দেয়।
তবে তৃতীয় শর্তটি সম্পর্কে মনে দ্বিধা-সন্দেহ আসতে পারে। অর্থাৎ ভবিষ্যতে গোনাহ না করার যে প্রতিজ্ঞা সেটা দৃঢ় প্রতিজ্ঞা হলো কি না তা অনেক সময় বোঝা যায় না। কারণ প্রতিজ্ঞা করার সময়ও মনের মধ্যে এই খটকা লেগে থাকে যে, তাওবা তো করছি, কিন্তু কে জানে, কতক্ষণ এই তাওবার উপর অবিচল থাকতে পারবো? কতটা সময় নিজেকে গোনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবো? মনের মধ্যে এই খটকা ও দ্বিধা-সন্দেহ থাকা অবস্থায় কি আর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা হয়? আর প্রতিজ্ঞতার দৃঢ়তা সম্পর্কেই যখন দ্বিধা-সন্দেহ, তখন আর তাওবা পূর্ণ হলো কোথায়? এসব কারণে মানুষ খুব পেরেশানির শিকার হয়। খটকা ও উৎকণ্ঠা তাওবার বিরোধী নয় বিষয়টি গভীরভাবে চিন্তা করে বুঝে নিন যে, পাক্কা ও সাচ্চা তাওবার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা অবশ্যই জরুরি।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দাতা:
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন