মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

مشكاة المصابيح للتبريزي

২৮- ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের আলামতের বর্ণনা - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

হাদীস নং: ৫৩৯০
- ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের আলামতের বর্ণনা
প্রথম অনুচ্ছেদ
৫৩৯০। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিয়াছেনঃ সেই মহান সত্তার কসম, যাঁহার হাতে আমার প্রাণ। সেই পর্যন্ত দুনিয়া নিঃশেষ হইবে না, যে পর্যন্ত না মানুষের উপর এমন একদিন আসিবে—হত্যাকারী বলিতে পারিবে না কেন সে হত্যা করিয়াছে এবং নিহত ব্যক্তিও জানিতে পারিবে না, কেন সে নিহত হইয়াছে। জিজ্ঞাসা করা হইল, ইহা কিরূপে হইবে? তিনি বলিলেন; ফিতনার দরুন। যাহাতে হত্যাকারী ও নিহত উভয়ই জাহান্নামে প্রবেশ করিবে। —মুসলিম
كتاب الفتن
وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا تَذْهَبُ الدُّنْيَا حَتَّى يَأْتِي يَوْمٌ لَا يَدْرِي الْقَاتِلُ فِيمَ قَتَلَ؟ وَلَا الْمَقْتُولُ فِيمَ قُتِلَ؟ فَقِيلَ: كَيْفَ يَكُونُ ذَلِكَ؟ قَالَ: «الْهَرْجُ الْقَاتِلُ وَالْمَقْتُولُ فِي النَّارِ» . رَوَاهُ مُسلم
হাদীস নং: ৫৩৯১
- ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের আলামতের বর্ণনা
প্রথম অনুচ্ছেদ
৫৩৯১। হযরত মা'কাল ইবনে ইয়াসার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন : ফিতনার সময় (উহাতে লিপ্ত না হইয়া) এবাদতে মশগুল থাকার সওয়াব আমার দিকে হিজরত করিয়া আসার সমতুল্য। —মুসলিম
كتاب الفتن
وَعَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «الْعِبَادَةُ فِي الْهَرْجِ كَهِجْرَةٍ إِلَيَّ» . رَوَاهُ مُسلم
হাদীস নং: ৫৩৯২
- ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের আলামতের বর্ণনা
প্রথম অনুচ্ছেদ
৫৩৯২। যোবাইর ইবনে আদী বলেন, একবার আমরা হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ)-এর নিকট যাইয়া হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের অত্যাচারের অভিযোগ করিলাম। তখন তিনি বলিলেন, ধৈর্যধারণ কর যে পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের রবের সাথে সাক্ষাৎ কর। কেননা, আগামীতে তোমাদের উপরে যেই যমানা আসিবে, উহা অতীত অপেক্ষা আরও মন্দ হইবে। এই কথাগুলি আমি তোমাদের নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হইতে শুনিয়াছি। বুখারী
كتاب الفتن
وَعَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ عَدِيٍّ قَالَ: أَتَيْنَا أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ فَشَكَوْنَا إِلَيْهِ مَا نَلْقَى مِنَ الْحَجَّاجِ. فَقَالَ: «اصْبِرُوا فَإِنَّهُ لَا يَأْتِي عَلَيْكُمْ زمَان إِلَّا الَّذِي بعده أشرمنه حَتَّى تَلْقَوْا رَبَّكُمْ» . سَمِعْتُهُ مِنْ نَبِيِّكُمْ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
হাদীস নং: ৫৩৯৩
- ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের আলামতের বর্ণনা
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৩৯৩। হযরত হাযাইফা (রাঃ) বলেন, আল্লাহ্র কসম! আমি বলিতে পারি না যে, আমার বন্ধুগণ (সাহাবায়ে কেরামগণ) কি প্রকৃতই ভুলিয়া গিয়াছেন ? নাকি, না ভুলিয়াও ভুলার ভান করিয়া আছেন ? আল্লাহর কসম করিয়া বলিতেছি, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এমন কোন ফিতনাকারীর আলোেচনা বাদ রাখেন নাই, যে কিয়ামত পর্যন্ত আবির্ভৃত হইবে এবং তাহার সাথে উক্ত ফিতনা সৃষ্টিকারীদের সংখ্যা তিন শত বা তাহারও অধিক পর্যন্ত পৌঁছিবে। বরং তিনি ঐ ব্যক্তির নাম, তাহার পিতার নাম এবং তাহার বংশপরিচয়ও আমাদিগকে বর্ণনা করিয়াছেন।—আবু দাউদ
كتاب الفتن
الْفَصْل الثَّانِي
عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ: وَاللَّهِ مَا أَدْرِي أَنَسِيَ أَصْحَابِي أَمْ تَنَاسَوْا؟ وَاللَّهِ مَا تَرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ قَائِدِ فِتْنَةٍ إِلَى أَنْ تَنْقَضِيَ الدُّنْيَا يَبْلُغُ مَنْ مَعَهُ ثَلَاثَمِائَةٍ فَصَاعِدًا إِلَّا قَدْ سَمَّاهُ لَنَا بِاسْمِهِ وَاسْمِ أَبِيهِ واسمِ قبيلتِه. رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
হাদীস নং: ৫৩৯৪
- ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের আলামতের বর্ণনা
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৩৯৪। হযরত সওবান (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ আমি আমার উম্মতের ব্যাপারে পথভ্রষ্টকারী নেতাদের খুব বেশী ভয় করিতেছি। আর আমার উম্মতের উপরে যখন একবার তলোয়ার চলিতে থাকিবে, তখন আর কিয়ামত পর্যন্ত তাহাদের হইতে উহা উঠিবে না। — আবু দাউদ ও তিরমিযী
كتاب الفتن
وَعَنْ ثَوْبَانَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّمَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي الْأَئِمَّةَ الْمُضِلِّينَ وَإِذَا وُضِعَ السَّيْفُ فِي أُمَّتِي لَمْ يُرْفَعْ عَنْهُمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد والترمذيُّ
হাদীস নং: ৫৩৯৫
- ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের আলামতের বর্ণনা
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৩৯৫। হযরত সাফীনা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলিয়াছেনঃ খেলাফত (নবুওতের তরীকায়) ত্রিশ বংসর বহাল থাকিবে। অতঃপর উহা মুলূকিয়াতে (রাজতন্ত্রে) পরিবর্তিত হইয়া যাইবে। ব্ণনাকারী সাফীনা (রাঃ) বলেন, উহা এইভাবে গণনা করিয়া লও-হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর খেলাফতকাল দুই বংসর। হযরত উমর (রাঃ)-এর খেলাফত দশ বংসর, হযরত ওসমান (রাঃ)এর বার বৎসর এবং হযরত আলী (রাঃ)-এর ছয় বৎসর। —আহমদ, তিরমিযী ও আবু দাউদ
كتاب الفتن
وَعَن سفينة قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «الْخِلَافَةُ ثَلَاثُونَ سَنَةً ثُمَّ تَكُونُ مُلْكًا» . ثُمَّ يَقُولُ سَفِينَةُ: أَمْسِكْ: خِلَافَةَ أَبِي بَكْرٍ سَنَتَيْنِ وَخِلَافَةَ عُمَرَ عَشْرَةً وَعُثْمَانَ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ وَعَلِيٍّ سِتَّةً. رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ
হাদীস নং: ৫৩৯৬
- ফিতনাসমূহ ও কিয়ামতের আলামতের বর্ণনা
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
৫৩৯৬। হযরত হোযাইফা (রাঃ) বলেন, একবার আমি জিজ্ঞাসা করিলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এখন আমরা যেই ভাল যুগে (ইসলামে) অবস্থান করিতেছি, ইহার পরে কি কোন মন্দ যুগ আসিবে, যেমন—ইহার (ইসলামের) পূর্বে (জাহেলিয়াত) ছিল? তিনি বলিলেনঃ হ্যাঁ, আসিবে। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, উহা হইতে বাঁচিয়া থাকার উপায় কি? তিনি বলিলেন ; তলোয়ার। (অর্থাৎ, বাতিলের মুকাবিলায় প্রয়োজনে অস্ত্র ধারণ করিতে হইবে।) আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, আচ্ছা, সেই তলোয়ারী যুগের পরে কি মুসলমানের অস্তিত্ব থাকিবে? তিনি বলিলেন; হ্যাঁ, থাকিবে। তবে তখন প্রতিষ্ঠিত হইবে রাজতন্ত্র। উহার ভিত্তি হইবে মানুষের ঘৃণার উপর এবং সন্ধি-চুক্তি হইবে প্রতারণার উপর। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, তারপর কি হইবে? তিনি বলিলেন ; অতঃপর গোমরাহীর দিকে আহ্বানকারী লোকের আবির্ভাব ঘটিবে। তখন যদি আল্লাহর এই যমীনে কোন শাসক থাকে এবং সে তোমার পৃষ্ঠে অন্যায়ভাবে চাবুক মারে এবং (জোরপূর্বক) তোমার মাল-সম্পদ ছিনাইয়াও নেয়, তবুও তুমি তাহার আনুগত্য কর। যদি কোন শাসক না থাকে তবে তোমার মৃত্যু যেন এই অবস্থায় হয় যে, তুমি (সকল সম্পর্ক ত্যাগ করিয়া) কোন বৃক্ষের গোড়ায় আশ্রয় গ্রহণকারী হইবে। (অর্থাৎ, নির্জনে থাকিবে।) আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, তারপর কি হইবে? তিনি বলিলেন; অতঃপর দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটিবে। তাহার সঙ্গে থাকিবে নহর ও আগুন। যে ব্যক্তি উক্ত অগ্নিকুণ্ডে পড়িবে, (আল্লাহর নিকট) তাহার প্রতিদান সাব্যস্ত হইয়া যাইবে এবং তাহার পূর্বের গোনাহসমূহ মাফ হইয়া যাইবে। আর যে ব্যক্তি তাহার নহরে প্রবেশ করিবে তাহার পাপ অবধারিত হইয়া যাইবে এবং তাহার (নেক আমলের) সওয়াব বাতিল হইয়া যাইবে। হোযাইফা বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, তারপর কি হইবে? তিনি বলিলেন ; ঘোড়ার বাচ্চা লাভ করা হইবে, কিন্তু উহা আরোহণের যোগ্য হওয়ার পূর্বেই কিয়ামত কায়েম হইয়া যাইবে। (অর্থাৎ, দাজ্জালের আবির্ভাবের পর কিয়ামত খুব নিকটবর্তী হইবে। )
অপর এক বর্ণনায় আছে—সেই ফিতনার সন্ধি-চুক্তি হইবে প্রতারণার উপর এবং জামাতবন্দী হইবে ঘৃণার উপর। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! প্রতারণার চুক্তির অর্থ কি? তিনি বলিলেন; লোকজনের অন্তর পূর্বাবস্থায় ফিরিয়া আসিবে না। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, সেই ভাল-এর পরেও কি কোন মন্দ আসিবে? তিনি বলিলেন; হ্যাঁ, ইহার পরে আসিয়া পড়িবে অন্ধ ও বধির ফিতনা। (অর্থাৎ, তখন আর হক ও বাতিলের পার্থক্য করার কোন উপায় থাকিবে না এবং উহা হইতে বাহির হওয়ার কোন পথও পাওয়া যাইবে না।) সেই সময় এক দল লোক জাহান্নামের দ্বারে দাঁড়াইয়া ফিতনার দিকে আহ্বানকারী হইবে। হে হোযাইফা! সেই সময় এই সকল আহ্বানকারীর কাহারও অনুসরণ করা অপেক্ষা যদি তুমি গাছের শিকড় আঁকড়াইয়া মৃত্যুবরণ কর, তাহা হইবে তোমার পক্ষে উত্তম। —আবু দাউদ
كتاب الفتن
وَعَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَكُونُ بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ شَرٌّ كَمَا كَانَ قَبْلَهُ شَرٌّ؟ قَالَ: «نَعَمْ» قُلْتُ: فَمَا الْعِصْمَةُ؟ قَالَ: «السَّيْفُ» قُلْتُ: وَهَلْ بَعْدَ السَّيْفِ بَقِيَّةٌ؟ قَالَ: «نعمْ تكونُ إِمارةٌ على أَقْذَاءٍ وَهُدْنَةٌ عَلَى دَخَنٍ» . قُلْتُ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: «ثُمَّ يَنْشَأُ دُعَاةُ الضَّلَالِ فَإِنْ كَانَ لِلَّهِ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةٌ جَلَدَ ظَهْرَكَ وَأَخَذَ مَالَكَ فَأَطِعْهُ وَإِلَّا فَمُتْ وَأَنْتَ عَاضٌّ عَلَى جَذْلِ شَجَرَةٍ» . قُلْتُ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: «ثُمَّ يَخْرُجُ الدَّجَّالُ بَعْدَ ذَلِكَ مَعَهُ نَهْرٌ وَنَارٌ فَمَنْ وَقَعَ فِي نَارِهِ وَجَبَ أَجْرُهُ وَحُطَّ وِزْرُهُ وَمَنْ وَقَعَ فِي نَهْرِهِ وَجَبَ وِزْرُهُ وحظ أَجْرُهُ» . قَالَ: قُلْتُ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: «ثُمَّ يُنْتَجُ الْمُهْرُ فَلَا يُرْكَبُ حَتَّى تَقُومَ السَّاعَةُ» وَفِي رِوَايَة: «هُدْنَةٌ عَلَى دَخَنٍ وَجَمَاعَةٌ عَلَى أَقْذَاءٍ» . قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ الْهُدْنَةُ عَلَى الدَّخَنِ مَا هِيَ؟ قَالَ: «لَا ترجع قُلُوب أَقوام كَمَا كَانَتْ عَلَيْهِ» . قُلْتُ: بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ شَرٌّ؟ قَالَ: «فِتْنَةٌ عَمْيَاءُ صَمَّاءُ عَلَيْهَا دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ النَّارِ فَإِنْ مُتَّ يَا حُذَيْفَةُ وَأَنْتَ عَاضٌّ عَلَى جَذْلٍ خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ تتبع أحدا مِنْهُم» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
tahqiq

তাহকীক: