মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

مشكاة المصابيح للتبريزي

৩০- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায় - এর পরিচ্ছেদসমূহ

মোট হাদীস টি

হাদীস নং: ৫৯৩২
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩২। হযরত সাহল ইবনে হানযালিয়া (রাঃ) বলেন, হোনাইনের যুদ্ধের দিন তাহারা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর সাথে সফরে বাহির হইলেন। সফরটি কিছুটা দীর্ঘ হইল, এমন কি সন্ধ্যা আসিয়া গেল। এমন সময় একজন অশ্বারোহী আসিয়া বলিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি অমুক অমুক পাহাড়ের উপর উঠিয়াছিলাম, তখন দেখিতে পাইলাম, হাওয়াযেন গোত্রের লোকেরা সর্বসাকল্যে আসিয়া পড়িয়াছে। তাহাদের সঙ্গে তাহাদের মহিলাগণ, মাল-সম্পদ এবং সর্বপ্রকারের গবাদিপশুসমূহ রহিয়াছে; আর তাহারা সকলে হোনাইন এলাকায় সমবেত হইয়াছে। এই কথা শুনিয়া রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) মৃদু হাসিলেন এবং বলিলেনঃ ইন্‌শাআল্লাহ্ ! আগামীকাল এই সমস্ত জিনিস মুসলমানদের গনীমতের মালে পরিণত হইবে।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেন, আজ রাতে (তোমাদের) কে আমাদিগকে পাহারা দিবে ? আনাস ইবনে আবু মারসাদ গানাভী (রাঃ) বলিলেন, আমিই ইয়া রাসুলাল্লাহ্! তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেন, আচ্ছা, আরোহণ কর। তখন তিনি তাঁহার অশ্বে সওয়ার হইলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেন, তুমি এই পাহাড়ী রাস্তায় অগ্রসর হও, এমন কি এই পাহাড়ের উপরে পৌঁছিয়া যাও। (বর্ণনাকারী বলেন,) যখন ভোর হইল, তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) নামাযের জন্য বাহির হইলেন। দুই রাকআত সুন্নত পড়িয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমরা তোমাদের অশ্বারোহীর আভাস পাইয়াছ কি ? তখন এক ব্যক্তি বলিল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা আভাস পাই নাই। অতঃপর নামাযের জন্য একামত দেওয়া হইল, তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) নামায পড়াইতে পড়াইতে কানি চোখে সেই গিরিপথের দিকে তাকাইতেছিলেন। নামায শেষ করিয়াই তিনি বলিলেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। তোমাদের অশ্বারোহী আসিয়া পৌঁছিয়াছে। (বর্ণনাকারী বলেন,) আমরা বৃক্ষরাজির মাঝে পাহাড়ী পথে সেই দিকে তাকাইয়া দেখিলাম, তিনি আসিয়া রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর সম্মুখে দাঁড়াইলেন, অতঃপর বলিলেন, আমি রওয়ানা হইয়া ঐ পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠিয়াছিলাম, যেইখানে উঠিবার জন্য রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমাকে নির্দেশ করিয়াছিলেন। যখন আমি ভোরে উপনীত হইলাম, তখন আমি উভয় পাহাড়ের চূড়ায় উঠিয়া এইদিক সেইদিক তাকাইলাম; কিন্তু কাহাকেও দেখিতে পাই নাই। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) সেই অশ্বারোহী (আনাস )-কে জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কি রাতের বেলায় (সওয়ারীর উপর হইতে) অবতরণ করিয়াছিলে? তিনি বলিলেন, না। তবে শুধু নামাযের জন্য অথবা প্রাকৃতিক প্রয়োজন মিটানোর জন্য। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেন, (আজ রাতে যেই মহৎ ও বিরাট কাজ তুমি আঞ্জাম দিয়াছ,) ইহার পর তুমি অন্য কোন প্রকারের (নফল) আমল না করিলেও তোমার কোন ক্ষতি হইবে না। –আবু দাউদ
كتاب الفضائل والشمائل
وَعَن سهل ابْن الْحَنْظَلِيَّةِ أَنَّهُمْ سَارُوا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ حُنَيْنٍ فَأَطْنَبُوا السَّيْرَ حَتَّى كَانَت عَشِيَّةً فَجَاءَ فَارِسٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي طَلِعْتُ عَلَى جَبَلِ كَذَا وَكَذَا فَإِذَا أَنَا بِهَوَازِنَ عَلَى بَكْرَةِ أَبِيهِمْ بِظُعُنِهِمْ وَنَعَمِهِمُ اجْتَمَعُوا إِلَى حُنَيْنٍ فَتَبَسَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ تِلْكَ غَنِيمَةٌ الْمُسْلِمِينَ غَدا إِن شَاءَ الله ثمَّ قَالَ مَنْ يَحْرُسُنَا اللَّيْلَةَ قَالَ أَنَسُ بْنُ أَبِي مَرْثَدٍ الْغَنَوِيُّ أَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ارْكَبْ فَرَكِبَ فَرَسًا لَهُ فَقَالَ: «اسْتَقْبِلْ هَذَا الشِّعْبَ حَتَّى تَكُونَ فِي أَعْلَاهُ» . فَلَمَّا أَصْبَحْنَا خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى مُصَلَّاهُ فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ قَالَ هَلْ حسستم فارسكم قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا حَسِسْنَا فَثُوِّبَ بِالصَّلَاةِ فَجَعَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي وَهُوَ يَلْتَفِتُ إِلَى الشِّعْبِ حَتَّى إِذَا قَضَى الصَّلَاةَ قَالَ أَبْشِرُوا فَقَدْ جَاءَ فَارِسُكُمْ فَجَعَلْنَا نَنْظُرُ إِلَى خِلَالِ الشَّجَرِ فِي الشِّعْبِ فَإِذَا هُوَ قَدْ جَاءَ حَتَّى وَقَفَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسلم فَقَالَ إِنِّي انْطَلَقْتُ حَتَّى كُنْتُ فِي أَعْلَى هَذَا الشِّعْبِ حَيْثُ أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا أَصبَحت اطَّلَعت الشِّعْبَيْنِ كِلَيْهِمَا فَلَمْ أَرَ أَحَدًا فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَلْ نَزَلْتَ اللَّيْلَةَ قَالَ لَا إِلَّا مُصَلِّيَا أَوْ قَاضِيَ حَاجَةٍ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَلَا عَلَيْكَ أَنْ لَا تَعْمَلَ بعدَها» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُد
হাদীস নং: ৫৯৩৩
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩৩। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, একদা আমি অল্প কয়েকটি খেজুর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর নিকট লইয়া আসিয়া বলিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ । আল্লাহর কাছে দো'আ করুন যেন এইগুলির মধ্যে বরকত হয়। তখন তিনি খেজুরগুলি হাতে লইলেন। অতঃপর সেইগুলির মধ্যে আমার জন্য বরকতের দো'আ করিলেন। তারপর বলিলেনঃ এইগুলি লইয়া যাও এবং তোমার খাদ্য থলির মধ্যে রাখিয়া দাও। যখনই তুমি থলি হইতে কিছু লইতে চাহিবে, তখনই উহার ভিতরে হাত ঢুকাইয়া লইবে। তবে কখনও থলিটিকে ঝাড়িয়া খালি করিবে না।
[আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন,] আমি সেই খেজুর হইতে এত এত 'ওসক' পরিমাণ আল্লাহর রাস্তায় খরচ করিয়াছি। এতদ্ভিন্ন উহা হইতে আমরা নিজেরাও খাইয়াছি এবং অন্যান্যকেও খাওয়াইয়াছি এবং উক্ত থলিটি কখনও আমার কোমর হইতে পৃথক হইত না। (অর্থাৎ, সর্বদা আমি উহা নিজের কোমরের সাথে বাঁধিয়া রাখিতাম।) অবশেষে হযরত ওসমান (রাঃ)-এর শাহাদতের দিন সেই থলিটি কোথাও খুলিয়া পড়িয়া যায়। —তিরমিযী
كتاب الفضائل والشمائل
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِتَمَرَاتٍ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ فِيهِنَّ بِالْبَرَكَةِ فَضَمَّهُنَّ ثُمَّ دَعَا لي فِيهِنَّ بِالْبركَةِ فَقَالَ خذهن واجعلهن فِي مِزْوَدِكَ كُلَّمَا أَرَدْتَ أَنْ تَأْخُذَ مِنْهُ شَيْئًا فَأَدْخِلْ فِيهِ يَدَكَ فَخُذْهُ وَلَا تَنْثُرْهُ نَثْرًا فَقَدْ حَمَلْتُ مِنْ ذَلِكَ التَّمْرِ كَذَا وَكَذَا مِنْ وَسْقٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَكُنَّا نَأْكُلُ مِنْهُ وَنُطْعِمُ وَكَانَ لَا يُفَارِقُ حَقْوِي حَتَّى كَانَ يَوْمُ قَتْلِ عُثْمَانَ فَإِنَّهُ انْقَطَعَ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ
হাদীস নং: ৫৯৩৪
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩৪। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, একদা রাত্রির বেলায় কোরাইশগণ মক্কায় পরামর্শ করিল যে, ভোর হইতেই তাহারা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে রশি দ্বারা শক্ত করিয়া বাঁধিয়া ফেলিবে। আবার কেহ বলিল; বরং তাহাকে কতল করিয়া ফেল। অন্য আরেকজন বলিল; বরং তাহাকে দেশ হইতে তাড়াইয়া দাও। আর এদিকে আল্লাহ্ তা'আলা (জিবরাঈলের মাধ্যমে) কাফেরদের ষড়যন্ত্রের কথা তাঁহার নবী (ﷺ)কে জানাইয়া দেন। অতঃপর হযরত আলী (রাঃ) নবী (ﷺ)-এর বিছানায় সেই রাত্রি যাপন করিলেন এবং নবী (ﷺ) মক্কা হইতে বাহির হইয়া 'সওর' পর্বতের গুহায় গিয়া আত্মগোপন করিলেন, কিন্তু নবী (ﷺ) নিজের বিছানায় শুইয়া আছেন ধারণা করিয়া মুশরিকরা সারাটি রাত্র হযরত আলীকে পাহারা দিতে রহিল। ভোর হইতেই তাহারা নবী (ﷺ)-এর হুজরার উপর আক্রমণ করিবার জন্য অগ্রসর হইল। যখন তাহারা নবী (ﷺ)-এর স্থলে আলীকে দেখিতে পাইল, তখন (বুঝিতে পারিল যে,) তাহাদের ষড়যন্ত্র আল্লাহ্ পাক প্রতিহত করিয়া দিয়াছেন। অতঃপর তাহারা হযরত আলীকে জিজ্ঞাসা করিল, তোমার এই বন্ধু [অর্থাৎ, নবী (ﷺ)] কোথায় ? আলী (রাঃ) বলিলেন, আমি জানি না। তখন তাহারা নবী (ﷺ)-এর পদ চিহ্ন অনুসরণ করিয়া তাঁহার খোঁজে বাহির হইয়া পড়িল ; কিন্তু উক্ত পর্বতের নিকটে পৌঁছার পর পদচিহ্ন তাহাদের জন্য এলোমেলো ও সন্দেহযুক্ত হইয়া গেল। তবুও তাহারা পাহাড়ের উপর উঠিল এবং গুহার মুখে গিয়া পৌঁছিল। তাহারা দেখিতে পাইল, গুহার দ্বারপথে মাকড়সা জাল বুনিয়া রাখিয়াছে, উহা দেখিয়া তাহারা বলাবলি করিল, যদি সে [মুহাম্মাদ (ﷺ)] এই গুহার মধ্যে প্রবেশ করিত, তাহা হইলে গুহার দ্বারে মাকড়সার জাল থাকিত না। ইহার পর নবী (ﷺ) তিন রাত্র-দিবস উহার ভিতরে অবস্থান করিলেন। –আহমদ
كتاب الفضائل والشمائل
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَن ابْن عبَّاس قَالَ تَشَاوَرَتْ قُرَيْشٌ لَيْلَةً بِمَكَّةَ فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِذَا أَصْبَحَ فَأَثْبِتُوهُ بِالْوِثَاقِ يُرِيدُونَ النَّبِيَّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم وَقَالَ بَعْضُهُمْ بَلِ اقْتُلُوهُ وَقَالَ بَعْضُهُمْ بَلْ أَخْرِجُوهُ فَأطلع الله عز وَجل نَبِيَّهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى ذَلِكَ فَبَاتَ عَليّ عَلَى فِرَاشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِلْكَ اللَّيْلَةَ وَخَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى لَحِقَ بِالْغَارِ وَبَاتَ الْمُشْرِكُونَ يَحْرُسُونَ عَلِيًّا يَحْسَبُونَهُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا أَصْبحُوا ثَارُوا إِلَيْهِ فَلَمَّا رَأَوْا عَلِيًّا رَدَّ اللَّهُ مَكْرَهُمْ فَقَالُوا أَيْنَ صَاحِبُكَ هَذَا قَالَ لَا أَدْرِي فَاقْتَصُّوا أَثَرَهُ فَلَمَّا بَلَغُوا الْجَبَلَ اخْتَلَطَ عَلَيْهِمْ فَصَعِدُوا فِي الْجَبَلَ فَمَرُّوا بِالْغَارِ فَرَأَوْا عَلَى بَابِهِ نَسْجَ الْعَنْكَبُوتِ فَقَالُوا لَوْ دَخَلَ هَاهُنَا لَمْ يَكُنْ نَسْجُ الْعَنْكَبُوتِ عَلَى بَابِهِ فَمَكَثَ فِيهِ ثَلَاثَ لَيَال. رَوَاهُ أَحْمد
হাদীস নং: ৫৯৩৫
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩৫। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বলেন, খায়বর বিজয় হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর খেদমতে (ভাজা) বকরী হাদিয়াস্বরূপ পেশ করা হইল। উহাতে বিষ ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নির্দেশ দিলেন, এখানে যত ইহুদী আছে, সকলকে আমার সম্মুখে একত্রিত কর। তাহারা সকলে একত্রিত হইলে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাহাদিগকে উদ্দেশ্য করিয়া বলিলেনঃ আমি তোমাদিগকে এক ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করিব, তোমরা কি আমাকে এই ব্যাপারে সত্য উত্তর দিবে? তাহারা বলিল, হ্যাঁ, হে আবুল কাসেম! অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আচ্ছা তোমাদের বাপ কে? তাহারা বলিল, অমুক। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেন, তোমরা মিথ্যা বলিতেছ বরং তোমাদের পিতা তো অমুক। তখন তাহারা বলিল, আপনি সত্যই বলিয়াছেন এবং সঠিক বলিয়াছেন। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) পুনরায় বলিলেন, আমি তোমাদিগকে আরও একটি ব্যাপারে যদি জিজ্ঞাসা করি, সেই ব্যাপারেও তোমরা কি আমাকে সত্য উত্তর দিবে ? তাহারা বলিল, হ্যাঁ, হে আবুল কাসেম! কেননা, যদি আমরা আপনাকে মিথ্যা কথা বলি, তাহা হইলে আপনি তো জানিতেই পারিবেন যেমনটি জানিতে পারিয়াছেন আমাদের পিতার ব্যাপারে এইবার রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আচ্ছা, জাহান্নামী কাহারা? উত্তরে তাহারা বলিল, আমরা স্বল্প সময়ের জন্য জাহান্নামে যাইব। অতঃপর আপনারা উহাতে আমাদের স্থলাভিষিক্ত হইয়া থাকিবেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিলেন, দূর হও ! তোমরাই তথায় থাকিবে আল্লাহর কসম! আমরা কখনও জাহান্নামে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত হইব না। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাহাদিগকে বলিলেন, আমি যদি তোমাদিগকে আরও একটি কথা জিজ্ঞাসা করি, তাহা হইলে তোমরা কি আমাকে সত্য উত্তর দিবে? তাহারা বলিল, হ্যাঁ, হে আবুল কাসেম! এইবার রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) জিজ্ঞাসা করিলেন, আচ্ছা, বল দেখি! তোমরা কি এই বকরীর গোশতে বিষ মিশাইয়াছিলে? তাহারা (নির্দ্বিধায়) বলিল, হ্যাঁ। নবী (ﷺ) জিজ্ঞাসা করিলেন? কিসে তোমাদিগকে এইরূপ করিতে উদ্বুদ্ধ করিল? উত্তরে তাহারা বলিল, আপনি যদি মিথ্যাবাদী হন, তাহা হইলে আমরা আপনা হইতে রেহাই পাইব। আর আপনি যদি (নবুওতের দাবীতে) সত্যবাদী হইয়া থাকেন, তাহা হইলে বিষ আপনার কোনই ক্ষতি করিবে না। —বুখারী
كتاب الفضائل والشمائل
وَعَن أبي هُرَيْرَة أَنه قَالَ لَمَّا فُتِحَتْ خَيْبَرُ أُهْدِيَتْ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَاةٌ فِيهَا سُمٌّ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اجْمَعُوا لي من كَانَ هَا هُنَا من الْيَهُود فَجمعُوا لَهُ فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنِّي سَائِلُكُمْ عَنْ شَيْءٍ فَهَلْ أَنْتُمْ صادقي عَنهُ فَقَالُوا نَعَمْ يَا أَبَا الْقَاسِمِ فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَبُوكُمْ قَالُوا فلَان فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَذبْتُمْ بل أبوكم فلَان فَقَالُوا صدقت وبررت قَالَ: «هَلْ أَنْتُمْ مُصَدِّقِيَّ عَنْ شَيْءٍ إِنْ سَأَلْتُكُمْ عَنْهُ» قَالُوا نَعَمْ يَا أَبَا الْقَاسِمِ وَإِنْ كَذَبْنَاكَ عَرَفْتَ كَمَا عَرَفْتَهُ فِي أَبِينَا قَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَهْلُ النَّارِ قَالُوا نَكُونُ فِيهَا يَسِيرًا ثمَّ تخلفوننا فِيهَا فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اخْسَئُوا فِيهَا وَاللَّهِ لَا نَخْلُفُكُمْ فِيهَا أبدا ثمَّ قَالَ لَهُم فَهَلْ أَنْتُمْ مُصَدِّقِيَّ عَنْ شَيْءٍ إِنْ سَأَلْتُكُمْ عَنهُ قَالُوا نَعَمْ يَا أَبَا الْقَاسِمِ قَالَ: «هَلْ جَعَلْتُمْ فِي هَذِه الشَّاة سما» . قَالُوا نعم فَقَالَ مَا حملكم على ذَلِك فَقَالُوا أردنَا إِن كنت كذابا نستريح مِنْك وَإِن كنت نَبيا لم يَضرك. رَوَاهُ البُخَارِيّ
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ৫৯৩৬
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩৬। হযরত আমর ইবনে আখতাব আনসারী (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমাদিগকে ফজরের নামায পড়াইয়া মিম্বরে উঠিলেন এবং আমাদের সম্মুখে ভাষণ দিলেন, এমন কি ভাষণের সিলসিলা একটানা যোহরের ওয়াক্ত পর্যন্ত চলিতে থাকিল। অতঃপর মিম্বর হইতে তিনি নামিলেন এবং যোহরের নামায পড়াইলেন। নামায শেষ করিয়া আবার মিম্বরে উঠিয়া ভাষণ দিলেন, এমন কি আসরের ওয়াক্ত হইয়া গেল। তখন মিম্বর হইতে নামিয়া আসরের নামায পড়াইলেন। আসরের নামায শেষ করিয়া পুনরায় মিম্বরে উঠিয়া সূর্যাস্ত পর্যন্ত ভাষণ দিলেন। ভাষণে তিনি সেইসমস্ত বিষয়গুলি আমাদিগকে অবহিত করিলেন, কিয়ামত পর্যন্ত যাহাকিছু সংঘটিত হইবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী, যে সেইদিনের কথাগুলি বেশী বেশী স্মরণ রাখিয়াছে। —মুসলিম
كتاب الفضائل والشمائل
وَعَن عَمْرو بن أخطَب الْأنْصَارِيّ قَالَ صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا الْفجْر وَصعد الْمِنْبَرِ فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ الظُّهْرُ فَنَزَلَ فَصَلَّى ثمَّ صعِد الْمِنْبَر فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ الْعَصْرُ ثُمَّ نَزَلَ فَصَلَّى ثُمَّ صَعِدَ الْمِنْبَرَ حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ فَأَخْبَرَنَا بِمَا هُوَ كَائِنٌ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَأَعْلَمُنَا أحفظنا. رَوَاهُ مُسلم
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ৫৯৩৭
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩৭। মা’ন ইবনে আব্দুর রহমান বলেন, আমি আমার পিতাকে বলিতে শুনিয়াছি, আমি মাসরূককে জিজ্ঞাসা করিলাম, জিনেরা যে রাত্রে মনোনিবেশ সহকারে কোরআন মজীদ শুনিয়াছিল, এই সংবাদটি (অর্থাৎ, জিনদের উপস্থিতির কথা) নবী (ﷺ)কে কে দিয়াছিল ? তিনি বলিলেন, তোমার পিতা—অর্থাৎ, আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) আমাকে বলিয়াছেন যে, তাঁহাকে [নবী (ﷺ)-কে] একটি বৃক্ষ তাহাদের উপস্থিতির কথা জানাইয়াছিল। — মোত্তাঃ
كتاب الفضائل والشمائل
وَعَنْ مَعْنِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ سَمِعْتُ أَبِي قَالَ: سَأَلْتُ مَسْرُوقًا: مَنْ آذَنَ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْجِنِّ لَيْلَةَ اسْتَمَعُوا الْقُرْآنَ؟ قَالَ حَدَّثَنِي أَبُوكَ يَعْنِي عَبْدَ اللَّهِ ابْن مَسْعُودٍ أَنَّهُ قَالَ: آذَنَتْ بِهِمْ شَجَرَةٌ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
tahqiq

তাহকীক:

হাদীস নং: ৫৯৩৮
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩৮। হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, একবার আমরা মক্কা এবং মদীনার মধ্যবর্তী স্থানে হযরত ওমর (রাঃ)-এর সাথে ছিলাম, তখন আমরা নতুন চাঁদ দেখিতে চেষ্টা করি। আমি ছিলাম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি। সুতরাং আমি চাঁদ দেখিয়া ফেলিলাম। আর আমি ব্যতীত সেখানে অন্য কেহই চাঁদ দেখিতে পাইয়াছে বলিয়া দাবী করে নাই। আমি হযরত ওমর (রাঃ)-কে বলিলাম, আপনি কি চাঁদ দেখিতেছেন না? কিন্তু তিনি উহা দেখিতে পাইতেছিলেন না। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর ওমর (রাঃ) বলিলেন, অচিরেই আমি আমার বিছানায় শুইয়া শুইয়া উহা দেখিব। (হযরত আনাস বলেন,) অতঃপর হযরত ওমর (রাঃ) বদর যুদ্ধের ঘটনাবলী বর্ণনা করিতে লাগিলেন এবং বলিলেন, যুদ্ধের একদিন পূর্বে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) আমাদিগকে ঐ সমস্ত স্থানগুলি দেখাইয়া দিলেন, যেই যেই স্থানে কাফেরদের লাশ পড়িয়া থাকিবে। তিনি বলিলেন, ইন্‌শাআল্লাহ্ আগামীকাল এই জায়গায় অমুক (কাফের)-এর লাশ পড়িবে। ইন্‌শাআল্লাহ্ আগামীকাল এই স্থানে অমুকের লাশ পড়িবে (এই বলিয়া তিনি এক একটি করিয়া নিহতের স্থানসমূহ দেখাইলেন)। হযরত ওমর (রাঃ) বলেন, সেই মহান সত্তার কসম! যিনি তাঁহাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করিয়াছেন; যেইসকল স্থান রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) নির্দিষ্ট করিয়াছিলেন, (কাফেরদের লাশগুলি) উক্ত স্থান হইতে একটুখানিও এইদিক সেইদিক সরিয়া পড়ে নাই। (বর্ণনাকারী বলেন,) অতঃপর উহাদিগকে একটি (অনাবাদ) কূপের মধ্যে একটির উপর একটিকে নিক্ষেপ করা হইল। ইহার পর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কূপটির নিকটে আসিয়া বলিলেন, হে অমুকের পুত্র অমুক! হে অমুকের পুত্র অমুক! আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূল তোমাদিগকে যেই ওয়াদা দিয়াছিলেন, তোমরা কি তাহা ঠিক ঠিক পাইয়াছ? তবে আমার আল্লাহ্ আমাকে যাহা ওয়াদা দিয়াছেন, আমি অবশ্য তাহা ঠিক ঠিকভাবে পাইয়াছি। তখন হযরত ওমর (রাঃ) বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! আপনি কিরূপে এমন দেহসমূহের সহিত কথা বলিতেছেন, যাহাদের মধ্যে কোন প্রাণ নাই ? তিনি বলিলেন, আমি উহাদিগকে যাহা বলিতেছি, তোমরা উহা তাহাদের চেয়ে অধিক শুনিতেছ না, অবশ্য উহারা আমার কথার কোন জওয়াব দিতে সক্ষম নহে। —মুসলিম
كتاب الفضائل والشمائل
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ كُنَّا مَعَ عُمَرَ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ فَتَرَاءَيْنَا الْهِلَالَ وَكُنْتُ رَجُلًا حَدِيدَ الْبَصَرِ فَرَأَيْتُهُ وَلَيْسَ أَحَدٌ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَآهُ غَيْرِي قَالَ فجعلتُ أقولُ لعُمر أما ترَاهُ فَجعل لَا يَرَاهُ قَالَ يَقُولُ عُمَرُ سَأَرَاهُ وَأَنَا مُسْتَلْقٍ عَلَى فِرَاشِي ثُمَّ أَنْشَأَ يُحَدِّثُنَا عَنْ أَهْلِ بدر فَقَالَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُرِينَا مَصَارِعَ أَهْلِ بَدْرٍ بِالْأَمْسِ يَقُولُ هَذَا مَصْرَعُ فُلَانٍ غَدًا إِنْ شَاءَ الله قَالَ فَقَالَ عمر فوالذي بَعثه بِالْحَقِّ مَا أخطئوا الْحُدُود الَّتِي حد رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ فَجُعِلُوا فِي بِئْرٍ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ فَانْطَلَقَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى انْتَهَى إِلَيْهِمْ فَقَالَ يَا فُلَانَ بْنَ فُلَانٍ وَيَا فُلَانَ بْنَ فُلَانٍ هَلْ وَجَدْتُمْ مَا وَعَدَكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ حَقًّا فَإِنِّي قَدْ وَجَدْتُ مَا وَعَدَني الله حَقًا قَالَ عُمَرُ يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ تُكَلِّمُ أَجْسَادًا لَا أَرْوَاحَ فِيهَا قَالَ مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ لِمَا أَقُولُ مِنْهُمْ غَيْرَ أَنَّهُمْ لَا يَسْتَطِيعُونَ أَن يَردُّوا عليَّ شَيْئا . رَوَاهُ مُسلم
tahqiq

তাহকীক: