মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৩০- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৯৩৪
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা
৫৯৩৪। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, একদা রাত্রির বেলায় কোরাইশগণ মক্কায় পরামর্শ করিল যে, ভোর হইতেই তাহারা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)কে রশি দ্বারা শক্ত করিয়া বাঁধিয়া ফেলিবে। আবার কেহ বলিল; বরং তাহাকে কতল করিয়া ফেল। অন্য আরেকজন বলিল; বরং তাহাকে দেশ হইতে তাড়াইয়া দাও। আর এদিকে আল্লাহ্ তা'আলা (জিবরাঈলের মাধ্যমে) কাফেরদের ষড়যন্ত্রের কথা তাঁহার নবী (ﷺ)কে জানাইয়া দেন। অতঃপর হযরত আলী (রাঃ) নবী (ﷺ)-এর বিছানায় সেই রাত্রি যাপন করিলেন এবং নবী (ﷺ) মক্কা হইতে বাহির হইয়া 'সওর' পর্বতের গুহায় গিয়া আত্মগোপন করিলেন, কিন্তু নবী (ﷺ) নিজের বিছানায় শুইয়া আছেন ধারণা করিয়া মুশরিকরা সারাটি রাত্র হযরত আলীকে পাহারা দিতে রহিল। ভোর হইতেই তাহারা নবী (ﷺ)-এর হুজরার উপর আক্রমণ করিবার জন্য অগ্রসর হইল। যখন তাহারা নবী (ﷺ)-এর স্থলে আলীকে দেখিতে পাইল, তখন (বুঝিতে পারিল যে,) তাহাদের ষড়যন্ত্র আল্লাহ্ পাক প্রতিহত করিয়া দিয়াছেন। অতঃপর তাহারা হযরত আলীকে জিজ্ঞাসা করিল, তোমার এই বন্ধু [অর্থাৎ, নবী (ﷺ)] কোথায় ? আলী (রাঃ) বলিলেন, আমি জানি না। তখন তাহারা নবী (ﷺ)-এর পদ চিহ্ন অনুসরণ করিয়া তাঁহার খোঁজে বাহির হইয়া পড়িল ; কিন্তু উক্ত পর্বতের নিকটে পৌঁছার পর পদচিহ্ন তাহাদের জন্য এলোমেলো ও সন্দেহযুক্ত হইয়া গেল। তবুও তাহারা পাহাড়ের উপর উঠিল এবং গুহার মুখে গিয়া পৌঁছিল। তাহারা দেখিতে পাইল, গুহার দ্বারপথে মাকড়সা জাল বুনিয়া রাখিয়াছে, উহা দেখিয়া তাহারা বলাবলি করিল, যদি সে [মুহাম্মাদ (ﷺ)] এই গুহার মধ্যে প্রবেশ করিত, তাহা হইলে গুহার দ্বারে মাকড়সার জাল থাকিত না। ইহার পর নবী (ﷺ) তিন রাত্র-দিবস উহার ভিতরে অবস্থান করিলেন। –আহমদ
كتاب الفضائل والشمائل
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ
وَعَن ابْن عبَّاس قَالَ تَشَاوَرَتْ قُرَيْشٌ لَيْلَةً بِمَكَّةَ فَقَالَ بَعْضُهُمْ إِذَا أَصْبَحَ فَأَثْبِتُوهُ بِالْوِثَاقِ يُرِيدُونَ النَّبِيَّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم وَقَالَ بَعْضُهُمْ بَلِ اقْتُلُوهُ وَقَالَ بَعْضُهُمْ بَلْ أَخْرِجُوهُ فَأطلع الله عز وَجل نَبِيَّهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى ذَلِكَ فَبَاتَ عَليّ عَلَى فِرَاشِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِلْكَ اللَّيْلَةَ وَخَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى لَحِقَ بِالْغَارِ وَبَاتَ الْمُشْرِكُونَ يَحْرُسُونَ عَلِيًّا يَحْسَبُونَهُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا أَصْبحُوا ثَارُوا إِلَيْهِ فَلَمَّا رَأَوْا عَلِيًّا رَدَّ اللَّهُ مَكْرَهُمْ فَقَالُوا أَيْنَ صَاحِبُكَ هَذَا قَالَ لَا أَدْرِي فَاقْتَصُّوا أَثَرَهُ فَلَمَّا بَلَغُوا الْجَبَلَ اخْتَلَطَ عَلَيْهِمْ فَصَعِدُوا فِي الْجَبَلَ فَمَرُّوا بِالْغَارِ فَرَأَوْا عَلَى بَابِهِ نَسْجَ الْعَنْكَبُوتِ فَقَالُوا لَوْ دَخَلَ هَاهُنَا لَمْ يَكُنْ نَسْجُ الْعَنْكَبُوتِ عَلَى بَابِهِ فَمَكَثَ فِيهِ ثَلَاثَ لَيَال. رَوَاهُ أَحْمد
হাদীসের ব্যাখ্যা:
কোরাইশরা নবী (ﷺ)-এর বিরুদ্ধে তাহাদের دار الندوة “দারুন নদওয়া” পরামর্শ সভায় মিলিত হইয়াছিল। কথিত আছে যে, শয়তানও শায়খে নজদীর আকৃতি ধারণ করিয়া সেখানে উপস্থিত হইয়াছিল এবং সে-ই মুহাম্মদ (ﷺ)-কে কতল করার পরামর্শ দেয়। আল্লাহর বাণীঃ وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ অর্থাৎ, “আর সেই ঘটনাও স্মরণ করুন যখন কাফেররা আপনাকে বন্দী করিয়া রাখিবে অথবা আপনাকে নিহত করিয়া ফেলিবে কিংবা আপনাকে দেশান্তর করিয়া দিবে।” –এর মধ্যে এই ঘটনার প্রতি ইংগিত রহিয়াছে।