১. আবূ নদর (র) হাসান বসরী (র) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বনি সলীতের একজন বৃদ্ধ সাহাবী তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, আমি জাহিলিয়াতের সময় আমাদের বিপদগ্রস্থ হওয়ার একটি বিষয়ে কথা বলার জন্য রাসূল (ﷺ)-এর নিকট গিয়েছিলাম। তিনি তখন দাঁড়ানো ছিলেন এবং সেখানে একটি মজলিস চলছিল। লোকেরা তার চারিদিকে বসা ছিল, আর তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এ সময় তাঁর শরীরে মোটা সুতির একটি লুঙ্গি ছিল, তারপর আমি প্রথম তাকে সে কথা বলতে শুনলাম। তিনি হাতের আঙ্গুলের ইশারায় বলছিলেন, এক মুসলমান অন্য মুসলমানের ভাই, সে না তার উপর জুলুম করতে পারে, আর না তাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারে। তাকওয়া এখানে আছে। তিনি বললেন, অন্তরে।
(মুসলিম শরীফে বলা হয়েছে: তিনি তিনবার তার অন্তরের দিকে ইংগিত করেন।)

২. আবূ যার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) বলেছেন, কোন ভালো কাজ করাকে তুচ্ছ জ্ঞান করো না, এমনকি তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাকেও।

৩. আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন আল্লাহ্ তা'আলা বলেছেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কখনো কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং কোন অন্তঃকরণ কখনো কল্পনাও করেনি।

৪. সালিম ইবন 'আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয়ই মানুষ এমন একশত উটের সমতুল্য, যেখানে আরোহণের যোগ্য একটিও পাওয়া যায় না (অর্থাৎ এমন ব্যক্তি যে উত্তম চরিত্রের দিক থেকে শক্তিশালী)।

৫. ইবন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, দোযখের আগুন প্রত্যেক কোমল মতি, নরম মেযাজ, বিনম্র স্বভাব বিশিষ্ট এবং যে মানুষের সাথে মিলেমিশে থাকে, তার জন্য হারাম।

৬. ইবন মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) বলেন, প্রত্যেক ব্যক্তির হাশর হবে সে ব্যক্তির সাথে, যাকে সে পছন্দ করে।

৭. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, মানুষ (সোনা রূপার মত) খনি। তোমাদের মধ্যে যারা জাহেলী যুগে শ্রেষ্ঠ ছিল, ইসলামী যুগে ও তারাই হবে শ্রেষ্ঠ, যখন তারা দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করবে।

৮. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, যখন তুমি কোন ব্যক্তিকে একথা বলতে শুনবে, 'মানুষ ধ্বংস হোক।' তখন জেনে রেখো, সে সর্বাপেক্ষা অধিক ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত।

৯. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট এসে তার অন্তরের কঠোরতার অভিযোগ করলো। তখন রাসূল (ﷺ) তাকে বললেন, তুমি যদি তোমার অন্তরে কোমলতার প্রত্যাশা কর, তাহলে তুমি মিসকিনের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা কর এবং ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলিয়ে দাও।

১০. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যে দুটি সবচেয়ে বেশী সংখ্যক লোককে দোযখে নিয়ে যাবে, সেদু'টি হলো দুই ফাঁপা স্থান। তারা বললো, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) দুই ফাঁপা স্থান কি? তিনি বললেন, মুখ ও লজ্জাস্থান, তিনি বললেন, তোমরা কি জান, কোন জিনিস লোকদেরকে সর্বাধিক পরিমাণে জান্নাতে প্রবেশ করাবে? তাহলো- তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি ও সচ্চরিত্র।

১১. আবূ সা'ঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: কোন ব্যক্তি উত্তম? তিনি জবাব দেন, সে মু'মিন উত্তম, যে আল্লাহর পথে জান মাল দিয়ে জিহাদ করে। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর কে? তিনি জবাব দিলেন, এমন মুমিন, যে কোন গিরিপথে বসে আল্লাহ্ ইবাদত করে এবং নিজের অনিষ্ট থেকে লোকদেরকে মুক্ত রাখে।

১২. ইবন 'আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, এমন দুটি নিয়ামত আছে, যে ব্যাপারে অধিকাংশ লোক ধোঁকায় পতিত তাহলো সুস্বাস্থ্য ও অবসর সময়।

১৩. 'আবদুল্লাহ ইবন 'উমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার কাঁধ ধরে বললেন, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, যেন তুমি তাকে দেখতে পাও। আর দুনিয়াতে তুমি মুসাফির অথবা পথচারী হয়ে থাকো। অন্য বর্ণনায় আছে, তুমি কবরবাসী হওয়ার জন্য নিজেকে তৈরী রাখ।

১৪. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। একদা নবী করিম (ﷺ) লোকদের একটি মজলিসে দাঁড়িয়ে বলেন, আমি কি তোমাদেরকে ভাল ও মন্দ মানুষের সংবাদ দেব না? লোকেরা চুপ থাকলো, তিনি এ কথাটি তিনবার বললেন। তখন তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, তোমাদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তি, যার কাছ থেকে কল্যাণ আশা করা যায়। আর তোমাদের অধম ঐ ব্যক্তি, যার কাছ থেকে কল্যাণ আশা করা যায় না, এবং যার অকল্যাণ থেকে লোকেরা নিরাপদ নয়।

১৫. আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, অন্তরের পরীক্ষা ছাড়া সহনশীল হওয়া যায় না। অভিজ্ঞতা ছাড়া বিজ্ঞ হওয়া যায় না।

১৬. সামুরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, সম্পদ মানুষকে মানুষের নিকট সম্মানিত করে; আর তাকওয়া মানুষকে আল্লাহর নিকট সম্মানিত করে।

১৭. আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, বনি ইসরাঈল জাতি যদি 'সালওয়া' মজুদ করে না রাখতো, তাহলে গোশতে কখনও পচন ধরতো না এবং বিবি হাওয়া যদি শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে বৃক্ষের ফল না খেত, তাহলে কোন মহিলা স্বামীর অবাধ্য হতো না।

১৮. 'উকবা ইবন 'আমির জুহানী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, দু'টি আত্মমর্যাদাবোধ জনিত ক্রোধ, যার একটিকে আল্লাহ্ তা'আলা পছন্দ করেন এবং অন্যটিকে অপছন্দ করেন। আর দুটি অহংকার, যার একটিকে আল্লাহ্ পছন্দ করেন এবং অন্যটিকে আল্লাহ্ অপছন্দ করেন। সন্দেহস্থলে আত্মমর্যাদাবোধের রাগকে আল্লাহ পছন্দ করেন, এ ছাড়া অন্য যে কোন রাগকে আল্লাহ্ অপছন্দ করেন অহংকার যদি দানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, আল্লাহ্ সেটা পছন্দ করেন, আর যদি তা গর্ব প্রকাশের অহংকারের জন্য হয়, তবে আল্লাহ তা অপছন্দ করেন।

১৯. ইবন 'আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, যুহায়র বলেন; এতে কোন সন্দেহ নেই যে, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, সৎপথে চলা, উত্তম আচরণ, আর মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা হচ্ছে নবুওয়াতের পঁচিশ ভাগের এক ভাগ।

২০. আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, এমন দু' ব্যক্তি জাহান্নামে একত্রিত হবে না যে, একের উপস্থিতি অন্যকে বিব্রত করে। তাদের মধ্যে একজন মুসলমান কাফিরকে হত্যা করেছে, তার মৃত্যুর পর সে সঠিক পথে চলেছে, অথবা আল্লাহর আনুগত্য করেছে। কোন ব্যক্তির পেটে আল্লাহ্ পথে জিহাদের ধুলাবালি ও জাহান্নামের ধোঁয়া একত্রিত হবে না। তেমনি কোন বান্দার অন্তরে ঈমান ও কৃপণতা একত্রিত হবে না।