আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

২. কুরআন-সুন্নাহর অনুসরণ

হাদীস নং: ৭৭
কুরআন-সুন্নাহর অনুসরণ
সুন্নত বর্জন, বিদআত অবলম্বন এবং প্রবৃত্তি পূজার প্রতি ভীতি প্রদর্শন
৭৭. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে নবতর আবিষ্কার করে (যা তাতে নেই), তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।
(ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু দাঊদ (র) নিজ শব্দযোগে বর্ণনা করেন যে, "যে বক্তি আমাদের ধর্মের মধ্যে বাইরের কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটায়, তা প্রত্যাখ্যাত।" ইবন মাজাহও হাদীসটি বর্ণনা। করেছেন। মুসলিমের রিওয়ায়াতে আছে, "যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে যে ব্যাপারে বিধান নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।")
كتاب السنة
التَّرْهِيب من ترك السّنة وارتكاب الْبدع والأهواء
77 - عَن عَائِشَة رَضِي الله عَنْهَا قَالَت قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من أحدث فِي أمرنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رد
رَوَاهُ البُخَارِيّ وَمُسلم وَأَبُو دَاوُد وَلَفظه من صنع أمرا على غير أمرنَا فَهُوَ رد
وَابْن مَاجَه
وَفِي رِوَايَة لمُسلم من عمل عملا لَيْسَ عَلَيْهِ أمرنَا فَهُوَ رد

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে দীনকে ‘আম্‌র' (امر) শব্দে ব্যক্ত করা হয়েছে। ‘আম্‌র' অর্থ বিষয়, পথ ইত্যাদি। দীনে ইসলামকে ‘আম্‌র' বা বিষয় বলে বোঝানো হচ্ছে যে, দীনই আমাদের একমাত্র বিষয়, যার প্রতি আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকি এবং সর্বাবস্থায় তার এমন অনুসরণ করি, যাতে আমাদের কোনও কথা ও কাজ তার বাইরে চলে না যায়।

তারপর এর সাথে ইঙ্গিতসূচক শব্দ ‘এই' (هذا) ব্যবহার করে বোঝানো হচ্ছে যে, দীনে ইসলাম এমন পূর্ণাঙ্গ, এমন পরিচিত ও সুবিদিত যে, তা কোনও জ্ঞানীজন ও বিবেকবানের কাছে অস্পষ্ট ও অজ্ঞাত নেই। যেন তা চাক্ষুষ ও দৃশ্যমান বিষয়ে পরিণত হয়ে গেছে। ফলে 'এই' বলে তার প্রতি ইঙ্গিত করা চলে।

তো নবী কারীম সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনে এমন কোনও বিষয় নতুনভাবে তৈরি করে, যা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কুরআন সুন্নাহ'র দ্বারা প্রমাণিত নয় অর্থাৎ তার পক্ষে কুরআন-হাদীছের প্রকাশ্য বা ইঙ্গিতমূলক কোনও দলীল নেই, তবে তা প্রত্যাখ্যাত, সে বিষয়টি বিশ্বাসগত হোক বা কর্মগত। আল্লাহ তা'আলার কাছে তা তো কবূল হবেই না; বরং ভিত্তিহীন কাজকে দীনের অন্তর্ভুক্ত করার কারণে কঠিন গুনাহ হবে। তাই তা থেকে বেঁচে থাকা অবশ্যকর্তব্য।

কয়েকটি বিশ্বাসগত বিদ'আতঃ- বিশেষ নক্ষত্রের উদয়-অস্তের সাথে ভাগ্যের ভালো মন্দের সম্পর্ক আছে বলে মনে করা; কোনও মাজারে গেলে উদ্দেশ্য পূরণ হয় বলে বিশ্বাস করা; বিশেষ কোনও মাস, বিশেষ কোনও দিন বা বিশেষ সময় সম্পর্কে এমন ধারণা রাখা যে, তখন বিবাহ-শাদী করা, ব্যবসা শুরু করা, গৃহ নির্মাণ করা ইত্যাদি অশুভ; বিশেষ কোনও পাখির ডাককে কুলক্ষণ মনে করা; যাত্রাকালে হাঁচি দিলে সে যাত্রা অশুভ হয় বলে মনে করা ইত্যাদি।

কয়েকটি কর্মগত বিদ'আতঃ- কবর ও মাজারে বাতি জ্বালানো; ওরস করা; কবরে চাদর দেওয়া; কারও মৃত্যুর পর চল্লিশা করা; খৎনার অনুষ্ঠান করা; শবে বরাতে হালুয়া রুটি বিতরণ করা; প্রচলিত মিলাদ-কিয়াম করা; শবে বরাত ও শবে কদরে গোসল করাকে সুন্নত মনে করা; ঈদে মীলাদুন্নবী উদযাপন করা; ফাতেহা দোয়াজদহম পালন করা; বিয়েতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি।

উল্লেখ্য, এ হাদীছটি দীনের প্রধান মূলনীতিসমূহের একটি। ইমাম নববী রহ. বলেন, এ হাদীছটি মুখস্থ রাখা চাই। অন্যায় ও আপত্তিকর কাজের খণ্ডনে এটি একটি মজবুত দলীল। কেউ কেউ বলেন, এটি শরী'আতের দলীলসমূহের অর্ধেক। কেননা কাজ তো দু'রকম— অর্জনীয় ও বর্জনীয়। যা-কিছু বর্জনীয় তার বর্জন সম্পর্কে দলীল হিসেবে এই এক হাদীছই যথেষ্ট।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. এ হাদীছ প্রমাণ করে, ইসলাম এক পরিপূর্ণ দীন। এতে নতুন কিছু যোগ করার সুযোগ নেই।

খ. কারও মনগড়া বিশ্বাস ও কর্ম গ্রহণ করতে নেই। কেননা তা দীনের মধ্যে নতুন সংযোজনের নামান্তর।

গ. সমাজে দীনের নামে কোনওকিছু চালু থাকলেই তা সত্যিকারের দীন হয়ে যায় না। দেখতে হবে কুরআন-সুন্নাহ তা সমর্থন করে কি না। সমর্থন না করলে তা বিদ'আত। সুতরাং অবশ্যই পরিত্যাজ্য। তাতে সমাজ যাই মনে করুক না কেন।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)