আত্-তারগীব ওয়াত্-তারহীব- ইমাম মুনযিরী রহঃ

১৫. অধ্যায়ঃ ক্রয়-বিক্রয়

হাদীস নং: ২৬১৪
অধ্যায়ঃ ক্রয়-বিক্রয়
অধ্যায়ঃ ক্রয়-বিক্রয়
ব্যবসা ইত্যাদির মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের প্রতি উৎসাহ দান প্রসঙ্গে
২৬১৪. হযরত যুবায়র ইবনুল আওয়াম (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি রশি নিয়ে জঙ্গলে গিয়ে কাঠ সংগ্রহ করে নিজের পিঠে বহন করে নিয়ে আসে, তারপর এটি বিক্রি করে এবং আল্লাহ তাকে অপমান থেকে রক্ষা করেন, তবে এটিই তার জন্য মানুষের নিকট হাত পাতার চেয়ে উত্তম হবে, মানুষ তাকে কিছু দিক অথবা দান থেকে বিরত থাকুক।
(হাদীসটি বুখারী বর্ণনা করেছেন।)
كتاب البيوع
كتاب الْبيُوع وَغَيرهَا
التَّرْغِيب فِي الِاكْتِسَاب بِالْبيعِ وَغَيره
2614- وَعَن الزبير بن الْعَوام رَضِي الله عَنهُ قَالَ قَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم لِأَن يَأْخُذ أحدكُم أحبله فَيَأْتِي بحزمة من حطب على ظَهره فيبيعها فيكف الله بهَا وَجهه خير لَهُ من أَن يسْأَل النَّاس أَعْطوهُ أم منعُوا

رَوَاهُ البُخَارِيّ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছটিতে অন্যের কাছে চেয়ে খাওয়ার উপর পরিশ্রম করে খাওয়াকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, তাতে সে পরিশ্রম যত কঠোরই হোক না কেন। বন-জঙ্গল থেকে কাঠ কেটে আনা এমনিই কঠিন কাজ। তা যদি হয় পাহাড়ের উপর, তবে কষ্ট আরও বেড়ে যায়। তার উপর আবার যদি সে কাঠ নিজের পিঠে করে টেনে আনতে হয়, তবে তা কত কষ্টসাধ্য বলাই বাহুল্য। এতদসত্ত্বেও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যের কাছে হাত না পেতে এরূপ কষ্টসাধ্য কাজ করে খেতে বলেছেন।

কাঠ কুড়ানোর কাজটিকে সমাজচোখে নিম্নস্তরের মনে করা হয়। হাদীছটি দ্বারা বোঝা গেল সওয়াল করে খাওয়া তারচে'ও নিম্নস্তরের। বরং পরিশ্রম করে খাওয়াকে মানুষ যে চোখেই দেখুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে তাতে লজ্জার কিছু নেই। চেয়ে খাওয়াই মূলত লজ্জার বিষয়। তাতে ইজ্জত ভূলুণ্ঠিত হয়। হাদীসে আছে- فَيَكُفَّ اللَّهُ بِهَا وَجْهَهُ 'এভাবে আল্লাহ তা'আলা তা দ্বারা তার চেহারাকে (অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়ার বেইজ্জতি থেকে) রক্ষা করবেন'। অর্থাৎ মানুষের কাছে চাওয়ার দ্বারা মান-সম্মান নষ্ট হয়। কামাই-রোজগার করার দ্বারা মান-সম্মান রক্ষা পায়। বোঝা গেল মানুষের মান-সম্মান অনেক মূল্যবান। কিছুতেই তা নষ্ট হতে দিতে নেই। কামাই-রোজগারের কাজ যত কঠিনই হোক না কেন, তা দ্বারা যেহেতু মান-সম্মানের হেফাজত হয়, তাই সওয়াল না করে এতেই লিপ্ত হওয়া উচিত। তাছাড়া কামাই-রোজগার করলে অনেক সময় দান-খয়রাতও করা যায়, যা বড়ই নেকীর কাজ।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. নিতান্ত ঠেকায় না পড়লে ভিক্ষা করা বা অন্যের কাছে হাত পাতা উচিত নয় কিছুতেই।

খ. যত কষ্টসাধ্যই হোক না কেন, কামাই-রোজগার করেই খাওয়া উচিত।

গ. উপার্জনের পন্থাটি যদি বৈধ হয়, তবে সমাজচোখে তা যতই নিম্নস্তরের হোক না কেন, প্রকৃতপক্ষে তাতে লজ্জার কিছু নেই।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান