মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)
বিবাহ অধ্যায়
হাদীস নং: ২৮
বিবাহ অধ্যায়
পরিচ্ছেদ: ধার্মিক এবং সৎচরিত্রের কাছে কন্যা দানে উৎসাহিতকরণ যদিও দরিদ্র ও কুৎসিৎ হয়।
২৮। উমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত উমর (রা)-এর কন্যা হাফসা (রা) বিধবা হলেন। তার স্বামী খুনায়স ইবন হুযায়ফা (রা) বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহনকারী সাহাবী ছিলেন, যিনি মদীনায় ইন্তিকাল করেন। তিনি বলেন, আমি উসমান ইবন আফফান (রা)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর কাছে হাফসা (রা)-এর বিয়ের প্রস্তাব দিলাম। আমি বললাম, আপনি চাইলে আমি আপনার কাছে, হাফসা (রা)-কে বিয়ে দিব। তিনি বললেন, আমি সে বিষয় চিন্তা করব। আমি কিছু দিন অপেক্ষা করলাম। তিনি আমার সাথে সাক্ষাৎ করে বললেন, আমি বর্তমানে বিয়ে করার ইচ্ছা রাখি না। উমর (রা) বলেন, তারপর আমি আবু বকর (রা)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে বললাম, আপনি চাইলে আমি আপনার কাছে হাফসা বিনতে উমর (রা)-কে বিয়ে দিব। তিনি আমার কথার কোন জওয়াব দিলেন না। উসমান (রা) আমার বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করাতে যে কষ্ট পেলাম তার চেয়ে আবূ বকর (রা)-এর চুপ থাকাতে আমি অধিক কষ্ট পেলাম। আমি এভাবে কিছুদিন কাটালাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার কাছে তার বিয়ের পয়গাম দিলেন। আমি তাঁর সাথে হাফসাকে বিয়ে দিলাম। অতঃপর আবু বকর (রা) আমার সাথে সাক্ষাৎ করে বললেন, যখন আপনি আমার কাছে, হাফসা (রা)-এর বিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। আর আমি আপনাকে কোন জওয়াব দেইনি তখন আপনি আমার আচরণে মনে কষ্ট পেয়েছেন। আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, আপনি আমাকে তার বিয়ের প্রস্তাব দিলে আমি আপনাকে কোন জওয়াব দেয়া হতে বিরত থেকেছি কেবল একারণে যে, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে তার উল্লেখ করতে শুনেছি। আর আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর গোপনীয়তা প্রকাশকারী হতে চাইনি। যদি তিনি তাঁকে বিয়ে না করতেন তাহলে আমি তাকে বিয়ে করতাম।
(বুখারী, নাসাঈ)
আর আবু-ইয়ালা আহমদের হাদীসের সমর্থক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন,
قال عمر: فشكوت عثمان إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: تزوج حفصة خير من عثمان، وتزوج عثمان خيرا من حفصة فزوجه النبي صلى الله عليه وسلم ابنته
“উমর (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট উসমান (রা)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হাফসাকে উসমান অপেক্ষা উত্তম ব্যক্তি বিবাহ করবে। আর উসমান হাফসা অপেক্ষা উত্তম (মহিলাকে) বিবাহ করবে। অতঃপর নবী (ﷺ) উসমান (রা)-এর নিকট তাঁর মেয়েকে বিয়ে দিলেন।
(আহমদ ইবন্ আবদুর রহমান আল বান্না বলেছেন, আবু ইয়ালার সনদে অলীদ ইবন মুহাম্মদ মুক্বরী আছেন। তিনি দূর্বল বর্ণনাকারী।)
(বুখারী, নাসাঈ)
আর আবু-ইয়ালা আহমদের হাদীসের সমর্থক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন,
قال عمر: فشكوت عثمان إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: تزوج حفصة خير من عثمان، وتزوج عثمان خيرا من حفصة فزوجه النبي صلى الله عليه وسلم ابنته
“উমর (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট উসমান (রা)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলাম। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হাফসাকে উসমান অপেক্ষা উত্তম ব্যক্তি বিবাহ করবে। আর উসমান হাফসা অপেক্ষা উত্তম (মহিলাকে) বিবাহ করবে। অতঃপর নবী (ﷺ) উসমান (রা)-এর নিকট তাঁর মেয়েকে বিয়ে দিলেন।
(আহমদ ইবন্ আবদুর রহমান আল বান্না বলেছেন, আবু ইয়ালার সনদে অলীদ ইবন মুহাম্মদ মুক্বরী আছেন। তিনি দূর্বল বর্ণনাকারী।)
كتاب النكاح
باب الترغيب فى التزويج من ذى الدين والخلق المرضى وإن كان فقيرا أو دميم الخلقة
عن ابن عمر عن عمر (7) رضى الله عنهما قال تأيمت (8) حفصة بنت عمر من خنيس (9) بن حذافة أو حذيفة (10) شك عبد الرزاق وكان من أصحاب النبى صلى الله عليه وسلم ممن شهد بدرا فتوفى بالمدينة قال فلقيت عثمان بن عفان فعرضت عليه حفصة (11) فقلت ان شئت انكحتك حفصة، قال سأنظر فى ذلك (12) فلبثت ليالى فلقينى فقال ما اريد ان أتزوج يومى هذا، قال عمر فلقيت أبا بكر فقلت ان شئت أنكحتك حفصة ابنة عمر فلم يرجع الى (13) شيئا فكنت أوجد عليه مني على عثمان فلبثت ليالي فخطبها الىَّ رسول الله صلى الله عليه وسلم فانكحتها اياه فلقينى أبو بكر فقال لعلك وجدت علىّ حين عرضت علىّ حفصة فلم أجع اليك شيئا؟ قال قلت نعم، قال فانه لم يمنعنى أن أرجع اليك شيئا حين عرضتها علىّ الا أنى سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يذكرها، ولم أكن لافشى سر رسول الله صلى الله عليه وسلم ولو تركها لنكحتها
হাদীসের ব্যাখ্যা:
হযরত হাফসা রাযি.-এর স্বামী হযরত খুনায়স ইবন হুযাফা রাযি.-এর ইন্তিকাল হয়ে গেলে হযরত উমর রাযি. তাঁর পুনর্বিবাহের জন্য চিন্তা করতে থাকেন। প্রথমে তিনি হযরত উছমান রাযি.-এর কাছে প্রস্তাব রাখেন। তারপর হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. -এর কাছে, যেমনটা এ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। তাঁরা কেউ তাঁর প্রস্তাব গ্রহণ করেননি। এতে তিনি মনে খুব কষ্ট পান। হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-এর প্রতি কষ্টটা একটু বেশিই পান। কারণ হযরত উছমান রাযি. তো তাঁর এখন বিবাহের ইচ্ছা নেই বলে একটা জবাব দিয়েছিলেন। কিন্তু হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি. কোনও উত্তরই দেননি। বাহ্যত তিনি তাঁর প্রস্তাবকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছেন বলে মনে হচ্ছিল। এভাবে একজন অভিজাত ব্যক্তির বিবাহের প্রস্তাবকে উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে মনে হলে অন্তরে অনেক বেশি কষ্ট লাগারই কথা, তাও যদি হয় অন্তরঙ্গ ও বিশেষ আস্থাভাজন ব্যক্তির পক্ষ থেকে। পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই যখন হযরত হাফসা রাযি.-কে বিবাহ করেন, তখন হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. জবাব না দেওয়ার কারণ প্রকাশ করেন। কারণটা হল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই যে হযরত হাফসা রাযি.-কে বিবাহ করবেন, এটা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। যাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বিবাহ করবেন বলে বোঝা যাচ্ছে, তাকে বিবাহ করার প্রস্তাব হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. কীভাবে গ্রহণ করতে পারেন? আবার প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেহেতু এ কথা অন্য কারও সামনে স্পষ্ট করেননি, তাই হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাযি.-ও তা প্রকাশ করা সমীচীন মনে করছেন না। তাই জবাব না দিয়ে তিনি প্রস্তাবটা এড়িয়ে গেছেন। কিন্তু হযরত উমর রাযি.-এর তো এসব কথা জানা নেই। ফলে তাঁরও মনে কষ্ট পাওয়া স্বাভাবিক। প্রিয় সাথী ও বন্ধুর মনের এ কষ্ট দূর করা দরকার। সুতরাং যথাসময়ে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি. তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এবং রহস্য প্রকাশ করে দিয়ে তাঁর মনের কষ্ট দূর করলেন।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অন্যের গোপন কোনও কথা জানা থাকলে তা প্রকাশ করা উচিত নয়।
খ. ইসলামে বিধবা বিবাহ দূষণীয় নয়; বরং এর প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কাজেই কারও মেয়ে বা বোন বিধবা হলে যথাশীঘ্র তার পুনর্বিবাহের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
গ. কারও আচরণ অপ্রীতিকর মনে হলে তাতে মনে কষ্ট পাওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়।
ঘ. কারও আচরণে অন্য কেউ কষ্ট পেলে তার উচিত যথাশীঘ্র সে কষ্ট দূর করে দেওয়া।
ঙ. সঠিক পন্থায় বন্ধুকন্যাকে বিবাহ করলে তাতে দোষের কিছু নেই।
চ. কন্যার পিতা সরাসরি যদি যোগ্য পাত্রের কাছে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তা লজ্জার কোনও বিষয় নয়। হযরত শু'আয়ব আলাইহিস সালাম নিজেই তাঁর কন্যাকে বিবাহ করার জন্য হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সামনে প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। কুরআন মাজীদে আছে-
إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أُنْكِحَكَ إِحْدَى ابْنَتَيَّ هَاتَيْنِ
আমি আমার এই দুই মেয়ের একজনকে তোমার সাথে বিবাহ দিতে চাই। (সূরা কাসাস (২৮), আয়াত ২৭)
ছ. বড় কোনও ব্যক্তি কোনও নারীকে বিবাহের আগ্রহ প্রকাশ করলে ছোট'র পক্ষ থেকে তাকে বিবাহের ইচ্ছা প্রকাশ করা সমীচীন নয়।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অন্যের গোপন কোনও কথা জানা থাকলে তা প্রকাশ করা উচিত নয়।
খ. ইসলামে বিধবা বিবাহ দূষণীয় নয়; বরং এর প্রতি উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কাজেই কারও মেয়ে বা বোন বিধবা হলে যথাশীঘ্র তার পুনর্বিবাহের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
গ. কারও আচরণ অপ্রীতিকর মনে হলে তাতে মনে কষ্ট পাওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়।
ঘ. কারও আচরণে অন্য কেউ কষ্ট পেলে তার উচিত যথাশীঘ্র সে কষ্ট দূর করে দেওয়া।
ঙ. সঠিক পন্থায় বন্ধুকন্যাকে বিবাহ করলে তাতে দোষের কিছু নেই।
চ. কন্যার পিতা সরাসরি যদি যোগ্য পাত্রের কাছে বিবাহের প্রস্তাব দেয়, তা লজ্জার কোনও বিষয় নয়। হযরত শু'আয়ব আলাইহিস সালাম নিজেই তাঁর কন্যাকে বিবাহ করার জন্য হযরত মূসা আলাইহিস সালামের সামনে প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। কুরআন মাজীদে আছে-
إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أُنْكِحَكَ إِحْدَى ابْنَتَيَّ هَاتَيْنِ
আমি আমার এই দুই মেয়ের একজনকে তোমার সাথে বিবাহ দিতে চাই। (সূরা কাসাস (২৮), আয়াত ২৭)
ছ. বড় কোনও ব্যক্তি কোনও নারীকে বিবাহের আগ্রহ প্রকাশ করলে ছোট'র পক্ষ থেকে তাকে বিবাহের ইচ্ছা প্রকাশ করা সমীচীন নয়।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)