মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)
প্রশংসা ও ভর্ৎসনা সম্পর্কে অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৯
প্রশংসা ও ভর্ৎসনা সম্পর্কে অধ্যায়
পরিচ্ছেদ : দুনিয়ার নিন্দা সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে
৩৯. আবু সাঈদ খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, আল্লাহ যমীনের উদ্ভিদ ও দুনিয়ার সৌন্দর্যের যে জিনিস বের করে দিয়েছেন, আমি তোমাদের জন্য সে সব জিনিষের ভয় করি। তখন এক ব্যক্তি বললো, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) মন্দের বিনিময়ে কোন কল্যাণ আসবে কি? এ সময় নবী করিম (ﷺ) চুপ হয়ে গেলেন, এমন কি আমরা দেখলাম যে তখন তাঁর উপর ওহী নাযিল হচ্ছে। বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর শরীরের ঘাম বের হয়ে শ্বাসকষ্টে তিনি মুর্ছা যাওয়ায় উপক্রম হন। তখন তিনি বলেন, প্রশ্নকারী কোথায়? সে বললো, এই যে আমি এখানে। আমিতো কল্যাণ ছাড়া কিছুই চাইনি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, কল্যাণ নেকীর বদলাতেই আসবে, কল্যাণ নেকীর বদলাতেই আসবে, কল্যাণ নেকীর বদলাতেই আসবে। কিন্তু পৃথিবী (ধন-দৌলত) সবুজ-শ্যামল, সুমিষ্ট মধুময় এবং বসন্ত মৌসুমের সবজীর ন্যায়, যে তৃণভোজী (প্রাণী) তা অতিরিক্ত খায়, তাকে তা মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। অথবা মৃত্যুর নিকটবর্তী করে দেয়। কিন্তু যে প্রাণী সবুজ ঘাস খায় এবং তার পেট ভরে গেলে সূর্যের দিকে মুখ করে জাবর কাটে এবং মলমূত্র ত্যাগ করে, তারপর পুনরায় খায় (তার কোন ক্ষতি হয় না); এ পৃথিবীর সম্পদ যে সৎভাবে উপার্জন করে এবং সৎপথে ব্যয় করে, তার জন্য তাতে বরকত দান করা হয়। আর যে ব্যক্তি অবৈধ পথে তা উপার্জন করে, তার সম্পদে বরকত দেওয়া হয় না, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে খায় কিন্তু পরিতৃপ্ত হয় না।
كتاب المدح والذم
باب ما جاء في ذم الدنيا
عن أبي سعيد الخدري (5) قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو على المنبر ان اخوف ما اخاف عليكم ما يخرج الله من نبات الأرض وزهرة الدنيا فقال رجل أي رسول الله أو يأتي (6) الخير بالشر؟ فسكت حتى رأينا أنه ينزل عليه قال وغشيه بهر (7) وعرق فقال أين السائل؟ فقال ها أنا ولم ارد إلا خيرا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الخير لا يأتي إلا بالخير ان الخير لا يأتي إلا بالخير إن الخير لا يأتي إلا بالخير ولكن الدنيا خضرة حلوة وكان ما ينبت الربيع يقتل حبطا (8) أو يلم إلا آكله (9) الخضر فإنها أكلت حتى امتدت خاصرتاها (10) واستقبلت الشمس فثلطت (11) وبالت ثم عادت فأكلت (12) فمن أخذها بحقها بورك له فيه ومن اخذها بغير حقها لم يبارك له وكان كالذي يأكل ولا يشبع قال عبد الله (يعني ابن الامام احمد بن حنبل رحمهما الله) قال أبي قال سفيان وكان الأعمش يسألني عن هذا الحديث
হাদীসের ব্যাখ্যা:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আনীত দীনের রূহানী সবক দিলেন। দিলেন যুহদের শিক্ষা। একজন মুমিনের জন্য দারিদ্র্য নয়; বরং ধনই যে বেশি বিপজ্জনক সে ব্যাপারে তাদের হুঁশিয়ার করলেন। ওহী দ্বারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানো হয়েছিল যে, অচিরেই তাঁর উম্মত দুনিয়ার দিকে দিকে জয়লাভ করবে। তাতে করে বড় বড় রাজা-বাদশার ধনভাণ্ডার তাদের দখলে চলে আসবে আর এভাবে তাদের বর্তমান দারিদ্র্য দূর হয়ে যাবে, তারা প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হয়ে যাবে। তিনি জানতেন মানুষের দীন ও ঈমানের জন্য ধন-সম্পদ যতবেশি ক্ষতিকর, অভাব-অনটন ততটা ক্ষতিকর নয়। অন্যদিকে সন্তানের প্রতি পিতার যে মায়া-মমতা, উম্মতের প্রতি তাঁর মায়া-মমতা ছিল তারচে'ও বেশি। পিতা-মাতা তো সন্তানের দুনিয়ার দিকটাই দেখে। অর্থ-সম্পদ থাকলে দুনিয়ায় আরাম-আয়েশে থাকা যায়। অভাব-অনটনে নানা কষ্ট পেতে হয়। তাই পিতা-মাতা সন্তানের ক্ষেত্রে ভয় করে দারিদ্র্যের, যাতে তাদের মৃত্যুর পর সন্তান অভাব-অনটনে কষ্ট না পায়। কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতের জন্য আখিরাতের মুক্তির চিন্তা করতেন। উম্মত যাতে জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তি পেয়ে চিরসুখের জান্নাত পেয়ে যায়, সেটাই ছিল তাঁর প্রধান লক্ষ্যবস্তু। এর জন্য দরকার দীন ও ঈমানের হেফাজত। বেশি বিত্তবৈভব দীন ও ঈমানের জন্য বিপজ্জনক। কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা'আলা বলেন
إِنَّ الْإِنْسَانَ لَيَطْغَى أَنْ رَآهُ اسْتَغْنَى
বস্তুত মানুষ প্রকাশ্য অবাধ্যতা করছে। কেননা সে নিজেকে ঐশ্বর্যশালী মনে করে।
তো ঐশ্বর্যশালী হয়ে গেলে মানুষ যেহেতু প্রকাশ্যে পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীছে সতর্ক করেছেন যে, আমি তোমাদের জন্য দারিদ্রের নয়; বরং দুনিয়ার প্রাচুর্যেরই ভয় করি। অন্য হাদীছে আছে, তিনি এ ভয়ের কারণ ব্যাখ্যা করে দেন যে
فتنافسوها كما تنافسوها فتهلككم كما أهلكتهم (ফলে তোমরা পরস্পর রেষারেষিতে লিপ্ত হবে, যেমনটা তারা রেষারেষিতে লিপ্ত হয়েছিল। পরিণামে তা তোমাদের ধ্বংস করবে, যেমন তাদের ধ্বংস করেছিল)। এটা পরীক্ষিত বিষয় যে, অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্য দেখা দিলে মানুষ পরস্পরে রেষারেষিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তখন প্রত্যেকের চেষ্টা থাকে কিভাবে অন্যকে ছাড়িয়ে যাবে। কেউ যখন দেখে অন্য কেউ তাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে, তখন তার প্রতি বিদ্বিষ্ট হয়ে পড়ে। সে বিদ্বেষ থেকে সৃষ্টি হয় শত্রুতা। তখন একে অন্যের ক্ষতি করতে চায়। যে-কোনও উপায়ে অন্যকে দাবিয়ে রেখে নিজে উপরে উঠতে চায়। এভাবে পরস্পরে শুরু হয়ে যায় মারামারি হানাহানি। মানুষের ইতিহাসে রক্তপাতের যত ঘটনা ঘটেছে, তার একটা বড় অংশই ঘটেছে অর্থবিত্তের প্রতিযোগিতা থেকে। অতীতে বহু জাতি এই হানাহানিতে ধ্বংস হয়ে গেছে।
এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন
اتقوا الشح، فإن الشح أهلك من كان قبلكم، حملهم على أن سفكوا دماءهم واستحلوا محارمهم
তোমরা লোভ-লালসা হতে বিরত থাক, কেননা লোভ-লালসা তোমাদের পূর্বের লোকদেরকে ধ্বংস করেছে। তা তাদেরকে তাদের রক্তপাত করতে এবং তাদের জন্য নিষিদ্ধ বিষয়সমূহকে হালাল করতে প্ররোচিত করেছিল।
অতীতের উদাহরণ টেনে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ উম্মতকে সতর্ক করেন যে, অতীতে যেমন প্রাচুর্যের রেষারেষিতে দুনিয়ার বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে, আমার ভয় তোমরাও তেমনি রেষারেষিতে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। অর্থাৎ প্রাচুর্য তো দেখা দেবে। কিন্তু সাবধান! তোমরা সে কারণে একে অন্যের প্রতি রেষারেষিতে লিপ্ত হয়ে যেয়ো না। বরং যার যা অর্জিত হয় তাতে সন্তুষ্ট থেকো। দৃষ্টি রেখো আখিরাতের দিকে। সেখানে যাতে মুক্তিলাভ হয়, সর্বদা সেজন্য চিন্তিত ও সচেষ্ট থেকো।
উল্লেখ্য, এ হাদীছটিতে প্রদত্ত ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিণত হয়েছিল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর খুব বেশি দিন যায়নি। হযরত উমর ফারূক রাযি.-এর আমলেই রোম, পারস্য ও মিশরের বিস্তীর্ণ এলাকা এ উম্মতের দখলে চলে আসে। এসব শক্তির ধনভাণ্ডার তাদের করতলগত হয়। হযরত উছমান রাযি.-এর আমলে এ উম্মত অভাবনীয় প্রাচুর্য লাভ করে। এমনও দেখা যায় যে, যাকাতদাতা কাকে যাকাত দেবে এরকম লোক খুঁজে পাচ্ছে না।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সতর্কবাণী এ উম্মতের প্রতিরক্ষার কাজ করেছে। প্রাচুর্যের সয়লাবে সামগ্রিকভাবে এ উম্মত ভেসে যায়নি। একটা অংশ সবসময়ই নির্মোহ চরিত্র ধরে রেখেছে। তারা নিজেরাও প্রাচুর্যের ক্ষতি হতে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছে এবং অন্যদেরকেও বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তবে এ কথাও সত্য যে, অভাব-অনটনকালে উম্মত যে চারিত্রিক ও নৈতিক মানদণ্ড রক্ষায় সক্ষম হয়েছিল, বিত্ত-বৈভব দেখা দেওয়ার পর তাদের বিপুল অংশ আর তা রক্ষা করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে তাদের যে অধঃপতন শুরু হয়, কালক্রমে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে।
আজকের অবস্থা তো ভয়াবহ। কোথায় সাহাবা তাবিঈনের সেই যুহদ ও সেই তাকওয়া-পরহেযগারী। আজ অর্থবিত্তের মোহ, প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা ও সেই প্রতিযোগিতা থেকে জন্ম নেওয়া হিংসা-বিদ্বেষ, মারামারি, হানাহানিতে এ উম্মত বিপর্যস্ত। এর থেকে মুক্তির জন্য উম্মতকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষার দিকে ফিরে আসতে হবে। ঘরে-বাইরে সর্বত্র সে শিক্ষার ব্যাপক চর্চা ছড়িয়ে দিতে হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অন্যের ধন-দৌলত দেখে কিছুতেই তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা ও রেষারেষিতে লিপ্ত হতে নেই। নিজের যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা চাই।
খ. সম্পদের প্রতি আকর্ষণ মানুষের স্বভাবগত বিষয়। এ আকর্ষণ যাতে সীমালঙ্ঘনের কারণ না হয়, তাই অন্তরে সর্বদা আখিরাতের চিন্তা জাগরুক রাখা চাই।
গ. নিজের অধীন ও সম্পৃক্তজনরা যাতে অর্থ-সম্পদের মোহে না পড়ে যায়, মুরুব্বী ও গুরুজনদের কর্তব্য সেদিকে লক্ষ রাখা এবং সে বিষয়ে তাদেরকে সচেতন ও সতর্ক করা।
ঘ. কারও ধন-দৌলত অর্জিত হয়ে গেলে তার উচিত সে ধন-দৌলতের ফিতনা ও তার অনিষ্টকারিতা সম্পর্কে সাবধান থাকা, যাতে তা তার অন্তরে বিদ্বেষ ও অহমিকা সৃষ্টি করতে না পারে।
إِنَّ الْإِنْسَانَ لَيَطْغَى أَنْ رَآهُ اسْتَغْنَى
বস্তুত মানুষ প্রকাশ্য অবাধ্যতা করছে। কেননা সে নিজেকে ঐশ্বর্যশালী মনে করে।
তো ঐশ্বর্যশালী হয়ে গেলে মানুষ যেহেতু প্রকাশ্যে পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীছে সতর্ক করেছেন যে, আমি তোমাদের জন্য দারিদ্রের নয়; বরং দুনিয়ার প্রাচুর্যেরই ভয় করি। অন্য হাদীছে আছে, তিনি এ ভয়ের কারণ ব্যাখ্যা করে দেন যে
فتنافسوها كما تنافسوها فتهلككم كما أهلكتهم (ফলে তোমরা পরস্পর রেষারেষিতে লিপ্ত হবে, যেমনটা তারা রেষারেষিতে লিপ্ত হয়েছিল। পরিণামে তা তোমাদের ধ্বংস করবে, যেমন তাদের ধ্বংস করেছিল)। এটা পরীক্ষিত বিষয় যে, অর্থ-সম্পদের প্রাচুর্য দেখা দিলে মানুষ পরস্পরে রেষারেষিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তখন প্রত্যেকের চেষ্টা থাকে কিভাবে অন্যকে ছাড়িয়ে যাবে। কেউ যখন দেখে অন্য কেউ তাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে, তখন তার প্রতি বিদ্বিষ্ট হয়ে পড়ে। সে বিদ্বেষ থেকে সৃষ্টি হয় শত্রুতা। তখন একে অন্যের ক্ষতি করতে চায়। যে-কোনও উপায়ে অন্যকে দাবিয়ে রেখে নিজে উপরে উঠতে চায়। এভাবে পরস্পরে শুরু হয়ে যায় মারামারি হানাহানি। মানুষের ইতিহাসে রক্তপাতের যত ঘটনা ঘটেছে, তার একটা বড় অংশই ঘটেছে অর্থবিত্তের প্রতিযোগিতা থেকে। অতীতে বহু জাতি এই হানাহানিতে ধ্বংস হয়ে গেছে।
এক হাদীছে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন
اتقوا الشح، فإن الشح أهلك من كان قبلكم، حملهم على أن سفكوا دماءهم واستحلوا محارمهم
তোমরা লোভ-লালসা হতে বিরত থাক, কেননা লোভ-লালসা তোমাদের পূর্বের লোকদেরকে ধ্বংস করেছে। তা তাদেরকে তাদের রক্তপাত করতে এবং তাদের জন্য নিষিদ্ধ বিষয়সমূহকে হালাল করতে প্ররোচিত করেছিল।
অতীতের উদাহরণ টেনে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ উম্মতকে সতর্ক করেন যে, অতীতে যেমন প্রাচুর্যের রেষারেষিতে দুনিয়ার বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে, আমার ভয় তোমরাও তেমনি রেষারেষিতে পড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। অর্থাৎ প্রাচুর্য তো দেখা দেবে। কিন্তু সাবধান! তোমরা সে কারণে একে অন্যের প্রতি রেষারেষিতে লিপ্ত হয়ে যেয়ো না। বরং যার যা অর্জিত হয় তাতে সন্তুষ্ট থেকো। দৃষ্টি রেখো আখিরাতের দিকে। সেখানে যাতে মুক্তিলাভ হয়, সর্বদা সেজন্য চিন্তিত ও সচেষ্ট থেকো।
উল্লেখ্য, এ হাদীছটিতে প্রদত্ত ভবিষ্যদ্বাণী সত্যে পরিণত হয়েছিল। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর খুব বেশি দিন যায়নি। হযরত উমর ফারূক রাযি.-এর আমলেই রোম, পারস্য ও মিশরের বিস্তীর্ণ এলাকা এ উম্মতের দখলে চলে আসে। এসব শক্তির ধনভাণ্ডার তাদের করতলগত হয়। হযরত উছমান রাযি.-এর আমলে এ উম্মত অভাবনীয় প্রাচুর্য লাভ করে। এমনও দেখা যায় যে, যাকাতদাতা কাকে যাকাত দেবে এরকম লোক খুঁজে পাচ্ছে না।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সতর্কবাণী এ উম্মতের প্রতিরক্ষার কাজ করেছে। প্রাচুর্যের সয়লাবে সামগ্রিকভাবে এ উম্মত ভেসে যায়নি। একটা অংশ সবসময়ই নির্মোহ চরিত্র ধরে রেখেছে। তারা নিজেরাও প্রাচুর্যের ক্ষতি হতে আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছে এবং অন্যদেরকেও বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তবে এ কথাও সত্য যে, অভাব-অনটনকালে উম্মত যে চারিত্রিক ও নৈতিক মানদণ্ড রক্ষায় সক্ষম হয়েছিল, বিত্ত-বৈভব দেখা দেওয়ার পর তাদের বিপুল অংশ আর তা রক্ষা করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে তাদের যে অধঃপতন শুরু হয়, কালক্রমে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে।
আজকের অবস্থা তো ভয়াবহ। কোথায় সাহাবা তাবিঈনের সেই যুহদ ও সেই তাকওয়া-পরহেযগারী। আজ অর্থবিত্তের মোহ, প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা ও সেই প্রতিযোগিতা থেকে জন্ম নেওয়া হিংসা-বিদ্বেষ, মারামারি, হানাহানিতে এ উম্মত বিপর্যস্ত। এর থেকে মুক্তির জন্য উম্মতকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষার দিকে ফিরে আসতে হবে। ঘরে-বাইরে সর্বত্র সে শিক্ষার ব্যাপক চর্চা ছড়িয়ে দিতে হবে।
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. অন্যের ধন-দৌলত দেখে কিছুতেই তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা ও রেষারেষিতে লিপ্ত হতে নেই। নিজের যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা চাই।
খ. সম্পদের প্রতি আকর্ষণ মানুষের স্বভাবগত বিষয়। এ আকর্ষণ যাতে সীমালঙ্ঘনের কারণ না হয়, তাই অন্তরে সর্বদা আখিরাতের চিন্তা জাগরুক রাখা চাই।
গ. নিজের অধীন ও সম্পৃক্তজনরা যাতে অর্থ-সম্পদের মোহে না পড়ে যায়, মুরুব্বী ও গুরুজনদের কর্তব্য সেদিকে লক্ষ রাখা এবং সে বিষয়ে তাদেরকে সচেতন ও সতর্ক করা।
ঘ. কারও ধন-দৌলত অর্জিত হয়ে গেলে তার উচিত সে ধন-দৌলতের ফিতনা ও তার অনিষ্টকারিতা সম্পর্কে সাবধান থাকা, যাতে তা তার অন্তরে বিদ্বেষ ও অহমিকা সৃষ্টি করতে না পারে।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)