মুসনাদে আহমদ- ইমাম আহমদ রহঃ (আল-ফাতহুর রব্বানী)

পোশাক-পরিচ্ছেদ ও সাজ-সজ্জা

হাদীস নং: ৫৭
পোশাক-পরিচ্ছেদ ও সাজ-সজ্জা
সোনা, রূপা, রেশম এবং বৈধ ও অবৈধ ব্যবহার্য সামগ্রী প্রসঙ্গ
নিষিদ্ধ বস্তুসমূহ সংক্রান্ত বিস্তারিত হাদীস।
৫৭। হুযায়ফা (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) মিহি রেশম ও মোটা রেশমের কাপড় পরতে এবং স্বর্ণ ও রূপার পাত্র ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন যে, এসব দুনিয়াতে তাদের (কাফিরদের) জন্য আর পরকালে এগুলো আমাদের জন্য।
(বুখারী, মুসলিম ও ইমামচতুষ্ঠয়)
كتاب اللباس والزنية
(أبواب ما جاء في الذهب والفضة والحرير وما يجوز استعماله منهما وما لا يجوز) (باب أحاديث جامعة لأمور من ذلك منهي عنها)
57- عن حذيفة قال نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن لبس الحرير والديباج وآنية الذهب والفضة، وقال هو لهم في الدنيا ولنا في الآخرة

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ديباج (দীবাজ) অর্থ রেশমী কাপড়। حرير (হারীর) অর্থ রেশম। রেশমী কাপড়কেও কখনও কখনও হারীর বলা হয়। তুলনামূলকভাবে দীবাজ অপেক্ষা হারীর বেশি মোলায়েম হয়ে থাকে।

দুনিয়া মুমিনদের বিলাসিতার জায়গা নয়। এটা ক্ষণস্থায়ী নিবাস। আখিরাতের কর্মক্ষেত্র। জান্নাত মুমিনদের আসল ঠিকানা। সে ঠিকানায় পৌঁছার জন্য যথাযথ কাজ করাই ইহজীবনের উদ্দেশ্য। সে কাজ হল ইবাদত-বন্দেগী করা ও আল্লাহ তা'আলার হুকুম মোতাবেক জীবনযাপন করা। এককথায় শরী'আত মোতাবেক চলা। এর বিপরীত আরেক রকম কাজও আছে। তা হল মনের ইচ্ছামতো চলা। মন চায় আনন্দ-ফুর্তি করতে ও ভোগ-বিলাসিতায় ডুবে থাকতে। মনের সে চাহিদা পূরণ করার পরিণাম হল জাহান্নামে যাওয়া। কেননা সে চাহিদা পূরণ করতে গেলে হালাল-হারাম, বৈধ-অবৈধ ও জায়েয-নাজায়েযকে বিবেচনায় রাখা যায় না। বরং অবৈধ পন্থায়ই তা পূরণ করা সম্ভব। বৈধ পন্থায় চলতে গেলে মনের চাহিদাকে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অন্তরে সর্বদা আল্লাহর ভয় জাগ্রত রাখতে হবে। ভোগ-বিলাসিতা পরিহার করে তথা মনের চাহিদা পূরণ হতে বিরত থেকে যে কাজ দ্বারা জান্নাতের ঠিকানায় পৌঁছা যাবে তাতেই মশগুল থাকতে হবে। প্রকৃত মুমিনগণ তাই করে থাকে। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন-
إِنَّ الَّذِينَ هُمْ مِنْ خَشْيَةِ رَبِّهِمْ مُشْفِقُونَ (57) وَالَّذِينَ هُمْ بِآيَاتِ رَبِّهِمْ يُؤْمِنُونَ (58) وَالَّذِينَ هُمْ بِرَبِّهِمْ لَا يُشْرِكُونَ (59)وَالَّذِينَ يُؤْتُونَ مَا آتَوْا وَقُلُوبُهُمْ وَجِلَةٌ أَنَّهُمْ إِلَى رَبِّهِمْ رَاجِعُونَ (60) أُولَئِكَ يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَهُمْ لَهَا سَابِقُونَ (61)
নিশ্চয়ই যারা নিজ প্রতিপালকের ভয়ে ভীত এবং যারা নিজ প্রতিপালকের আয়াতসমূহে ঈমান রাখে এবং যারা নিজ প্রতিপালকের সাথে কাউকে শরীক করে না এবং যারা যে-কোনও কাজই করে, তা করার সময় তাদের অন্তর এই ভয়ে ভীত থাকে যে, তাদেরকে নিজ প্রতিপালকের কাছে ফিরে যেতে হবে, তারাই কল্যাণার্জনে তৎপরতা প্রদর্শন করছে এবং তারাই সেদিকে অগ্রসর হচ্ছে দ্রুতগতিতে। (সূরা মু'মিনূন, আয়াত ৫৭-৬১)

পক্ষান্তরে যারা দুনিয়ার জীবনকেই আসল জীবন বানিয়ে নিয়েছে, তারা ভোগ-বিলাসিতায় মেতে থাকে। তাদের সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-
بَلْ قُلُوبُهُمْ فِي غَمْرَةٍ مِنْ هَذَا وَلَهُمْ أَعْمَالٌ مِنْ دُونِ ذَلِكَ هُمْ لَهَا عَامِلُونَ (63) حَتَّى إِذَا أَخَذْنَا مُتْرَفِيهِمْ بِالْعَذَابِ إِذَا هُمْ يَجْأَرُونَ (64)
‘কিন্তু তাদের অন্তর (আখিরাত সম্পর্কিত) এ বিষয়ে উদাসীনতায় নিমজ্জিত। এছাড়া তাদের আরও বহু দুষ্কর্ম আছে, যা তারা করে থাকে। অবশেষে আমি যখন তাদের ভোগ-বিলাসিতায় নিমজ্জিত ব্যক্তিদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করব, তখন তারা আর্তনাদ করে উঠবে।' (সূরা মু'মিনূন, আয়াত ৬৩, ৬৪)

অপর এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
وَيَوْمَ يُعْرَضُ الَّذِينَ كَفَرُوا عَلَى النَّارِ أَذْهَبْتُمْ طَيِّبَاتِكُمْ فِي حَيَاتِكُمُ الدُّنْيَا وَاسْتَمْتَعْتُمْ بِهَا فَالْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُونِ بِمَا كُنْتُمْ تَسْتَكْبِرُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَبِمَا كُنْتُمْ تَفْسُقُونَ (20)
এবং সেই দিনকে স্মরণ রেখো, যেদিন কাফেরদেরকে আগুনের সামনে পেশ করা হবে (এবং বলা হবে) তোমরা নিজেদের অংশের উৎকৃষ্ট জিনিসসমূহ পার্থিব জীবনে (ভোগ করে) নিঃশেষ করে ফেলেছ এবং তা বেজায় ভোগ করেছ। সুতরাং আজ বিনিময়রূপে তোমরা পাবে লাঞ্ছনাকর শাস্তি, যেহেতু তোমরা পৃথিবীতে নাহক গৌরব করতে এবং যেহেতু তোমরা সীমালঙ্ঘন করতে। (সূরা আহকাফ, আয়াত ২০)

সারকথা জান্নাতের প্রত্যাশা যারা করে, বিলাসিতাপূর্ণ জীবন তাদের জন্য নয়। কুরআন ও হাদীছ তাদেরকে বিলাসিতা পরিহার করে সাদামাটা জীবনযাপনে উৎসাহ যোগায়। তারই ধারাবাহিকতায় এ হাদীছটিতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোনা-রুপার পাত্রে পানাহার করতে নিষেধ করেছেন। আরও নিষেধ করেছেন সর্বপ্রকার রেশমী কাপড় ব্যবহার করতে। কেননা এগুলো নিছক বিলাসিতা, যা মুমিনদের জন্য শোভনীয় নয়।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. মুমিনদের জন্য বিলাসিতাপূর্ণ জীবনযাপন করা শোভনীয় নয়।

খ. তাদেরকে অবশ্যই সোনা-রুপার পাত্র ব্যবহার করা হতে বিরত থাকতে হবে।

গ. রেশমী কাপড় পরিহার করাও মুমিনদের জন্য একান্ত জরুরি।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান