আল জামিউল কাবীর- ইমাম তিরমিযী রহঃ

৩৭. কিয়ামত-মৃত্যুপরবর্তী জগতের বিবরণ

হাদীস নং: ২৪৫১
আন্তর্জাতিক নং: ২৪৫১
কিয়ামত-মৃত্যুপরবর্তী জগতের বিবরণ
শিরোনামবিহীন পরিচ্ছেদ।
২৪৫৪. আবু বকর ইবনে আবুন নযর (রাহঃ) ..... নবী (ﷺ) এর জনৈক সাহাবী আতিয়্যা সা‘দী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ কোন বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত মুত্তাকীদের স্তরে পৌছাতে পারবে না যতক্ষণ না সে ক্ষতিজনক কাজে লিপ্ত হওয়ার ভয়ে ক্ষতিজনক কাজকেও পরিত্যাগ না করে।
أبواب صفة القيامة والرقائق والورع عن رسول الله صلى الله عليه وسلم
بَابٌ
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي النَّضْرِ، حَدَّثَنَا أَبُو النَّضْرِ، حَدَّثَنَا أَبُو عَقِيلٍ الثَّقَفِيُّ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَقِيلٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يَزِيدَ، حَدَّثَنِي رَبِيعَةُ بْنُ يَزِيدَ، وَعَطِيَّةُ بْنُ قَيْسٍ، عَنْ عَطِيَّةَ السَّعْدِيِّ، وَكَانَ، مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ يَبْلُغُ الْعَبْدُ أَنْ يَكُونَ مِنَ الْمُتَّقِينَ حَتَّى يَدَعَ مَا لاَ بَأْسَ بِهِ حَذَرًا لِمَا بِهِ الْبَأْسُ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ .

হাদীসের ব্যাখ্যা:

এ হাদীছে যে কথা বলা হয়েছে, তার সম্পর্ক উচ্চস্তরের তাকওয়ার সঙ্গে। উলামায়ে কেরামের মতে তাকওয়া তিন স্তরের। সাধারণ স্তরের তাকওয়া হল শিরক ও কুফর পরিহার করে জাহান্নামের স্থায়ী শাস্তি হতে নিজেকে রক্ষা করা। মধ্যম স্তরের তাকওয়া যাবতীয় কবীরা গুনাহ পরিহার করা এবং লক্ষ রাখা যাতে সগীরা গুনাহও বারবার না হয়ে যায়। শরী'আতের পরিভাষায় সাধারণত তাকওয়া বলতে এই মধ্যম স্তরকেই বোঝায়। সর্বোচ্চ স্তরের তাকওয়া হল এমন যাবতীয় কাজ পরিহার করা, যদ্দরুন বান্দার অন্তর গায়রুল্লাহর দিকে ঝুঁকে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে বান্দার কাছে তাকওয়ার এই সর্বোচ্চ স্তরই কাম্য। সুতরাং কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ
‘হে মুমিনগণ! আল্লাহভীতি অবলম্বন করো- সত্যিকারের আল্লাহভীতি।’(সূরা আলে-ইমরান (৩), আয়াত ১০২)
অর্থাৎ সর্বোচ্চ স্তরের তাকওয়া অবলম্বন করো। এ পর্যায়ের মুত্তাকী হওয়ার জন্য কী করণীয়, সে সম্পর্কে হাদীছটিতে বলা হয়েছে- حَتَّى يَدَعَ مَا لَا بَأْسَ بِهِ، حَذَرًا مِمَّا بِهِ بَأْسٌ (যতক্ষণ না সে দূষণীয় জিনিস থেকে বাঁচার জন্য নির্দোষ জিনিস ছেড়ে দেয়)। কেননা কোনও কোনও নির্দোষ জিনিস এমন আছে, যাতে লিপ্ত হলে দিল-মন ক্ষণিকের জন্য হলেও আল্লাহর দিক থেকে সরে দুনিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে। আর এটা বারবার হতে থাকলে এক পর্যায়ে অন্তর আল্লাহ হতে পুরোপুরি গাফেল হয়ে যায় এবং দুনিয়াদারীতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। এজন্যই উলামায়ে কেরাম বলেন, দুনিয়াদারদের বেশভূষার দিকে নজর দিয়ো না। তাতে মনের ভেতর তার আগ্রহ জন্মানোর ভয় আছে। কারও কারও উক্তি বর্ণিত আছে যে, আমরা হালাল বস্তুসামগ্রীর ১০ ভাগের ৯ ভাগ এই ভয়ে পরিহার করতাম যে, না জানি পরিণামে হারামে লিপ্ত হয়ে পড়ি। মোটকথা প্রকৃত মুত্তাকী হওয়ার জন্য জরুরি হল হালাল ও বৈধ বিষয়াবলিও যতটুকু না হলেই নয় কেবল ততটুকুই ভোগ করা, তার বেশিতে লিপ্ত না হওয়া।

ইমাম গাযালী রহ. বলেন, বেশি বেশি হালাল বস্তুতে লিপ্ত হলে তা হারামের দিকে টেনে নেয় এবং সুস্পষ্ট পাপাচারে লিপ্ত করে দেয়। কেননা মানুষের নফস বড় লোভী ও অবাধ্য। মানবমনে সীমালঙ্ঘন করার প্রবণতা বিদ্যমান। কাজেই যে ব্যক্তি তার দীন ও ঈমান নিরাপদ রাখতে চায়, তার কর্তব্য বিপদের ঝুঁকি না নেওয়া আর সে লক্ষ্যে হালাল ও বৈধ কাজে অতিরিক্ত না জড়ানো, পাছে তা তাকে সুস্পষ্ট হারামের দিকে টেনে নেয়। সুতরাং সর্বোচ্চ পর্যায়ের তাকওয়া-পরহেযগারী এটাই যে, মানুষ কেবল এতটুকুতেই ক্ষান্ত থাকবে, যার মধ্যে দীনের কোনও ক্ষতির আশঙ্কা নেই।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. ইসলাম চায় তার অনুসারীগণ সর্বোচ্চ স্তরের মুত্তাকী হোক।

খ. মুত্তাকী ব্যক্তিকে অবশ্যই হারাম বস্তু পরিহার করতে হবে।

গ. আমাদেরকে হালাল বস্তুরাজির বাড়তি ভোগ থেকে বিরত থাকতে হবে। তবেই আমরা ভালো মুত্তাকী হতে পারব।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান