মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

১২- ক্রয় - বিক্রয়ের অধ্যায়

হাদীস নং: ৩০০৮
- ক্রয় - বিক্রয়ের অধ্যায়
১৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - দানসমূহ
৩০০৮। হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, হযরত ওমর (রাঃ) খায়বরে (গনীমতের) এক খণ্ড ভূমি লাভ করিলেন। অতঃপর তিনি নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যাইয়া বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্। আমি খায়বরে এক খণ্ড ভূমি লাভ করিয়াছি, যাহা অপেক্ষা উত্তম সম্পদ আমি আর কখনও লাভ করি নাই। এখন হুযুর আমাকে ইহাতে কি করিতে বলেন? তখন হুযূর বলিলেন: আপনি যদি চাহেন ইহার মূল রক্ষা করিয়া লভ্য দান করিতে পারেন। সুতরাং ওমর (রাঃ) উহা এইরূপে দান করিলেন যে, উহার মূল বিক্রয় করা যাইবে না, হেবা করা যাইবে না এবং উহাতে উত্তরাধিকার প্রবর্তিত হইবে না। উহা দান করা হইবে অভাবীদের জন্য, আত্মীয়দের জন্য, দাস মুক্তকরণে, আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ, জেহাদে), মুসাফিরদের জন্য ও মেহমানদের জন্য। যে উহার মুতাওয়াল্লী হইবে সে জমা না করিয়া উহা হইতে ন্যায়সঙ্গতভাবে খাইতে বা (আপন পরিবারকে খাওয়াইতে পারিবে। ইহাতে আপত্তি নাই। মোত্তাঃ
كتاب البيوع
بَابُ الْعَطَايَا: الْفَصْل الأول
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا أَنَّ عُمَرَ أَصَابَ أَرْضًا بِخَيْبَرَ فَأَتَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي أَصَبْتُ أَرْضًا بِخَيْبَرَ لَمْ أُصِبْ مَالًا قَطُّ أَنْفَسَ عِنْدِي مِنْهُ فَمَا تَأْمُرُنِي بِهِ؟ قَالَ: «إِنْ شِئْتَ حَبَسْتَ أَصْلَهَا وَتَصَدَّقْتَ بِهَا» . فَتَصَدَّقَ بِهَا عُمَرُ: إِنَّهُ لَا يُبَاعُ أَصْلُهَا وَلَا يُوهب وَلَا يُورث وَتصدق بهَا فِي الْفُقَرَاءِ وَفِي الْقُرْبَى وَفِي الرِّقَابِ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَالضَّيْفِ لَا جُنَاحَ عَلَى مَنْ وَلِيَهَا أَنْ يَأْكُلَ مِنْهَا بِالْمَعْرُوفِ أَوْ يُطْعِمَ غَيْرَ مُتَمَوِّلٍ قَالَ ابْنُ سِيرِينَ: غير متأثل مَالا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ওয়াকফ ও দুই বিশেষ দান

(১) দাতা বলিল, তোমার জীবনকালের জন্য ইহা আমি তোমাকে দান করিলাম। ইহাকে 'ওমরা' বা জীবনস্বত্ব দান বা ভোগোত্তর দান বলে। (২) দাতা বলিল, আমি তোমাকে ইহা দান করিলাম। যদি আমি তোমার আগে মরিয়া যাই, তবে ইহা তোমার হইবে আর যদি তুমি আমার আগে মরিয়া যাও তবে ইহা আমার হইবে। ইহাকে 'রুকবা' দান বলে। এই দুই রকমের দান জাহেলিয়াত যুগের আরবে প্রচলিত ছিল। নবী করীম (ﷺ) ইহা নিষেধ করিয়া দিয়াছেন এবং বলিয়াছেন, ফেরতের শর্তে দান করিলে উহা যাহাকে দান করা হইয়াছে তাহারই হইয়া যাইবে এবং তাহার মৃত্যুর পর তাহার ওয়ারিসগণই পাইবে। দান ফেরত লওয়া কুত্তার বমি খাওয়ার সমতুল্য।
মূল শীর্ষে ‘ওয়াকফ' শব্দ নাই, কিন্তু অধ্যায়ের প্রথম হাদীসটিই 'ওয়াকফ' সম্পৰ্কীয়। মূল জিনিসকে বাকী রাখিয়া উহার আয় বা লভ্য (উপকার) জনকল্যাণে ব্যয় করার ব্যবস্থাকে ওয়াকফ বলে। ওয়াকফ সমস্ত মুসলিম আইনবিদগণের মতেই জায়েয। ওয়াকফ সম্পত্তি ওয়াকফকারীর শর্ত অনুযায়ীই পরিচালিত হইবে। সম্পত্তির মূল্য নির্ধারণ না করিয়াও উহা ওয়াকফ করা যায় এবং নিজের আত্মীয়-আওলাদের জন্যও ওয়াকফ করা যায়। এসম্পর্কীয় বিস্তারিত বিবরণ ফেকাহর কিতাবে দ্রষ্টব্য। —অনুবাদক

শরীআতের ভাষায় ইহাকে ওয়াকফ বলে। ওয়াকফের সময় মুতাওয়াল্লী বা পরিচালকের নাম উল্লেখ না করিলেও ওয়াক্ফ জায়েয হইয়া যায়। হযরত ওমর (রাঃ) প্রথমে পরিচালকের নাম উল্লেখ করেন নাই। ওয়াকফকারী নিজেও পরিচালক হইতে পারেন এবং আপন পারিশ্রমিক গ্রহণ করিতে পারেন। ওয়াকফ সম্পত্তিতে বেচাকিনা বা দান-হেবা ও মীরাস জায়েয নহে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান