মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
১৪- বিবাহ-শাদী সম্পর্কিত অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৩০৭
- বিবাহ-শাদী সম্পর্কিত অধ্যায়
১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - লিআন
৩৩০৭। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, একদিন হেলাল ইবনে উমাইয়া নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসিয়া তাহার স্ত্রীর প্রতি অপবাদ দিল যে, শরীক ইবনে সামার সাথে সে কু-কাজ করিয়াছে। নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন: প্রমাণ দাও, না হয় তোমার পিঠে কোড়া। তখন সে বলিল, ইয়া রাসুলাল্লাহ্। যখন কোন ব্যক্তি তাহার স্ত্রীর উপর পুরুষ চড়িয়া আছে দেখে, তখন কি সে সাক্ষী তালাশ করিতে চায়? কিন্তু নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারবার বলিতে রহিলেন, সেসব শুনিব না, (এত বড় গুরুতর দোষারোপ !) হয় প্রমাণ, না হয় তোমার পিঠে কোড়া। তখন হেলাল বলিল, যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠাইয়াছেন তাহার কসম করিয়া বলিতেছি, আমি নিশ্চয় সত্যবাদী। নিশ্চয় আল্লাহ্ কোরআন নাযিল করিয়া আমার পিঠকে কোড়া হইতে রক্ষা করিবেন। রাবী বলেন, তৎক্ষণাৎ হযরত জিবরাঈল (আঃ) আসিলেন এবং হুযুরের উপর কোরআন নাযিল করিলেন, "যাহারা নিজেদের স্ত্রীদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়, আর তাহাদের নিকট নিজেরা ব্যতীত কোন সাক্ষী না থাকে" এখান হইতে পাঠ করিতে করিতে তিনি—“যদি সে সত্যবাদী হয়" পর্যন্ত পাঠ করিলেন। অতঃপর হেলাল আসিয়া 'লেআন' করিল আর নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিতে রহিলেন, আল্লাহ্ অবগত আছেন, নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে একজন মিথ্যুক। সুতরাং তোমাদের কেহ আছ কি যে তওবা করিবে? রাবী বলেন, অতঃপর নারী দাড়াইল এবং লেআন করিল। কিন্তু সে যখন পঞ্চম বাক্যের নিকট পৌঁছিল, লোকেরা তাহাকে নামাইয়া দিল এবং বলিল, দেখ, উহা আল্লাহর গযব নির্ধারণ করিবে। ইবনে আব্বাস বলেন, তখন সে নামিয়া গেল এবং চুপ রহিল, যাহাতে আমরা ধারণা করিলাম, সে সরিয়া যাইবে। কিন্তু অতঃপর সে এই বলিয়া লেআন পূর্ণ করিল যে, আমি চিরকালের জন্য আমার গোষ্ঠীকে লজ্জিত করিতে পারি না। তখন নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, দেখ, যদি সে সুরমা রংের চোখ, বড় বড় নিতম্ব ও মোটা মোটা নালাওয়ালা সন্তান প্রসব করে, তবে সে সন্তান শরীক ইবনে সামার। পরে দেখা গেল, সে এইরূপ সন্তানই প্রসব করিয়াছে। এসময় নবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, যদি আল্লাহর কিতাবের নির্দেশ কার্যকরী করা না হইত, তবে আমি তাহাকে দেখাইতাম (অর্থাৎ, সঙ্গেসার করিতাম ) । —বোখারী
كتاب النكاح
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ هِلَالَ بْنَ أُمَيَّةَ قَذَفَ امْرَأَتَهُ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِشَرِيكِ بْنِ سَحْمَاءَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْبَيِّنَةَ أَوْ حَدًّا فِي ظَهْرِكَ» فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِذَا رَأَى أَحَدُنَا عَلَى امْرَأَتِهِ رَجُلًا يَنْطَلِقُ يَلْتَمِسُ الْبَيِّنَةَ؟ فَجَعَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «الْبَيِّنَةَ وَإِلَّا حَدٌّ فِي ظَهْرِكَ» فَقَالَ هِلَالٌ: وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ إِنِّي لَصَادِقٌ فَلْيُنْزِلَنَّ اللَّهُ مَا يُبَرِّئُ ظَهْرِي مِنَ الْحَدِّ فَنَزَلَ جِبْرِيلُ وَأنزل عَلَيْهِ: (وَالَّذين يرْمونَ أَزوَاجهم)
فَقَرَأَ حَتَّى بَلَغَ (إِنْ كَانَ مِنَ الصَّادِقِينَ)
فَجَاءَ هِلَالٌ فَشَهِدَ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ أَنَّ أَحَدَكُمَا كَاذِبٌ فَهَلْ مِنْكُمَا تَائِبٌ؟» ثُمَّ قَامَتْ فَشَهِدَتْ فَلَمَّا كَانَتْ عِنْدَ الْخَامِسَةِ وَقَفُوهَا وَقَالُوا: إِنَّهَا مُوجِبَةٌ فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: فَتَلَكَّأَتْ وَنَكَصَتْ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهَا تَرْجِعُ ثُمَّ قَالَتْ: لَا أَفْضَحُ قَوْمِي سَائِرَ الْيَوْمِ فَمَضَتْ وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَبْصِرُوهَا فَإِنْ جَاءَتْ بِهِ أَكْحَلَ الْعَيْنَيْنِ سَابِغَ الْأَلْيَتَيْنِ خَدَلَّجَ السَّاقِينَ فَهُوَ لِشَرِيكِ بْنِ سَحْمَاءَ» فَجَاءَتْ بِهِ كَذَلِكَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْلَا مَا مَضَى مِنْ كِتَابِ اللَّهِ لَكَانَ لِي وَلَهَا شَأْن» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
فَقَرَأَ حَتَّى بَلَغَ (إِنْ كَانَ مِنَ الصَّادِقِينَ)
فَجَاءَ هِلَالٌ فَشَهِدَ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ أَنَّ أَحَدَكُمَا كَاذِبٌ فَهَلْ مِنْكُمَا تَائِبٌ؟» ثُمَّ قَامَتْ فَشَهِدَتْ فَلَمَّا كَانَتْ عِنْدَ الْخَامِسَةِ وَقَفُوهَا وَقَالُوا: إِنَّهَا مُوجِبَةٌ فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: فَتَلَكَّأَتْ وَنَكَصَتْ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهَا تَرْجِعُ ثُمَّ قَالَتْ: لَا أَفْضَحُ قَوْمِي سَائِرَ الْيَوْمِ فَمَضَتْ وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَبْصِرُوهَا فَإِنْ جَاءَتْ بِهِ أَكْحَلَ الْعَيْنَيْنِ سَابِغَ الْأَلْيَتَيْنِ خَدَلَّجَ السَّاقِينَ فَهُوَ لِشَرِيكِ بْنِ سَحْمَاءَ» فَجَاءَتْ بِهِ كَذَلِكَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْلَا مَا مَضَى مِنْ كِتَابِ اللَّهِ لَكَانَ لِي وَلَهَا شَأْن» . رَوَاهُ البُخَارِيّ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
‘আল্লাহর কিতাবের নির্দেশ' – অর্থাৎ, লেআন করিলে আর তাহাকে সঙ্গেসার করা চলে না, ইহাই নির্দেশ। ওলামাগণ বলেন, হেলালের লেআনই প্রথম লেআন। তোমার পিঠে কোড়া—কেহ কোন নারীর প্রতি যেনার অপবাদ দেওয়াকে 'কযফ' বলে। কযফের শাস্তি ৮০ কোড়া, কোরআনের নির্দেশ।