মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

১৭- কিসাসের অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৫৩১
- কিসাসের অধ্যায়
৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - সম্মিলিত কসম
৩৫৩১। হযরত রাফে' ইবনে খাদীজ ও সাহল ইবনে আবু হাসমা (রাঃ) তাঁহারা উভয়েই বর্ণনা করিয়াছেন, একদা আব্দুল্লাহ্ ইবনে সাল এবং মুহাইয়্যেসা ইবনে মাসউদ (রাঃ) খায়বর আসিলেন এবং তথায় খেজুরের বাগানে আসিয়া একে অন্য হইতে আলাদা হইয়া গেলেন। অতঃপর দেখা গেল, আব্দুল্লাহ্ ইবনে সালকে খুন করা হইয়াছে। (এক জায়গায় তাঁহার মৃত লাশ পাওয়া গেল।) তখন আব্দুর রহমান ইবনে সাল (আব্দুল্লাহর ভাই) এবং মাসউদের দুই পুত্র হুয়াইয়্যেসা ও মুহাইয়্যেসা নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হইলেন এবং তাঁহাদের সাথীর (আব্দুল্লাহর হত্যার ব্যাপারে) আলোচনা করিতে গিয়া আব্দুর রহমান কথা বলা শুরু করিলেন, অথচ তিনি ছিলেন এই দলের সকলের ছোট। তখন নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁহাকে বাধা দিয়া) বলিলেন: বড়জনকে কথা বলিতে দাও। বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া ইবনে সায়ীদ বলেন, হুযূরের কথার অর্থ হইল, যিনি বয়সে বড়, কথা শুরু করার উপযুক্ত ব্যক্তি হইলেন তিনি। মোটকথা, তাঁহারা তাঁহাদের সঙ্গীর হত্যার ব্যাপারে আলোচনা করিলেন। ইহার পর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, তোমাদের মধ্য হইতে পঞ্চাশজন কসম খাইয়া তোমাদের নিহত ব্যক্তির কিংবা বলিয়াছেন, তোমাদের সাথীর হত্যার বিনিময় (দিয়ত) পাইবার হকদার হইতে পারিবে। তাহারা আরয করিলেন, হে আল্লাহ্ রাসূল! ইহা এমন এক ব্যাপার, যাহা আমরা স্বচক্ষে দেখি নাই। (সুতরাং কিভাবে কসম করিব ?) তখন হুযূর (ছাঃ) বলিলেন, তাহা হইলে ইহুদীদের মধ্য হইতে পঞ্চাশজন কসম খাইয়া অভিযোগমুক্ত হইয়া যাইবে। তাঁহারা বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! উহারা তো কাফের (মিথ্যা কসম খাইয়া ফেলিবে)। তখন রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের তরফ হইতে তাহাদের খুনের বিনিময় (দিয়ত) পরিশোধ করিয়া দিলেন। অন্য আরেক রেওয়ায়তে আছে, তোমরা পঞ্চাশজন কসম খাইয়া তোমাদের হত্যাকারীর অথবা বলিয়াছেন, তোমাদের সঙ্গীর দিয়ত পাইবার হকদার হইতে পারিবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের পক্ষ হইতে তাহাদিগকে একশত উট দিয়তস্বরূপ আদায় করিয়া দিলেন। — মোত্তাঃ
[এই অধ্যায়ে দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ নাই।]
كتاب القصاص
بَابُ الْقَسَامَةِ: الْفَصْل الأول
عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ وَسَهْلِ بْنِ أَبِي حَثْمة أَنَّهُمَا حَدَّثَا أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ سَهْلٍ وَمُحَيِّصَةَ بْنَ مَسْعُودٍ أَتَيَا خَيْبَرَ فَتَفَرَّقَا فِي النَّخْلِ فَقُتِلَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَهْلٍ فَجَاءَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ سَهْلٍ وَحُوَيِّصَةُ وَمُحَيِّصَةُ ابْنَا مَسْعُودٍ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَكَلَّمُوا فِي أَمْرِ صَاحِبِهِمْ فَبَدَأَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ وَكَانَ أَصْغَر الْقَوْم فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كبر الْكبر قَالَ يحيى بن سعد: يَعْنِي لِيَلِيَ الْكَلَامَ الْأَكْبَرُ فَتَكَلَّمُوا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اسْتَحِقُّوا قَتِيلَكُمْ أَوْ قَالَ صَاحِبَكُمْ بِأَيْمَانِ خَمْسِينَ مِنْكُمْ» . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَمْرٌ لَمْ نَرَهُ قَالَ: فَتُبَرِّئُكُمْ يَهُودُ فِي أَيْمَانِ خَمْسِينَ مِنْهُمْ؟ قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ قَوْمٌ كُفَّارٌ فَفَدَاهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ قِبَلِهِ. وَفِي رِوَايَةٍ: «تَحْلِفُونَ خَمْسِينَ يَمِينًا وَتَسْتَحِقُّونَ قَاتِلَكُمْ أَوْ صَاحِبَكُمْ» فَوَدَاهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ عِنْده بِمِائَة نَاقَة

وَهَذَا الْبَاب خَال من الْفَصْل الثَّانِي

হাদীসের ব্যাখ্যা:

সম্মিলিত শপথ

قسامة -এর আভিধানিক অর্থ হইল—কসম খাওয়া। শরীআতের পরিভাষায়, যদি কোথাও কোন ব্যক্তিকে নিহত অবস্থায় পাওয়া যায়; কিন্তু হত্যাকারীর সন্ধান পাওয়া না যায়, তখন যেই স্থানে বা যেই এলাকায় কিংবা যে মহল্লায় লাশ পাওয়া যায়, নিহত ব্যক্তির অভিভাবক ও ওয়ারিসগণ উক্ত মহল্লার পঞ্চাশ ব্যক্তির উপর কসম প্রয়োগ করিতে পারিবে এবং তাহারা শপথ করিয়া বলিবে, ঐ লোকটিকে আমরা কতল করি নাই এবং কে কতল করিয়াছে তাহাও আমাদের জানা নাই। ইহাকে ‘কাসামাহ্' বলা হয়। জাহেলিয়াতের যুগে ইহার প্রচলন ছিল। ইসলামী যুগে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-ও ইহাকে জায়েযভাবে বহাল রাখিয়াছেন। ইমাম শাফেয়ী ও আহমদ (রঃ) বলেন, যদি উক্ত মহল্লাবাসীরা হত্যা করিয়াছে বলিয়া কোন নিদর্শন পাওয়া যায়, যেমন তাহাদের সাথে শত্রুতা আছে অথবা কোথাও কোন রকমের রক্তের চিহ্ন আছে ইত্যাদি পাওয়া গেলে নিহতের অভিভাবক উক্ত মহল্লাবাসীদের উপর শপথ প্রয়োগ করিতে পারিবে। কসম খাওয়ার পর তাহাদের উপর দিয়ত ওয়াজিব হইবে। এই অবস্থায় কোন প্রকারের কেসাস ওয়াজিব হইবে না। ইমাম মালেক (রঃ) বলেন, চিহ্ন পাওয়া গেলে কেসাস ওয়াজিব হইবে। কিন্তু البينة على المدَّعِي، واليمين على من أنكر এই হাদীসের ভিত্তিতে হানাফীরা বলেন, বিবাদীর উপর কসমই বর্তিবে। তাহারা কসম করিলে দিয়ত আদায় করিবে, কেসাস ওয়াজিব হইবে না।

যদিও নিহত আবদুল্লাহর ভাই আবদুর রহমান প্রকৃত বাদী ছিলেন; কিন্তু বয়সে কনিষ্ঠ হওয়ার দরুন তাহার পক্ষ হইতে বড়কে ঘটনার বিবরণ পেশ করার নির্দেশ দিয়াছেন, যেন তিনি ঘটনার আদ্যোপান্ত সঠিক ও সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করিতে পারেন। আর বিবাদী পক্ষ হইতে কসম গ্রহণ করিতে বাদী পক্ষ অসম্মত হইলে বিবাদীদের উপর দিয়ত ওয়াজিব হইবে না।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান