মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

১৮- শরীআতের দন্ড বিধি অধ্যায়

হাদীস নং: ৩৫৫৯
- শরীআতের দন্ড বিধি অধ্যায়
প্রথম অনুচ্ছেদ
৩৫৫৯। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, একদা ইহুদীগণ রাসুলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসিয়া বলিল, তাহাদের এক পুরুষ ও এক নারী যিনা করিয়াছে। তখন রাসুলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, রজমের (ব্যভিচারীদিগকে পাথর নিক্ষেপ করিয়া হত্যা করার) ব্যাপারে তওরাতের মধ্যে তোমরা কি পাইয়াছ? তাহারা বলিল, আমরা তাহাদিগকে অপমান করি (যেমন, মুখের মধ্যে কালি কয়লা ফেলিয়া গাধার পিঠে সওয়ার করিয়া রাস্তায় রাস্তায় ঘুরাই) এবং চাবুক মারা হয়। (অর্থাৎ, রজম করার ব্যাপারে তওরাতে কোন কথা উল্লেখ নাই।) আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (যিনি প্রথমে ইহুদী ছিলেন; বরং সেই ধর্মের প্রখ্যাত আলেম ছিলেন, পরে ইসলাম গ্রহণ করিয়াছেন) বলিলেন, তোমরা মিথ্যা বলিতেছ। উহার মধ্যে নিশ্চয়ই রজমের কথা উল্লেখ আছে। আচ্ছা, তওরাত নিয়া আস। তাঁহারা উহা আনিল এবং খুলিল বটে; কিন্তু তাহাদের একজন রজমের আয়াতের উপর তাহার হাত দ্বারা চাপা দিয়া রাখিল এবং উক্ত আয়াতের সামনে এবং পিছন হইতে পড়িল। তখন আব্দুল্লাহ্ ইবনে সালাম (রাঃ) বলিলেন, তোমার হাত উঠাও। সে হাত উঠাইল, দেখা গেল তন্মধ্যে রজমের আয়াত বিদ্যমান রহিয়াছে। তখন তাহারা বলিল, হে মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ্ সত্যই বলিয়াছে। ইহার মধ্যে রজমের আয়াত ঠিকই বিদ্যমান আছে। অতঃপর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রজমের) নির্দেশ করিলেন, তখন তাহাদের উভয়কে রজম করা হইল। অন্য আরেক রেওয়ায়তে আছে, হুযূর (ছাঃ) বলিলেন: তোমার হাত উঠাও। সে হাত উঠাইল, তখন দেখা গেল, সেইখানে স্পষ্ট রজমের আয়াত রহিয়াছে। তখন হাত দ্বারা চাপাদানকারী লোকটি বলিয়া উঠিল, হে মুহাম্মাদ। সত্যই ইহার মধ্যে রজমের আয়াত বিদ্যমান আছে। অবশ্য আমরা উহা নিজেদের মধ্যে গোপন রাখিতাম। অতঃপর তিনি নির্দেশ করিলেন এবং তাহাদের উভয়কে পাথর নিক্ষেপ করা হইল। -মোত্তাঃ
كتاب الحدود
وَعَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ: أَن الْيَهُود جاؤوا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرُوا لَهُ أَنَّ رَجُلًا مِنْهُمْ وَامْرَأَةً زَنَيَا فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا تَجِدُونَ فِي التَّوْرَاةِ فِي شَأْنِ الرَّجْمِ؟» قَالُوا: نَفْضَحُهُمْ وَيُجْلَدُونَ قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلَامٍ: كَذَبْتُمْ إِنَّ فِيهَا الرَّجْمَ فَأْتُوا بِالتَّوْرَاةِ فَنَشَرُوهَا فَوَضَعَ أَحَدُهُمْ يَدَهُ عَلَى آيَةِ الرَّجْمِ فَقَرَأَ مَا قَبْلَهَا وَمَا بَعْدَهَا فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلَامٍ: ارْفَعْ يَدَكَ فَرَفَعَ فإِذا فِيهَا آيةُ الرَّجم. فَقَالُوا: صدقَ يَا محمَّدُ فِيهَا آيَة الرَّجْم. فَأمر بهما النَّبِي صلى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرُجِمَا. وَفِي رِوَايَةٍ: قَالَ: ارْفَعْ يَدَكَ فَرَفَعَ فَإِذَا فِيهَا آيَةُ الرَّجْمِ تَلُوحُ فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّ فِيهَا آيَةَ الرَّجْمِ وَلِكِنَّا نَتَكَاتَمُهُ بَيْنَنَا فَأَمَرَ بِهِمَا فَرُجِمَا

হাদীসের ব্যাখ্যা:

ইমাম শাফেয়ী বলেন, ব্যাভিচারী বিবাহিতের উপর রজম করার জন্য মুসলমান হওয়া শর্ত নহে। অর্থাৎ, 'ইসলাম' না হইলেও তাহাকে محصن বলা যায়। যেমন নবী (ﷺ) এই ঘটনায় ইহুদী محصن -এর উপর রজম করার নির্দেশ দিয়াছেন। ইমাম আবু হানীফা (রঃ) বলেন, 'ইসলাম' শর্ত। তবে এইখানের ব্যাপার হইল এই, উক্ত যিনাকারী দুইজন তাহাদের ধারণায় মুসলমান ছিল। অথবা কোরআনের বিধান নাযিল হওয়ার পূর্বে তাহাদিগকে তাহাদের নিজেদের ধর্মীয় কিতাব তওরাতের বিধান অনুযায়ী রজম করিয়াছেন। কোরআনের হুকুম ও বিধান নাযিল হওয়ার পর সেই বিধান রহিত হইয়া গিয়াছে।
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান
মিশকাতুল মাসাবীহ - হাদীস নং ৩৫৫৯ | মুসলিম বাংলা