মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
২০- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়
হাদীস নং: ৩৮৫৮
- জিহাদের বিধানাবলী অধ্যায়
তৃতীয় অনুচ্ছেদ
৩৮৫৮। হযরত ফাযালা ইবনে ওবায়দ বলেন, আমি হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে বলিতে শুনিয়াছি, তিনি বলেন, আমি শুনিয়াছি, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ শহীদ চার প্রকারের (লোক ) হয়। এক—এমন ব্যক্তি যে পরিপূর্ণ ঈমানদার, সে শত্রুর মুকাবেলায় যুদ্ধে রত হইয়া আল্লাহর প্রতিজ্ঞা পূরণ করিয়াছে, শেষ নাগাদ নিজে শহীদ হইয়া গিয়াছে। এই ব্যক্তি এমন এক উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হইবে, যাহার দিকে কিয়ামতের দিন লোকেরা এইভাবে চক্ষু তুলিয়া তাকাইবে। এবং (এই কথা বলিয়া) তাঁহার মাথা খুব উপরের দিকে উঠাইলেন যে, মাথা হইতে টুপীটি নীচে পড়িয়া গেল। (অধস্তন বর্ণনাকারী বলেন,) আমি জানি না, বর্ণনাকারী (ফায়ালা)-এর উদ্দেশ্য কি হযরত ওমরের মাথা হইতে টুপীটি নীচে পড়িয়া গিয়াছিল না কি হুযূর (ﷺ)-এর মাথা হইতে টুপীটি পড়িয়া গিয়াছিল ? দুই ঐ ব্যক্তি, যে পাক্কা ঈমানদার বটে; কিন্তু শত্রুর সম্মুখীন হয় এমন অবস্থায় যে, ভীরুতার দরুন সে ধারণা করিতে থাকে, যেন তাহার শরীরে কন্টক বৃক্ষের কাঁটা বিধিতেছে। এমন সময় হঠাৎ একটি তীর আসিয়া তাহাকে ঘায়েল করিল, অমনিই সে শহীদ হইয়া গেল। এই ব্যক্তি দ্বিতীয় শ্রেণীর শহীদ। তিন—এমন মু'মিন, যে ভালো মন্দ উভয় প্রকারের কাজে লিপ্ত ছিল, পরে জেহাদে অংশগ্রহণ করিয়া আল্লাহর প্রতিজ্ঞাকে সত্যে পরিণত করিল, (অর্থাৎ, মনে-প্রাণে লড়াই করিল।) অবশেষে নিজেই শহীদ হইয়া গেল। এই ব্যক্তি তৃতীয় শ্রেণীর শহীদ। চার—এমন ব্যক্তি যে মু'মিন বটে, তবে সে নিজের উপর সীমাহীন অনাচার করিয়াছে। অতঃপর জেহাদে শরীক হইয়া আল্লাহর ওয়াদাকে সত্যে প্রমাণিত করিয়াছে, শেষ নাগাদ সে শহীদ হইয়া গিয়াছে। এই লোক চতুর্থ শ্রেণীর শহীদ। —তিরমিযী এবং তিনি বলিয়াছেন, এই হাদীসটি হাসান ও গরীব।
كتاب الجهاد
وَعَن فَضالةَ بنِ عُبيد قَالَ: سمِعْتُ عمَرَ بن الْخطاب يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: الشُّهَدَاءُ أَرْبَعَةٌ: رَجُلٌ مُؤْمِنٌ جَيِّدُ الْإِيمَانِ لَقِيَ الْعَدُوَّ فَصَدَقَ اللَّهَ حَتَّى قُتِلَ فَذَلِكَ الَّذِي يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ أَعْيُنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ هَكَذَا وَرَفَعَ رَأْسَهُ حَتَّى سَقَطَتْ قَلَنْسُوَتُهُ فَمَا أَدْرِي أَقَلَنْسُوَةَ عُمَرَ أَرَادَ أَمْ قَلَنْسُوَةَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: «وَرَجُلٌ مُؤْمِنٌ جَيِّدُ الْإِيمَانِ لَقِيَ الْعَدُوَّ كَأَنَّمَا ضَرَبَ جِلْدَهُ بِشَوْكٍ طَلْحٍ مِنَ الْجُبْنِ أَتَاهُ سَهْمٌ غَرْبٌ فَقَتَلَهُ فَهُوَ فِي الدَّرَجَةِ الثَّانِيَةِ وَرَجُلٌ مُؤْمِنٌ خَلَطَ عَمَلًا صَالِحًا وَآخَرَ سَيِّئًا لَقِيَ الْعَدُوَّ فَصَدَقَ اللَّهَ حَتَّى قُتِلَ فَذَلِكَ فِي الدَّرَجَةِ الثَّالِثَةِ وَرَجُلٌ مُؤْمِنٌ أَسْرَفَ عَلَى نَفْسِهِ لَقِيَ الْعَدُوَّ فَصَدَقَ اللَّهَ حَتَّى قُتِلَ فَذَاكَ فِي الدَّرَجَةِ الرَّابِعَةِ» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ
হাদীসের ব্যাখ্যা:
فصدق الله এই বাক্যের অর্থ দুই প্রকারের হইতে পারে। (ক) আল্লাহ্ তা'আলা শহীদদিগকে বিরাট পুরস্কার এবং সুউচ্চ মর্যাদা দান করিবার যে ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন তাহা পূরণ করিয়াছেন। (খ) আল্লাহ্ তা'আলা মুজাহিদগণের ব্যাপারে ধৈর্যধারণ এবং সওয়াবের প্রত্যাশার যে গুণ বর্ণনা করিয়াছেন, নিজের বীরত্বের দ্বারা সে উহা সত্য প্রমাণ করিতে সক্ষম হইল। মোটকথা, প্রথম শ্রেণীর শহীদ হইলেন, মুত্তাকী ও বীর-বাহাদুর। দ্বিতীয় শ্রেণীর শহীদ হইলেন, মুত্তাকী ও ভীরু। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর শহীদ হইলেন, বীর, তবে কাহারও আমল ভাল-মন্দে মিশ্রিত আবার কাহারও আমল সীমাহীন মন্দ, যাহাকে ফাসেকও বলা যায়।