মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

২৯- সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামত পরবর্তী বর্ণনা

হাদীস নং: ৫৬৯৮
- সৃষ্টির সূচনা ও কিয়ামত পরবর্তী বর্ণনা
প্রথম অনুচ্ছেদ - সৃষ্টির সূচনা ও নবী-রাসূলদের আলোচনা
৫৬৯৮। হযরত ইমরান ইবনে হোসাইন (রাঃ) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত ছিলাম। (এই সময় আমি আমার উষ্ট্রীটি বাহিরে দরজার সাথে বাধিয়া রাখিয়াছিলাম।) তখন তাহার দরবারে বনু তামীমের কতিপয় লোক আসিল। তিনি বলিলেন : হে বনু তামীম, তোমরা শুভ সংবাদ গ্রহণ কর। জবাবে তাহারা বলিল, আপনি শুভ সংবাদ তো শুনাইয়াছেন, এইবার আমাদিগকে কিছু দানও করুন। পরক্ষণে তাঁহার খেদমতে ইয়ামনের কিছু লোক আসিল। তিনি তাহাদিগকে বলিলেন; হে ইয়ামনবাসী। শুভ সংবাদ গ্রহণ কর। কেননা, বনু তামীম তাহা গ্রহণ করে নাই। তাহারা জবাব দিল, আমরা তাহা কবুল করিলাম। অবশ্য আমরা দ্বীনের বিধান সম্পর্কে কিছু অবগত হওয়ার জন্য আপনার খেদ মতে উপস্থিত হইয়াছি। আমরা আপনাকে এই সৃষ্টির সূচনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিতে চাই, সর্ব প্রথম কি ছিল? উত্তরে তিনি বলিলেন; আদিতে একমাত্র আল্লাহই ছিলেন এবং তাঁহার পূর্বে কিছুই ছিল না। আর তাহার আরশ স্থাপিত ছিল পানির উপরে। অতঃপর তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেন এবং লওহে মাহফুযে প্রত্যেক জিনিসের বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন। ইমরান ইবনে হোসাইন বলেন, এই সময় এক ব্যক্তি আসিয়া আমাকে বলিল, হে ইমরান। তুমি তোমার উষ্ট্রীর খোঁজ কর, উহা তো পালাইয়াছে। সুতরাং আমি উহার খোজে চলিয়া গেলাম। আল্লাহর কসম! যদি উষ্ট্রীটি চলিয়া যাইত আর আমি তথা হইতে উঠিয়া না যাইতাম, উহাই আমার নিকট প্রিয় ছিল। বুখারী
كتاب أحوال القيامة وبدء الخلق
بَاب بدءالخلق وَذِكْرِ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ: الْفَصْل الأول
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ قَالَ: إِنِّي كُنْتُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ جَاءَ قومٌ منْ بَني تميمٍ فَقَالَ: «اقْبَلُوا الْبُشْرَى يَا بَنِي تَمِيمٍ» قَالُوا: بَشَّرْتَنَا فَأَعْطِنَا فَدَخَلَ نَاسٌ مِنْ أَهْلِ الْيَمَنِ فَقَالَ: «اقْبَلُوا الْبُشْرَى يَا أَهْلَ الْيَمَنِ إِذْ لَمْ يَقْبَلْهَا بَنُو تَمِيمٍ» . قَالُوا: قَبِلْنَا جِئْنَاكَ لِنَتَفَقَّهَ فِي الدِّينِ وَلِنَسْأَلَكَ عَنْ أَوَّلِ هَذَا الْأَمْرِ مَا كَانَ؟ قَالَ: «كَانَ اللَّهُ وَلَمْ يَكُنْ شَيْءٌ قَبْلَهُ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ ثُمَّ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَكَتَبَ فِي الذِّكْرِ كلَّ شيءٍ» ثُمَّ أَتَانِي رَجُلٌ فَقَالَ: يَا عِمْرَانُ أَدْرِكْ ناقتَكَ فقدْ ذهبتْ فانطلقتُ أطلبُها وايمُ اللَّهِ لَوَدِدْتُ أَنَّهَا قَدْ ذَهَبَتْ وَلَمْ أَقُمْ. رَوَاهُ البُخَارِيّ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

সমস্ত আসমানী কিতাব ও দ্বীনে শরীআহ্ এবং নবী-রাসূলদের বর্ণনায় এই ঐকমত্য রহিয়াছে যে, আল্লাহ্ তা'আলার পাক যাত ও সত্তা ব্যতীত সমস্ত কিছু সৃষ্ট ও ক্ষণস্থায়ী। সমস্ত উম্মত এবং ইমামদেরও এই একই অভিমত। যেমন, সত্যবাদী ও সত্যায়িত নবী (ﷺ) বলিয়াছেন— كان الله ولم يكن معه شيى অর্থাৎ, “আল্লাহ্ পাক ছিলেন, কিন্তু তাঁহার সহিত কিছুই ছিল না"। অতঃপর লওহ্, কলম, আরশ, কুরসী, আসমান, যমীন ও উভয়ের মধ্যবর্তী জিনিসসমূহ সৃষ্টি করিয়াছেন, অবশ্য সর্বপ্রথম কোন্ জিনিস সৃষ্টি করিয়াছেন, এই সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রহিয়াছে। যেমন আল্লাহ্ বলেন - وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ অর্থাৎ, “আল্লাহর আরশ ছিল পানির উপরে।" ইহাতে বুঝা যায় ‘পানি এবং আরশ' এই দুইটিই সর্বপ্রথম সৃষ্ট বস্তু। আবু রাযীন উকাইলী ইমাম আহমদের নিকট বর্ণনা করিয়াছেন — ان الماء خلق قبل العرش অর্থাৎ, “আরশের পূর্বে পানিকেই সৃষ্টি করা হইয়াছে।" হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলিয়াছেনঃ كل شيى خلق من الماء অর্থাৎ, “ প্রত্যেক বস্তুই পানি হইতে সৃষ্টি করা হইয়াছে। অপর এক রেওয়ায়তে আছে—হযরত উবাদাহ্ ইবনে সামেত বলেন, নবী (ﷺ) বলিয়াছেন; اول ما خلق الله القلم অর্থাৎ, “আল্লাহ্ সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করিয়াছেন।” আর এক বর্ণনায় আছে— اول ما خلق الله نور محمد ﷺ অর্থাৎ, আল্লাহ্ সর্বপ্রথম নূরে মুহাম্মদী সৃষ্টি করিয়াছেন।”
এই বিভিন্নতার সমাধান হইল—প্রতিটি জিনিস পরবর্তীটির হিসাবে প্রথম এবং বস্তুও বিভিন্ন । তাই বলা হয়, সর্বপ্রথম পানি, তারপর অন্যান্য সমস্ত কিছু সৃষ্টি হইয়াছে। ইমাম রাগেব বলেন, النُّبُوَّةُ سَفَارَةُ الْعَبْدِ بَيْنَ اللَّهِ وَبَيْنَ خَلْقِهِ অর্থাৎ, "নবুওত হইল আল্লাহ্ ও তাঁহার সৃষ্টিকুলের মাঝে বান্দার যোগাযোগ।" 'নবী ও রাসূল' শব্দ দুইটি প্রায় কাছাকাছি অর্থে ব্যবহৃত হয়। কাযী আয়ায রলেন, জমহুর উলামাদের মতে ان كل رسول نبى ولا عكس অর্থাৎ, “প্রত্যেক রাসূল নবীও বটেন, কিন্তু ইহার বিপরীতে প্রত্যেক নবীই রাসূল নহেন।” অবশ্য ইহাও বলা যায়; যিনি পরকালের ভীতি প্রদর্শনের সাথে নতুন শরীঅত প্রয়োগের জন্য নির্দেশিত, তিনি ‘রাসূল’। কিন্তু ‘নবী’ নতুন শরীঅত বা কিতাব প্রাপ্ত হওয়া শর্ত নহে। তবে দুই জনই অহী প্রাপ্ত হন, নবী বা রাসূল হওয়ার জন্য পুরুষ হওয়া শর্ত, এবং তাঁহারা জন্মগত মাসুম ও দোষ-কলুষ মুক্ত। চেষ্টা বা সাধনার দ্বারা নবুওত লাভ করা যায় না। (আততা'লীক)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান