মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)

৩০- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়

হাদীস নং: ৫৮৬২
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
প্রথম অনুচ্ছেদ - মিরাজের বর্ণনা
৫৮৬২। কাতাদাহ হযরত আনাস ইবনে মালেক হইতে, তিনি হযরত মালেক ইবনে সাসাআ (রাঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, আল্লাহর নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেই রাত্রে মে'রাজ (আকাশ ভ্রমণ) করান হইয়াছিল, সেই রাত্রের বর্ণনা প্রসঙ্গে তিনি তাহাদিগকে (সাহাবীদিগকে) বলিয়াছেন: একদা আমি কা'বার হাতীম অংশে কাত হইয়া শুইয়াছিলাম। রাবী (কাতাদাহ) কখনও কখনও (হাতীমের স্থলে) 'হিজর' শব্দ বলিয়াছেন (বস্তুত উভয়টি একই স্থানের নাম)। এমন সময় হঠাৎ একজন আগন্তুক আমার কাছে আসিলেন এবং তিনি এই স্থান হইতে এই স্থান পর্যন্ত চিরিয়া ফেলিলেন। অর্থাৎ, হলকুমের নিম্নভাগ হইতে নাভির উপরিভাগ পর্যন্ত বিদীর্ণ করিলেন। অতঃপর তিনি আমার কলব বাহির করিলেন। তারপর ঈমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণের থালা আমার কাছে আনা হইল, ইহার পর আমার কলবকে ধৌত করা হয়, তারপর উহাকে ঈমানে পরিপূর্ণ করিয়া আবার পূর্বের জায়গায় রাখা হয়। অপর এক বর্ণনায় আছে অতঃপর যমযমের পানি দ্বারা পেট ধৌত করা হয়, পরে ঈমান ও হিকমতে উহাকে পরিপূর্ণ করা হয়। তারপর আকারে খচ্চরের চাইতে ছোট এবং গাধা অপেক্ষা বড় এক সাদা বর্ণের বাহন আমার সম্মুখে উপস্থিত করা হয়। উহাকে বলা হয় 'বোরাক'। উহার দৃষ্টি যতদূর যাইত, সেখানে উহা পা রাখিত। (অর্থাৎ, উহার পথ অতিক্রমের গতিবেগ ছিল দৃষ্টিশক্তির গতিবেগের সমান।) নবী (ছাঃ) বলেন, অতঃপর আমাকে উহার উপরে আরোহণ করান হইল। এইবার হযরত জিবরাঈল আমাকে সঙ্গে লইয়া (উর্ধ্বলোকে) যাত্রা করিলেন এবং নিকটতম আসমানে পৌঁছিয়া দরজা খুলিতে বলিলেন। জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনি কে? বলিলেন, (আমি) জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে আর কে। তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হইল,তাহাকে কি ডাকিয়া পাঠান হইয়াছে। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তখন বলা হইল, তাহার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাঁহার আগমন কতই না উত্তম। ইহার পর দরজা খুলিয়া দেওয়া হইল। যখন আমি ভিতরে পৌঁছিলাম, তখন সেইখানে দেখিতে পাইলাম হযরত আদম (আঃ)-কে। (তাহার দিকে ইংগিত করিয়া) জিবরাঈল বলিলেন, ইনি হইলেন আপনার পিতা আদম, তাহাকে সালাম করুন। তখন আমি তাহাকে সালাম করিলাম। তিনি সালামের জওয়াব দিয়া বলিলেন, নেককার পুত্র ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ।
অতঃপর হযরত জিবরাঈল আমাকে লইয়া আরও উর্ধ্বে আরোহণ করিলেন এবং দ্বিতীয় আসমানে পৌঁছিয়া দরজা খুলিতে বলিলেন। জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনি কে? তিনি বলিলেন, জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হইল, তাহাকে কি ডাকিয়া পাঠান হইয়াছে। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তখন বলা হইল, তাহার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাহার আগমন বড়ই শুভ। তারপর দরজা খুলিয়া দেওয়া হইল। যখন আমি ভিতরে প্রবেশ করিলাম, তখন সেইখানে দেখিতে পাইলাম হযরত ইয়াহ্ইয়া ও ঈসা (আঃ)-কে। তাহারা দুইজন পরস্পর খালাত ভাই। জিবরাঈল (আমাকে) বলিলেন, ইনি হইলেন ইয়াহ্ইয়া আর উনি হইলেন ঈসা (আঃ), আপনি তাহাদিগকে সালাম করুন। যখন আমি সালাম করিলাম, তাহারা উভয়ে সালামের জাওয়াব দিয়া বলিলেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ।
অতঃপর হযরত জিবরাঈল আমাকে লইয়া তৃতীয় আসমানে উঠিলেন এবং দরজা খুলিয়া দিতে বলিলেন। জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনি কে। তিনি বলিলেন, জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হইল, তাহাকে কি ডাকিয়া পাঠান হইয়াছে। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। বলা হইল, তাহার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাহার আগমন বড়ই শুভ। অতঃপর দরজা খুলিয়া দেওয়া হইল। ভিতরে প্রবেশ করিয়া আমি সেইখানে হযরত ইউসুফ (আঃ)-কে দেখিতে পাইলাম। হযরত জিবরাঈল বলিলেন, ইনি হইলেন হযরত ইউসুফ (আঃ), তাহাকে সালাম করুন। আমি তাঁহাকে সালাম করিলাম। তিনি সালামের জওয়াব দিয়া বলিলেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ।
অতঃপর হযরত জিবরাঈল আমাকে লইয়া আরও উর্ধ্বলোকে যাত্রা করিলেন এবং চতুর্থ আসমানে আসিয়া দরজা খুলিতে বলিলেন। জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনি কে? বলিলেন, জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হইল, তাহাকে কি ডাকিয়া পাঠান হইয়াছে? বলিলেন, হ্যাঁ। বলা হইল,তাহার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাহার আগমন বড়ই শুভ। তারপর দরজা খুলিয়া দেওয়া হইল। আমি ভিতরে প্রবেশ করিয়া দেখিলাম, সেইখানে হযরত ইদ্রীস (আঃ) জিবরাঈল (আঃ) বলিলেন, ইনি হযরত ইদ্রীস, তাহাকে সালাম করুন। আমি তাহাকে সালাম করিলাম, অতঃপর তিনি জওয়াব দিয়া বলিলেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর সম্ভাষণ।
ইহার পর জিবরাঈল আমাকে লইয়া উর্ধ্বে আরোহন করিলেন এবং পঞ্চম আসমানে আসিয়া দরজা খুলিয়া দিতে বলিলেন। জিজ্ঞাসা করা হইল কে? বলিলেন, (আমি) জিবরাঈল। পুনঃ জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)। আবার জিজ্ঞাসা করা হইল, তাহাকে কি ডাকিয়া পাঠান হইয়াছে? বলিলেন, হ্যাঁ। বলা হইল, তাহার প্রতি সাদর অভিনন্দন। তাহার আগমন বড়ই শুভ। তারপর দরজা খুলিয়া দিলে আমি যখন ভিতরে পৌঁছিলাম, সেইখানে হযরত হারুন (আঃ)-কে দেখিতে পাইলাম। জিবরাঈল বলিলেন, ইনি হযরত হারুন (আঃ), তাহাকে সালাম করুন। আমি তাহাকে সালাম করিলে তিনি জওয়াব দিলেন। অতঃপর বলিলেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন।
অতঃপর জিবরাঈল আমাকে সঙ্গে লইয়া আরও উর্ধ্বলোকে উঠিলেন এবং ষষ্ঠ আসমানে আসিয়া দরজা খুলিয়া দিতে বলিলেন। জিজ্ঞাসা করা হইল, কে ? বলিলেন, জিবরাঈল। জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হইল, তাহাকে কি ডাকিয়া পাঠান হইয়াছে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। বলা হইল, তাহার প্রতি সাদর সম্ভাষণ। তাহার আগমন কতই না উত্তম। তারপর দরজা খুলিয়া দিলে আমি যখন ভিতরে প্রবেশ করিলাম, তখন সেইখানে হযরত মুসা (আঃ)-কে দেখিতে পাইলাম। জিবরাঈল বলিলেন, ইনি হইলেন মুসা (আঃ), তাহাকে সালাম করুন। আমি তাহাকে সালাম করিলে তিনি উহার জাওয়াব দিয়া বলিলেন, নেককার ভাই ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন। অতঃপর আমি যখন তাহাকে অতিক্রম করিয়া অগ্রসর হইলাম, তখন তিনি কাদিয়া ফেলিলেন। তাহাকে জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনি কাঁদিতেছেন কেন? তিনি বলিলেন, আমি এই জন্য কাঁদিতেছি যে, আমার পরে এমন একজন যুবককে (নবী বানাইয়া) পাঠান হইল, যাহার উম্মত আমার উম্মত অপেক্ষা অধিক সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করিবে।
অতঃপর জিবরাঈল (আঃ) আমাকে লইয়া সপ্তম আসমানে আরোহণ করিলেন। অনন্তর হযরত জিবরাঈল দরজা খুলিতে বলিলে জিজ্ঞাসা করা হইল, কে? তিনি বলিলেন, জিবরাঈল। আবার জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে আর কে? তিনি বলিলেন, মুহাম্মাদ (ছাঃ)। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হইল, তাহাকে কি ডাকিয়া পাঠান হইয়াছে। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। ইহার পর বলা হইল, তাহার প্রতি সাদর অভিনন্দন। তাহার আগমন কতই না উত্তম। অতঃপর আমি যখন ভিতরে প্রবেশ করিলাম, সেইখানে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে দেখিতে পাইলাম। জিবরাঈল বলিলেন, ইনি হইলেন আপনার পিতা ইবরাহীম (আঃ), তাহাকে সালাম করুন। তখন আমি তাহাকে সালাম করিলাম। তিনি সালামের জওয়াব দিয়া বলিলেন, নেককার পুত্র ও নেককার নবীর প্রতি সাদর অভিনন্দন।
অতঃপর আমাকে “সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত উঠান হইল। আমি দেখিতে পাইলাম, উহার ফল হাজার নামক অঞ্চলের মটকার ন্যায় এবং উহার পাতা হাতীর কানের মত। জিবরাঈল বলিলেন, ইহাই সিদরাতুল মুনতাহা। আমি (তথায়) আরও দেখিতে পাইলাম চারিটি নহর। দুইটি নহর অপ্রকাশ্য, আর দুইটি প্রকাশ্য। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, হে জিবরাঈল। এই নহরের তাৎপর্য কি। তিনি বলিলেন, অপ্রকাশ্য দুইটি হইল জান্নাতে প্রবাহিত দুইটি নহর। আর প্রকাশ্য দুইটি হইল (মিসরের নীল এবং (ইরাকের) ফোরাত নদী। অতঃপর আমাকে "বায়তুল মা'মুর" দেখান হইল। তারপর আমার সামনে হাযির করা হইল এক পাত্র মদ, এক পাত্র দুধ ও এক পাত্র মধু। ইহার মধ্য হইতে আমি দুধ গ্রহণ করিলাম (এবং উহা পান করিলাম)। তখন জিবরাঈল বলিলেন, ইহা 'ফেতরত'-এর (স্বভাব-ধর্মের) নিদর্শন। আপনি এবং আপনার উম্মত ইহার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকিবেন।
অতঃপর আমার উপর দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) নামায ফরয করা হইল। আমি (ইহা গ্রহণ করিয়া) প্রত্যাবর্তন করিলাম। হযরত মুসা (আঃ)-এর সম্মুখ দিয়া যাইবার সময় তিনি (আমাকে) বলিলেন, আপনাকে কি করিতে আদেশ করা হইয়াছে? আমি বলিলাম, দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) নামাযের আদেশ করা হইয়াছে। তিনি বলিলেন, আপনার উম্মত দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) নামায সম্পাদনে সক্ষম হইবে না। আল্লাহর কসম! আপনার পূর্বে আমি (বনী ইসরাঈলের) লোকদিগকে পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছি এবং বনী ইসরাঈলদের হেদায়তের জন্য আমি যথাসাধ্য পরিশ্রম করিয়াছি। অতএব, (সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই আপনাকে বলিতেছি,) আপনি আপনার রবের কাছে ফিরিয়া যান এবং আপনার উম্মতের পক্ষে (নামায) আরও হ্রাস করিবার জন্য আবেদন করুন। তখন আমি ফিরিয়া গেলাম (এবং ঐভাবে প্রার্থনা জানাইলে) আল্লাহ্ আমার উপর হইতে দশ (ওয়াক্ত নামায) কমাইয়া দিলেন। তারপর আমি হযরত মুসা (আঃ)-এর নিকট ফিরিয়া আসিলাম। তিনি এইবারও অনুরূপ কথা বলিলেন। ফলে আমি পুনরায় আল্লাহর কাছে ফিরিয়া গেলাম। তিনি আমার উপর হইতে আরও দশ (ওয়াক্ত নামায) কমাইয়া দিলেন। আবার আমি মুসার নিকট ফিরিয়া আসিলাম। তিনি অনুরূপ কথাই বলিলেন। তাই আমি (আবার) ফিরিয়া গেলাম। তখন আল্লাহ্ আরও দশ (ওয়াক্ত নামায) মাফ করিয়া দিলেন। অতঃপর আমি মুসার নিকট ফিরিয়া আসিলে আবারও তিনি ঐ কথাই বলিলেন। আমি আবার ফিরিয়া গেলাম। আল্লাহ্ আমার জন্য দশ (ওয়াক্ত নামায) কম করিয়া দিলেন এবং আমাকে প্রত্যহ দশ (ওয়াক্ত) নামাযের আদেশ করা হইল। আমি মুসার নিকট ফিরিয়া আসিলাম। এইবারও তিনি অনুরূপ কথাই বলিলেন। ফলে আমি পুনরায় ফিরিয়া গেলে আমাকে প্রত্যহ পাঁচ (ওয়াক্ত) নামাযের আদেশ করা হইল। আমি মুসার কাছে আবার ফিরিয়া আসিলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনাকে (সর্বশেষ) কি করিতে আদেশ করা হইল। আমি বলিলাম, আমাকে দৈনিক পাঁচ (ওয়াক্ত) নামাযের আদেশ করা হইয়াছে। তিনি বলিলেন, আপনার উম্মত প্রত্যহ পাঁচ (ওয়াক্ত) নামায সমাপনে সক্ষম হইবে না। আপনার পূর্বে আমি (বনী ইসরাঈলের) লোকদিগকে বিশেষভাবে পরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছি এবং বনী ইসরাঈলের হেদায়তের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা ও কষ্ট স্বীকার করিয়াছি, তাই আপনি আপনার রবের নিকট ফিরিয়া যান এবং আপনার উম্মতের জন্য আরও হ্রাস করিবার প্রার্থনা করুন। নবী (ছাঃ) বলিলেন, আমি আমার রবের কাছে (কর্তব্য হ্রাসের জন্য) এত অধিকবার প্রার্থনা জানাইয়াছি যে, পুনর্বার প্রার্থনা জানাইতে আমি লজ্জাবোধ করিতেছি, বরং আমি (আল্লাহর এই নির্দেশের উপর) সন্তুষ্ট এবং আমি (আমার ও আমার উম্মতের ব্যাপার) আল্লাহর উপর সপর্দ করিতেছি। নবী (ছাঃ) বলেন, আমি যখন মুসাকে অতিক্রম করিয়া সম্মুখে অগ্রসর হইলাম, তখন (আল্লাহর পক্ষ হইতে) ঘোষণাকারী ঘোষণা দিলেন, আমার অবশ্য পালনীয় আদেশটি আমি জারি করিয়া দিলাম এবং আমার বান্দাদের জন্য সহজ করিয়া দিলাম। মোত্তাঃ
كتاب الفضائل والشمائل
بَابٌ فِي الْمِعْرَاجِ: الْفَصْل الأول
عَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنْ مَالك بن صعصعة أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدثهمْ لَيْلَةِ أُسْرِيَ بِهِ: «بَيْنَمَا أَنَا فِي الْحَطِيمِ - وَرُبَّمَا قَالَ فِي الْحِجْرِ - مُضْطَجِعًا إِذْ أَتَانِي آتٍ فَشَقَّ مَا بَيْنَ هَذِهِ إِلَى هَذِهِ» يَعْنِي مِنْ ثُغْرَةِ نَحْرِهِ إِلَى شِعْرَتِهِ «فَاسْتَخْرَجَ قَلْبِي ثُمَّ أُتِيتُ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مَمْلُوءٍ إِيمَانًا فَغُسِلَ قَلْبِي ثُمَّ حُشِيَ ثُمَّ أُعِيدَ» - وَفِي رِوَايَةٍ: ثُمَّ غُسِلَ الْبَطْنُ بِمَاءِ زَمْزَمَ ثمَّ ملئ إِيماناً وَحِكْمَة - ثُمَّ أُتِيتُ بِدَابَّةٍ دُونَ الْبَغْلِ وَفَوْقَ الْحِمَارِ أَبْيَضَ يُقَالُ لَهُ: الْبُرَاقُ يَضَعُ خَطْوَهُ عِنْدَ أَقْصَى طَرْفِهِ فَحُمِلْتُ عَلَيْهِ فَانْطَلَقَ بِي جِبْرِيلُ حَتَّى أَتَى السَّمَاءَ الدُّنْيَا فَاسْتَفْتَحَ قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قِيلَ وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ. قَالَ: نَعَمْ. قيل: مرْحَبًا بِهِ فَنعم الْمَجِيء جَاءَ ففُتح فَلَمَّا خَلَصْتُ فَإِذَا فِيهَا آدَمُ فَقَالَ: هَذَا أَبُوكَ آدَمُ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرَدَّ السَّلَام ثمَّ قَالَ: مرْحَبًا بالابن الصَّالح وَالنَّبِيّ الصَّالح ثمَّ صعد بِي حَتَّى السَّماءَ الثانيةَ فَاسْتَفْتَحَ قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ فَنِعْمَ الْمَجِيءُ جَاءَ فَفُتِحَ. فَلَمَّا خَلَصْتُ إِذَا يَحْيَى وَعِيسَى وَهُمَا ابْنَا خَالَةٍ. قَالَ: هَذَا يَحْيَى وَهَذَا عِيسَى فَسَلِّمْ عَلَيْهِمَا فَسَلَّمْتُ فَرَدَّا ثُمَّ قَالَا: مَرْحَبًا بِالْأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ. ثُمَّ صَعِدَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الثَّالِثَةِ فَاسْتَفْتَحَ قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ فَنِعْمَ الْمَجِيءُ جَاءَ ففُتح فَلَمَّا خَلَصْتُ إِذَا يُوسُفُ قَالَ: هَذَا يُوسُفُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرَدَّ. ثُمَّ قَالَ: مَرْحَبًا بِالْأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ ثُمَّ صَعِدَ بِي حَتَّى أَتَى السَّمَاءَ الرَّابِعَةَ فَاسْتَفْتَحَ قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ فَنِعْمَ الْمَجِيءُ جَاءَ فَفُتِحَ فَلَمَّا خَلَصْتُ فَإِذَا إِدْرِيسُ فَقَالَ: هَذَا إِدْرِيسُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرَدَّ ثُمَّ قَالَ: مَرْحَبًا بِالْأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ ثُمَّ صَعِدَ بِي حَتَّى أَتَى السَّمَاءَ الْخَامِسَةَ فَاسْتَفْتَحَ قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ فَنِعْمَ الْمَجِيءُ جَاءَ فَفتح فَلَمَّا خَلَصْتُ فَإِذَا هَارُونُ قَالَ: هَذَا هَارُونُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرَدَّ ثُمَّ قَالَ: مَرْحَبًا بِالْأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ ثُمَّ صَعِدَ بِي إِلَى السَّمَاءَ السَّادِسَةَ فَاسْتَفْتَحَ قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قِيلَ: وَهل أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قَالَ: مَرْحَبًا بِهِ فَنِعْمَ الْمَجِيءُ جَاءَ فَلَمَّا خَلَصْتُ فَإِذَا مُوسَى قَالَ: هَذَا مُوسَى فَسَلِّمْ عَلَيْهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرَدَّ ثُمَّ قَالَ: مَرْحَبًا بِالْأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالح فَلَمَّا جَاوَزت بَكَى قيل: مَا بيكيك؟ قَالَ: أَبْكِي لِأَنَّ غُلَامًا بُعِثَ بَعْدِي يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِهِ أَكْثَرَ مِمَّنْ يَدْخُلُهَا مِنْ أُمَّتِي ثُمَّ صَعِدَ بِي إِلَى السَّمَاءِ السَّابِعَةِ فَاسْتَفْتَحَ جِبْرِيلُ قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ. قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ. قِيلَ: وَقَدْ بُعِثَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ. قِيلَ: مَرْحَبًا بِهِ فَنِعْمَ الْمَجِيءُ جَاءَ فَلَمَّا خَلَصْتُ فَإِذَا إِبْرَاهِيمُ قَالَ: هَذَا أَبُوكَ إِبْرَاهِيمُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرد السَّلَام ثمَّ قَالَ: مرْحَبًا بالابن الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ ثُمَّ [ص:1637] رُفِعْتُ إِلَى سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى فَإِذَا نَبِقُهَا مِثْلُ قِلَالِ هَجَرَ وَإِذَا وَرَقُهَا مِثْلُ آذَانِ الْفِيَلَةِ قَالَ: هَذَا سِدْرَةُ الْمُنْتَهَى فَإِذَا أَرْبَعَةُ أَنْهَارٍ: نَهْرَانِ بَاطِنَانِ وَنَهْرَانِ ظَاهِرَانِ. قُلْتُ: مَا هَذَانِ يَا جِبْرِيلُ؟ قَالَ: أَمَّا الْبَاطِنَانِ فَنَهْرَانِ فِي الْجَنَّةِ وَأَمَّا الظَّاهِرَانِ فَالنِّيلُ وَالْفُرَاتُ ثُمَّ رُفِعَ لِيَ الْبَيْتُ الْمَعْمُورُ ثُمَّ أُتِيتُ بِإِنَاءٍ مِنْ خَمْرٍ وَإِنَاءٍ مِنْ لَبَنٍ وَإِنَاءٍ مِنْ عَسَلٍ فَأَخَذْتُ اللَّبَنَ فَقَالَ: هِيَ الْفِطْرَةُ أَنْتَ عَلَيْهَا وَأُمَّتُكَ ثُمَّ فُرِضَتْ عَلَيَّ الصَّلَاةُ خَمْسِينَ صَلَاةً كُلَّ يَوْمٍ فَرَجَعْتُ فَمَرَرْتُ عَلَى مُوسَى فَقَالَ: بِمَا أُمِرْتَ؟ قُلْتُ: أُمِرْتُ بِخَمْسِينَ صَلَاةً كُلَّ يَوْمٍ. قَالَ: إِنَّ أمتك لَا تستطع خَمْسِينَ صَلَاةً كُلَّ يَوْمٍ وَإِنِّي وَاللَّهِ قَدْ جَرَّبْتُ النَّاسَ قَبْلَكَ وَعَالَجْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَشَدَّ الْمُعَالَجَةِ فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَسَلْهُ التَّخْفِيفَ لِأُمَّتِكَ فَرَجَعْتُ فَوَضَعَ عَنِّي عَشْرًا فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقَالَ مِثْلَهُ فَرَجَعْتُ فَوَضَعَ عَنِّي عَشْرًا فَرَجَعْتُ إِلى مُوسَى فَقَالَ مثله فَرَجَعت فَوضع عني عَشْرًا فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقَالَ مِثْلَهُ فَرَجَعْتُ فَوَضَعَ عَنَى عَشْرًا فَأُمِرْتُ بِعَشْرِ صَلَوَاتٍ كُلَّ يَوْمٍ فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقَالَ مِثْلَهُ فَرَجَعْتُ فَأُمِرْتُ بِخَمْسِ صَلَوَاتٍ كُلَّ يَوْمٍ فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقَالَ: بِمَا أُمِرْتَ؟ قُلْتُ: أُمِرْتُ بِخَمْسِ صَلَوَاتٍ كُلَّ يَوْمٍ. قَالَ: إِنَّ أُمَّتَكَ لَا تَسْتَطِيعُ خَمْسَ صَلَوَاتٍ كُلَّ يَوْمٍ وَإِنِّي قَدْ جَرَّبْتُ النَّاسَ قَبْلَكَ وَعَالَجْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَشَدَّ الْمُعَالَجَةِ فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَسَلْهُ التَّخْفِيفَ لِأُمَّتِكَ قَالَ: سَأَلْتُ رَبِّي حَتَّى اسْتَحْيَيْتُ وَلَكِنِّي أَرْضَى وَأُسَلِّمُ. قَالَ: فَلَمَّا جَاوَزْتُ نَادَى مُنَادٍ: أَمْضَيْتُ فريضتي وخففت عَن عبَادي . مُتَّفق عَلَيْهِ

হাদীসের ব্যাখ্যা:

১. معراج (মে'রাজ)— ইহা 'উরুজ' হইতে গঠিত। 'মে'রাজ' উপরে উঠিবার সিঁড়ি বা সোপানকে বলা হয়। মে'রাজের ঘটনাকে ইসরা শব্দ দ্বারাও উল্লেখ করা হয়। (ইসরা) অর্থ রাত্র বা নিশি ভ্রমণ। এই প্রসঙ্গে আল্লাহর বাণীঃ

سُبْحَنَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِنَّهُ ............هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ

এই আয়াতের মধ্যে নবী (ﷺ)-এর মসজিদুল হারাম হইতে মসজিদুল আকসা অর্থাৎ, বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত কোন এক রাত্রিকালীন পরিভ্রমণের ঘটনাটি ‘ইসরা' শব্দের দ্বারা উল্লেখ করা হইয়াছে। আর বহুসংখ্যক মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, নবী পাক (ﷺ) মসজিদুল হারাম হইতে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত এবং তথা হইতে একই রাত্রে ঊর্ধ্বলোকে গমন ও পরিভ্রমণ করিয়াছেন। বহুসংখ্যক তাফসীরকারদের মতে আল্লাহর বাণীঃ لَقَدْ رَأَىٰ مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَىٰ দ্বারা ঊর্ধ্বলোকে গমন এবং আল্লাহর দীদার লাভ ও অদৃশ্য জগতের অন্যান্য নিদর্শনসমূহ অবলোকন ও পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে ইংগিত করা হইয়াছে। সমস্ত ওলামায়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জমাআতের ঐক্যমত ও আকীদা নবী (ﷺ)-এর নবুওতপ্রাপ্তির পর মক্কী জীবনের শেষ দিকে একই রাত্রে তাঁহার ইসরা ও মে'রাজ উভয়টি সংঘটিত হইয়াছে। অবশ্য উহার তারিখ সম্পর্কে মতভেদ রহিয়াছে। তবে অধিকাংশের মতে হিজরতের তিন বৎসর পূর্বে রজব মাসের সাতাইশ তারিখের রাত্রেই মে'রাজ ঘটিয়াছে। এই অভিমতটিই সর্বসাধারণের কাছে বহুল প্রসিদ্ধ। ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ সলফে সালেহীন ও মুসলমানদের বিরাট একটি দলের অভিমত হইল, নবী পাক (ﷺ)-এর মে'রাজ জাগ্রত অবস্থায় সশরীরেই হইয়াছে এবং তিনি বোরাক নামক একটি বাহনে আরোহণ করিয়া মক্কা হইতে বায়তুল মুকাদ্দাস গিয়াছেন এবং তথায় সমস্ত নবীদেরকে নামায পড়াইয়া সশরীরে ঊর্ধ্বলোকে গমন করিয়াছেন।
কাহারও মতে নবী পাক (ﷺ)-এর মে'রাজ তাঁহার নিদ্রাবস্থায় স্বপ্নযোগেই হইয়াছে। কিন্তু কুরআন ও হাদীসের স্পষ্ট দলিল দ্বারা প্রমাণিত যে, তাঁহার মে'রাজ সশরীরে জাগ্রত অবস্থায় হইয়াছে।

মূলত হযরত ঈসা ও ইয়াহ্ইয়া (আঃ) পরস্পর খালাত ভাই নহেন; বরং হযরত ঈসা (আঃ)-এর মাতা মারইয়াম এবং ইয়াহ্ইয়া (আঃ) পরস্পর খালাত ভাই-বোন ছিলেন। পিতা বলিতে যেমন পিতামহকেও বুঝায়, তদ্রূপ মাতা বলিতে মাতামহীকেও বুঝাইয়া থাকে। এই প্রয়োগ মতে ঈসা (আঃ)-এর মাতামহীকে তাঁহার মাতা ধরিয়া উভয়কে খালাত ভাই বলা হইয়াছে।
হযরত মূসা (আঃ)-এর কান্না হিংসা-বিদ্বেষের কারণে ছিল না; বরং তাঁহার কান্নার কারণ ছিল অনুতাপজনিত—উম্মতে মুহাম্মদীর মোকাবেলায় নিজ উম্মতের অবাধ্যতা স্মরণ করিয়া তাঁহার মন তখন ব্যথিত হইয়া উঠে।
“সিদরাতুল মুনতাহা”— সিদরা শব্দের অর্থ কুলবৃক্ষ এবং মুনতাহা শব্দের অর্থ শেষ সীমা। পৃথিবী হইতে যাহাকিছু ঊর্ধ্বলোকে নীত হয়, তাহা সেইখানে গিয়াই থামিয়া যায়, অতঃপর অপর দিকে যাঁহারা রহিয়াছেন, তাঁহারা সেইখানে থাকিয়া তাহা গ্রহণ করিয়া উপরে লইয়া যান। শেষ সীমার চিহ্নস্বরূপ ঐ স্থানটিতে একটি কুলবৃক্ষ থাকায় উক্ত সীমান্ত-চিহ্নকে সিদরাতুল মুনতাহা বলা হয়।
“বায়তুল মা’মূর”—ভূপৃষ্ঠের কা'বাঘরের বরাবর সপ্তম আকাশে অবস্থিত আল্লাহর এবাদতের একখানা পবিত্র ঘর। দৈনিক সত্তর হাজার ফেরেশতা এই গৃহে এবাদতের জন্য প্রবেশ করেন, আবার বাহির হইয়া যান। যাঁহারা একবার বাহির হইয়া যান, তাঁহারা দ্বিতীয়বার প্রবেশ করেন না। এইভাবে প্রত্যহ ফেরেশতাদের নূতন নূতন জমাআত এই ঘরের যিয়ারত করিয়া থাকেন।

২. ইসরা ও মি'রাজের সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে বায়তুল মাকদিসে গমন করেন। সেখানে নবীগণকে নিয়ে নামায পড়েন। তারপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁকে নিয়ে এক এক করে সাত আসমান পাড়ি দেন। প্রত্যেক আসমানে পৌঁছলে সে আসমানের দ্বাররক্ষী জিজ্ঞেস করে, কে? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, আমি জিবরীল। তারপর জিজ্ঞেস করে, আপনার সঙ্গে কে? তিনি উত্তর দেন, মুহাম্মাদ। এভাবে প্রত্যেকবার তিনি পরিচয় দিতে গিয়ে নিজের নাম বলেছেন। বলেননি যে, আমি। নাম বলতে গিয়েও নিজের সুপরিচিত নাম 'জিবরীল' বলেছেন। অন্য কোনও নাম নয়। তাঁর এছাড়া আরও নাম আছে, যেমন আর-রূহুল আমীন, রূহুল কুদ্‌স। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিচয় দিতে গিয়েও তিনি তাঁর সুপরিচিত নাম 'মুহাম্মাদ' উল্লেখ করেছেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরও আরও বহু নাম আছে, যেমন আহমাদ, আল-মাহী, আল-হাশির, আল-আকিব ইত্যাদি। তাঁর কুনয়াত বা উপনাম হল আবুল কাসিম। তিনি খাতামুন নাবিয়্যীন। তিনি সায়্যিদুল বাশার। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম এসবের কোনওটিই না বলে উভয় প্রসিদ্ধ ও পরিচিত নামই বলেছেন। এর দ্বারা বোঝা গেল ঘরের ভেতর থেকে আগন্তুকের পরিচয় জানতে চাওয়া হলে তাকে যে নামে সবাই চেনে সেই নাম বলেই পরিচয় দিতে হবে। 'আমি' বলা কিংবা এমন কোনও নাম বা উপাধি বলাও ঠিক নয়, যা বললে জিজ্ঞাসাকারী তাকে ভালোভাবে চিনতে পারবে না। পরিচয় জিজ্ঞেস করার উদ্দেশ্যই তো চিনতে পারা। যা বললে সে চিনতে পারবে না, তা বলার ফায়দা কী? তাতে বরং ঝামেলাই বাড়ে। কথা বেশি বলতে হয়, সময়ও নষ্ট হয়।

অনেক সময় বাক্তি বড় হলে নিজ নাম বলতে আত্মসম্মানে বাধে। হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম ও নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে বড় মাখলূক আর কে আছে? তাঁদেরই যখন পরিচয় দিতে গিয়ে নিজ নাম বলতে কুণ্ঠাবোধ হয়নি, তখন অন্যদের কেন এতে আপত্তি লাগবে? অকপটে নিজ নাম উচ্চারণ করার দ্বারা কেবল পরিচয়দানই সহজ হয় না; এটা বিনয়েরও পরিচায়ক।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ

ক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরা ও মি'রাজের ঘটনা সত্য। এতে বিশ্বাস রাখা জরুরি।

খ. আকাশ সাতটি। এতেও বিশ্বাস রাখতে হবে।

গ. প্রত্যেক আকাশে উপরে ওঠার দরজা আছে। আছে দরজার প্রহরীও। একেক ফিরিশতাকে আল্লাহ তা'আলা একেক দরজার দায়িত্বে নিযুক্ত করেছেন।

ঘ. দ্বাররক্ষী ফিরিশতাগণ সদা সতর্ক ও সচেতন। দায়িত্বপালনে তাদের দ্বারা কখনও কোনও ত্রুটি হয় না।

ঙ. কারও দরজায় পৌঁছলে নিজের নাম-পরিচয় দেওয়া কর্তব্য।

চ. পরিচয় দিতে গিয়ে সবাই যে নামে চেনে সেটাই বলা উচিত।
২. ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)
tahqiqতাহকীক:তাহকীক চলমান