মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত শরীফ)
৩০- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
হাদীস নং: ৫৮৬৩
- নবীজী সাঃ এর মর্যাদা ও শামাঈল অধ্যায়
প্রথম অনুচ্ছেদ - মিরাজের বর্ণনা
৫৮৬৩। হযরত সাবেত আল-বুনানী হযরত আনাস (রাঃ) হইতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন আমার সম্মুখে 'বোরাক' উপস্থিত করা হইল। উহা শ্বেত বর্ণের লম্বা কায়াবিশিষ্ট একটি জানোয়ার, গাধার চাইতে বড় এবং খচ্চর অপেক্ষা ছোট। উহার দৃষ্টি যতদূর যাইত সেইখানে পা রাখিত। আমি উহাতে আরোহণ করিয়া বায়তুল মুকাদ্দাসে আসিয়া পৌঁছিলাম এবং অন্যান্য নবীগণ যেই স্থানে নিজেদের সওয়ারী বাঁধিতেন, আমিও আমার বাহনকে তথায় বাধিলাম। নবী (ছাঃ) বলেন, অতঃপর বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদে প্রবেশ করিয়া তথায় দুই রাকআত নামায পড়িলাম। তারপর মসজিদ হইতে বাহিরে আসিলাম, তখন হযরত জিবরাঈল আমার কাছে এক পাত্র মদ ও এক পাত্র দুধ লইয়া আসিলেন। আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করিলাম। তখন জিবরাঈল বলিলেন, আপনি (ইসলামরূপী) ফেতরত (স্বভাব-ধর্ম ইসলাম) গ্রহণ করিয়াছেন।
অতঃপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমাকে আসমানের দিকে লইয়া চলিলেন, ইহার পরবর্তী অংশ সাবেত বুনানী হযরত আনাস (রাঃ) হইতে পূর্বে বর্ণিত হাদীসটির মর্মানুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। (অবশ্য ইহাতে রহিয়াছে,) নবী (ছাঃ) বলেন, হঠাৎ আমি আদম (আঃ)-কে দেখিতে পাইলাম। তিনি আমাকে সাদর সম্ভাষণ জানাইলেন এবং আমার জন্য নেক দোআ করিলেন। নবী (ছাঃ) ইহাও বলিয়াছেন যে, তিনি তৃতীয় আসমানে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর সাক্ষাৎ লাভ করিয়াছেন। তিনি এমন ব্যক্তি যে, তাহাকে (গোটা পৃথিবীর) অর্ধেক সৌন্দর্য দান করা হইয়াছে। তিনিও আমাকে সাদর অভিনন্দন জানাইয়া আমার জন্য নেক দো'আ করিলেন। সাবেত বলেন এবং ইহাতে মুসা (আঃ)-এর কান্নার বিষয়টির উল্লেখ নাই। নবী (ছাঃ) আরও বলিয়াছেন, সপ্তম আকাশে আমি হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে দেখিতে পাইলাম যে, তিনি বায়তুল মা'মুরের সহিত পিঠ লাগাইয়া বসিয়া আছেন। সেই গৃহে দৈনিক সত্তর হাজার ফিরিশতা প্রবেশ করেন। যাঁহারা একবার বাহির হইয়াছেন, তাহারা পুনরায় আর প্রবেশ করিবার সুযোগ পাইবেন না। অতঃপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় লইয়া গেলেন। উহার পাতা গুলি হাতীর কানের মত এবং উহার ফল মটকার ন্যায়। এরপর উক্ত বৃক্ষটি আল্লাহ্ তা'আলার নির্দেশে এমন একটি আবৃতকারী বস্তু দ্বারা আবৃত হয়, যাহাতে উহার অবস্থা (উত্তমরূপে ) পরিবর্তিত হয় যে, আল্লাহর সৃষ্ট কোন মাখলুক যাহার সৌন্দর্যের কোন প্রকার বর্ণনা দিতে সক্ষম হইবে না। ইহার পর আল্লাহ্ আমার নিকট ওহী পাঠাইলেন, যাহা তিনি পাঠাইয়াছেন এবং আমার উপরে দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) নামায ফরয করিলেন। ফিরিবার সময় আমি হযরত মুসা (আঃ)-এর নিকট আসিলে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনার পরওয়ারদেগার আপনার উম্মতের উপর কি ফরয করিয়াছেন? আমি বলিলাম, দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) নামায ফরয করিয়াছেন। তিনি আমাকে (পরামর্শস্বরূপ) বলিলেন, আপনি আপনার রবের কাছে ফিরিয়া যান এবং (নামাযের সংখ্যা হ্রাস করিবার জন্য তাঁহার কাছে আবেদন করুন। কেননা, আপনার উম্মত ইহা (দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায) সম্পাদন করিতে সক্ষম হইবে না। আমি বনী ইসরাঈলকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছি। নবী (ছাঃ) বলেন, তখন আমি আমার রবের কাছে ফিরিয়া গেলাম এবং বলিলাম; হে আমার পরওয়ারদেগার! আমার উম্মতের উপর হইতে হ্রাস করিয়া দিন। তখন আমার উপর হইতে পাঁচ (ওয়াক্ত নামায) কমাইয়া দিলেন। অতঃপর আমি হযরত মুসা (আঃ)-এর নিকট ফিরিয়া আসিয়া বলিলাম, আল্লাহ্ তা'আলা আমার উপর হইতে পাঁচ (ওয়াক্ত নামায) কমাইয়া দিয়াছেন। হযরত মুসা বলিলেন, আপনার উম্মত ইহা সম্পাদনেও সমর্থ হইবে না। কাজেই আপনি পুনরায় আপনার রবের কাছে যান এবং আরও হ্রাস করিবার জন্য আবেদন করুন। নবী (ছাঃ) বলেন, আমি এইভাবে আমার রব ও হযরত মুসা (আঃ)-এর মাঝখানে আসা-যাওয়া করিতে থাকিলাম [ এবং বার বার নামাযের সংখ্যা কমাইয়া আনিতে রহিলাম। নবী (ছাঃ) বলেন,] সর্বশেষ আমার রব বলিলেন: হে মুহাম্মাদ। দৈনিক ফরয তো এই পাঁচ নামায এবং প্রত্যেক নামাযের সওয়াব দশ দশ নামাযের সমান। ফলে ইহা (পাঁচ ওয়াক্ত) পঞ্চাশ নামাযের সমান। (আমার নীতি হইল, যেই ব্যক্তি কোন একটি নেক কাজ করিবার সংকল্প করিবে; কিন্তু তাহা সম্পাদন করে নাই, তাহার জন্য একটি নেকী লেখা হইবে এবং সেই কাজটি সম্পাদন করিলে তাহার জন্য দশটি নেকী লেখা হইবে। আর যেই ব্যক্তি কোন একটি মন্দ কাজ করিবার সংকল্প করিয়া উহাকে বাস্তবায়ন না করে, তাহার জন্য কিছুই লেখা হইবে না। অবশ্য যদি সে উক্ত কাজটি বাস্তবায়ন করে, তবে তাহার জন্য একটি গোনাহই লেখা হইবে। রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেন, অতঃপর আমি অবতরণ করিয়া যখন হযরত মুসা (আঃ)-এর নিকট পৌঁছিলাম, তখন তাঁহাকে পূর্ণ বিবরণ জানাইলাম। তখন তিনি আমাকে বলিলেন, আবারও আপনার রবের কাছে যান এবং আরও কিছু কমাইয়া দেওয়ার জন্য অনুরোধ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, আমি বলিলাম, আমি আমার রবের কাছে বার বার গিয়াছি। এখন পুনরায় যাইতে আমার লজ্জা হইতেছে। মুসলিম
অতঃপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমাকে আসমানের দিকে লইয়া চলিলেন, ইহার পরবর্তী অংশ সাবেত বুনানী হযরত আনাস (রাঃ) হইতে পূর্বে বর্ণিত হাদীসটির মর্মানুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। (অবশ্য ইহাতে রহিয়াছে,) নবী (ছাঃ) বলেন, হঠাৎ আমি আদম (আঃ)-কে দেখিতে পাইলাম। তিনি আমাকে সাদর সম্ভাষণ জানাইলেন এবং আমার জন্য নেক দোআ করিলেন। নবী (ছাঃ) ইহাও বলিয়াছেন যে, তিনি তৃতীয় আসমানে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর সাক্ষাৎ লাভ করিয়াছেন। তিনি এমন ব্যক্তি যে, তাহাকে (গোটা পৃথিবীর) অর্ধেক সৌন্দর্য দান করা হইয়াছে। তিনিও আমাকে সাদর অভিনন্দন জানাইয়া আমার জন্য নেক দো'আ করিলেন। সাবেত বলেন এবং ইহাতে মুসা (আঃ)-এর কান্নার বিষয়টির উল্লেখ নাই। নবী (ছাঃ) আরও বলিয়াছেন, সপ্তম আকাশে আমি হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কে দেখিতে পাইলাম যে, তিনি বায়তুল মা'মুরের সহিত পিঠ লাগাইয়া বসিয়া আছেন। সেই গৃহে দৈনিক সত্তর হাজার ফিরিশতা প্রবেশ করেন। যাঁহারা একবার বাহির হইয়াছেন, তাহারা পুনরায় আর প্রবেশ করিবার সুযোগ পাইবেন না। অতঃপর হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহায় লইয়া গেলেন। উহার পাতা গুলি হাতীর কানের মত এবং উহার ফল মটকার ন্যায়। এরপর উক্ত বৃক্ষটি আল্লাহ্ তা'আলার নির্দেশে এমন একটি আবৃতকারী বস্তু দ্বারা আবৃত হয়, যাহাতে উহার অবস্থা (উত্তমরূপে ) পরিবর্তিত হয় যে, আল্লাহর সৃষ্ট কোন মাখলুক যাহার সৌন্দর্যের কোন প্রকার বর্ণনা দিতে সক্ষম হইবে না। ইহার পর আল্লাহ্ আমার নিকট ওহী পাঠাইলেন, যাহা তিনি পাঠাইয়াছেন এবং আমার উপরে দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) নামায ফরয করিলেন। ফিরিবার সময় আমি হযরত মুসা (আঃ)-এর নিকট আসিলে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনার পরওয়ারদেগার আপনার উম্মতের উপর কি ফরয করিয়াছেন? আমি বলিলাম, দৈনিক পঞ্চাশ (ওয়াক্ত) নামায ফরয করিয়াছেন। তিনি আমাকে (পরামর্শস্বরূপ) বলিলেন, আপনি আপনার রবের কাছে ফিরিয়া যান এবং (নামাযের সংখ্যা হ্রাস করিবার জন্য তাঁহার কাছে আবেদন করুন। কেননা, আপনার উম্মত ইহা (দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায) সম্পাদন করিতে সক্ষম হইবে না। আমি বনী ইসরাঈলকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়া দেখিয়াছি। নবী (ছাঃ) বলেন, তখন আমি আমার রবের কাছে ফিরিয়া গেলাম এবং বলিলাম; হে আমার পরওয়ারদেগার! আমার উম্মতের উপর হইতে হ্রাস করিয়া দিন। তখন আমার উপর হইতে পাঁচ (ওয়াক্ত নামায) কমাইয়া দিলেন। অতঃপর আমি হযরত মুসা (আঃ)-এর নিকট ফিরিয়া আসিয়া বলিলাম, আল্লাহ্ তা'আলা আমার উপর হইতে পাঁচ (ওয়াক্ত নামায) কমাইয়া দিয়াছেন। হযরত মুসা বলিলেন, আপনার উম্মত ইহা সম্পাদনেও সমর্থ হইবে না। কাজেই আপনি পুনরায় আপনার রবের কাছে যান এবং আরও হ্রাস করিবার জন্য আবেদন করুন। নবী (ছাঃ) বলেন, আমি এইভাবে আমার রব ও হযরত মুসা (আঃ)-এর মাঝখানে আসা-যাওয়া করিতে থাকিলাম [ এবং বার বার নামাযের সংখ্যা কমাইয়া আনিতে রহিলাম। নবী (ছাঃ) বলেন,] সর্বশেষ আমার রব বলিলেন: হে মুহাম্মাদ। দৈনিক ফরয তো এই পাঁচ নামায এবং প্রত্যেক নামাযের সওয়াব দশ দশ নামাযের সমান। ফলে ইহা (পাঁচ ওয়াক্ত) পঞ্চাশ নামাযের সমান। (আমার নীতি হইল, যেই ব্যক্তি কোন একটি নেক কাজ করিবার সংকল্প করিবে; কিন্তু তাহা সম্পাদন করে নাই, তাহার জন্য একটি নেকী লেখা হইবে এবং সেই কাজটি সম্পাদন করিলে তাহার জন্য দশটি নেকী লেখা হইবে। আর যেই ব্যক্তি কোন একটি মন্দ কাজ করিবার সংকল্প করিয়া উহাকে বাস্তবায়ন না করে, তাহার জন্য কিছুই লেখা হইবে না। অবশ্য যদি সে উক্ত কাজটি বাস্তবায়ন করে, তবে তাহার জন্য একটি গোনাহই লেখা হইবে। রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেন, অতঃপর আমি অবতরণ করিয়া যখন হযরত মুসা (আঃ)-এর নিকট পৌঁছিলাম, তখন তাঁহাকে পূর্ণ বিবরণ জানাইলাম। তখন তিনি আমাকে বলিলেন, আবারও আপনার রবের কাছে যান এবং আরও কিছু কমাইয়া দেওয়ার জন্য অনুরোধ করুন। তখন রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিলেন, আমি বলিলাম, আমি আমার রবের কাছে বার বার গিয়াছি। এখন পুনরায় যাইতে আমার লজ্জা হইতেছে। মুসলিম
كتاب الفضائل والشمائل
وَعَن ثابتٍ البُنانيِّ عَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أُتيتُ بالبُراق وَهُوَ دابَّة أَبْيَضُ طَوِيلٌ فَوْقَ الْحِمَارِ وَدُونَ الْبَغْلِ يَقَعُ حَافِرُهُ عِنْدَ مُنْتَهَى طَرْفِهِ فَرَكِبْتُهُ حَتَّى أَتَيْتُ بَيْتَ الْمَقْدِسِ فَرَبَطْتُهُ بِالْحَلْقَةِ الَّتِي تَرْبُطُ بِهَا الْأَنْبِيَاءُ» . قَالَ: ثُمَّ دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فَصَلَّيْتُ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثمَّ خرجتُ فَجَاءَنِي جِبْرِيلُ بِإِنَاءٍ مِنْ خَمْرٍ وَإِنَاءٍ مِنْ لبن فاختَرتُ اللَّبن فَقَالَ جِبْرِيل: اخْتَرْتَ الْفِطْرَةَ ثُمَّ عَرَجَ بِنَا إِلَى السَّمَاءِ . وَسَاقَ مِثْلَ مَعْنَاهُ قَالَ: «فَإِذَا أَنَا بِآدَمَ فرحَّبَ بِي وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ» . وَقَالَ فِي السَّمَاءِ الثَّالِثَةِ: «فَإِذا أَنا بِيُوسُف إِذا أُعْطِيَ شَطْرَ الْحُسْنِ فَرَحَّبَ بِي وَدَعَا لِي بِخَيْرٍ» . وَلَمْ يَذْكُرْ بُكَاءَ مُوسَى وَقَالَ فِي السَّمَاءِ السَّابِعَةِ: فَإِذَا أَنَا بِإِبْرَاهِيمَ مُسْنِدًا ظَهْرَهُ إِلَى الْبَيْتِ الْمَعْمُورِ وَإِذَا هُوَ يَدْخُلُهُ كُلَّ يَوْمٍ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ لَا يَعُودُونَ إِلَيْهِ ثمَّ ذهب بِي إِلَى سِدْرَة الْمُنْتَهى فَإِذا وَرقهَا كآذان الفيلة وَإِذا ثمارها كَالْقِلَالِ فَلَمَّا غَشِيَهَا مِنْ أَمْرِ اللَّهِ مَا غَشَّى تَغَيَّرَتْ فَمَا أَحَدٌ مِنْ خَلْقِ اللَّهِ يَسْتَطِيعُ أَنْ يَنْعَتَهَا مِنْ حُسْنِهَا وَأَوْحَى إِلَيَّ مَا أوحى فَفرض عَليّ خمسين صَلَاة كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ فَنَزَلْتُ إِلَى مُوسَى فَقَالَ: مَا فَرَضَ رَبُّكَ عَلَى أُمَّتِكَ؟ قُلْتُ: خَمْسِينَ صَلَاة كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ. قَالَ: ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَسَلْهُ التَّخْفِيفَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لَا تُطِيقُ ذَلِكَ فَإِنِّي بَلَوْتُ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَخَبَرْتُهُمْ. قَالَ: فَرَجَعْتُ إِلَى رَبِّي فَقُلْتُ: يَا رَبِّ خَفِّفْ عَلَى أُمَّتِي فَحَطَّ عَنِّي خَمْسًا فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقُلْتُ: حَطَّ عَنِّي خَمْسًا. قَالَ: إِنَّ أُمَّتَكَ لَا تُطِيقُ ذَلِكَ فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَسَلْهُ التَّخْفِيفَ . قَالَ: فَلَمْ أَزَلْ أَرْجِعُ بَيْنَ رَبِّي وَبَيْنَ مُوسَى حَتَّى قَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّهُنَّ خَمْسُ صَلَوَاتٍ كُلَّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ لِكُلِّ صَلَاةٍ عَشْرٌ فَذَلِكَ خَمْسُونَ صَلَاةً مَنْ هَمَّ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كُتِبَتْ لَهُ حَسَنَةً فَإِنْ عَمِلَهَا كُتِبَتْ لَهُ عَشْرًا وَمَنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا لَمْ تُكْتَبْ لَهُ شَيْئًا فَإِنَّ عَمِلَهَا كُتِبَتْ لَهُ سَيِّئَةً وَاحِدَةً . قَالَ: فَنَزَلْتُ حَتَّى انتهيتُ إِلى مُوسَى فَأَخْبَرته فَقَالَ: ارجعْ إِلى رَبِّكَ فَسَلْهُ التَّخْفِيفَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَقُلْتُ: قَدْ رَجَعْتُ إِلَى رَبِّي حَتَّى استحييت مِنْهُ . رَوَاهُ مُسلم
হাদীসের ব্যাখ্যা:
এ হাদীছে বলা হয়েছে যে, কেউ যদি কোনও নেক কাজের নিয়ত করে কিন্তু কাজটি করা না হয়, তবে কেবল নিয়তের কারণেও সেই কাজ করার ছওয়াব পাবে। এটা আল্লাহ তা'আলার মেহেরবানী যে, তিনি নেক কাজের নিয়তকেও একটি স্বতন্ত্র নেক কাজের মর্যাদা দিয়ে দেন। যেমন কেউ নিয়ত করল সে দু' রাক'আত নামায পড়বে, কিন্তু কোনও কারণে তার তা পড়া হল না। কিংবা নিয়ত করল, অমুক দীনী কাজে সে এত টাকা দান করবে, কিন্তু টাকাটা তার দান করা হল না। এ অবস্থায় তার ওই নিয়ত বৃথা যায় না। কাজটি করা হল না বলে তার নিয়ত বাতিল গণ্য হয় না; বরং আল্লাহ তা'আলা নিজ দয়ায় ওই নিয়তকেও একটি পূর্ণাঙ্গ কাজের মর্যাদা দিয়ে দেন এবং তার আমলনামায় সেই নিয়তকে একটি পূর্ণাঙ্গ নেক কাজরূপে লিখে দেন। তিনি লেখেন মানে ফিরিশতাদেরকে লেখার হুকুম করেন এবং তারা তা পালন করেন।
নেক কাজের নিয়ত করার পর বান্দা যদি তা পালন করতে সক্ষম হয়, তবে আল্লাহ তা'আলা তাকে দশ থেকে সাতশ' গুণ পর্যন্ত বরং তারও বেশি নেক কাজের মর্যাদা দিয়ে দেন। দশগুণ থেকে সাতশ' বা তারও বেশি হয় ইখলাসের তারতম্য ও আমলের সৌন্দর্যগত পার্থক্যের কারণে। অর্থাৎ যার ইখলাস যতবেশি হবে এবং আমল যতবেশি সুন্নতসম্মত ও সুচারু হবে, ছওয়াবও ততবেশি হবে। আমল একটা হওয়া সত্ত্বেও ছওয়াব বহুগুণ বেশি দেওয়াটা কেবলই আল্লাহ তা'আলার মেহেরবানী ও তাঁর দয়া।
এটাও আল্লাহ তা'আলার মেহেরবানী যে, অসৎ কাজের ক্ষেত্রে নেক কাজের মত বৃদ্ধি তিনি ঘটান না। একটা মন্দ কাজকে একটা মন্দ কাজই লেখা হয়। আবার মন্দ কাজের নিয়তকে স্বতন্ত্র কাজরূপে ধরা হয় না যে, সেজন্যও পাপ লেখা হবে। বরং উল্টো পাপের পরিবর্তে ছওয়াব লেখা হয়। অর্থাৎ যদি পাপ কাজের ইচ্ছা করার পর সেই পাপ কাজটি করা না হয়, তবে সে যে পাপ কাজটি করল না, সে তার ইচ্ছা বাস্তবায়ন থেকে বিরত থাকল, এজন্যে তার আমলনামায় একটি নেক কাজের ছওয়াব লিখে দেওয়া হয়। সুবহানাল্লাহ! এই মেহেরবানীরও কি কোনও সীমা আছে! এর জন্য আমাদের কতই না শোকর আদায় করা উচিত!
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নেক কাজের নিয়তও যেহেতু ছওয়াবের কারণ, সেহেতু যখনই কোনও নেক কাজের অবকাশ আসে, অবিলম্বে তার নিয়ত করে ফেলা উচিত। এমনও হতে পারে যে, অবকাশ আসা সত্ত্বেও কোনও ওযরের কারণে কাজটি করা হল না। কিন্তু যেহেতু করার নিয়ত করা হয়েছিল, তাই সে কাজটি না করা সত্ত্বেও তার ছওয়াব থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত থাকতে হবে না; বরং নিয়তের কারণে একটা ছওয়াব অবশ্যই লেখা হবে। কিন্তু নিয়ত যদি না করা হত, তবে তো সম্পূর্ণই বঞ্চিত থাকতে হত। কাজটি করতে না পারার কারণে করার ছওয়াব তো পাওয়াই গেল না, আবার যেহেতু নিয়ত করা হয়নি তাই নিয়তেরও ছওয়াব থেকে মাহরূম থাকতে হল।
খ. শয়তান বা নফসের প্ররোচনায় কোনও পাপকর্মের ইচ্ছা জাগলে বান্দার কর্তব্য তা পরিহারের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো, যেহেতু পরিহার করতে পারলে একটি নেককাজ করার ছওয়াব পাওয়া যায়।
গ. এ হাদীছ বান্দার প্রতি আল্লাহর অশেষ রহমত ও দয়ার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে। সুতরাং এর জন্যও আল্লাহর শোকর আদায় করা অবশ্যকর্তব্য।
নেক কাজের নিয়ত করার পর বান্দা যদি তা পালন করতে সক্ষম হয়, তবে আল্লাহ তা'আলা তাকে দশ থেকে সাতশ' গুণ পর্যন্ত বরং তারও বেশি নেক কাজের মর্যাদা দিয়ে দেন। দশগুণ থেকে সাতশ' বা তারও বেশি হয় ইখলাসের তারতম্য ও আমলের সৌন্দর্যগত পার্থক্যের কারণে। অর্থাৎ যার ইখলাস যতবেশি হবে এবং আমল যতবেশি সুন্নতসম্মত ও সুচারু হবে, ছওয়াবও ততবেশি হবে। আমল একটা হওয়া সত্ত্বেও ছওয়াব বহুগুণ বেশি দেওয়াটা কেবলই আল্লাহ তা'আলার মেহেরবানী ও তাঁর দয়া।
এটাও আল্লাহ তা'আলার মেহেরবানী যে, অসৎ কাজের ক্ষেত্রে নেক কাজের মত বৃদ্ধি তিনি ঘটান না। একটা মন্দ কাজকে একটা মন্দ কাজই লেখা হয়। আবার মন্দ কাজের নিয়তকে স্বতন্ত্র কাজরূপে ধরা হয় না যে, সেজন্যও পাপ লেখা হবে। বরং উল্টো পাপের পরিবর্তে ছওয়াব লেখা হয়। অর্থাৎ যদি পাপ কাজের ইচ্ছা করার পর সেই পাপ কাজটি করা না হয়, তবে সে যে পাপ কাজটি করল না, সে তার ইচ্ছা বাস্তবায়ন থেকে বিরত থাকল, এজন্যে তার আমলনামায় একটি নেক কাজের ছওয়াব লিখে দেওয়া হয়। সুবহানাল্লাহ! এই মেহেরবানীরও কি কোনও সীমা আছে! এর জন্য আমাদের কতই না শোকর আদায় করা উচিত!
হাদীস থেকে শিক্ষণীয়ঃ
ক. নেক কাজের নিয়তও যেহেতু ছওয়াবের কারণ, সেহেতু যখনই কোনও নেক কাজের অবকাশ আসে, অবিলম্বে তার নিয়ত করে ফেলা উচিত। এমনও হতে পারে যে, অবকাশ আসা সত্ত্বেও কোনও ওযরের কারণে কাজটি করা হল না। কিন্তু যেহেতু করার নিয়ত করা হয়েছিল, তাই সে কাজটি না করা সত্ত্বেও তার ছওয়াব থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত থাকতে হবে না; বরং নিয়তের কারণে একটা ছওয়াব অবশ্যই লেখা হবে। কিন্তু নিয়ত যদি না করা হত, তবে তো সম্পূর্ণই বঞ্চিত থাকতে হত। কাজটি করতে না পারার কারণে করার ছওয়াব তো পাওয়াই গেল না, আবার যেহেতু নিয়ত করা হয়নি তাই নিয়তেরও ছওয়াব থেকে মাহরূম থাকতে হল।
খ. শয়তান বা নফসের প্ররোচনায় কোনও পাপকর্মের ইচ্ছা জাগলে বান্দার কর্তব্য তা পরিহারের সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো, যেহেতু পরিহার করতে পারলে একটি নেককাজ করার ছওয়াব পাওয়া যায়।
গ. এ হাদীছ বান্দার প্রতি আল্লাহর অশেষ রহমত ও দয়ার দৃষ্টান্ত তুলে ধরে। সুতরাং এর জন্যও আল্লাহর শোকর আদায় করা অবশ্যকর্তব্য।
ব্যাখ্যা সূত্রঃ_ রিয়াযুস সালিহীন (অনুবাদ- মাওলানা আবুল বাশার মুহাম্মাদ সাইফুল ইসলাম হাফি.)